অনিয়ন্ত্রণবাদের সংজ্ঞা দিন। অনিয়ন্ত্রণবাদ সমালোচনাসহ ব্যাখ্যা করুন।

> অনিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে, ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে। মানুষ কোনো বাহ্যশক্তি দ্বারা পরিচালিত নয়।
প্রাকৃতিক ঘটনাবলী কার্যকারণ নিয়ম দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু মানুষের কার্যকলাপ যান্ত্রিক
কার্যকারণ নিয়মের অধীন নয়। কারণ মানুষ যন্ত্রের ন্যায় নিশ্চল ও অচেতন নয়। মানুষ সচল
ও সচেতন। সুতরাং কোনো বাহ্যশক্তি মানুষের কাজকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে না।
অনিয়ন্ত্রণবাদ : সংজ্ঞা
যে মতবাদ অনুসারে মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে এবং তার কর্ম নির্বাচনে কোনো নিয়ন্ত্রণ
নেই তাকে অনিয়ন্ত্রণবাদ বলে। এ মতবাদ অনুসারে, মানুষের ইচ্ছাশক্তি মুক্ত। মানুষ
সামাজিক জীব। সামাজিক পরিবেশে সে যখন বিভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন সে তার
স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে তার জন্য উপযোগী পরিস্থিতি বেছে নেয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের
ক্ষেত্রে মানুষ তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও অন্যান্য ঘটনার দ্বারা অনেকটা প্রভাবিত হয়, কিন্ত
তাই বলে মানুষের কোনো ইচ্ছার স্বাধীনতা নেই, তা নয়।অনিয়ন্ত্রণবাদীরা তাদের মতবাদের
সমর্থনে কিছু যুক্তি তুলে ধরেন; নিচে তা আলোচনা করা হলো।
অভিজ্ঞতাভিত্তিক যুক্তি
ক. কাজ করার সময় আত্মসচেতন হলে আমরা যে স্বাধীন তা বুঝতে পারি। যখন কোনো
কাজ করতে চাই তখন কি করব তা আমরা স্বাধীনভাবেই ঠিক করি। সুতরাং আমাদের
আত্মসচেতনতা আমাদের কর্মের স্বাধীনতারই সাক্ষ্য বহন করে।
খ. একটি মানুষ সব সময় একই রকমের আচরণ করে না। অনেক সময় দেখা যায়, তার যে
কাজটি করা উচিত ছিল সে সেই কাজটি না করে অন্য একটি কাজ করেছে। এখানেই তার
ইচ্ছার স্বাধীনতা প্রকাশ পায়। বিরোধিতার বেলায় এই স্বাধীনতা উদ্দেশ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে
প্রকট হয়। তাই কোনো ব্যক্তি দুটি বিরোধী কাজের সম্মুখীন হলে, চরিত্র অনুযায়ী তার যে
কাজটি করার কথা সে কাজটি না করে, কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য কাজটি করে। একটি
কাজের প্রতি তীব্র আকাক্সক্ষা থাকা সত্তে¡ও অন্য একটি কাজ করার মানেই হলো, নির্বাচন করার
মত স্বাধীনতা তার রয়েছে। অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে।
অধিবিদ্যক যুক্তি
ক. পদার্থবিজ্ঞানে হিসেনবার্গ-এর অনিয়ন্ত্রণ নীতি জগৎ ও মানুষের স্বাধীনতার প্রাচীন দ্ব›দ্বকে
অনেকাংশে দূর করেছে। যে বিজ্ঞান প্রকৃতির বিভিন্ন মতবাদে মানুষের স্বাধীনতাকে এতদিন
ধরে অস্বীকার করেছে, সেই বিজ্ঞানই প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনা ও মানুষের মধ্যে কিছু স্বাধীনতার
কথা স্বীকার করেছে।
খ. কার্যকারণ তত্তে¡র সাথেও অনিয়ন্ত্রণবাদের কোনো বিরোধ নেই। অনিয়ন্ত্রণবাদ মানুষের
ইচ্ছা অকারণে উদ্ভ‚ত হয়, এমন কথা বলে না। অনিয়ন্ত্রণবাদীদের মতে, ব্যক্তি চরিত্রই ব্যক্তির
