দ্বৈতবাদ কী? দ্বৈতবাদের একটি ঐতিহাসিক বিবরণ দিন। । প্রাচীন গ্রিক দর্শনের দ্বৈতবাদী চিন্তাধারা দ্বৈতবাদের সমালোচনা লিখুন।

পূর্ববর্তী পাঠে আমরা পরম সত্তা বা আদি উপাদানের সংখ্যা সম্পর্কিত বহুত্ববাদী মত নিয়ে
আলোচনা করেছি। বর্তমান পাঠে আমরা দ্বৈতবাদী মত নিয়ে আলোচনা করবো। দ্বৈতবাদের
মূলকথা হলো পরম সত্তা একও নয়, বহুও নয়, বরং দুটি। আসুন এখন আমরা দ্বৈতবাদ নিয়ে আলোচনা করি।
দ্বৈতবাদ
যে মতবাদ দুটি স্বতন্ত্র ও পরস্পর নিরপেক্ষ সত্তাকে বিশ্ব জগতের আদি বা মূল উপাদান বলে
গণ্য করে তাকে দ্বৈতবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ মতবাদের মূলকথা হলো, জগতে মন
ও জড় বলে দুটি মৌলিক ও আদিম উপাদান আছে। এ উপাদান দুটি পরস্পর স্বতন্ত্র সত্তা।
এদের একটিকে অন্যটিতে পরিবর্তন করা চলে না। জগতের সব অস্তিত্বশীল বস্তুকেই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
দ্বৈতবাদ : ডেকার্ট
দর্শনের ইতিহাসে দ্বৈতবাদের একটি স্থায়ী আসন আছে। এর মূলে আছে দুটি বিশেষ কারণ।
প্রথমত দ্বৈতবাদ একটি মৌলিক মতবাদ। এ মতবাদ সাধারণ লোকের কাছে বেশ প্রিয় ও
গ্রহণযোগ্য। কেননা এর সাহায্যে সুন্দর ও অসুন্দর, ভাল ও মন্দ, শান্ত ও অশান্ত ইত্যাদি বিষয়
সহজে বিশ্লেষণ করা যায়।
দ্বিতীয়ত আধুনিক দর্শনের জনক ডেকার্টের প্রভাবের ফলে দ্বৈতবাদ পাশ্চাত্য দর্শনে এক স্থায়ী
আসন করে নেয়। তাই অনেক সময় ডেকার্টকে বলা হয় দ্বৈতবাদের প্রবর্তক। ডেকার্টের মতে,
জড় হচ্ছে চেতনাহীন বিস্তৃত পদার্থ, আর মন হচ্ছে বিস্তৃতিহীন চেতন পদার্থ। জড় ও মন তাই
দুটি বিরোধী সত্তা। এ দুটি সত্তা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে খোদারূপ পরম সত্তা দ্বারা। এজন্য এ
মতবাদের আরেক নাম নিয়ন্ত্রিত দ্বৈতবাদ। যে দ্বৈতবাদ নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করে না তাকে বলা হয় চরম দ্বৈতবাদ।
দ্বৈতবাদ : প্রাচীন গ্রিক দর্শন
ফরাসি দার্শনিক ডেকার্টকে যদিও দ্বৈতবাদের প্রবর্তক বলা হয়, প্রাচীন গ্রিক দর্শনেও এ
দ্বৈতবাদের অনেক সাক্ষ্য মেলে। যদিও প্রাচীন গ্রিক দর্শনের মাইলেশীয় সম্প্রদায়ের তিন
দার্শনিক- থেলিস, এনাক্সিম্যান্ডার ও এনাক্সিমিনিস জড়কে একমাত্র সত্তা বলে মনে করতেন,
তবুও তাঁরা বস্তুতে প্রাণের অস্তিত্বকে স্বীকার করে বা নিয়ন্ত্রণ কর্তাকে স্বীকার করে একত্ববাদের
পরিবর্তে দ্বৈতবাদ প্রচার করেন। এম্পিডক্লিস চারটি উপাদানের অস্তিত্ব স্বীকার করেছিলেন।
কিন্তুএ চারটি উপাদানের সংমিশ্রণে লোপ ও পরিবর্তন ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি অনুরাগ ও
বিরাগ নামক দুটি মনস্তাত্তি¡ক শক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন। এনাক্সাগোরাস জড় ও মানস
সত্তার কল্পনা করেন। প্লেটো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎ ও ইন্দ্রিয়াতীত জগতের বিশেষ ও সামান্যের
