সার্বিক ধারণার প্রকৃতি সম্পর্কীয় মতবাদসমূহের মধ্যে নামবাদ একটি। নামবাদ অনুসারে
সার্বিক হলো নিছক নাম, নাম ছাড়া কিছুনয়। এই মতবাদের প্রবক্তা হলেন হবস্, বার্কলি
প্রমুখ দার্শনিকগণ। আমরা এখানে নামবাদ নিয়ে আলোচনা করবো।
নামবাদ (ঘড়সরহধষরংস)
নামবাদ অনুসারে সার্বিক নিছক নাম। সার্বিকের কোন বস্তুগত বা মনোগত অস্তিত্ব নেই।
শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ বস্তু বা ব্যক্তিরই অস্তিত্ব আছে; এগুলো ছাড়া এর অতিরিক্ত কোন
সার্বিকের অস্তিত্ব নেই। কাজ চালাবার জন্য যে নামের ব্যবহার করা হয় তাই হলো সার্বিক।
নামবাদীরা মনে করেন, যে কোন ধারণাই বিশেষ ধারণা। তাই সার্বিক ধারণার প্রকৃত কোন
অস্তিত্ব নেই। এক জাতীয় অনেক বিশিষ্ট ধারণাকে যখন আমরা কোন নাম দেই , তখন তাদের
মধ্যে যা সাধারণ তা হলো নামটুকুআর কিছুনয়।
বার্কলির মতে সার্বিক ধারণা
বার্কলির মতে, সার্বিক ধারণা হলো অমূর্ত ধারণা এবং অমূর্ত ধারণার অভিজ্ঞতা আমাদের
নেই। যে সমস্ত শব্দ ব্যবহার করে অমূর্ত ধারণা ব্যক্ত করা হয় তা শুধুই নাম। আসলে অমূর্ত
সার্বিক ধারণার অনুরূপ কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। মানুষ বলতে আমরা কোন না কোন বিশেষ
মানুষের ধারণা পাই। অর্থাৎ আমাদের মনের মধ্যে বিশেষ মানুষের ধারণা জেগে ওঠে। আমরা
এমন কোন মানুষের ধারণা করতে পারি না যা বিশেষ মানুষ নয়। তবুবিভিন্ন মানুষের
ধারণাকে একই নাম দেয়া হয়। একইভাবে আমরা এমন কোন বিশেষ বস্তুর ধারণা করতে
পারি না যা বিশেষ কোন বস্তুনয়। কোন এক শ্রেণীর অন্তর্গত বস্তুর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি
নির্দেশ করার জন্য যখন আমরা কোন শব্দের ব্যবহার করি তখন সেই শব্দের অনুরূপ কোন
বাস্তব বস্তুর অস্তিত্ব থাকে না। সুতরাং সার্বিক ধারণার মনোজগতে বা বস্তুজগতে কোথাও কোন
অস্তিত্ব নেই।
সার্বিক ধারণার এক বিশেষ অর্থে অস্তিত্ব আছে
বার্কলির মতে, কোন নাম বা শব্দকে একাধিক বিশেষ ধারণার চিহ্ণ বা সংকেতরূপে ব্যবহার
করা যেতে পারে এবং এই অর্থে ঐ নাম বা শব্দকে সার্বিক ধারণা হিসেবে গ্রহণ করা যেতে
পারে। যেমন ত্রিভুজের তিনটি কোণ মিলে দুই সমকোণ -এটি প্রমাণ করার জন্য কোন একটি
ত্রিভুজকে অন্যান্য সকল ত্রিভুজের প্রতিনিধিরূপে ব্যবহার করা হয়। কাজেই সার্বিক ধারণার
