কারণের সংজ্ঞা দিন। “কারণ কতগুলি শর্তের সমষ্টি”Ñ ব্যাখ্যা করুন।

আমরা জানি, এ জগতে কোন কার্য কোন কারণ ছাড়া সংঘটিত হয় না। এমন কোন ঘটনা ঘটে
না, যার কোন কারণ নেই; অর্থাৎ প্রতিটি কাজেরই কারণ থাকে। দুটি ঘটনার মধ্যে যেটি আগে
ঘটে তাকে আমরা কারণ, আর যেটি পরে ঘটে তাকে আমরা কার্য বলি। এই কারণ আবার
কতগুলি শর্তের সমাহার। অনেকগুলি শর্ত মিলে একটি কারণ হয়। আমরা এখানে কারণ ও
শর্ত নিয়ে আলোচনা করবো।
কারণ
আমরা জাগতিক বস্তুও ঘটনার যে পারস্পরিক সম্পর্ক দেখতে পাই তা বিভিন্ন রকম হতে
পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক সাধারণ সংযোগ সম্পর্কমাত্র। যেমন আমরা কাকের যে কাল
রং দেখতে পাই তা একটা সাধারণ সংযোগ সম্পর্ক। কারণ কাল রং এর সাথে কাকের এমন
কোন সম্পর্ক নেই যে সব কাককে কাল হতেই হবে। আবার আকাশে ধূমকেতুউঠলো, রাজা
মারা গেলেন। আকাশের ধূমকেতুর সাথে রাজার মৃত্যুর সম্পর্ক একান্তভাবেই আকস্মিক।
আকাশে ধূমকেতুদেখা দেয়া সত্তে¡ও রাজা মারা না গেলে আমরা আশ্চর্য হতাম না। কিন্তু
আগুনের সামনে ঘি রাখলে যদি তা না গলে তবে সত্যিই আশ্চর্য হই। আগুনে হাত দিলাম
অথচ হাত পুড়লো না তা কখনই হতে পারে না। আবার বৃষ্টি হয় অথচ মাটি ভিজে না-এমনটা
আমরা আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখিনি এবং ভবিষ্যতে দেখব বলেও আশা করি না। এই রকমের
ব্যতিক্রমহীন অপরিবর্তনীয় সম্পর্কগুলিকে সাধারণ সম্পর্ক বলা যায় না। এই ধরনের
সম্পর্ককে বলা হয় কার্যকারণ সম্পর্ক।
দুটি ঘটনার মধ্যে যে ঘটনাটি আগে ঘটে তাকে কারণ এবং যে ঘটনাটি পরে ঘটে তাকে কার্য
বলে। অর্থাৎ যে ঘটনাটির জন্য অন্য ঘটনাটি ঘটে তাকে কারণ এবং যেটি ঘটে তাকে কার্য
বলে। যেমন বৃষ্টি হলে মাটি ভিজে। এখানে বৃষ্টি কারণ, আর মাটি ভিজা কার্য।
বিজ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবনে কার্যকারণ সম্পর্ক
বিজ্ঞান ও দর্শন উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকারণ সম্বন্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
কখনও কখনও বলা হয় যে, আধুনিক বিজ্ঞান কার্যকারণ সম্পর্ক স্বীকার করে না । তার অর্থ
এই যে, কার্যকারণ সম্পর্ক নিয়ে একটি বিশিষ্ট দার্শনিক মত আধুনিক বিজ্ঞান মানে না।
সাধারণ মানুষ ও বিজ্ঞান এক অর্থে কার্যকারণ সম্পর্ক কখনই পরিত্যাগ করতে পারে না। জ্ঞাত
বিষয় থেকে অজ্ঞাত বিষয় অনুমান করা যেমন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে দরকার তেমনি দরকার
সাধারণ মানুষের জীবনে। এই অনুমান করা না গেলে বিজ্ঞান ও জীবন উভয়ই অচল।
কার্যকারণ সম্পর্ক আর যাই বোঝাক না কেন, তা জ্ঞাত ক্ষেত্রে যা ঘটেছে অজ্ঞাত ক্ষেত্রেও তাই
ঘটবে, এমন অনুমান যে করা যায় তা বোঝায়। এরূপ অনুমান করতে না পারলে জীবনে কোন
পরিকল্পনাই করা যায় না, বিজ্ঞানে সার্বিকীকরণ সম্ভব হয় না। বিজ্ঞানের
ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক আরোহানুমানের ভিত্তি, আর সাধারণ জীবনে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ধারণা
একমাত্র কার্যকারণ সম্পর্কের সাহায্যেই করা যায়। এই বিশ্বে যে সমস্ত পরিবর্তন আমরা
দেখতে পাই, তার ব্যাখ্যা একমাত্র কারণের সাহায্যেই দেয়া যায়। সুতরাং পরিবর্তনের ব্যাখ্যার জন্যও কারণ আবশ্যক।
শর্ত
কারণ কতগুলি শর্তের সমষ্টি
কারণ ছাড়া কার্য হয় না। কিন্তুকারণ কতগুলি শর্তের সমষ্টি। কোন লোক ছাদ থেকে পড়ে
মারা গেল। এক্ষেত্রে ছাদ থেকে পড়া ঐ লোকের মৃত্যুর কারণ বলতে আমরা ছাদ থেকে
পড়াই বুঝি। কিন্তুএকটুচিন্তা করলে বুঝতে পারি, যদি ছাদটি উঁচুনা হত, অথবা পড়ার সময়
সে যদি সানশেডে আটকে যেত অথবা যেখানে পড়লো সেখানকার মাটি যদি খুব নরম হত
কিংবা লোকটির আঘাত যদি গুরুতর না হত, তবে সে নাও মারা যেতে পারত। সুতরাং
আপাতঃদৃষ্টিতে যেটিকে কারণ বলে মনে হয় সূক্ষ¥ভাবে বিচার করলে সেটিকে কারণ বলা
সঙ্গত হয় না। উঁচুছাদ থেকে পড়া, কোন কিছুতে বাধা না পাওয়া, যে মাটিতে পড়েছে সে
মাটি অত্যন্ত কঠিন হওয়া, গুরুতর আঘাত পাওয়া ইত্যাদি শর্তগুলি ছাদ থেকে পড়া লোকটির
মৃত্যুর কারণ।
শর্ত নানা রকম হতে পারে। তবে কোন রকমের শর্ত বা শর্তসমষ্টি কারণ আমরা তা এখন
আলোচনা করবো।
আবশ্যিক শর্ত
যদি দুটি ঘটনা ক ও খ হয় এবং যদি ক না ঘটে তবে যদি খ না ঘটে, এমন হয় তবে ক, খ
এর আবশ্যিক শর্ত। তবে ক ঘটলেও খ নাও ঘটতে পারে। যেমন, আগুন জ্বলা ধোঁয়া হওয়ার
আবশ্যিক শর্ত। কারণ আগুন না জ্বললে ধোঁয়া হয় না, তবে আগুন জ্বললেও ধোঁয়া নাও হতে পারে। একই ঘটনার একাধিক আবশ্যিক শর্ত থাকতে পারে। যেমন ধোঁয়া তৈরির একটি
আবশ্যিক শর্ত আগুন জ্বলা, আর একটি ভিজে জ্বালানি।
পর্যাপ্ত শর্ত
যদি ক ও খ এই দুটি ঘটনা এমন হয় যে, ক ঘটলে খও ঘটে, আবার ক না ঘটলেও খ ঘটে,
তবে ক, খ এর পর্যাপ্ত শর্ত । যেমন দুর্ঘটনা মৃত্যুর পর্যাপ্ত শর্ত। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হতে পারে,
আবার দুর্ঘটনা না হলেও মৃত্যু হতে পারে। যেমন রোগভোগেও মৃত্যু হতে পারে। একই
ঘটনার একাধিক পর্যাপ্ত শর্ত থাকতে পারে। যেমন মৃত্যুর একটি পর্যাপ্ত শর্ত দুর্ঘটনা, একটি
রোগভোগ, আর একটি বার্ধক্য।
পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত
যদি দুটি ঘটনা ক ও খ এমন হয় যে, যদি ক ঘটে তবে খ ঘটে এবং যদি ক না ঘটে তবে খও
ঘটে না, তবে ক খ এর পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত। ভিজা জ্বালানিতে আগুন লাগানো ধোঁয়া হওয়ার
পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত। ভিজা জ্বালানিতে আগুন দিলেই ধোঁয়া হয়, না দিলে ধোঁয়া হয় না।
অনেক সময় কারণ বলতে আবশ্যিক শর্তকে বোঝায়। আবার অনেক সময় কারণ বলতে
পর্যাপ্ত শর্তকে বোঝায়। তবে কারণ বলতে যদি আবশ্যিক শর্তকে বোঝান হয়, তাহলে কার্য
থেকে কারণে যাওয়া যায়, কিন্তুকারণ থেকে কার্যে যাওয়া যায় না। আবার কারণ বলতে যদি
পর্যাপ্ত শর্তকে বোঝান হয়, তবে কারণ থেকে কার্যে যাওয়া যায়, কিন্তুকার্য থেকে কারণে
যাওয়া যায় না। কিন্তুকারণ বলতে যখন পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্তকে বোঝান হয়, তখন কারণ
থেকে কার্যে এবং কার্য থেকে কারণে যাওয়া যায়। এরূপ ক্ষেত্রে কারণ বলতে কার্যের
অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনাকে বোঝায় এবং কার্য বলতে কারণের অব্যবহিত পরবর্তী ঘটনাকে
বোঝায়। সুতরাং আমরা বলতে পারি কারণ হলো কার্যের অব্যবহিত পূর্ববতী পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত বা শর্তের সমষ্টি। আর শর্ত হলো কারণের অংশবিশেষ।
সারাংশ
কারণ হলো কার্যের অব্যবহিত পূর্ববর্তী পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত বা শর্তের সমষ্টি। কার্য হলো
কারণের শর্তহীন অপরিবর্তনীয় অব্যবহিত পরবর্তী ঘটনা। শর্ত হলো কারণের অংশবিশেষ।
শর্ত নানা রকমের হতে পারে। তবে আবশ্যিক শর্ত, পর্যাপ্ত শর্ত ও পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত বা শর্তসমষ্টি কারণ হতে পারে।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। কারণের সংজ্ঞা দিন। “কারণ কতগুলি শর্তের সমষ্টি”Ñ ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। আবশ্যিক শর্ত কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।
২। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্কের গুরুত্ব আলোচনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। কারণ হলো
(অ) পূর্ববর্তী ঘটনা (আ) পরবর্তী ঘটনা
(ই) অব্যবহিত পূর্ববর্তী পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত বা শর্তের সমষ্টি
(ঈ) পূর্ববর্তী শর্ত
২। দুটি ঘটনার মধ্যে যদি এমন সম্পর্ক থাকে যে একটি না ঘটলে অন্যটি ঘটে না তাহলে
প্রথমটিকে দ্বিতীয়টির
(অ) শর্ত বলে (আ) আবশ্যিক শর্ত বলে
(ই) পর্যাপ্ত শর্ত বলে (ঈ) কার্য বলে
৩। যে শর্ত একাই একটি কাজ ঘটাতে পারে তাকে বলে
(অ) আবশ্যিক শর্ত (আ) পর্যাপ্ত শর্ত
(ই) সাধারণ শর্ত (ঈ) শর্ত
৪। কোন ঘটনার শর্তহীন, অপরিবর্তনীয়, অব্যবহিত পরবর্তী ঘটনাকে বলে
(অ) কার্য (আ) কারণ
(ই) কার্যকারণ সম্পর্ক (ঈ) শর্ত
সত্য হলে ‘স', মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন।
১। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
২। শর্ত হলো কারণের সমষ্টি।
৩। কতগুলি শর্ত মিলে হয় কার্য।
৪। যখন একটি শর্ত একাই একটি কার্য ঘটাতে পারে তখন তাকে পর্যাপ্ত শর্ত বলে।
সঠিক উত্তর
১। (ই) অব্যবহিত পূর্ববর্তী পর্যাপ্ত আবশ্যিক শর্ত বা শর্তের সমষ্টি ২। (আ) আবশ্যিক
শর্ত বলে ৩। (আ) পর্যাপ্ত শর্ত ৪। (অ) কার্য
১। স ২। মি ৩। মি ৪। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]