নিশ্চল জড়বাদ সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। জড়ের নির্জড়ীকরণ বলতে কি বুঝায়?

আধুনিক বিজ্ঞানে জড়ের স্বরূপ সম্পর্কে দুটি মতবাদ পাওয়া যায়। এর প্রথমটি হলো
পরমাণুবাদ বা নিশ্চল জড়বাদ (ঝঃধঃরপ ড়ৎ অঃড়সরপ ঞযবড়ৎু ড়ভ গধঃঃবৎ) আর দ্বিতীয়টি হলো
সচল জড়বাদ (উুহধসরপ ঞযবড়ৎু ড়ভ গধঃঃবৎ)। ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে ডাল্টন প্রথমোক্ত
মতবাদটি প্রচার করেন। এর প্রায় একশত বছর পর বিশ শতকের প্রথম দিকে দ্বিতীয় মতটি
প্রচার করা হয়। যারা দ্বিতীয় মতটি প্রচার করেন তাঁদের অন্যতম হলেন বিজ্ঞানী ভাশ্চভিচ,
ফ্যারাডে, লর্ড কেল্ভিন, অস্টওয়াল্ড, রাদারফোর্ড, নিউটন প্রমুখ। প্রথম মতটির ত্রæটি-বিচ্যুতির
সমালোচনার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয় শেষোক্ত মতবাদটি।
নিশ্চল জড়বাদ
ঊনিশ শতকের প্রথম ভাগে প্রখ্যাত রসায়নবিদ ডাল্টন (১৭৬৬-১৮৪৪) নতুনভাবে
পরমাণুবাদের পত্তন করেন। ডাল্টন ডেমোক্রিটাসের পরমাণুবাদের উপর ভিত্তি করেই তাঁর
নিশ্চল জড়বাদ উপস্থাপন করেন। তাঁর মতে, কোন বস্তুকে ক্রমাগত বিভক্ত করলে তা
কতগুলো সূক্ষè কণিকায় পরিণত হয়। এই সূক্ষè কণিকাগুলোকে খালি চোখে দেখা যায় না। এই
কণিকাগুলোকেই পরমাণুবলা হয়। এগুলো আবার অভেদ্য ও গতিহীন। কিন্তুবাইরে থেকে
যখন শক্তি প্রয়োগ করা হয়, তখন এগুলো সক্রিয় ও সচল হয়ে ওঠে।
ডাল্টনের মতে, জড় ও শক্তি (সধঃঃবৎ ধহফ বহবৎমু) হলো পরস্পর নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সত্তা এবং
তাদের কোন বিনাশ নেই, যদিও তাদের রূপান্তর ঘটতে পারে। আর একেই বলা হয় জড় ও
শক্তির নিত্যতা নীতি
আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে, জগতের বিভিন্ন বস্তুকতগুলো মৌলিক উপাদান দ্বারা গঠিত এবং
এই মৌলিক উপাদানগুলো শতাধিক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় পানি, গাছ-পালা, বাতাস ও
মাটি প্রভৃতি জাগতিক বস্তুকে যদি বিশ্লেষণ করা যায়, তা হলে তার মধ্যে কার্বন, অক্সিজেন,
নাইট্রোজেন, ক্যালসিয়াম, পারদ ইত্যাদি ধরনের কতগুলো মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়।
মৌলিক পদার্থগুলোর বিভিন্ন অনুপাতে মিশ্রণের ফলেই বিভিন্ন বস্তুসৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন
এক কণিকা অক্সিজেনের সাথে দুই কণিকা হাইড্রোজেন মিলিত হলে পানির সৃষ্টি হয়। এই
মৌলিক উপাদানগুলো কতগুলো সূক্ষè কণিকা দ্বারা গঠিত বলেই এ মিশ্রণ হওয়া সম্ভব হয়ে
ওঠে। মৌলিক পদার্থের পরমাণুর পরিমাণগত স্বাতন্ত্র্য আছে এবং সেজন্য স্বর্ণ পরমাণুর সাথে রৌপ্য পরমাণুর পরিমাণগত পার্থক্য আছে।
সমালোচনা
ডাল্টনের পরমাণুবাদ বা নিশ্চল জড়বাদের কতগুলো ত্রæটি রয়েছে :
প্রথমত এ মতবাদ জড় ও শক্তিকে পৃথক সত্তা বলে কল্পনা করে দ্বৈতবাদের জন্ম দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত সব পরমাণুই ক্ষুদ্রতম ও মৌলিক উপাদান হলে একটি পরমাণুর সাথে অন্য পরমাণুর
পরিমাণগত পার্থক্য কিভাবে সম্ভব? তার কোন সঠিক ব্যাখ্যা এই মতবাদে দেয়া হয়নি।
তৃতীয়তঃ পরমাণুর যদি নিজস্ব কোন গতি বা শক্তি না থাকে, তা হলে প্রত্যক্ষ জগতে গতির
উদ্ভব কিভাবে হতে পারে? তারও কোন ব্যাখ্যা এ মতবাদে নেই।
সচল জড়বাদ
পরমাণুবাদ বা নিশ্চল জড়বাদের নানা ত্রæটি-বিচ্যুতি দূর করার মাধ্যমেই সচল জড়বাদের
উৎপত্তি হয়। বিজ্ঞানী ফ্যারাডের মতে, পরমাণুনিশ্চল ও নিষ্ক্রিয় নয়, বরং প্রত্যকটি পরমাণু
শক্তির কেন্দ্র। এজন্য প্রত্যেকটি পরমাণুর আকর্ষণ-বিকর্ষণের ক্ষমতা আছে। বিজ্ঞানী নিউটনও
পরমাণুর আকর্ষণের শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। লর্ড কেল্ভিন-এর মতে, পরমাণুহচ্ছে সর্বত্র
তরল ইথারের আবর্তন চক্র (যিরৎষঢ়ড়ড়ষ)। একইভাবে অস্টওয়াল্ড (ঙংঃধিষফ)-এর মতে,
পরমাণুহচ্ছে শক্তির আধার এবং শক্তি সাধারণত সমান অবস্থায় থাকে। কিন্তুএই অবস্থার
পরিবর্তন হলেই শক্তির প্রচন্ডতার প্রকাশ ঘটে।
রাদারফোর্ড , বোর ), সোমারফেল্ড (, মিলিকান
প্রমুখ আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানীরা পূর্ববর্তী মতবাদের ভুল-ত্রæটিকে দূর করে পরমাণুসম্পর্কে এক নতুন বিষয়ের সন্ধান দেন। পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীদের মতে, পরমাণুনিষ্ক্রিয়, অভেদ্য, অবিভাজ্য
(ভাগ করা যায় না এমন) এবং সরল। কিন্তুএসব বিজ্ঞানীরা বলেন যে, প্রত্যেক পরমাণু
আণবিক শক্তির আধার। আর প্রত্যেকটি পরমাণুই ভাগযোগ্য ও যৌগিক পদার্থ। প্রতিটি
পরমাণুযে মৌলিক উপাদান দ্বারা গঠিত, সে সব উপাদানের সংখ্যা, গতি ও পারস্পরিক
সংগঠনের জন্যই একটি পরমাণুঅপর পরমাণুথেকে পৃথক। প্রতিটি পরমাণুবস্তুকণা ও বিদ্যুৎ
শক্তির এক একটি জটিল সংগঠন, যা আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপাদানের দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে।
প্রত্যেকটি পরমাণুর ভেতরে একটি নিউক্লিয়াস বা ধনাত্মক বিদ্যুৎ শক্তি ) আছে এবং এই নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে এক বা একাধিক ইলেকট্রন বা ঋণাত্মক
বিদ্যুৎ শক্তি অনবরত ঘোরে। হাইড্রোজেন ছাড়া সব মৌলিক পদার্থের
পরমাণুর নিউক্লিয়াস ‘প্রোটন' ও ‘নিউট্রন' দ্বারা গঠিত। হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসে শুধুএকটি
‘প্রোটন' থাকে। হাইড্রোজেন পরমাণুহলো সবচেয়ে হালকা পরমাণুএবং এর একটি মাত্র
ইলেকট্রন তার প্রোটনের চারপাশে ঘোরে। ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন এদের প্রত্যেকটিকে
মূল কণিকা বলা হয়। কেননা এদের আর ভাঙ্গা যায় না। নিউট্রনের ভর প্রোটনের ভরের প্রায় সমান।
বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলোর মধ্যে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন
হয়ে থাকে। ইউরেনিয়াম হলো ভারী মৌলিক পদার্থ, যার নিউক্লিয়াসে ৯২টি প্রোটন এবং
১৪৬টি নিউট্রন থাকে, আর এর নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে ৯৯টি ইলেকট্রন ঘোরে। সৌরমন্ডলে
বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে, তেমনি পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন
প্রোটনকে কেন্দ্র করে ঘোরে। সৌরমন্ডল ও পরমাণুর কক্ষ পথের মধ্যে পার্থক্য এই যে,
সৌরমন্ডলের ক্ষেত্রে একটিমাত্র গ্রহ আবর্তিত হতে পারে, কিন্তুএকটি পরমাণুর কক্ষ পথে
একাধিক ইলেকট্রন আবর্তিত হতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে, জড় পরমাণুহলো এক
একটি শক্তিপুঞ্জ এবং জড় বস্তুর মৌলিক উপকরণ হলো শক্তি, জড় নয়। বিজ্ঞানীদের এ
মতবাদকে সচল জড়বাদ বলা হয়ে থাকে।
জড়ের নির্জড়ীকরণ
