দেশ ও কাল সম্পর্কে নিউটন ও আইনস্টাইনের মতবাদের পার্থক্য আলোচনা করুন।

নিউটন দেশ ও কাল সম্পর্কীয় সমস্যাকে বৈজ্ঞানিক মর্যাদা দেন। তিনি মনে করেন, দেশ ও
কাল হলো দুটি স্বতন্ত্র ও বস্তুগত সত্তা, দেশে বস্তুঅবস্থান করে এবং কালে ঘটনা ঘটে। শুধু
তাই নয়, দেশ ও কাল সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। একটি আর একটির উপর কোন দিক থেকেই
নির্ভরশীল নয় বা একটি আর একটির সাপেক্ষ নয়। এই মতবাদ দেশ ও কাল নিরপেক্ষতাবাদ
নামে অভিহিত। কিন্তু সাম্প্রতিককালে
পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে নতুন নতুন গবেষণা এবং পুরাতন মতবাদের অনেক পরিবর্তন সাধিত
হওয়ার ফলে নতুন মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। মিকোস্কি (গরহশড়ঁংশর), আইনস্টাইন প্রমুখ
বিজ্ঞানীদের মতে, দেশ ছাড়া কাল এবং কাল ছাড়া দেশের কোন অস্তিত্ব নেই। তাঁরা বলেন,
দেশ-কাল আপেক্ষিক ও আত্মনির্ভর সত্তা, এই দেশ-কাল জ্ঞাতা ছাড়া অর্থহীন। দেশ ও কাল : নিউটনের মত
নিউটন মনে করেন, দেশ বস্তুর অধিষ্ঠান বা আধার, আর কাল ঘটনার আধার । অর্থাৎ বস্তু
দেশে থাকে এবং ঘটনা কালে ঘটে। দেশ ও কালের সাথে বস্তুও ঘটনার এক আধার-আধেয়
সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর মতে, দেশ ও কাল সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। একটি আর একটির উপর কোন
দিক থেকেই নির্ভরশীল নয় বা একটি আর একটির সাপেক্ষ নয়। তাঁর এই মতবাদ দেশ ও
কাল নিরপেক্ষতাবাদ নামে পরিচিত।
দেশ-কালের আপেক্ষিকতা ও আইনস্টাইন
আধুনিককালে দেশ ও কাল সম্বন্ধে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মতবাদই সর্বজন স্বীকৃতি লাভ
করেছে। আইনস্টাইনের মতে, দেশ ও কাল পরস্পর নিরপেক্ষ নয়। দেশ বিচ্ছিন্ন কাল বা
কাল বিচ্ছিন্ন দেশ ভাবা যায় না। সুতরাং দেশ ও কাল না বলে দেশ-কাল বলাই উচিত। দেশ
ও কাল পর্যবেক্ষকের গতির উপর নির্ভর করে। পর্যবেক্ষকের গতির উপর নির্ভর করলেও দেশকাল আত্মগত এমন মনে করার কারণ নেই। কোন জিনিস সাপেক্ষ (ৎবষধঃরাব) হলেই তা
আত্মগত হয় না। যেমন বিভিন্ন মানুষের অবস্থান অনুসারে তাদের কাছ থেকে কোন একটি
নির্দিষ্ট স্থানের দূরত্ব বিভিন্ন হতে পারে। তাতে দূরত্ব বিভিন্ন ব্যক্তির অবস্থানসাপেক্ষ হবে। কিন্তু
সেজন্য দূরত্ব আত্মগত, এমন বলা যায় না। দূরত্ব বিষয়গত-ই। তেমনি বলা যায়, দেশ-কাল
সাপেক্ষ হওয়া সত্তে¡ও বিষয়গত। আইনস্টাইনের এই মতবাদই দেশ-কালাপেক্ষিকতাবাদ নামে পরিচিত।
নতুন মতবাদ
আইনস্টাইন, মিকোস্কি প্রমুখের মতানুসারে আধুনিক পদার্থবিদ্যায় দেশ ও কাল সম্বন্ধে যে
নতুন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে তা পুরাতন মতবাদ থেকে দু'দিক দিয়ে পৃথক :
দেশ ও কাল হলো পরস্পর অবিচ্ছিন্ন এক অখন্ড সত্তা
১। নতুন মতানুসারে, দেশ ও কালকে দুটি পৃথক বা ভিন্ন সত্তা মনে করা ঠিক নয়। মূলত এরা
একই বিষয়ের দুটি দিক এবং সেটি হচ্ছে ‘গতি'। অতএব, ত্রিমাত্রাবিশিষ্ট দেশ এবং
একমাত্রাবিশিষ্ট কালের কোন সত্তা নেই। চারমাত্রাবিশিষ্ট দেশ-কালের
অস্তিত্ব আছে। দেশ ও কাল স্বতন্ত্র সত্তা নয়, এরা পরস্পরনির্ভর, অবিচ্ছিন্ন। তথাকথিত দেশ
স্বরূপত কালিক, আবার তথাকথিত কাল স্বরূপত দৈশিক। কাল হলো ঘটনার পারম্পর্য। কিন্তু
ঘটনাগুলি যদি কোন দেশে না ঘটে তবে সেই ঘটনা বাস্তব নয়, অলীক। ঘটনার পারম্পর্য
বুঝতে হলে তাদের দৈশিক অবস্থানের কথা ভাবতেই হবে। দেশে পৃথক বা বিচ্ছিন্নভাবে
অবস্থান না করলে কালে বস্তু বা ঘটনার পারম্পর্য বোঝা যায় না। অর্থাৎ কালের অস্তিত্ব
দেশসাপেক্ষ।
