কতিপয় আধুনিক দার্শনিক কার্যকারণ তত্ত¡ নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন। এদের
অধিকাংশ আলোচনাই আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তাঁরা
হিউম ও কান্টের মতবাদের সমালোচনা করে তাঁদের নিজস্ব মতবাদ প্রদান করেন। এই সমস্ত
দার্শনিকদের মধ্যে হোয়াইটহেড, আলেকজান্ডার, রাসেল, ব্রাডলি অন্যতম। আমরা এখানে
তাঁদের মতসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধরবো।
হোয়াইটহেডের মতে কার্যকারণ তত্ত¡
হোয়াইটহেড হিউম ও কান্টের কার্যকারণ তত্তে¡র সমালোচনা করে তাঁর নিজের মতবাদ প্রদান
করেন। তিনি বলেন, তাঁরা উভয়েই প্রকৃতিকে খন্ড খন্ড করে দেখেছেন, তাই অভিজ্ঞতালব্ধ
ঘটনার মধ্যে প্রকৃত কোন কার্যকারণ তত্তে¡র সন্ধান পাননি। হিউম পরস্পরবিচ্ছিন্ন খন্ড খন্ড
সংবেদনকেই একমাত্র সত্য বলে স্বীকার করেছেন। আর কান্টের মতে, কার্যকারণ সম্বন্ধের যে
অনিবার্যতা সেটি আসে বিষয় থেকে নয়, আমাদের মন থেকে।
হোয়াইটহেডের মতে, সত্তার বৈশিষ্ট্য হলো ক্রমিক গতি (চৎড়পবংং) এবং এই গতি পথে প্রতিটি
বস্তুই প্রতিটি বস্তুর সাথে সম্পর্কযুক্ত। কার্যকারণ সম্বন্ধ হলো বস্তুগত সম্বন্ধ। এই সম্বন্ধ দুটি
ঘটনার মধ্যেই আমরা প্রত্যক্ষ করি-পূর্ববর্তী ঘটনা হলো কারণ এবং অনুবর্তী ঘটনা হলো কার্য।
কার্য ও কারণের মধ্যে অবিচ্ছিন্নতা রয়েছে। কার্যকারণ দুটি পরস্পর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
আলেকজান্ডারের মতে কার্যকারণ তত্ত¡
আলেকজান্ডার সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কার্যকারণ তত্ত¡ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, কারণ বস্তুর
আকারবিশেষ। তাঁর মতে, গতিই (গড়ঃরড়হ) হলো পরম সত্তা, গতিই হলো দেশ-কাল। বস্তু
দেশ-কাল বা গতির এক জটিল সংগঠন (ঈড়সঢ়ষবী)। প্রত্যেক বস্তুর দুটি দিক আছে, একটি
স্থিতির দিক, আর একটি গতির দিক। বস্তুযখন স্থির থাকে তখন তাকে বলা হয় ‘দ্রব্য', আর
যখন গতির মধ্যে থাকে তখন তাকে বলা হয় কারণ।
রাসেলের মতে কার্যকারণ তত্ত¡
কার্যকারণ সম্পর্ক পারস্পরিক সম্পর্ক ছাড়া কিছুই নয়। কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে
দেখা যায়, এ কেবলমাত্র পরিমাণগত পারস্পরিক সম্পর্ক (য়ঁধহঃরঃধঃরাব পড়-ৎবষধঃরড়হ)। কারণ
কার্যকে নিশ্চিতভাবে উৎপন্ন করে-এমন নিশ্চয়তা কার্যকারণ সম্পর্কের মধ্যে নেই।
ব্রাডলির মতে কার্যকারণ তত্ত¡
ব্রাডলির মতে, কার্যকারণ সম্পর্ক এমন এক সম্পর্ক যা প্রকৃতপক্ষে কোন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা
করতে পারে না। কারণ যদি কার্যের সাথে অবিচ্ছিন্ন হয় তাহলে কার্য ও কারণের মধ্যে পার্থক্য
করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার কারণ কার্যের সাথে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে পারে না। কার্য
উৎপন্ন করার জন্য কারণকে অপরের উপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তুকারণের কার্য উৎপন্ন
করার জন্য যদি এই তৃতীয় বিষয়টির প্রয়োজন হয় তাহলে তৃতীয় বিষয়টিরও একটি চতুর্থ
বিষয়ের প্রয়োজন হবে। এভাবে অনবস্থা দোষের উদ্ভব হবে। সুতরাং
কারণের মধ্যে আত্মবিরোধ রয়েছে।
সমালোচনা
(১) হোয়াইটহেড কার্যকারণ সম্পর্ককে অনিবার্য সম্পর্ক হিসেবে স্বীকার করে সম্পর্কের এক
বিশেষ বৈশিষ্ট্যকেই স্বীকার করে নিয়েছেন। আলেকজান্ডার ও রাসেল কার্যকারণ
সম্পর্ককে অনিবার্য সম্পর্করূপে স্বীকার করে নেননি। কিন্তু হিউমের মতবাদের
সমালোচনা করার সময় আমরা দেখেছি যে, কার্যকারণ সম্পর্ক অনিবার্য সম্পর্ক।