এক বিশেষ অর্থে অস্তিত্ব আছে। সার্বিক ধারণা আসলে বিশেষ ধারণা, কিন্তুএকই জাতীয়
অন্যান্য বিশেষ ধারণার প্রতিনিধিরূপে ব্যবহৃত হওয়ায় সার্বিক হয়ে পড়ে। আমরা এক জাতীয়
সব বিশেষ ধারণার জন্য একই নাম বা চিহ্ণ ব্যবহার করে থাকি। কিন্তুযেহেতুআমরা একই
নাম ব্যবহার করি সেহেতুআমরা মনে করি যে ঐ নামের অনুরূপ একটি অমূর্ত সার্বিক ধারণার
অস্তিত্ব আছে। কিন্তুআসলে তা নেই।
হবসের মতে সার্বিক ধারণা
হবসের মতে, কতগুলি নাম অনেকগুলি ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি সাধারণভাবে প্রযোজ্য হয়; যেমন
‘মানুষ', ‘থালা'। এই সাধারণ নামগুলিকেই সার্বিক ধারণা বলা হয়। তাঁর মতে, সার্বিক পদ
নামকে বুঝায়, সেই নামের দ্বারা যে বস্তু সূচিত হয় তাকে বোঝায় না। নাম হলো
সমষ্টিগতভাবে নেয়া অনেকগুলি বিশিষ্ট বস্তুর নাম। এসব বিশিষ্ট বস্তুর কোনটিই সার্বিক নয়।
তাছাড়া সার্বিক নাম কোন সার্বিক প্রত্যয়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। ‘সার্বিক' এই পদটি প্রকৃতিতে
অস্তিত্বশীল এমন কোন বস্তুর নাম নয় বা এমন কোন ধারণার নাম নয়, যা আমরা মনে গঠন
করি। সার্বিক হলো কোন শব্দ বা নামের নাম। যখন বলা হয় মানুষ তখন যে কোন মানুষকে
সার্বিক বলা যায় না , প্রকৃতপক্ষে তারা সার্বিক হতেও পারে না। মানুষ হলো সার্বিক নাম, যা
বহু বস্তুর বেলায় প্রযোজ্য হতে পারে।
সমালোচনা
(১) নামবাদীদের মতবাদ বিভিন্ন দার্শনিকগণ নানাভাবে সমালোচনা করেছেন। অনেক
দার্শনিকই মনে করেন, সার্বিক নিছক নাম নয়। সার্র্বিক ধারণা ছাড়া আমাদের চিন্তা
অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ চিন্তার বিষয়বস্তুসব সময়ই সার্বিক, কোন বিশিষ্ট বস্তুনয়।
(২) সম্পূর্ণ ভিন্ন বস্তুবা ব্যক্তিদের একই নামে অভিহিত করা যায় না। কোন এক শ্রেণীর
অন্তর্গত বিশেষ বিশেষ বস্তুকেই আমরা এক নামে অভিহিত করি। যেমন- ‘বৃক্ষ', ‘গরু',
‘মানুষ'। এক শ্রেণীর অন্তর্গত বিশেষ বিশেষ বস্তুর মধ্যে কোন সাধারণ ধর্ম না থাকলে
তাদের এক শ্রেণীভুক্ত করা যায় না। কয়েকটি বৃক্ষ ও কয়েকটি গরুকে আমরা কখনও
এক শ্রেণীভুক্ত করি না । সুতরাং কোন সাধারণ ধর্ম উপস্থিত থাকলেই আমরা কতগুলি
বস্তুকে এক শ্রেণীভুক্ত করি। বিভিন্ন বস্তুকে সাদৃশ্যের ভিত্তিতেই এক শ্রেণীভুক্ত করা হয়।
কিন্তু যদি কোন সাধারণ বৈশিষ্ট্য না থাকে তাহলে তাদের সাদৃশ্য নিরূপিত হবে
কিভাবে?