দেশ ও কাল হলো পরস্পর অবিচ্ছিন্ন এক অখন্ড সত্তা। অপরদিকে দেশের অস্তিত্ব
কালসাপেক্ষ। কালিক পরিবর্তন ছাড়া বস্তুর দৈশিক অবস্থান ব্যাখ্যা করা যায় না। যখন বলা
হয় একটা বস্তুস্থান পরিবর্তন করেছে, তখন তার অর্থ হলো যে, আগে বস্তুটি যে জায়গায় ছিল
বর্তমানে সে জায়গায় নেই। সুতরাং কালের ধারণা ছাড়া এই অবস্থানগত পরিবর্তন ব্যাখ্যা করা
যায় না। তাই দেশ ও কাল স্বতন্ত্র নয়, দেশ ও কাল হলো পরস্পর অবিচ্ছিন্ন এক অখন্ড সত্তা।
যখন আমরা দেশ ও কালকে স্বতন্ত্রভাবে ভাবি তখন এক অখন্ড সত্তা থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে দেখি।
দেশ ও কাল পর্যবেক্ষকের গতির উপর নির্ভরশীল
২। দেশ ও কালের প্রকৃতি পর্যবেক্ষকের অবস্থান ও গতির উপর নির্ভর করে। দেশ ও কাল
নিরপেক্ষ (ধনংড়ষঁঃব) বস্তু নয়, এরা হলো সাপেক্ষ (ৎবষধঃরাব)। এদের সম্বন্ধ ও পরিমাণ
পর্যবেক্ষকের গতি ও মানদন্ডের দ্বারা নিরূপিত হয়। অর্থাৎ পর্যবেক্ষকের অবস্থান ও তার
পরিমাপ প্রণালীকে বাদ দিলে দেশ ও কালের কোন অর্থই হয় না। একেই বলে দেশ-কালের
আপেক্ষিক তত্ত¡। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোন একজন পর্যবেক্ষক পৃথিবী থেকে এবং অন্য
একজন পর্যবেক্ষক মঙ্গল গ্রহ থেকে একই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন। এখন একই ঘটনার
দৈশিক ও কালিক অবস্থা দুই পর্যবেক্ষকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন বলে প্রতীয়মান হবে। কারণ দু'জন
দুটি ভিন্ন ভিন্ন দেশ এবং ভিন্ন ভিন্ন গতিতে ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
উপসংহার
আপেক্ষিকতাবাদ অনুসারে, দেশ ও কাল পর্যবেক্ষকের গতির উপর নির্ভর করলেও এরা ব্যক্তি
মনের ধারণামাত্র নয়। কান্টের মতে, দেশ ও কাল ব্যক্তিমনের আকার। কিন্তুবিজ্ঞানীরা দেশ
ও কালের আপেক্ষিকতা স্বীকার করলেও দেশ-কাল যে কেবলমাত্র ব্যক্তিমনের ধারণা তা
স্বীকার করেন না। তাঁদের বক্তব্য হলো দেশ ও কাল বস্তুগত এবং বাস্তব জগতেরই বৈশিষ্ট্য। এরা বাস্তব জগতের বাস্তব গুণ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। দেশ ও কাল সম্পর্কে নিউটন ও আইনস্টাইনের মতবাদের পার্থক্য আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। দেশের অস্তিত্ব সাপেক্ষ না নিরপেক্ষ বর্ণনা করুন।
২। আপেক্ষিকতাবাদ কী?
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। নিরপেক্ষতাবাদের প্রবক্তা হলেন
(অ) নিউটন (আ) আইনস্টাইন
(ই) মিকোস্কি (ঈ) হিউম
২। আপেক্ষিকতাবাদের প্রবক্তা হলেন
(অ) নিউটন (আ) হিউম
(ই) লক (ঈ) আইনস্টাইন
৩। নিরপেক্ষতাবাদের বক্তব্যÑ
(অ) দেশ কালের উপর নির্ভরশীল। (আ) কাল দেশের উপর নির্ভরশীল।
(ই) দেশ ও কাল একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
(ঈ) দেশ ও কাল একটি আর একটির উপর নির্ভরশীল নয়।
৪। ‘দেশ, কালসাপেক্ষ; কিন্তুকাল, দেশসাপেক্ষ নয়' এই বক্তব্যটি
(অ) নিরপেক্ষতাবাদের (আ) আপেক্ষিকতাবাদের
(ই) দু'টিই (ঈ) কোনটিই নয়
সত্য হলে ‘স', মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন।
১। পর্যবেক্ষকের অবস্থান ও পরিমাপ প্রণালীকে বাদ দিলে দেশ ও কালের কোন অর্থই হয়
না।
২। আপেক্ষিকতাবাদ অনুসারে, দেশ ও কাল ব্যক্তিমনের ধারণামাত্র।
৩। আপেক্ষিকতাবাদ অনুসারে, দেশ ও কাল দুটি ভিন্নসত্তা।
৪। কাল হলো কোন ঘটনার পারম্পর্য, কিন্তুঘটনাগুলি যদি কোন দেশে না ঘটে তবে তা
বাস্তব নয়।
সঠিক উত্তর
১। (অ) নিউটন ২। (ঈ) আইনস্টাইন ৩। (ঈ) দেশ ও কাল একটি আর একটির উপর
নির্ভরশীল নয়। ৪। (ঈ) কোনটিই নয়
১। স ২। মি ৩। মি ৪। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]