দ্রব্য সম্পর্কে ব্রাডলির মত ব্যাখ্যা দ্রব্য সম্পর্কে আধুনিক ভাষা-দার্শনিকদের মতামত ব্যাখ্যা করুন।

পূর্ববর্তী দার্শনিকদের দ্রব্য সম্পর্কীয় মতবাদের মধ্যে যে মতবাদটি গ্রহণযোগ্য ছিল তাহলো:
‘দ্রব্য ও গুণের মধ্যে এক অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক রয়েছে। দ্রব্য ছাড়া গুণ এবং গুণ ছাড়া দ্রব্য থাকতে
পারে না। দ্রব্য গুণের মধ্য দিয়েই আত্মপ্রকাশ করে এবং পরিপূর্ণতা লাভ করে।' কিন্তুআধুনিক
দার্শনিকগণ এই মতের বিরুদ্ধাচারণ করে নতুন নতুন মতবাদ প্রদান করেন। তাঁদের মধ্যে
ব্রাডলি, আলেকজান্ডার, রাসেল, হোয়াইটহেড ও যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী দার্শনিকদের নাম
উল্লেখযোগ্য। আমরা এখানে তাঁদের মতবাদগুলি আলোচনা করবো।
দ্রব্য সম্পর্কে ব্রাডলির মতবাদ
ব্রাডলির মতে, আমরা অভিজ্ঞতা বা বিচারবুদ্ধি কোনটির সাহায্যেই গুণের অতিরিক্ত কোন
দ্রব্যের সন্ধান পাই না। যদি অভিজ্ঞতার সাহায্যে বস্তুকে বিশ্লেষণ করি তাহলে সেই বস্তুর
গুণগুলি ছাড়া আর কিছুই পাই না। যেমন- চিনিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা মিষ্টত্ব, শুষ্কত্ব
প্রভৃতি গুণগুলি ছাড়া চিনির দ্রব্যত্ব বলে অতিরিক্ত কোন সত্তা পাই না। সুতরাং গুণাতিরিক্ত
কোন দ্রব্যের অস্তিত্ব অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায় না। আবার বুদ্ধির সাহায্যেও এই দ্রব্যকে জানতে
গেলে আমাদের হতাশ হতে হয়।
ব্রাডলির মতে, দ্রব্য ও গুণ এই আকারের সাহায্যে বস্তুস্বরূপকে জানা যায় না। দ্রব্য ও গুণের
ধারণার মধ্যে স্ববিরোধ বা আত্মবিরোধ আছে। যা স্ববিরোধযুক্ত তা কখনই সত্য হতে পারে
না। সুতরাং দ্রব্য ও গুণ কখনই বাস্তব তত্ত¡ হতে পারে না । ‘দুধ সাদা'-এই বচনে ‘দুধ' দ্রব্য
আর ‘সাদা' গুণ। এই বচনে দ্রব্য যদি গুণ থেকে একান্ত পৃথক হয়, তবে ‘দুধ সাদা'-একথা
বলা যায় না। আর যদি তারা একান্ত অভিন্ন হয়, তবে ‘দুধ সাদা' একথা বলার কোন অর্থ হয়
না। ‘রহিম রহিম'-এমন কথা কেউ বলে না। হয় দ্রব্য ও গুণ এক হবে, না হয় এরা পৃথক
হবে। কিন্তুযদি এই দুই সম্ভাবনার কোনটাই সম্ভব না হয়, তবে দ্রব্য ও গুণকে মিথ্যা ধারণাই
বলতে হয়। দ্রব্য গুণ থেকে পৃথকও হতে পারে না, আবার তা একও হতে পারে না। সুতরাং
দ্রব্য ও গুণ বাস্তব সত্য হতে পারে না। এরা প্রকাশ বা অবভাসমাত্র। ব্রাডলির মতে, শেষপর্যন্ত
অবশ্য সব অবভাসই চরম তত্ত¡ পরম সত্তার কোলে ঠাঁই পায়। পরম সত্তা কোন কিছুই মিথ্যা বা
তুচ্ছ বলে প্রত্যাখ্যান করে না। পূর্ণের মধ্যে সকল অপূর্ণেরই এক প্রকার সদগতি হয়।
সমালোচনা
ব্রাডলির মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর মতে, দ্রব্য ও গুণ মিথ্যা বা অবভাসমাত্র। আর পরম
সত্তা সৎ ও সত্য। যদি তাই হয় তাহলে তা অর্থাৎ অবভাস চরম তত্ত¡রূপ পরম সত্তার মধ্যে
স্থান পায় কি করে? সত্যের মধ্যে কি মিথ্যা থাকতে পারে? এই সব প্রশ্নের উত্তর ব্রাডলি
দেননি।
আবার ব্রাডলির মতে, দ্রব্য ও গুণ হয় এক হবে, না হয় তারা একান্তভাবেই পৃথক হবে। এই
