অদৃষ্টবাদের মূল বক্তব্য কী? অদৃষ্টবাদের সমর্থক কারা? মুসলিম দর্শনে কারা অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী? তাঁদের বক্তব্য কী?

পূর্ববর্তী তিনটি ইউনিটে আমরা যথাক্রমে দর্শনের প্রকৃতি ও পরিসর, তার পদ্ধতি এবং
বিভিন্ন বিষয়ের সাথে তার পারস্পরিক সম্পর্ক জানার চেষ্টা করেছি। বর্তমান ইউনিটে
আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো। মানুষের ইচ্ছা স্বাধীন
না নিয়ন্ত্রিত?
মানুষের জীবন কর্মময়। এই কর্মের ক্ষেত্রে মানুষের কতটুকু স্বাধীনতা রয়েছে? বিভিন্ন
কর্মের মধ্যে কিংবা দুটি বিরোধী কর্মের মধ্যে যে কোনো একটিকে নির্বাচন করার
স্বাধীনতা ব্যক্তির রয়েছে কিনা? অন্যকথায়, কর্ম নির্বাচন বা বাছাই-এর ক্ষেত্রে মানুষের
ইচ্ছা স্বাধীন কিনা? এ এক সঙ্গত প্রশ্ন। কর্মের পেছনে মানুষের যে ইচ্ছা সক্রিয় থাকে তা
স্বাধীন না হলে মানুষের কাজের ভাল-মন্দ মূল্যায়ন করা যায় না। ইচ্ছার স্বাধীনতা না
থাকলে মানুষকে শাস্তি বা পুরস্কার কোনোটিই দেয়া সম্ভব নয়। ইচ্ছার স্বাধীনতা সংক্রান্ত
উল্লেখযোগ্য দার্শনিক মতবাদগুলো এ ইউনিটে আলোচিত হয়েছে। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কীয় সমস্যাটি দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও চিত্তাকর্ষক সমস্যা।
দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটাতে আমরা কত কাজ করি। এই কাজ আমরা স্কেচ্ছায় করি, না বাধ্য
হয়ে করি, তা এক জটিল প্রশ্ন। স্বাধীনতা বলতে প্রকৃতপক্ষে কি বোঝায় এবং সে অর্থে মানুষ
কতটুকু স্বাধীন? এ নিয়ে দার্শনিকগণ একমত হতে পারেননি। ফলে নানা মতবাদের উদ্ভব
হয়েছে। ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কীয় মতবাদ হিসেবে আমরা ৪টি মতবাদ পাই :
১) অদৃষ্টবাদ
২) অনিয়ন্ত্রণবাদ
৩) নিয়ন্ত্রণবাদ
৪) স্বনিয়ন্ত্রণবাদ
অদৃষ্টবাদ
যে মতবাদ অদৃষ্ট বা ভাগ্যে বিশ্বাস করে তাকে অদৃষ্টবাদ বলা হয়। এ মতানুসারে, যা কিছু
ঘটে তা সবই পূর্বনির্ধারিত। কোনো ঘটনাকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা মানুষের নেই। এ
মতবাদের মূল বক্তব্য হলো, যা হবার তা হবেই, মানুষের পক্ষে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
এই মতবাদ, মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা পুরোপুরি অস্বীকার করে। শুধু মানুষের ইচ্ছাই নয়,
প্রকৃতির মধ্যে এমন কিছুই নেই যার স্বাধীনতা এই মতবাদ স্বীকার করে। তাই উইলিয়াম
জেমস্ এই মতবাদকে কঠোর নিয়ন্ত্রণবাদ বলে অভিহিত করেন।
অদৃষ্টবাদ মূলত একটি ধর্মতাত্তি¡ক মতবাদ। ধর্ম-বিশ্বাসী মানুষ মনে করে, তার কর্ম পূর্ব-
নির্ধারিত যা লঙ্ঘন করা যায় না। এই অল ঘনীয় কর্ম ভাগ্য বা অদৃষ্ট নামে অভিহিত।
ভারতীয় দর্শনের ‘দৈব’ এবং মুসলিম দর্শনের ‘তকদীর’ এই ভাগ্য বা অদৃষ্ট অর্থেই ব্যবহৃত
হয়।
ইচ্ছার স্বাধীনতা : জাবারিয়া ও কাদারিয়া সম্প্রদায়
মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে কিনা? এ নিয়ে মুসলিম দর্শনের দুই সম্প্রদায় জাবারিয়া ও
কাদারিয়াদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক দেখা যায়। জাবারিয়াদের মতে, তকদীর অর্থাৎ ভাগ্য
পূর্বনির্ধারিত। তাঁরা মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তাঁদের মতে, আল্লাহ্ পাঠ - ১
সর্ব শক্তিমান এবং সমগ্র পৃথিবীর একমাত্র শাসক। আল্লাহ্র ইচ্ছার বাইরে সসীম মানুষের
স্বতন্ত্র ইচ্ছা বলে কিছু নেই, থাকতে পারে না। তাঁদের মতে, আল্লাহ্ স্বেচ্ছাচারী শাসক।
তাঁদের মতের বিরোধিতা করে কাদারিয়া সম্প্রদায় বলেন, মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে এবং