দ্বৈততা স্বীকার করেন। অ্যারিস্টটল উপাদান ও আকারের দ্বৈততা স্বীকার করেন।
দ্বৈতবাদ : মধ্যযুগ
মধ্যযুগের দর্শনেও দেহ-মনের দ্বৈততার একাধিক দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। সেন্ট অগাস্টিনের
দর্শনে, বিশেষ করে দেহ ও মনের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। দেহ বা বস্তুনশ্বর, আর
আত্মা অবিনশ্বররূপেই এদের মতবাদে স্থান পেয়েছে।
দ্বৈতবাদের সমালোচনা
দ্বৈতবাদ সাধারণ মানুষের কাছে খুব আকর্ষণীয় মনে হলেও দার্শনিক বিচারে খুব সার্থক মতবাদ
নয়। ডেকার্ট যেভাবে দেহ-মনের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করেছেন তা স্বীকার করে নিলে মানুষের
মধ্যে দেহ-মনের সম্বন্ধটি একটি রহস্যময় হেঁয়ালিতে পর্যবসিত হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে ডেকার্টের
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ দেহ-মন সম্পর্কের কোন সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। ডেকার্ট যে
পিনিয়াল গ্রন্থির মাধ্যমে দেহ-মনের সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন সেই পিনিয়াল গ্রন্থিও
কিন্তুবিশেষ ধরনের একটি জড় পদার্থ। হোয়াইটহেড তাই দুঃখ করে বলেছেন যে, ডেকার্টের
দ্বৈতবাদ পরবর্তী দার্শনিক চিন্তাধারাকে বিষাক্ত করে তুলেছে।
এই দ্বৈতবাদের উপর ভিত্তি করেই ধর্ম-দর্শনের ইতিহাসে দ্বীশ্বরবাদ (উরঃযবরংস) এর উৎপত্তি ঘটেছে। দ্বীশ্বরবাদে ঈশ্বরের দুটি রূপ কল্পিত হয়েছে। একটি হচ্ছে তাঁর কল্যাণের দিক, আর
অন্যটি হচ্ছে তাঁর অকল্যাণের দিক। পারসিকরা কল্যাণের দেবতাকে ‘আহুরা-মাজদা' আর
অকল্যাণের দেবতাকে ‘আহরিমান' বলে অভিহিত করে থাকেন। বলা যায়, এই দ্বৈতবাদের
প্রভাবেই বৈষ্ণব চিন্তাধারায় রাধা-কৃষ্ণ প্রতীতি বিস্তার লাভ করেছে। তবে সম্ভাব্য দোষ-ত্রæটি সত্তে¡ও দ্বৈতবাদের দার্শনিক তাৎপর্যকে অস্বীকার করা যায় না।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। দ্বৈতবাদ কী? দ্বৈতবাদের একটি ঐতিহাসিক বিবরণ দিন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। প্রাচীন গ্রিক দর্শনের দ্বৈতবাদী চিন্তাধারা বর্ণনা করুন।
২। দ্বৈতবাদের সমালোচনা লিখুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। আধুনিক দ্বৈতবাদের প্রবর্তক হলেন
(অ) স্পিনোজা (আ) ডেকার্ট
(ই) লিবনিজ (ঈ) প্লেটো
২। দ্বৈতবাদের মতে পরম সত্তা হলো
(অ) একটি (আ) বহু
(ই) অনির্ধারিত (ঈ) দুটি
৩। যে দ্বৈতবাদ কোন নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করে না তাকে বলা হয়Ñ
(অ) অনিয়ন্ত্রিত দ্বৈতবাদ (আ) নিয়ন্ত্রিত দ্বৈতবাদ
(ই) কঠোর দ্বৈতবাদ (ঈ) চরম দ্বৈতবাদ
৪। সেন্ট অগাষ্টিন হলেন
(অ) প্রাচীন যুগের দ্বৈতবাদী (আ) মধ্যযুগের দ্বৈতবাদী
(ই) বর্তমান যুগের দ্বৈতবাদী (ঈ) আধুনিক যুগের দ্বৈতবাদী।
সঠিক উত্তর
১। (আ) ২। (ঈ) ৩। (ঈ) ৪। (আ)

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]