বর্তমান যুগে প্লাংক ), আইনস্টাইন ) প্রমুখ বিজ্ঞানী সচল জড়বাদের ভিত্তিকে
আরও শক্তিশালী করে জড়ের নির্জড়ীকরণ করেছেন। আপেক্ষিকতাবাদ (
এবং কোয়ান্টামবাদ প্রাচীন মতবাদের উপর আঘাত হেনে
বলিষ্ঠভাবে ঘোষণা করে যে, ভর (গধংং) ও শক্তি (ঊহবৎমু) দুটি স্বতন্ত্র সত্তা নয় এবং ভরকে
শক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করার কোন প্রয়োজন নেই, বরং ভর শক্তির রূপান্তর ছাড়া আর কিছু
নয়। তাই শক্তিই জগতের মূল উপাদান এবং জড় শক্তিরই এক বিশেষ রূপমাত্র।
কোয়ান্টামবাদ প্রচারের পূর্বে নিউটন মনে করতেন যে, আলোক কণিকা সূর্য
থেকে সোজাসুজি নির্গত হয় এবং এর পরে অনেক বিজ্ঞানী মনে করতেন যে, সূর্যরশ্মি তরঙ্গের
আকারে নির্গত হয়। কিন্তুকোয়ান্টামবাদের মতে, আলোক কণিকাগুলো নিউটনের মতবাদ
অনুযায়ী বস্তুকণিকা নয়, বরং শক্তি কণিকা। এই
শক্তি-কণিকাকেই ‘স্ফোটন' বলা হয়ে থাকে। তাই কোয়ান্টামবাদের মতে, শক্তি ও
আলোকশক্তি মূলত একই শক্তির ভিন্ন ভিন্ন রূপমাত্র। এদিক থেকে শক্তি পরমাণুতে এবং
পরমাণুশক্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। সুতরাং আধুনিক বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে জড় ও
শক্তির মধ্যের দ্বৈততা দূর হয়ে যায় এবং শক্তিই জগতের আদি উপাদান বলে পরিগণিত হয়।
আধুনিক পদার্থবিদরা জড় সম্পর্কে অত্যন্ত সূক্ষè গবেষণা চালিয়ে এমন মতবাদ দিয়েছেন যে,
তাঁদেরকে আর জড়বাদী বলা যায় না। এ প্রসঙ্গে আমেরিকান দার্শনিক ফিলিফ ফ্রাংকের একটি
বক্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থে বলেন, “ কিন্তুএখন একটি পরিচ্ছন্ন
ধারণা জন্মেছে যে, [জড়বাদের] এই শক্তিধর ধারা বিংশ শতকের পদার্থবিদ্যায় এসে থেমে
গেছে, বিশেষ করে আপেক্ষিকতাবাদ ও কোয়ান্টামবাদের প্রবর্তনের পর। অনেক লেখকই এ
ব্যাপারে নিশ্চিত যে, জড়বাদী ধারার গতি থামিয়ে দেয়া হয়েছে এবং ভাববাদের প্রতি একটি সূক্ষè মোড় নিয়েছে
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সচল জড়বাদের মূল বক্তব্য আলোচনা করুন।
২। প্রাচীন পরমাণুবাদের সাথে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পারমাণুবাদের তুলনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। নিশ্চল জড়বাদ সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
২। জড়ের নির্জড়ীকরণ বলতে কি বুঝায়?
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। নিশ্চল জড়বাদের প্রবক্তা হলেন
(অ) নিউটন (আ) ডাল্টন
(ই) আইনস্টাইন (ঈ) ডেমোক্রিটাস
২। সচল জড়বাদীদের মতে পরমাণুগুলো
(অ) অভেদ্য (আ) অবিভাজ্য
(ই) সরল (ঈ) যৌগিক
৩। হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সংখ্যা
(অ) ১০ টি (আ) ১৪৬ টি
(ই) ৯২ টি (ঈ) ১ টি
৪। আপেক্ষিকতাবাদ ও কোয়ান্টাম মতবাদের মতে জগতের মূল উপাদান হলো
(অ) জড় (আ) ভর
(ই) শক্তি (ঈ) আলো
সত্য হলে ‘স', মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন।
১। বস্তুকে ক্রমাগত ভাগ করলে কতগুলো সূক্ষè কণিকায় পরিণত হয়।
২। ডাল্টনের মতে, জড় ও শক্তি পরস্পর নির্ভরশীল।
৩। বিজ্ঞানী ফ্যারাডের মতে, পরমাণুনিশ্চল ও নিষ্ক্রিয়।
৪। প্রত্যেক পরমাণুআণবিক শক্তির আধার।
সঠিক উত্তর
১। (আ) ডাল্টন ২। (ঈ) যৌগিক ৩। (ঈ) ১ টি ৪। (আ) ভর
১। স ২। মি ৩। মি ৪। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]