> দর্শনের ইতিহাসে ভাববাদ (ওফবধষরংস) শব্দটির বিভিন্ন ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আর এ
কারণে শব্দটিকে নিখুঁতভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। তবুও কোন চিন্তাবিদ ও লেখক
ভাববাদকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেন। তাঁদের মতে, ভাববাদী মতবাদ কেবল আধ্যাত্মিক
বা আত্মিক সত্তাকে পরম মূল্যবান বলে গণ্য করে তাকেই পরম সত্তা বলে ঘোষণা করে।
সুতরাং যে মতবাদ জড়ের তুলনায় আত্মাকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে তাকেই
ভাববাদ বলে। অর্থাৎ আধ্যাত্মিক সত্তার আদি ও মৌলিকতায় বিশ্বাস স্থাপনকারী মতবাদকেই
ভাববাদ বলা যায়।
ভাববাদ
দর্শনের ইতিহাসে ভাববাদ শব্দটি প্রধানত দুটি অর্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এক,
জ্ঞানতাত্তি¡ক ভাববাদ অর্থে আর দুই, অধিবিদ্যক ভাববাদ
জ্ঞানতাত্তি¡ক ভাববাদ ও অধিবিদ্যক ভাববাদ
জ্ঞানতাত্তি¡ক অর্থে ভাববাদ বাস্তববাদ (জবধষরংস) এর বিরোধী মতবাদ হিসেবে পরিচিত। এ
মতবাদ জ্ঞানের বিষয়কে জ্ঞাতার ধারণার উপর নির্ভরশীল বলে মনে করে। জ্ঞাতার মনোগত
কতগুলো আকার বা ধারণা প্রয়োগ না করলে যথার্থ জ্ঞান হতে পারে না। তাই প্রকৃত জ্ঞান
জ্ঞাতার ধারণার উপর নির্ভরশীল। বার্কলীর আত্মগত ভাববাদ
জ্ঞানতাত্তি¡ক ভাববাদের একটি সুন্দর উদাহরণ। কান্টের ভাববাদকেও কেউ কেউ এ দলের
অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন।
পক্ষান্তরে, অধিবিদ্যক অর্থে ভাববাদ জড়বাদ এর বিরোধী মতবাদ হিসেবে
পরিচিত। এ অর্থে, যে মতবাদ আত্মাকে মুখ্য, আর জড়কে গৌণ বলে মনে করে এবং বিশ্ব
ভূবনের স্বকীয় তাৎপর্যকে অস্বীকার করে তাকে অধিবিদ্যক ভাববাদ বলে। বর্তমান পাঠে
আমরা অধিবিদ্যক ভাববাদ নিয়েই আলোচনা করবো।
প্লেটোর অধিবিদ্যক ভাববাদ
গ্রিক দার্শনিক প্লেটোকে অধিবিদ্যক ভাববাদ (যাকে আধ্যাত্মিক ভাববাদও বলা হয়) এর প্রধান
ও সফল প্রবক্তা বলে মনে করা হয়। তাঁর মতে, বিশেষ ব্যক্তি ও বিশেষ বস্তুনিয়ে যে জগৎ
গঠিত তাকে ভঙ্গুর ও ক্ষণস্থায়ী বলে আখ্যায়িত করা যায়। তাই যা বিশেষ নয়, বরং সার্বিক
তাই কেবল স্থায়ী ও চিরন্তন। সার্বিক একমাত্র সৎ বস্তু। এ সার্বিককে তিনি কখনো আকার
(ঋড়ৎস), কখনো ধারণা বা প্রত্যয় বলে অভিহিত করেন। ব্যষ্টিসত্তা নিয়ে যেমন এই
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎ গঠিত তেমনি সার্বিক নিয়ে ধারণা বা প্রত্যয়ের জগৎ গঠিত। এই প্রত্যয় বা
ধারণার জগৎ শ্বাশত ও চিরন্তন। এ জগৎ সত্যের জগৎ, আর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎ হচ্ছে মিথ্যার
জগৎ।
চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, গাছ-পালা, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত, মানুষ, গরু ইত্যাদি নিয়ে আমরা
চলি, দেখি ও স্পর্শ করি। এসব কিছুহলো প্লেটোর মতে পরিবর্তনের জগৎ, মিথ্যা ও অবভাস
(এর জগৎ। কিন্তুব্যক্তি মানুষ, বিশেষ ঘোড়া ও বিশেষ গরুর পেছনে আমাদের
এক একটি ধারণা আছে, যা মানুষ, গরু ও ঘোড়া না থাকলেও বিদ্যমান থাকবে। এই ধারণার
জগতই প্লেটোর মতে সত্য, শ্বাশত ও চিরন্তন। এর কোন পরিবর্তন নেই। ইন্দ্রিয় জগতের
মানুষ, গরু, ঘোড়া ইত্যাদি হচ্ছে তার প্রতিচ্ছবিমাত্র।
সমালোচনা
প্লেটোর এ মতবাদ বিভিন্ন কারণে আকর্ষণীয় হলেও এ মতবাদ বিভিন্ন মহল কর্তৃক সমালোচিত
হয়েছে। তাঁর প্রথম সমালোচক হলেন তাঁরই শিষ্য দার্শনিক অ্যারিস্টটল। তিনি প্লেটোর ধারণা
তত্ত¡কে তীব্রভাবে সমালোচনা করেন। অ্যারিস্টটল বলেন, প্লেটো সার্বিক ও বিশেষের মধ্যকার
নিবিড় সম্পর্ককে স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষকে নিয়েই যে সার্বিক গঠিত হয় একথা
তিনি বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। তাছাড়া বিশেষ থেকে আলাদা হয়ে সার্বিক কিভাবে প্রত্যয়ের
জগতে বাস করে একথা প্লেটো স্পষ্ট করে বলতে পারেননি।
লিবনিজের অধিবিদ্যক বা আধ্যাত্মিক ভাববাদ
আদি সত্তার স্বরূপ ব্যাখ্যায় লিবনিজ এক অভিনব মতবাদ পেশ করেন। তাঁর মতে, আদি সত্তা
হলো অবিভক্ত, অবিভাজ্য ও অস্তিত্বশীল। এ কথার সমর্থনে তিনি বলেন যে, যা বিভক্ত বা
বিভাজ্য তা অবশ্যই ভঙ্গুর। আর যা ভঙ্গুর তা কখনো সত্য হতে পারে না। আদি সত্তা তাই
অবিভাজ্য, পূর্ণ ও চিরন্তন। যা অপূর্ণ, বিভাজ্য ও সাময়িক তা অসত্য ও অনস্তিত্বশীল। এখন
প্রশ্ন হলো, আদি সত্তা অবিভাজ্য হয়ে কি করে অস্তিত্ববান হতে পারে? লিবনিজ এ প্রশ্নের উত্তর
দিতে গিয়ে গ্রিক পরমাণুবাদ ও কার্টেসীয় দার্শনিকদের মতবাদের মধ্যে এক সমন¦য় বিধানের
চেষ্টা করেন। গ্রিক পরমাণুবাদীরা বস্তুর পরমাণুকেই আদি সত্তা বলে মনে করেন। যাকে কোন
অবস্থাতেই বিভক্ত করা যায় না তাকেই পরমাণুবলে। লিবনিজের মতে, পরমাণুগুলো জড়ীয়
(সধঃবৎরধষ) বলে তারা কখনো অবিভাজ্য হতে পারে না। কেননা জড় পদার্থের বিস্তৃতি বলে
একটি অপরিহার্য গুণ আছে। পরমাণুগুলো যেহেতুজড়ীয় সেহেতুতাদের বিস্তৃতি আছে। আর
যার মধ্যে বিস্তৃতি গুণ রয়েছে তা অবশ্যই বিভাজ্য। তাই জড়ীয় পরমাণুকে কোন অবস্থাতেই
আদি সত্তা বলা যায় না। পক্ষান্তরে, কার্টেসীয় মতে, গাণিতিক বিন্দুঅবিভাজ্য হতে বাধ্য।
কেননা গণিতে বিন্দুবলতে এমন কিছুকে বুঝায়, যার কোন দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নেই, তা সম্পূর্ণ
অমূর্ত। আর এ কারণে অবিভাজ্য হয়েও অনস্তিত্বশীল। যা অনস্তিত্বশীল তা কখনো আদি সত্তা
হতে পারে না।
চিৎ পরমাণু
উপরোক্ত দুই পরস্পর বিরোধী মতের সমন¦য় করে লিবনিজ এমন এক পরমাণুর সন্ধান দিলেন,
যা জড় পরমাণুর মত অস্তিত্বশীল হয়েও কার্টেসীয় বিন্দুর মত অবিভক্ত। লিবনিজের মতে,
পরমাণুযদি চেতন ও আধ্যাত্মিক স্বভাবের অধিকারী হয় তাহলে তা একাধারে অবিভাজ্য ও
অস্তিত্বশীল হতে বাধ্য। লিবনিজ এ আধ্যাত্মিক ও চেতনাপূর্ণ পরমাণুর নাম দেন মোনাড বা
চিৎ পরমাণু।
সমালোচনা
লিবনিজের মতও সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য নয়। লিবনিজ প্রথমে বহু চেতন পরমাণুর পরমত্বের বিশ্বাস
নিয়ে দার্শনিক চিন্তা শুরু করলেও একাধিক স্বাধীন পরমাণুর পারস্পরিক শৃ´খলা ব্যাখ্যা করার
জন্য অবশেষে ঈশ্বরের অস্তিত্ব মেনে নিতে বাধ্য হন। তাই এ দিকটি তার মতবাদের একটি
মস্ত বড় দুর্বলতা বলে অনেকে মনে করেন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সত্তার স্বরূপ সম্পর্কে ভাববাদী মত বর্ণনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। লিবনিজের মোনাডতত্ত¡ ব্যাখ্যা করুন।
২। প্লেটোর ধারণাতত্ত¡ ব্যাখ্যা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। প্লেটোর মতে পরম সত্তা হলো
(অ) ধারণার জগৎ (আ) ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎ
(ই) বিশেষ বস্তু (ঈ) ক্ষণস্থায়ী
২। দর্শনের ইতিহাসে ভাববাদ শব্দটি প্রধানতঃ ব্যবহৃত হয়
(অ) দুটি অর্থে (আ) তিনটি অর্থে
(ই) চারটি অর্থে (ঈ) পাঁচটি অর্থে
৩। আধিবিদ্যক অর্থে ভাববাদের বিরোধী মতবাদ হিসেবে পরিচিতÑ
(অ) বাস্তববাদ (আ) জড়বাদ
(ই) বিচারবাদ (ঈ) বুদ্ধিবাদ
৪। আধ্যাত্মিক ও চেতনাপূর্ণ পরমাণুর নাম মোনাড দেনÑ
(অ) প্লেটো (আ) বার্কলি
(ই) লিবনিজ (ঈ) কান্ট
সত্য হলে ‘স', মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন।
১। লিবনিজের মতে মোনাড অবিভাজ্য।
সঠিক উত্তর
১। (অ) ২। (অ) ৩। (আ) ৪। (ই)
১। স
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত