আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে প্লেটোর , অ্যারিস্টটল, ডেকার্ট ও বার্কলির মতবাদ , রুশোর বক্তব্য তুলে ধরুন।

আত্মা মরণশীল না অমর? দেহ বিনাশের সাথে সাথে কি আত্মারও বিনাশ ঘটে? এ এক
তাৎপর্যপূর্ণ জিজ্ঞাসা। দেশ-কালভেদে বিভিন্ন দার্শনিক মনের স্থায়িত্ব বা আত্মার অমরত্ব
সম্বন্ধে বিভিন্ন যুক্তি ও মতবাদ প্রদান করেন। বর্তমান ইউনিটে আমরা আত্মার অমরত্ব
সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য যুক্তি ও মতবাদসমূহ আলোচনা করবো।
এই ইউনিটে মোট চারটি পাঠ রয়েছে
 আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে অধিবিদ্যক যুক্তি
 আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে নৈতিক যুক্তি
 আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে ধর্মতাত্তি¡ক যুক্তি
 আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে বিশ্লেষণী মত
আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে অধিবিদ্যক যুক্তি আত্মা মরণশীল নাকি অমর? এই প্রশ্ন নিয়ে দার্শনিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তাই আত্মা বা
মনের অমরত্ব নিয়ে বিভিন্ন যুক্তি ও মতবাদের উদ্ভব হয়েছে। আমরা এখানে আত্মা বা মনের
অমরত্ব সম্পর্কীয় অধিবিদ্যক যুক্তি নিয়ে আলোচনা করবো।
আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে অধিবিদ্যক যুক্তি
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস আত্মার অমরতায় বিশ্বাসী ছিলেন, যদিও এ সম্পর্কে তিনি
বিশেষ কিছু বলেননি। মৃত্যুর সময়ে তিনি তাঁর স্বজনদের উদ্দেশে বলেছিলেন, “দুঃখ করো
না। মনে রেখো মৃত্যু কেবল আমার দেহকেই বিনাশ করবে আত্মাকে নয়”।
প্লেটো তাঁর ‘ফিডো’ ও ‘এপোলজি’ গ্রন্থে আত্মার অমরতা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন।
তাঁর মতে, পৃথিবীতে আত্মার আগমন ঘটেছে স্বর্গলোক থেকে পতনের ফলে। এ জীবনে
সৌন্দর্য অবলোকনের সময় আমরা সুখানুভ‚তির সাথে সাথে একটি প্রচ্ছন্ন বেদনা অনুভব করি।
এই বেদনার কারণ হলো, পৃথিবীতে আগমনের আগে আত্মা সৌন্দর্য অবলোকন করে যে øিগ্ধ
আনন্দানুভ‚তি পেত পার্থিব জগতে সে সেই অনুভ‚তি পায় না। তাই পার্থিব সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ
করার সাথে সাথে তার সেই পুরনো অনুভ‚তি জেগে ওঠে অস্পষ্ট বেদনার আকারে। সৌন্দর্য ও
শুভের প্রতি আমাদের যে স্বাভাবিক আকর্ষণ, প্লেটোর মতে, এটা আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসের একটি জোরালো ভিত্তি।
প্লেটোর মতে, আত্মা একটি আধ্যাত্মিক দ্রব্যবিশেষ। কোনো আধ্যাত্মিক দ্রব্যই যৌগিক হতে
পারে না। সুতরাং আত্মা এক আযৌগিক (ংরসঢ়ষব) দ্রব্য, যা কখনো বিশ্লিষ্ট হতে পারে না।
যা বিশ্লিষ্ট হতে পারে না তার বিনাশ নেই। সুতরাং আত্মা অমর।
অ্যারিস্টটল আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসী। তাঁর মতে, আত্মা শুধু আধ্যাত্মিক দ্রব্যই নয়, বরং
আত্মা হলো দেহের সাংগঠনিক শক্তি ও দেহের আকার। আত্মার সারধর্ম হলো বুদ্ধি। বুদ্ধি
দু’ধরনের: ১) সক্রিয় ও ২) নিষ্ক্রিয়। নিষ্ক্রিয় বুদ্ধি দেহের সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যায়, আর সক্রিয় বুদ্ধি অমর। অ্যারিস্টটল ব্যক্তিগত অমরতায় বিশ্বাসী নন, তাঁর মতে, সক্রিয় বুদ্ধি পরম
সত্তার সাথে একাকার হয়ে যায়। আত্মা যেহেতু আধ্যাত্মিক সত্তা, সেহেতু আত্মা অবিনশ্বর,
শাশ্বত ও অমর।
বার্কলির মতে, আত্মা অবিভাজ্য, অবিমিশ্র ও বিদেহী এবং এর বিস্তৃতি নেই। আত্মা যেহেতু
আধ্যাত্মিক দ্রব্য, সেহেতু আত্মা অবিনশ্বর ও অমর।
লাইবনিজের মতে, আত্মা তার স্বাভাবিক প্রকৃতিতেই অমর। যেহেতু আত্মা আধ্যাত্মিক দ্রব্য
সেহেতু আত্মা অমর।
হেগেল ও নব্য হেগেলীয়ানরা আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসী। তাদের মতে, সসীম আত্মার এ
জগতে নির্দিষ্ট স্থান ও কর্তব্য রয়েছে, কিন্তু এই সসীম আত্মা এই স্বল্পস্থায়ী জগতে তার পূর্ণ
কর্তব্য সমাপ্ত করতে পারে না, তাই মৃত্যুর পরও নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে।
দার্শনিক রুশোও আত্মার অমরতায় বিশ্বাসী। তিনি তাঁর বন্ধু ভলটেয়ারকে লেখা এক চিঠিতে
বলেন, “এ জীবনে আমি এত বেশি দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছি যে, পরলোকের প্রত্যাশা না করে
পারি না। অধিবিদ্যার কোনো ক‚টযুক্তি অমরত্ব ও ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে আমার মনে এতটুকু
সংশয় সৃষ্টি করতে পারবে না। আমি জানি, আমি বিশ্বাস করি, এ আমি প্রত্যাশা করি এবং
জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি এ বিশ্বাসে অটল থাকবো।”
মার্টিনিউ আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, শক্তির অবিনশ্বর নীতি থেকে আত্মার অমরতা
প্রমাণ করা যায়। মৃত্যু শক্তির রূপান্তরমাত্র। যদি এ নীতি শুধুমাত্র দৈহিক শক্তির ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য হয়, তাহলে মন দেহ থেকে স্বাধীন। দেহের ধ্বংস প্রাপ্তির পরও মনের অস্তিত্ব থাকতে
পারে। আবার যদি এ নীতি মানসিক শক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, তাহলে মৃত্যুর সঙ্গে মন
ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। অর্থাৎ দৈহিক শক্তির মত মানসিক শক্তিরও বিনাশ ঘটে না এবং কোনো না
কোনো আকারে এর অস্তিত্ব ঠিক থাকে।
আধুনিককালে আধ্যাত্মিক গবেষণার ফলে যেসব তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে, তা আত্মার অমরতা
সূচনা করে। অধ্যাপক উইলিয়াম ককস্-এর মত বিখ্যাত রসায়নবিদও স্বীকার করেছেন যে,
ব্যক্তিবিশেষকে মাধ্যমরূপে ব্যবহার করলে পরলোকগত আত্মা এই জগতের মানুষের সাথে
কথা বলে। ফলে আত্মা যে অমর তা-ই প্রমাণিত হয়।
সমালোচনা
১) আত্মার অমরতা সম্বন্ধে প্লেটোর প্রমাণ তাঁর আত্মা সম্বন্ধীয় বিশেষ ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত।
এই বিশেষ ধারণা যদি মিথ্যা হয়, তবে তাঁর প্রমাণেরও কোনো মূল্য থাকে না। আত্মাকে
আধ্যাত্মিক দ্রব্য বলা যায় না। সুতরাং প্লেটোর যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।
২) অ্যারিস্টটল, ডেকার্ট, বার্কলি, লাইবনিজ, হেগেল ও হেগেলপন্থীদের মতবাদও প্লেটোর
ন্যায় আতœা সম্বন্ধীয় বিশেষ ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই বিশেষ ধারণা যদি সত্য না হয়
তাহলে তাদের মতবাদেরও কোনো মূল্য থাকে না। বস্তুত ধারণাপ্রস ত কোনো মতবাদকে
নিশ্চিত বা সঠিক বলা যায় না। এদের কেউই আত্মার ধারণাকে যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেননি।
সুতরাং তাদের মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়।
৩) মার্টিনিউ-এর মতবাদ উপমার উপর প্রতিষ্ঠিত। উপমা কখনো কোনো বিষয়কে
সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে না। শক্তির নিত্যতা নীতির সঙ্গে উপমায় আত্মার অমরত্ব
নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে হলে, প্রথমে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে আত্মা একটি শক্তি।
উপসংহার
এ আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, আত্মার অমরত্ব সংক্রান্ত অধিবিদ্যক যুক্তি বা
মতবাদ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধারণা বা উপমার উপর প্রতিষ্ঠিত। যে মতবাদ ধারণা ও উপমার
উপর প্রতিষ্ঠিত সে মতবাদ সম্পর্কে নিশ্চিতরূপে কিছু বলা যায় না।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে অধিবিদ্যক মতবাদটি সমালোচনাসহ আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে প্লেটোর মতবাদ আলোচনা করুন।
২। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে অ্যারিস্টটল, ডেকার্ট ও বার্কলির মতবাদ আলোচনা করুন।
৩। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে রুশোর বক্তব্য তুলে ধরুন।
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কীয় অধিবিদ্যক
মতবাদ অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত
র) ধারণার ওপর
রর) যুক্তির ওপর
ররর) আবেগের ওপর
রা) অনুভ তির ওপর
২। ‘আত্মার সারধর্ম হলো বুদ্ধি’- উক্তিটি
র) সক্রেটিসের
রর) প্লেটোর
ররর) অ্যারিস্টটলের
রা) ডেকার্টের
৩। বার্কলি বলেন
র) আত্মা তার স্বাভাবিক প্রকৃতিতেই অমর
রর) চেতনা আত্মার প্রধান ধর্ম
ররর) আত্মা হলো দেহের সাংগঠনিক শক্তি
ও দেহের আকার
রা) আত্মা অবিভাজ্য, অবিমিশ্র, বিদেহী
এবং এর বিস্তৃতি নেই
৪। কার মতবাদ উপমার উপর প্রতিষ্ঠিত
র) প্লেটোর
রর) মার্টিনিউর
ররর) বার্কলির
রা) লাইবনিজের
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। সক্রেটিস আত্মার অমরতায় বিশ্বাসী ছিলেন না।
২। প্লেটোর মতে, আত্মা একটি আধ্যাত্মিক দ্রব্যবিশেষ।
৩। অ্যারিস্টটল বুদ্ধিকে তিন ভাগে ভাগ করেন।
৪। রুশো বলেন, দৈহিক শক্তির মত মানসিক শক্তির বিনাশ ঘটে না এবং কোনো না কোনো
আকারে এর অস্তিত্ব ঠিক থাকে।
সঠিক উত্তর
ক)
১। র) ধারণার ওপর ২। ররর) অ্যারিস্টটলের ৩। রা) আত্মা অবিভাজ্য, অবিমিশ্র,
বিদেহী এবং এর বিস্তৃতি নেই ৪। রর) মার্টিনিউর
খ) ১। মি ২। স ৩। মি ৪। মি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]