প্রাণের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করুন। যন্ত্র ও জীবদেহের বৈসাদৃশ্যসমূহ উল্লেখ করুন।

আমরা বিগত পাঠে জড় সম্পর্কে বিভিন্ন দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক মতামত জেনেছি। আমরা
বর্তমান পাঠে প্রাণের স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করবো। প্রাণ বা জীবনের স্বরূপ বুঝতে হলে
আমাদের প্রথমেই বুঝতে হবে যন্ত্র বা জড়ের সাথে প্রাণ বা জীবনের কি কি মিল ও অমিল রয়েছে।
প্রাণের স্বরূপ
প্রাণ বা জীবন সম্পর্কে আমরা একটুচিন্তা করলেই বুঝতে পারি যে, প্রাণ বা জীবন হলো এমন
একটি শক্তি যার দ্বারা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশ সাধন হয় এবং এর দ্বারা ঐক্য স্থাপন,
দেহের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ, পারিপার্শ্বিকের সাথে দেহের সামঞ্জস্য বিধান এবং বংশবৃদ্ধিকরণ ঘটে।
প্রাণের বৈশিষ্ট্য
প্রাণ বা জীবনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে কতগুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো
নিæোক্তভাবে বর্ণনা করা যায় :
প্রথমত প্রাণ বা জীবন দেহকে আশ্রয় করেই নিজেকে বিকশিত করে।
দ্বিতীয়ত প্রাণ দেহের মধ্যে এমন এক শক্তি উৎপন্ন করে, যার ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-
প্রত্যঙ্গের মধ্যে পরিবর্তন ও ক্রমবিকাশ সাধন এবং সামঞ্জস্য বিধান হয়।
তৃতীয়ত প্রাণ জৈবিক প্রক্রিয়াসমূহকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে জীব দেহের কল্যাণ সাধন করে
এবং পারিপার্শি¦কের সাথে সামঞ্জস্য স্থাপন করতে সাহায্য করে।
চতুর্থত বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা প্রাণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রধানত প্রজনন ক্ষমতার মাধ্যমেই
স্বজাতীয় জীব সৃষ্টি বা বংশ রক্ষা করা হয়ে থাকে।
যন্ত্র ও জীবদেহ
প্রাণ শক্তির স্বরূপ নির্ধারণ করতে গিয়ে অনেকে যন্ত্র ও জীব দেহের মধ্যে তুলনা করেন। যন্ত্র
ও জীবদেহ যদিও আপাতঃ দৃষ্টিতে মনে হয় এক, তথাপি আসলে যন্ত্র ও জীবদেহ এক নয়।
নিচে যন্ত্র ও জীব দেহের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করা হলো :
যন্ত্র ও জীবদেহ : সাদৃশ্য
যন্ত্র বলতে আমরা সাধারণত এমন একটা বস্তুকে বুঝি, যা কতগুলো জড় অংশের দ্বারা গঠিত
এবং বাইরের কোন শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর জীবদেহ বলতে আমরা এমন একটা বস্তুকে
বুঝি যা কোন জৈবিক প্রক্রিয়ার আধার।
যন্ত্র ও জীব দেহের মধ্যে সাদৃশ্য হলো, যন্ত্র ও জীবদেহ উভয়ই কতগুলো অংশের সমন¦য়ে
গঠিত। যন্ত্র যেমন কতগুলো অংশ নিয়ে গঠিত, জীবদেহও তেমনি কতগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে
গঠিত। যন্ত্র যেমন যন্ত্রাংশের উপর নির্ভরশীল, জীবদেহও তেমনি বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর নির্ভরশীল।
যন্ত্র ও জীবদেহ : বৈসাদৃশ্য
যন্ত্র ও জীব দেহের মধ্যে সাদৃশ্য থাকলেও যন্ত্র ও জীবদেহ এক নয়। এদের মধ্যে সাদৃশ্যের
চেয়ে বৈসাদৃশ্যই বেশি পরিলক্ষিত হয় :
প্রথমত যন্ত্র মানুষের সৃষ্টি। আর প্রাণ প্রাকৃতিক বা ঐশ্বরিক সৃষ্টি। যন্ত্র বিভিন্ন জড় পদার্থকে
একত্র করলেই সৃষ্টি করা সম্ভব হয়, কিন্তুএভাবে জীবদেহ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। যদিও যন্ত্রের
মতো জীব দেহেও বিভিন্ন ভৌতিক ও রাসায়নিক পদার্থ আছে, তথাপি জীব দেহের বৃদ্ধি আছে,
কিন্তুযন্ত্রের কোন বৃদ্ধি নেই।
দ্বিতীয়ত যন্ত্র বাইরের শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়; পক্ষান্তরে, জীবদেহ বাইরের শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
হয় না। অভ্যন্তরীণ শক্তিই একে পরিচালিত করে।
তৃতীয়ত যন্ত্র ও জীবদেহ উভয়ে যদিও এদের অংশের উপর নির্ভরশীল, তথাপি যন্ত্রের বেলায়
অংশের প্রাধান্য বেশি এবং জীব দেহের বেলায় সমগ্রতার প্রাধান্য বেশি। একটি যন্ত্রের কোন
একটি অংশ বিকল হলেই যন্ত্রটি অকেজো হয়ে পড়ে। কিন্তুএই অংশটির স্বতন্ত্র অবস্থান
সমগ্রের উপর নির্ভর না করেও সম্ভব হতে পারে, কেননা যন্ত্র কতগুলো বিক্ষিপ্ত অংশের একটি
কৃত্রিম সংগঠনমাত্র। পক্ষান্তরে, জীবদেহ কতগুলো অংশের স্বাভাবিক সংগঠন। এ হিসেবে জীব
দেহের বেলায় সমগ্রকে অংশের উপর এবং অংশকে সমগ্রের উপর নির্ভরশীল হতে হয়।
চতুর্থত যন্ত্র সব সময়ই অপরের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়, তাই যন্ত্র যন্ত্রীর ইচ্ছামতই কাজ
করে। পক্ষান্তরে, জীবের নিজস্ব উদ্দেশ্য আছে, কেননা জীব তার অভ্যন্তরীণ শক্তি দ্বারাই পরিচালিত হয়।
পঞ্চমত যন্ত্র হলো পরাধীন এবং পর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তুজীবদেহ স্বাধীন ও স্বনিয়ন্ত্রিত। এ
জন্য জীবের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়।
ষষ্ঠত জীবের আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মসংগঠন, আত্মসংরক্ষণ ও আত্মবিকাশের ক্ষমতা আছে। জীব
এসব ক্ষমতার বলে প্রয়োজন মত যে কোন পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে,
নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু যন্ত্রের মধ্যে এসব গুণ নেই বলে যন্ত্র
পুরোপুরি পরাধীন। যন্ত্রের একটি অংশ বিকল হয়ে গেলে যন্ত্র তা পূরণ করতে পারে না।
পক্ষান্তরে জীবদেহে কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে জীব তা নিজেই পূরণ করতে চেষ্টা করে।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। যন্ত্র বলতে কী বুঝায়? যন্ত্রের সাথে জীবদেহের পার্থক্য বর্ণনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। প্রাণের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করুন।
১। যন্ত্র ও জীবদেহের বৈসাদৃশ্যসমূহ উল্লেখ করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। প্রাণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম হলো
(অ) চঞ্চলতা বা গতি (আ) স্থিরতা
(ই) প্রজনন (ঈ) কোনটাই নয়
২। প্রাণ বা জীবন নিজেকে বিকশিত করেÑ
(অ) মনকে আশ্রয় করে (আ) দেহকে আশ্রয় করে
(ই) অনুভ‚তিকে আশ্রয় করে (ঈ) বুদ্ধিকে আশ্রয় করে
৩। যন্ত্র ও জীবদেহ এক
(অ) আপাতঃ দৃষ্টিতে (আ) প্রকৃতঃ পক্ষে
(ই) মূলতঃ (ঈ) কোনটিই নয়
৪। যন্ত্র সব সময়ই উদ্দেশ্য সাধন করে
(অ) নিজের (আ) বন্ধুর
(ই) গরীবের (ঈ) অপরের
সত্য হলে ‘স', মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন।
১। যন্ত্রের বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা আছে।
২। প্রাণ দেহের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন¦য় সাধন করে থাকে।
সঠিক উত্তর
১। (ই) ২। (আ) ৩। (অ) ৪। (ঈ)
১। মি ২। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]