(৩) হস্পার্স নামবাদের সমালোচনা করে বলেন, যখন আমরা কোন বস্তুকে নীল বা লাল বলি
তখন আমরা কতগুলি বস্তুর কথা বলি না। আমরা বস্তুর একটা বৈশিষ্ট্যের কথা বলি,
এমন একটা বৈশিষ্ট্য যা বস্তুর সাথে অভিন্ন নয়। ‘নীল জামা' আর নীল অভিন্ন নয়।
আমরা এমন একটা বৈশিষ্ট্যের কথা বলি যা বস্তুটির আছে এবং অন্যান্য বস্তুরও থাকতে
পারে অর্থাৎ এমন একটি ধর্ম, বহু বস্তুযার অংশীদার হতে পারে। আর একথা বলার
অর্থ ব্যক্তি নিরপেক্ষ অস্তিত্বশীল ধর্মের কথা বলা। অর্থাৎ বস্তুআছে, বস্তুর ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য
আছে, বহু বস্তুসাধারণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
সারাংশ
সার্বিক ধারণার প্রকৃতি সম্পর্কীয় যে তিনটি মতবাদ রয়েছে তার মধ্যে নামবাদ একটি। নামবাদ
একটি চরমপন্থী মতবাদ। এ মতের প্রবক্তা হলেন হবস্, বার্কলি প্রমুখ দার্শনিকবৃন্দ। এ
মতবাদ অনুসারে, সার্বিক ধারণা নিছক নাম ছাড়া আর কিছুই নয়। এর মনোগত বা বস্তুগত
কোন রূপ অস্তিত্বই নেই। বার্কলির মতে, সার্বিক ধারণা হলো অমূর্ত ধারণা, যার অভিজ্ঞতা
আমাদের নেই। তিনি আরো বলেন, সার্বিক ধারণার মনোজগতে বা বস্তুজগতে কোথাও কোন
অস্তিত্ব নেই। হবসের মতে, কতগুলি নাম অনেকগুলি ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি সাধারণভাবে
প্রযোজ্য হয়। এই সাধারণ নামগুলিকেই সার্বিক ধারণা বলে। সার্বিক ধারণার কোন অস্তিত্ব
নেই। সার্বিক হলো কোন শব্দ বা নামের নাম।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সার্বিক ধারণার প্রকৃতি সম্পর্কীয় মতবাদ হিসেবে নামবাদ ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। সার্বিক ধারণা সম্পর্কে বার্কলির মতবাদ ব্যাখ্যা করুন।
২। সার্বিক ধারণা সম্পর্কে হবসের মতবাদ আলোচনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। নামবাদের প্রবক্তা হলেন
(অ) বার্কলি (আ) হবস্
(ই) লক (ঈ) হবস্ ও বার্কলি
২। সার্বিক ধারণার এক বিশেষ অর্থে অস্তিত্ব আছে -কথাটি
(অ) বার্কলির (আ) হবসের
(ই) ডেকার্টের (ঈ) প্লেটোর
৩। সার্বিক হলো অমূর্ত ধারণা - কথাটি বলেন
(অ) লক (আ) প্লেটো
(ই) হবস্ (ঈ) বার্কলি
৪। সার্বিক হলো কোন শব্দ বা নামের নাম - কথাটি বলেন
(অ) অ্যারিস্টটল (আ) সক্রেটিস
(ই) হবস্ (ঈ) বার্কলি
সত্য হলে ‘স', মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন।
১। নামবাদ একটি চরম মতবাদ।
২। নামবাদের প্রবক্তা লক।
৩। হবস্ বলেন, সার্বিক নাম কোন সার্বিক প্রত্যয়ের প্রতিনিধিত্ব করে না।
৪। বার্কলি বলেন, কোন নাম বা শব্দকে একাধিক বিশেষ ধারণার চিহৃ বা সংকেতরূপে
ব্যবহার করা যেতে পারে।
সঠিক উত্তর
১। (ঈ) হবস্ ও বার্কলি ২। (অ) বার্কলির ৩। (ঈ) বার্কলি ৪। (ই) হবস্
১। স ২। মি ৩। স ৪। স
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত