উপলক্ষবাদের , উপবস্তুবাদের , উন্মেষবাদের সমালোচনা লিখুন।

পূর্ববর্তী পাঠে আমরা দেহ ও মনের সম্পর্কবিষয়ক প্রধান প্রধান মতবাদসমূহ আলোচনা
করেছি। এই পাঠে আমরা উক্ত মতবাদসমূহের ভুল-ত্রæটিগুলো কী? তা আলোচনা করবো।
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ
১) ডেকার্ট দেহ ও মনের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি মনে
করেন, দেহ ও মন সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন। সম্পূর্ণ ভিন্ন দেহ ও মনের মধ্যে কি করে ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা আমরা বুঝি না। যদি দেহ ও মনের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া
স্বীকার করতে হয়, তবে তাদের সম্পূর্ণ ভিন্ন বলা যায় না। সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনো দুই বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হতে পারে না।
২) ডেকার্টের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ, শক্তির অবিনশ্বরবাদ নামক বৈজ্ঞানিক মতবাদের বিরোধিতা
করে। শক্তির অবিনশ্বরবাদ অনুসারে, শক্তির রূপান্তর ঘটতে পারে, কিন্তু তার কোনো হ্রাসবৃদ্ধি নেই। এক ধরনের শক্তি আর এক ধরনের শক্তিতে, যেমন উত্তাপ আলোকে রূপান্তরিত
হতে পারে, কিন্তু এই ধরনের রূপান্তরের ক্ষেত্রে শক্তির কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে না। অথচ
ডেকার্টের মতানুযায়ী মন যদি দেহের উপর ক্রিয়া করে তাহলে জগতে দৈহিক বা ভৌতশক্তি
কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায়। একইভাবে, দেহ মনের উপর ক্রিয়া করলে অর্থাৎ দৈহিক শক্তি
মানসিক শক্তিতে রূপান্তরিত হলে জগতে কিছুটা হলেও দৈহিক বা ভৌতশক্তি হ্রাস পায়।
উপলক্ষবাদ
১) উপলক্ষবাদ দেহ ও মনের সম্পর্ক সম্বন্ধে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে পারে না। প্রতি
পদে স্রষ্টার হস্তক্ষেপের ফলে দেহ ও মনের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, একথাকে কোনো
যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হয় নি। প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ বা উপলক্ষবাদ মানতে হলে যুক্তি
বিসর্জন দিয়ে ভক্তিমূলক বিশ্বাসে আস্থা স্থাপন করতে হয়। দর্শনে ভক্তিমূলক বিশ্বাসের কোনো
স্থান নেই। সুতরাং উপলক্ষবাদের বিশেষ কোনো দার্শনিক মূল্য থাকতে পারে না।
২) দেহ ও মন যদি দুটি পরস্পর বিরুদ্ধ দ্রব্য হয়, তাহলে স্রষ্টা কিভাবে এই দুই বিজাতীয়
দ্রব্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেন তা বোধগম্য নয়। স্রষ্টাকে পরমাত্মারূপী এক অধ্যাÍ
সত্তারূপে কল্পনা করা হয়। আমাদের ইচ্ছা উপলক্ষে বিদেহী স্রষ্টাই যদি আমাদের বাহুকে ঊর্ধ্বে
উত্তোলিত করতে সমর্থ হন, তাহলে ইচ্ছাই তা সম্পাদনে ব্যর্থ হয় কেন, তা বোধগম্য নয়।
সমান্তরালবাদ
১) যেখানে চৈতন্য সেখানে বিস্তৃতির অস্তিত্ব এবং যেখানে বিস্তৃতি সেখানেই চৈতন্যের অস্তিত্ব-
এই বিষয়টির সপক্ষে আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। বিস্তৃতি
থাকলেও প্রস্তর খন্ডে আমরা কোনো চৈতন্যের অস্তিত্ব দেখি না।
২) সমান্তরালবাদ দেহের তুলনায় মনের উৎকর্ষ স্বীকার করে না। প্রতিটি দৈহিক ঘটনার
পূর্ববর্তী কারণ যদি অন্য কোনো দৈহিক ঘটনা হয়, তাহলে মনের সহায়তা ছাড়াও দৈহিক
ক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে, এই সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, দেহকে
মনের নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করে নিতে হয়। কাজেই দেহ ও মন একই স্তরের অন্তর্গত, এরা
পরস্পরের সমান্তরাল, এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া, মনের সহায়তা
ছাড়াই যদি দেহ কার্য-সম্পাদন করতে পারে তাহলে মানসিক শক্তি বিকাশের কোনো প্রয়োজন
আছে বলেও মনে হয় না।
উপবস্তুবাদ
১) উপবস্তুবাদীদের মতে, মন হলো মস্তিষ্কের উপবস্তু। কিন্তু মন বা চেতনাকে যদি মস্তিষ্কের
উপবস্তু মনে করা হয় তাহলে মনের পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছা ও দেহকে নিয়ন্ত্রিত
করার কোনো ক্ষমতা থাকে না। অথচ মন যে ইচ্ছা ও দেহকে নিয়ন্ত্রিত করে অভিজ্ঞতার
সাহায্যে তা জানা যায়। সুতরাং মনকে মস্তিষ্কের উপবস্তু গণ্য করা যায় না।
২) এই মতবাদ মনকে দেহের উপবস্তু গণ্য করাতে দেহ বা জড়ের তুলনায় মনকে নীচু স্তরের
মনে করে। কিন্তু মন বা চৈতন্যের সাহায্যেই জড় বা দেহকে জানা সম্ভব হয়। মনের সাহায্যেই
কোনো মতবাদের সত্য-মিথ্যা বিচার করা সম্ভব হয়। তাহলে মনকেই পরমতত্ত¡ বলে স্বীকার
করতে হয় এবং জড় বা দেহের তুলনায় মনকে উচ্চ স্তরের সত্তা বলে মনে করতে হয়।
৩) উপবস্তুবাদ মনের উপর দেহের প্রভাব স্বীকার করে, কিন্তু দেহের উপর মনের কোনো
প্রভাব স্বীকার করে না। আমাদের মনে হয়, দেহের উপর মনের প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।
এমন অনেক মহাত্মাই আছেন যারা মনের জোরে দেহে জোর পান। সাধারণ লোকের চেয়ে
তাদের কর্মক্ষমতা অনেক বেশি। সুতরাং দেহের উপর মনের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না।
উন্মেষবাদ
১) উন্মেষবাদীরা মনকে দেহের তুলনায় উচ্চ স্তরের সত্তারূপে গণ্য করায় এই মতবাদের
যুক্তিগ্রাহ্যতা অন্য মতবাদের তুলনায় একটু বেশি। কিন্তু অভিব্যক্তি প্রক্রিয়ার বিশেষ এক স্তরে
দেহ থেকে মন বা চৈতন্যের উন্মেষ কি কারণে হলো তার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা
উন্মেষবাদীরা দেয়ার চেষ্টা করেননি। এর ফলে মতবাদটি পুরোপুরি যুক্তিগ্রাহ্য হয়ে ওঠেনি।
২) জড়ের তুলনায় প্রাণ উচ্চ স্তরের সত্তা, প্রাণের তুলনায় মন উচ্চ স্তরের সত্তা বলে
উন্মেষবাদীরা মনে করেন। কিন্তু প্রাণের মধ্যে মন বা চৈতন্য প্রচ্ছন্নভাবে না থাকলে তা
কিভাবে উন্মেষিত হতে পারে? কে এই উন্মেষ-প্রক্রিয়াকে সাধিত করে, তার কোনো
সন্তোষজনক ব্যাখ্যা উন্মেষবাদীরা দেননি।
পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলাবাদ
১) দেহ ও মনের সঙ্গতি রক্ষার জন্য লাইবনিজ উপলক্ষবাদীদের মত স্রষ্টার সাহায্য গ্রহণ
করেছেন, যা আমাদের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয় না। স্রষ্টার সাহায্যে দেহ ও মনের সম্বন্ধের
ব্যাখ্যা বিজ্ঞানসম্মত নয়।
২) লাইবনিজের মতে, কোনো চিৎপরমাণু অন্য চিৎপরমাণুর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে
না। অথচ স্রষ্টাকে দেহ ও মনের চিৎপরমাণুর মধ্যে সঙ্গতি স্থাপন করতে হলে তাদের উপর
প্রভাব বিস্তার করতে হয়।
৩) স্রষ্টার অবিরত সঙ্গতিসাধন মতবাদের তুলনায় লাইবনিজের পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলাবাদ
সন্তোষজনক মনে হতে পারে। কিন্তু দার্শনিক বিচারে এই মতবাদ সন্তোষজনক নয়।
উপলক্ষবাদে যে অপ্রাকৃতিক ঘটনা নিয়ত সংঘটিত হচ্ছে বলা হয়েছে, লাইবনিজের মতে তা
অতীতে একবার মাত্র সংঘটিত হয়েছিল। দুই মতবাদের মধ্যে এই হলো পার্থক্য।
উপসংহার
দেহ ও মনের সম্পর্কবিষয়ক মতবাদসমূহের সমালোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, এই মতবাদগুলোর কোনোটিই সন্তোষজনক নয়।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ ও সমান্তরালবাদের সমালোচনামূলক মূল্যায়ন করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। উপলক্ষবাদের সমালোচনা লিখুন।
২। উপবস্তুবাদের সমালোচনা লিখুন।
৩। উন্মেষবাদের সমালোচনা লিখুন।
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। দেহ ও মনের সম্পর্কবিষয়ক কোন্
োমতবাদ মেনে নিলে শক্তির
অবিনশ্বরতাবাদ অস্বীকার করতে হয়
র) ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ
রর) উপলক্ষবাদ
ররর) সমান্তরালবাদ
রা) উন্মেষবাদ
২) দার্শনিক মতবাদ হয়েও যুক্তিকে
বিসর্জন দিয়ে ভক্তিমূলক বিশ্বাসে কোন্
োমতবাদ আস্থা স্থাপন করে
র) ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ
রর) উপলক্ষবাদ
ররর) সমান্তরালবাদ
রা) উপবস্তবাদ
৩। কোন্ োমতবাদ মেনে নিলে মনের
দেহ ও ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা
অস্বীকার করতে হয়
র) ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ
রর) উপলক্ষবাদ
ররর) সমান্তরালবাদ
রা) উপবস্তুবাদ
৪। অপ্রাকৃতিক ঘটনা নিয়ত সংঘটিত
হচ্ছে আর অপ্রাকৃিতক ঘটনা অতীতে
একবার মাত্র সংঘটিত হয়েছিল -
সমালোচকদের মতে এই পার্থক্যটুকু
কোন্ োদুটি মতবাদের মধ্যে লক্ষণীয়
র) উপলক্ষবাদ ও পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত
শৃঙ্খলাবাদে
রর) ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ ও
সমান্তরালবাদে
ররর) উপলক্ষবাদ ও সমান্তরালবাদে
রা) উপলক্ষবাদ ও উপবস্তুবাদে
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। উপবস্তুবাদ দেহের উপর মনের প্রভাব অস্বীকার করে।
২। পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলাবাদ সর্বজনস্বীকৃত মতবাদ।
৩। উপলক্ষবাদ দেহ ও মনের সম্পর্কের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছে।
৪। সমান্তরালবাদ দেহের তুলনায় মনের উৎকর্ষ স্বীকার করে না।
সঠিক উত্তর
ক) ১। র) ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াবাদ ২) রর) উপলক্ষবাদ ৩। রা) উপবস্তুবাদ
৪। র) উপলক্ষবাদ ও পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলাবাদে
খ) ১। স ২। মি ৩। মি ৪। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]