দুই সম্ভাবনা ছাড়া ব্রাডলি তৃতীয় কোন সম্ভাবনার কথা স্বীকার করেননি। কিন্তুআমরা দ্রব্য ও
গুণের যে সম্পর্ক স্বীকার করি, তাতে এই তৃতীয় সম্ভাবনার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়। আমাদের
মতে, দ্রব্য ও গুণ একান্তভাবে একও নয়, আবার তারা একান্তভাবে পৃথকও নয়। দ্রব্য ও
গুণের মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্তে¡ও একটা ঐক্য আছে। গুণের বৈচিত্র্যের মধ্যেই দ্রব্যের ঐক্য
সম্যকভাবে বিকশিত ও পরিপূর্ণ হয়। সুতরাং দ্রব্য ও গুণের এই সম্পর্ক স্বীকার করলে ব্রাডলির মতবাদ গ্রাহ্য হতে পারে না।
আলেকজান্ডারের মতে দ্রব্য
আলেকজান্ডারের মতে, ‘দেশ-কাল বা শুদ্ধ গতিই হলো জগতের মূল উপাদান। এই বিশ্বের
সমস্ত বস্তুই শুদ্ধ গতির কোন না কোন পরিণতিবিশেষ। গতিই জাগতিক সমস্ত বস্তুর যথার্থ
সত্তা। সুতরাং কোন বস্তুই একেবারে গতিহীন হতে পারে না। তবে নিজের সীমার মধ্যে বস্তু
তার যে কাঠামো কম-বেশি বজায় রেখে চলে তাকেই দ্রব্য বলে। যে কোন বস্তুর দুটি দিক
থাকে, একটি তার স্থিতির দিক, অন্যটি হলো গতির দিক। বস্তুকে যখন স্থিতির দিক থেকে
দেখি তখন তার নাম দ্রব্য, আর যখন গতির দিক থেকে দেখি তখন তা কারণ।
রাসেলের মতে দ্রব্য
রাসেল বলেন, দ্রব্য বলে অতীন্দ্রিয় স্থায়ী কোন পদার্থ নেই। দ্রব্য নামক আকার সাধারণ
জ্ঞানের আলোচ্য বস্তুনামক ধারণার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। আধুনিককালে বিজ্ঞান
জড়দ্রব্য বলতে ঘটনার সমষ্টিকে বোঝে। রাসেলের মতে, বিশ্বের সরলতম উপাদান হচ্ছে
ঘটনা। ঘটনাই বিশ্বের সমস্ত বস্তুর একমাত্র একক। সমস্ত বস্তুই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে।
জগতের অপরিবর্তিত সত্তা বলে কিছুনেই। যাকে আমরা বহির্বিশ্বে বস্তুনামে অভিহিত করি তা
কতগুলি ঘটনার সমাহারমাত্র। সুতরাং দ্রব্য হলো একটি মৌলিক ধারণা, যার মাধ্যমে আমরা একটি বস্তুর ধারণাকে প্রকাশ করি।
হোয়াইটহেডের মতে দ্রব্য
হোয়াইটহেড কোন অপরিবর্তিত স্থায়ী সত্তার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। তিনি ঘটনার অস্তিত্ব
স্বীকার করেন এবং ঘটনা প্রবাহের নিবিড় সম্পর্কের কথা বলেন এবং দ্রব্যের প্রয়োজনীয়তাও
স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ব্যবহারিক প্রয়োজনেই আমরা কোন একটি বস্তুকে অপরিবর্তিত
ও অভিন্ন সত্তা বলে ধারণা করি, যদিও বস্তুটি অনবরত পরিবর্তিত হচ্ছে। সুতরাং পরিবর্তন,
সম্বন্ধ ও গুণের অতিরিক্ত কোন বস্তুগত স্থায়ী সত্তার অস্তিত্ব মনের কল্পনামাত্র। দ্রব্য হলো
আমাদের মনের বা জ্ঞানের পক্ষে একটি অবশ্যস্বীকার্য মৌলিক ধারণামাত্র।
আধুনিক ভাষা-দার্শনিকদের মতে দ্রব্য
আধুনিক ভাষা-দার্শনিকদের মতে, দ্রব্যের ধারণা একটি ভ্রান্ত ধারণা। গুণবাচক শব্দের
ব্যবহারের সময় কোন দ্রব্যবাচক শব্দের প্রয়োজন হয়। যদিও এই প্রয়োজন সম্পূর্ণভাবে ভাষার
প্রয়োজন, তবুও অনেক দার্শনিক ভুলবশত একে বাস্তব প্রয়োজন মনে করে বস্তুজগতে দ্রব্যের
সন্ধান করেছেন। বলা বাহুল্য, ভাষা-দার্শনিকদের মতে, এই সন্ধান শুধুভুলের সংখ্যা বৃদ্ধি
করেছে। অধ্যাপক এ. জে. এয়ার (অ.ঔ. অুবৎ)-এর মতে, সাধারণ ভাষা ব্যবহারের সময় বস্তু
(ঞযরহম) বা দ্রব্য (ঝঁনংঃধহপব) এই পদের ব্যবহার করা হয়। যেমন- ‘লবণ' হয় ‘নোনতা' -
এই বচনটিতে ‘লবণ' এই শব্দটি ব্যবহার করতে হয়। এটা ভাষার দিক থেকে প্রয়োজন। তাই
বলে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য গুণের বাস্তব অস্তিত্ব আছে -এমন সিদ্ধান্ত করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
সুতরাং তাঁদের মতে, দ্রব্য একটি অর্থহীন শব্দ, কারণ দ্রব্য শব্দের দ্বারা অভিজ্ঞতায় প্রমাণ করা যায় এমন কিছুই বোঝায় না।
সারাংশ
দ্রব্য সম্পর্কীয় মতবাদের ক্ষেত্রে আধুনিক দার্শনিকদের মধ্যে যারা উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন,
ব্রাডলি, আলেকজান্ডার, রাসেল, হোয়াইটহেড ও ভাষা-দার্শনিকগণ। ব্রাডলির মতে, দ্রব্য ও
গুণের ধারণার মধ্যে স্ববিরোধ রয়েছে। যা স্ববিরোধযুক্ত তা কখনই সত্য হতে পারে না।
সুতরাং দ্রব্য ও গুণ কখনই বাস্তব সত্য হতে পারে না। দ্রব্য ও গুণের ধারণা মিথ্যা বা
অবভাসমাত্র।
আলেকজান্ডারের মতে, নিজ সীমার মধ্যে বস্তুযে কাঠামো কম-বেশি বজায় রাখে তাকে দ্রব্য
বলে। রাসেলের মতে, দ্রব্য হলো একটি মৌলিক ধারণা যার মাধ্যমে আমরা একটি বস্তুর
ধারণাকে প্রকাশ করি। হোয়াইটহেডের মতে, দ্রব্য হলো মনের বা জ্ঞানের একটি অবশ্যস্বীকার্য
মৌলিক ধারণা।
আধুনিক ভাষা-দার্শনিকদের মতে, দ্রব্য হলো একটি অর্থহীন শব্দ। এই শব্দ শুধু ভাষা
ব্যবহারের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বাস্তবে বা অভিজ্ঞতায় দ্রব্য বলে কোন কিছুপাওয়া যায় না।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। দ্রব্য সম্পর্কে আধুনিক দার্শনিকদের মত ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। দ্রব্য সম্পর্কে ব্রাডলির মত ব্যাখ্যা করুন।
২। দ্রব্য সম্পর্কে আধুনিক ভাষা-দার্শনিকদের মতামত ব্যাখ্যা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। ‘‘নিজ সীমার মধ্যে চলতে গিয়ে বস্তুযে কাঠামো বজায় রাখে তাকে দ্রব্য বলে।''-একথা
বলেন
(অ) ব্রাডলি (আ) আলেকজান্ডার
(ই) রাসেল (ঈ) হোয়াইটহেড
২। ‘দ্রব্য হলো মনের অবশ্যস্বীকার্য একটি মৌলিক ধারণা'- উক্তিটি
(অ) ব্রাডলির (আ) রাসেলের
(ই) হোয়াইটহেডের (ঈ) ডেকার্টের
৩। ‘দ্রব্য ও গুণ বাস্তব সত্য নয়, এরা প্রকাশ বা অবভাসমাত্র'-এটি বলেন
(অ) ব্রাডলি (আ) রাসেল
(ই) আলেকজান্ডার (ঈ) এয়ার
৪। আধুনিক ভাষা-দার্শনিক হলেন
(অ) ডেকার্ট (আ) লক
(ই) এয়ার (ঈ) হিউম
সত্য হলে ‘স', মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন।
১। ব্রাডলির মতে, দ্রব্য হলো জ্ঞানের মৌলিক আকার।
২। রাসেলের মতে, দ্রব্য হলো অর্থহীন শব্দ।
৩। আলেকজান্ডারের মতে, দ্রব্য ও গুণের মধ্যে আত্মবিরোধিতা রয়েছে।
৪। রাসেলের মতে, বিশ্বের সরলতম উপাদান হচ্ছে ঘটনা।
সঠিক উত্তর
১। (আ) আলেকজান্ডার ২। (ই) হোয়াইটহেডের ৩। (অ) ব্রাডলি ৪। (ই) এয়ার
১। মি ২। মি ৩। মি ৪। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]