ইচ্ছা নিয়ন্ত্রিত করে। সুতরাং ব্যক্তি চরিত্রই ব্যক্তির ইচ্ছার কারণ। তাই বলা যায়, কার্যকারণ
তত্তে¡র সাথে অনিয়ন্ত্রণবাদের কোনো বিরোধ নেই। বরং অনিয়ন্ত্রণবাদ কার্যকারণ নিয়মের
সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
গ. উইলিয়াম জেমস্রে মতে, মানুষের অনেক কাজ এমন যে, এগুলো সম্বন্ধে আগেই কিছু বলা
যায় না। অণু-পরমাণুর গতিপ্রকৃতি, কার্যকারণ আমাদের কাছে যতটুকু স্পষ্ট, মানুষের কাজ ও
আচরণ সে রকম নয় এবং এ সম্পর্কে আগেই কিছু বলার উপায় নেই। এ থেকে বোঝা যায়
যে, মানুষের কর্মকান্ড পূর্ব-নিয়ন্ত্রিত নয়; বরং মানুষ নিজেই নিজের কর্মের স্বাধীন কর্তা এবং
সে কারণেই তার প্রতিটি কর্মের জন্য সে নিজেই দায়ী।
নৈতিক যুক্তি
অনিয়ন্ত্রণবাদীরা বলেন, ইচ্ছার স্বাধীনতা স্বীকার না করলে নৈতিক জীবনের কোনো অর্থই
থাকে না। কান্টের মতে, সামর্থ্যরে মধ্যেই মানুষের স্বাধীনতা নিহিত রয়েছে। কোনো ব্যক্তি
যদি কাউকে জোর করে কোনো কাজ করতে বাধ্য করে, তাহলে সে কাজের জন্য কোনো
নৈতিক দায়িত্বের প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু কোনো কাজ যদি ব্যক্তির সামর্থ্য ও সাধ্যের মধ্যে থাকে
এবং কাজটি সে স্বেচ্ছায় করে, তাহলে ঐ কাজটির দায়-দায়িত্ব ঐ ব্যক্তির উপর বর্তায়।
সুতরাং নৈতিক চেতনা ও নৈতিক জীবনের তাৎপর্য রক্ষার জন্য ইচ্ছার স্বাধীনতা স্বীকার করতে হয়।
ধর্মীয় যুক্তি
ক. মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতাহীনতা স্রষ্টার ন্যায়বিচারকের ধারণাকে ক্ষুণœ করে। কারণ যে কাজ
ব্যক্তির নিজের ইচ্ছায় ঘটেনি, সে কাজের জন্য তাকে শাস্তি দেয়া ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠা করে
না। মুতাযিলারা যুক্তি দেন যে, মানুষের যদি ইচ্ছার স্বাধীনতা না থাকে, তাহলে আল্লাহ্
মানুষকে তার মন্দ কাজের জন্য শাস্তি দিতে পারেন না। আল্লাহ্ যেহেতু মানুষকে ভাল কাজের
পুরস্কার এবং মন্দ কাজের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেহেতু কোন্োিট ভাল ও কোন্োিট মন্দ
তা নির্বাচন করার ক্ষমতাও মানুষকে দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা রয়েছে।
খ. স্রষ্টার সর্বজ্ঞতা ও সর্বশক্তিমত্তা মানুষের স্বাধীনতার বিরোধী নয়। স্রষ্টা সর্বজ্ঞ, মানুষের সব
ইচ্ছাই তিনি জানেন। কিন্তু তিনি জানেন বলেই মানুষের ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করেন না। সেন্ট টমাস
বলেছেন, স্মৃতিতে আমরা যেমন অতীতকে জানি, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করি না, তেমনি স্রষ্টা
মানুষের সব কাজই জানেন, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত করেন না। স্রষ্টা সর্বশক্তিমান। তিনি ইচ্ছা করলেই
মানুষের কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিন্তু সাধারণত তিনি তা করেন না। ক্ষমতা থাকা
সত্তে¡ও ক্ষমতার ব্যবহার না করা, ক্ষমতাবানের মহত্ত¡ স চিত করে। স্রষ্টার পক্ষে সেজন্যই
নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও নিয়ন্ত্রণ না করাই স্বাভাবিক। সুতরাং স্রষ্টা সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান
বলে মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকবে না, তা নয়।
সমালোচনা
অনিয়ন্ত্রণবাদও নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে :
১) অনিয়ন্ত্রণবাদ একটি চরম ও একপেশে মতবাদ। চরম স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতার
নামান্তরমাত্র। স্বেচ্ছাচারিতা উচ্ছৃ খলতার স চনা করে। উচ্ছৃ খলতা কেউই সমর্থন করতে
পারেন না। সুতরাং অনিয়ন্ত্রণবাদ মেনে নেয়া যায় না।
২) অনিয়ন্ত্রণবাদ কার্যকারণ তত্তে¡র বিরোধী। অনিয়ন্ত্রণবাদ ইচ্ছারূপ কার্যের কোনো কারণই
স্বীকার করে না। কিন্তু কার্যকারণ তত্ত¡ সার্বিক বলেই সাধারণত গৃহীত হয়। সুতরাং
অনিয়ন্ত্রণবাদ যুক্তিযুক্ত নয়।
৩) অনিয়ন্ত্রণবাদ স্বীকার করলে কোনো নৈতিক বিচারই সম্ভব হয় না। কোনো মানুষের কাজ
যদি সেই মানুষ নিয়ন্ত্রিত না করে , তবে সেই কাজের জন্য তাকে দায়ী করা যায় না।
উপসংহার
অনিয়ন্ত্রণবাদ সন্তোষজনক মতবাদ নয়। আমরা যদি আমাদের কোনো ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রিত
করতে না পারি তাহলে সেই ইচ্ছার জন্য আমাদেরকে শাস্তি বা পুরস্কার দেয়া যায় না। এর ফলে নৈতিক জীবন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। অনিয়ন্ত্রণবাদ সমালোচনাসহ ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। অনিয়ন্ত্রণবাদের সংজ্ঞা দিন।
২। অনিয়ন্ত্রণবাদের পক্ষে অভিজ্ঞতাভিত্তিক যুক্তিটি ব্যাখ্যা করুন।
৩। অনিয়ন্ত্রণবাদের পক্ষে অধিবিদ্যক যুক্তি কি কি?
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। অনিয়ন্ত্রণবাদের সমর্থনে যে সমস্ত
যুক্তিগুলো দেওয়া হয়েছে তাকে ভাগ করা
যায়
র) দু’ভাগে
রর) তিন ভাগে
ররর) চার ভাগে
রা) পাঁচ ভাগে
২। অনিয়ন্ত্রণবাদের অভিজ্ঞতাভিত্তিক যুক্তি
অনুসারে
র) আত্মসচেতনতাই মানুষের স্বাধীনতা
নির্দেশ করে
রর) অভিজ্ঞতাই মানুষের স্বাধীনতা নির্দেশ
করে
ররর) বুদ্ধিই মানুষের স্বাধীনতা নির্দেশ করে
রা) চিন্তাই মানুষের স্বাধীনতা নির্দেশ করে
৩। উইলিয়াম জেমসের মতে
র) মানুষের কর্মের কর্তা আল্লাহ
রর) মানুষের কর্মের কর্তা তার বাবা-মা
ররর) মানুষের কর্মের কর্তা তার শিক্ষক
রা) মানুষের কর্মের কর্তা সে নিজে
৪। ‘‘সামর্থ্যের মধ্যেই মানুষের স্বাধীনতা
নিহিত’’ উক্তিটি করেছেন
র) সেন্ট টমাস
রর) কান্ট
ররর) উইলিয়াম জেমস্
রা) হিসেনবার্গ
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। অনিয়ন্ত্রণবাদ একটি সর্বজনগ্রাহ্য মতবাদ।
২। অনিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে মানুষ প র্ণ স্বাধীন।
৩। অনিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে নৈতিক জীবনের তাৎপর্য রক্ষার জন্য ইচ্ছার স্বাধীনতা স্বীকার
করতে হয়।
৪। মুতাযিলাদের মতে আল্লাহ্ স্বেচ্ছাচারী শাসক।
সঠিক উত্তর
ক)
১। রর) চার ভাগে ২। র) আত্মসচেতনতাই মানুষের স্বাধীনতা নির্দেশ করে
৩। রা) মানুষের কর্মের কর্তা সে নিজে ৪। রর) কান্ট
খ) ১। মি ২। স ৩। স ৪। মি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]