এই স্বাধীনতা আছে বলেই মানুষের কর্মের বিচার হবে। আল্লাহ্ স্বেচ্ছাচারী শাসক নন। তিনি ন্যায়বিচারক।
ইচ্ছার স্বাধীনতা : পাশ্চাত্য ধর্ম দর্শন
পাশ্চাত্য ধর্ম দর্শনেও অদৃষ্টবাদের জোর সমর্থন লক্ষ্য করা যায়। ক্যালভিনপন্থীরা বিশ্বাস করে,
ঈশ্বর সব কিছুর চ‚ড়ান্ত কর্তা এবং মানুষ তাঁর উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। এজন্যই মানুষের
উচিত সর্বদা ঈশ্বরের দয়া ও করুণা লাভের চেষ্টা করা।
সমালোচনা
১) অদৃষ্টবাদ দর্শনের ইতিহাসে কখনই তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রভাবশালী মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা
পায়নি। এটি মূলত একটি ধর্মতাত্তি¡ক মতবাদ বা জনপ্রিয় লোকজ বিশ্বাস। একটি সিদ্ধান্ত
গ্রহণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই
বলে তাকে অদৃষ্টের লিখন বলে অভিহিত করা যায় না। একে নিয়ন্ত্রণ বা আত্মনিয়ন্ত্রণ বলা
যেতে পারে। এটি বস্তুত একটি স্থ‚ল ও চরম মতবাদ।
২) ধর্মতাত্তি¡ক অদৃষ্টবাদ ঐশী সত্তার শুদ্ধতা বা পূর্ণতা অর্থাৎ স্রষ্টার সর্বজ্ঞতা ও সর্বশক্তিমত্তার
একটি রক্ষা কবজ হিসেবে উদ্ভ‚ত হয়েছে। এটি যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চায় যে, মুক্ত বা স্বাধীন
সসীম সত্তার অস্তিত্ব আবশ্যকীয়ভাবে স্রষ্টার সর্বশক্তিমত্তাকে খর্ব করে। তবে এই যুক্তি যথাযথ
নয়, কেননা এটি মানুষের দায়িত্বশীলতার প্রতি ধর্ম যে গুরুত্ব আরোপ করেছে তা নস্যাৎ করে
দেয়।
৩) সব কিছুই পূর্বনির্ধারিত, অন্যকথায় কোনো কাজই মানুষের নিজস্ব পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও
শ্রমের ফসল নয়, এটি সুস্পষ্ট যুক্তি দিয়ে অদৃষ্টবাদ প্রতিপাদন করতে পারেনি। এটি
পুরোপুরিই একটি বিশ্বাস। নেতিবাচক এই বিশ্বাস মানুষের অভিপ্রায় ও সৃজনশীলতাকে
অস্বীকার করে তার জীবনকে অর্থহীন করে তোলে।
উপসংহার
অদৃষ্টবাদ একটি ত্রæটিপূর্ণ মতবাদ। এ মতবাদ মানুষের কর্মস্পৃহা নষ্ট করে। মানুষের নিজের
দোষ স্রষ্টার উপর চাপানোর মনোভাব তৈরি করে। স্রষ্টাকে স্বেচ্ছাচারী অবিবেচক শাসকে
পরিণত করে। এই মতবাদের অনুসারী হয়ে মানুষ স্থির বসে থাকলে এক সময় পৃথিবীই অচল হয়ে যাবে। সুতরাং এই মতবাদ মেনে নেয়া যায় না।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। অদৃষ্টবাদ সমালোচনাসহ ব্যখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১) অদৃষ্টবাদের মূল বক্তব্য কী?
২) অদৃষ্টবাদের সমর্থক কারা?
৩) মুসলিম দর্শনে কারা অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী? তাঁদের বক্তব্য কী?
ক. বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কীয় মতবাদ
র) দু’টি
রর) তিনটি
ররর) একটি
রা) চারটি
২। অদৃষ্টবাদীদের মতে
র) মানুষ পূর্ণ স্বাধীন
রর) মানুষ কিছুটা স্বাধীন
ররর) মানুষের স্বাধীনতা নেই
রা) কোনোটিই ঠিক নয়
৩। ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কীয় সমস্যাটি আমরা দেখতে পাই
র) পাশ্চাত্য দর্শনে
রর) ভারতীয় দর্শনে
ররর) মুসলিম দর্শনে
রা) সব কয়টিতে
খ. সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কীয় সমস্যাটি প্রথম দেখা যায় মুসলিম দর্শনে।
২। অদৃষ্টবাদের মূল বক্তব্য হলো মানুষ পূর্ণ স্বাধীন।
৩। উইলিয়াম জেমস্ অদৃষ্টবাদকে কঠোর নিয়ন্ত্রণবাদ বলে অভিহিত করেন।
৪। জাবারিয়াদের মতে, আল্লাহ্ ন্যায় বিচারক।
সঠিক উত্তর
ক.
১। রা) চারটি
২। ররর) মানুষের স্বাধীনতা নেই
৩। রা) সব কয়টিতে
খ. ১। মি ২। মি ৩। স ৪। মি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]