(২) ব্রাডলির মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ তিনি মনে করেন যে, কার্যকারণ হলো দুটি পদ।
কার্যকারণ হলো সম্পর্ক, একে পদরূপে গণ্য করলে অনবস্থা দোষের সৃষ্টি হবে। স্টেবিং
(ঝঃবননরহম) এ বিষয়ে অত্যন্ত চমৎকার কথা বলেন, কার্যকারণ সম্বন্ধটি দুটি পদ, এটি
সম্বন্ধ নয় বরং সম্বন্ধযুক্ত দুটি পদ। দুটি ঘটনা স্বতন্ত্র হয়েও কার্যকারণ সম্পর্কযুক্ত হয়,
যেহেতুএভাবে সম্পর্কযুক্ত হওয়া তাদের ধর্ম। সুতরাং কার্যকারণ সম্পর্কের পক্ষে দুটি
ঘটনাকে কার্যকারণ সম্পর্কযুক্ত করার পথে কোন বাধা নেই।
সারাংশ
কার্যকারণ তত্ত¡ সম্বন্ধে যারা আধুনিক মতবাদ প্রদান করেছেন তাঁদের মধ্যে হোয়াইটহেড,
আলেকজান্ডার, রাসেল, ব্রাডলি উল্লেখযোগ্য।
(১) হোয়াইটহেডের মতে, কার্যকারণ সম্বন্ধ হলো বস্তুগত সম্বন্ধ। এই সম্বন্ধ দুটি ঘটনার
মধ্যেই আমরা প্রত্যক্ষ করি-পূর্ববর্তী ঘটনাকে বলা হয় কারণ এবং অনুবর্তী ঘটনাকে
বলা হয় কার্য। কার্যকারণের মধ্যে অবিচ্ছিন্নতা রয়েছে।
(২) আলেকজান্ডারের মতে, কারণ বস্তুর আকারবিশেষ। তাঁর মতে, গতিই হলো পরম সত্তা,
গতিই হলো দেশ-কাল। বস্তুদেশ-কাল বা গতির এক জটিল সংগঠন (পড়সঢ়ষবী)।
প্রত্যেক বস্তুর দুটি দিক আছে, একটি স্থির দিক, আর একটি গতিয়মান দিক। বস্তুর
গতিয়মান দিককে বলা হয় কারণ।
(৩) রাসেলের মতে, কার্যকারণ সম্পর্ক পারস্পরিক সম্পর্ক ছাড়া কিছুই নয়। কার্যকারণ
সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ কেবলমাত্র পরিমাণগত পারস্পরিক সম্পর্ক।
(৪) ব্রাডলির মতে, কার্যকারণ সম্পর্ক এমন এক সম্পর্ক যা প্রকৃতপক্ষে কোন সম্পর্ক
প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। কার্যকারণ তত্ত¡ সম্পর্কে আধুনিক দার্শনিকদের মতবাদ ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। হোয়াইটহেডের কার্যকারণ সম্পর্কীয় মত ব্যাখ্যা করুন।
২। ব্রাডলির কার্যকারণ তত্ত¡ সম্পর্কীয় ধারণা ব্যাখ্যা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। বস্তুর গতিয়মান দিককে বলা হয় কারণ -এ কথা বলেন
(অ) হোয়াইটহেড (আ) আলেকজান্ডার
(ই) রাসেল (ঈ) ব্রাডলি
২। কার্যকারণ তত্ত¡ সম্পর্কে আধুনিক মতবাদ প্রদান করেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
(অ) হোয়াইটহেড, আলেকজান্ডার, রাসেল, ব্রাডলি
(আ) কান্ট, হিউম, ব্রাডলি
(ই) এয়ার, মিল, কান্ট (ঈ) হেগেল, রাসেল, মিল
৩। হোয়াইটহেডের মতে, কার্যকারণ সম্বন্ধ হলো
(অ) বাহ্যিক (আ) মানসিক
(ই) আত্মিক (ঈ) বস্তুগত
৪। রাসেলের মতে কার্যকারণ সম্বন্ধ হলো
অ) গুণগত পারস্পরিক সম্পর্ক আ) গুণগত অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক
ই) পরিমাণগত পারস্পরিক সম্পর্ক ঈ) পরিমাণগত অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক
সত্য হলে ‘স', মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন।
১। কার্যকারণ তত্তে¡র আলোচনায় আধুনিক দার্শনিকের মধ্যে কান্ট উল্লেখযোগ্য।
২। কার্যকারণ সম্পর্কীয় আধুনিক মত আধুনিক বৈজ্ঞানিক সত্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে
উঠেছে।
৩। কার্যকারণ তত্ত¡ সম্পর্কে হোয়াইটহেড হিউমের মতবাদে বিশ্বাসী।
৪। আলেকজান্ডারের মতে, বস্তুর গতিয়মান অবস্থাই হলো কারণ।
সঠিক উত্তর
১। (আ) আলেকজান্ডার ২। (অ) হোয়াইটহেড, আলেকজান্ডার, রাসেল, ব্রাডলি
৩। (ঈ) বস্তুগত ৪। ই) পরিমাণগত পারস্পরিক সম্পর্ক
১। মি ২। স ৩। মি ৪। স
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত