আত্মার অমরত্বের সপক্ষে কান্টের ন্যায়বিচারমূলক ,কান্টের নৈতিক আদর্শমূলক যুক্তিটি , মার্টিনিউর অভিমত উল্লেখ করুন।

আত্মার অমরত্ববিষয়ক যুক্তিগুলোর মধ্যে নৈতিক যুক্তি একটি উল্লেখযোগ্য যুক্তি। এই যুক্তির
প্রবক্তা জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট। তাঁর মতে, নৈতিক জীবনের কোনো মূল্য থাকে না,
যদি আত্মা অমর না হয়। এই পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে আত্মাকে অবশ্যই
অমর হতে হবে। আমরা এখন আত্মার অমরত্ব সম্পর্কীয় নৈতিক যুক্তিটি আলোচনা করবো।
আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে নৈতিক যুক্তি
আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে নৈতিক যুক্তি : কান্ট
কান্ট (১৭২৪-১৮০৪) আত্মার অমরত্বকে নৈতিকতার স্বীকার্য সত্য হিসেবে গণ্য করেন। কান্ট
বলেন, আত্মার অমরত্ব সাধারণভাবে প্রমাণ করা যায় না। কিন্তু নৈতিক জীবনের তাৎপর্য
ব্যাখ্যা করার জন্য আত্মার অমরত্ব স্বীকার করে নিতে হয়। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে কান্ট দু’টি
নৈতিক যুক্তি প্রদান করেছেন :
১) ন্যায়বিচারমূলক যুক্তি
আত্মা যদি অমর না হয় তাহলে ন্যায়পরায়ণতার কোনো মূল্য থাকে না। নৈতিক জীবনের
একটা মূল্য আছে। ফলে যে ভাল কাজ করে তার পুরস্কার এবং যে খারাপ কাজ করে তার
শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তব জীবনে আমরা সাধারণত দেখি যে ভাল কাজ করে সে কষ্ট
পায়, আর যে খারাপ কাজ করে সে সুখে থাকে। এসব বিরোধিতা দূর করার জন্য পরকাল
বলে একটা জায়গা থাকা দরকার, যেখানে পূণ্যবানরা পুরস্কৃত এবং পাপীরা শাস্তি পাবে। আর এজন্য আত্মাকে অবশ্যই অমর হতে হবে।
২) নৈতিক আদর্শমূলক যুক্তি
কান্টের মতে, নৈতিক জীবন হচ্ছে আদর্শকে পাওয়ার জন্য একটা দ্ব›দ্ব বা সংগ্রাম। কিন্তু এ
আদর্শকে এ জীবনে সন্তোষজনকভাবে পাওয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, মানুষের জৈবিক
সত্তা যখন সম্পূর্ণভাবে বৌদ্ধিক সত্তার নিয়ম মেনে চলে
তখনই নৈতিক জীবনের আদর্শ প র্ণতা লাভ করে। বৌদ্ধিক সত্তার সাথে মানুষের জৈবিক
সত্তার এই সঙ্গতি লাভ মানুষের নৈতিক জীবনের আদর্শ। এই আদর্শ এক জীবনে বাস্তবে
পরিণত করা যায় না। এই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য জন্ম-জন্মান্তরের সাধনা দরকার। সুতরাং
এই নৈতিক আদর্শের বাস্তবতা প্রতিপাদনের জন্য আত্মার অমরতা স্বীকার করতে হয়। আত্মা
যদি অমর না হত তবে নৈতিক জীবন নিরর্থক হয়ে পড়ত। আত্মার অমরতা স্বীকার করলেই
নৈতিক আদর্শ যে বাস্তবায়িত করা সম্ভব তা স্বীকার করা যায়, আর তা না মানলে নৈতিক
আদর্শের কোনো অর্থ থাকে না। যে নৈতিক আদর্শকে বাস্তবায়িত করা যায় না তার কোনো
মূল্য নেই। সুতরাং নৈতিক আদর্শের সার্থকতা প্রতিপন্ন করার জন্য আত্মার অমরতা স্বীকার করতে হয়।
আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে নৈতিক যুক্তি : সেথ ও হফডিং
জেমস সেথ (ঔধসবং ঝবঃয) বলেন, নৈতিক আদর্শ হলো অসীম এবং এ জগৎ হলো সসীম।
সসীম জগতে অসীম আদর্শের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। নৈতিক আদর্শের বাস্তবায়নের জন্য অসীম
সময়ের প্রয়োজন। তাই আত্মাকেও অসীম অর্থাৎ অমর হতে হবে। হফডিং (ঐড়ভভফরহম) তাঁর
মূল্যের নিত্যতা নীতি অনুসারে বলেন যে, আমরা এ জীবনে যে মূল্য বা মান অর্জন করি তা
নৈতিক ক্রমবন্ধনে সংরক্ষিত থাকে, এর কোনো ধ্বংস নেই। এসব মূল্যকে বহন করার জন্য
মৃত্যুর পরও মানবাত্মাকে অমর হয়ে থাকতে হয়। অর্থাৎ আত্মা অমর।
আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে নৈতিক যুক্তি : মার্টিনিউ
মার্টিনিউ ও আত্মার অমরতার সপক্ষে নৈতিক যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর ‘স্টাডি
অফ রিলিজিয়ন’ গ্রন্থে তিনি বলেন, মানবাত্মার গঠনের আসল
প্রকৃতি থেকে এর অমরত্বের বেশ কতকগুলো ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এগুলোকে তিনি তিন ভাগে
ভাগ করেন: ১। বুদ্ধির ইঙ্গিত বা ভবিষ্যদ্বাণী ) ২। বিবেকের
ইঙ্গিত বা ভবিষ্যদ্বাণী ও ৩। উদ্বেগের ইঙ্গিত বা
ভবিষ্যদ্বাণী
১) বুদ্ধির ইঙ্গিত বা ভবিষ্যদ্বাণী
বুদ্ধি¦র ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, বুদ্ধির উন্নতি আত্মার উন্নতি; কেননা বুদ্ধি আত্মার সারসত্তা। এ
জীবনে দেশ ও কালের সীমাবদ্ধতার মধ্যে বুদ্ধির উন্নতি হতে পারে না, দেশ ও কালের গন্ডি
অতিক্রম করতে পারলেই বুদ্ধির উন্নতি লাভ সম্ভব হয়। তাই মৃত্যুর মাধ্যমে এই সসীম পৃথিবী
থেকে মুক্তিলাভ করে বুদ্ধি উন্নতির শীর্ষে পৌঁছাতে পারে। আর এজন্য আত্মাকে অমর হতে
হবে।
২) বিবেকের ইঙ্গিত বা ভবিষ্যদ্বাণী
এ ইঙ্গিত অনুসারে, আমাদের বিবেক নৈতিক প্রগতির জন্য আশা-আকাক্সক্ষায় পরিপূর্ণ। কিন্তু
প্রগতি একটা অসীম পদ্ধতিরই ইঙ্গিত দেয়। আমরা প্রগতির যতই উন্নত স্তরে উঠি, ততই
আমরা আদর্শকে পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের দিকে ধাবিত হই। নৈতিক প্রগতির উচ্চ স্তরে পৌঁঁছার
জন্য বিবেকের এই যে আকাক্সক্ষা তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, মৃত্যুর পরও আত্মা তার
অস্তিত্বকে বজায় রেখে নৈতিক আদর্শকে উন্নতভাবে লাভ করতে পারে। তাই আত্মা অমর। ৩) উদ্বেগের ইঙ্গিত বা ভবিষ্যদ্বাণী
এ ইঙ্গিত নৈতিকতাপূর্ণ কাজ ও সুখের সঙ্গতির কথা বলে। কিন্তু এ জীবনে এ সঙ্গতি সম্ভবপর
হয়ে ওঠে না বলে পরকালের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়, যেখানে এর সঙ্গতি বিধান সম্ভব।
সুতরাং আত্মা অমর।
ব্যক্তিগত অমরত্ব হচ্ছে নৈতিকতার একটা প্রয়োজনীয় শর্ত। নৈতিক জীবন হলো ব্যক্তি
জীবন। কোনো ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত জীবনেই নৈতিক আদর্শকে উপলব্ধি করে থাকে। যদি
ব্যক্তির নৈতিক আত্মা অসীম আত্মা স্রষ্টার সাথে মিলে যায়, তবে তার নৈতিক জীবন লোপ
পায়। নৈতিক জীবন প্রাকৃতিক জীবন বা ঐশ্বরিক জীবনের সাথে মিশে যেতে পারে না।
সমালোচনা
নৈতিক জীবনের তাৎপর্য রক্ষার জন্য আত্মার অমরত্বের প্রয়োজন। কিন্তু কোনো জিনিসের
প্রয়োজন হলেই যে তা অস্তিত্বশীল তা প্রমাণিত হয় না। নৈতিক জীবনের জন্য আত্মার অমরত্ব
দরকার বা উচিত, কিন্তু বাস্তব আর উচিত এককথা নয়। আমার ১০০ টাকার খুব প্রয়োজন,
তার মানে এ নয় যে, আমার পকেটে ১০০ টাকা আছে।
নৈতিক যুক্তির প্রবক্তাদের বক্তব্য হচ্ছে, নৈতিক আদর্শ অসীম, সসীম জীবনে তা বাস্তবায়ন
করা সম্ভব নয়। সসীম জীবনে এটা সম্ভব নয় বলেই আত্মা অসীম জীবন পাবে তা নিশ্চিত করে
বলা যায় না। তাছাড়া, অধ্যাপক ব্রড বলেন, সুখ-শান্তি হলো মনোদৈহিক ব্যাপার। সুতরাং
দেহ ছাড়া সুখ লাভ দুরূহ ব্যাপার।
উপসংহার
একথা ঠিক, মানুষের সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য আত্মার অমরত্বের প্রয়োজন। আত্মা
যদি অমর না হয়, তাহলে যারা পরকালে ভাল ফল লাভের আশায় অনেক মন্দ কাজ থেকে
বিরত থাকে এবং ভাল কাজ করে, তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। তাছাড়া, সবাই যদি
নিশ্চিত জানে যে, এ পৃথিবীই শেষ, তাহলে মানুষের মধ্যে পাওয়ার আকাক্সক্ষা বেড়ে যাবে,
দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেড়ে যাবে, পৃথিবী হয়ে যাবে অশান্তিতে পূর্ণ। সুতরাং পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা
বজায় রাখার জন্য আমাদের আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস করা উচিত। কিন্তু এহলো বিশ্বাস বা
ঔচিত্যের ব্যাপার। যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো বিশ্বাস বা মতের দার্শনিক গুরুত্ব নেই।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কীয় নৈতিক যুক্তিটি ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। আত্মার অমরত্বের সপক্ষে কান্টের ন্যায়বিচারমূলক যুক্তিটি ব্যাখ্যা করুন।
২। আত্মার অমরত্ব প্রসঙ্গে কান্টের নৈতিক আদর্শমূলক যুক্তিটি ব্যাখ্যা করুন।
৩। আত্মার অমরত্বের সপক্ষে মার্টিনিউর অভিমত উল্লেখ করুন।
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে নৈতিক
যুক্তিটি প্রদান করেন
র) হেগেল
রর) কান্ট
ররর) জেমস সেথ
রা) হফডিং
২। মার্টিনিউ মানবাত্মার অমরত্বের যে
ইঙ্গিত দেন তাকে ভাগ করা হয়
র) দুই ভাগে
রর) তিন ভাগে
ররর) চার ভাগে
রা) ছয় ভাগে
৩। “জীবনের মূল্য বহন করার জন্য
মৃত্যুর পরও মানবাত্মা অমর হয়ে থাকে”উক্তিটি করেন
র) কান্ট
রর) হফডিং
ররর) মার্টিনিউ
রা) জেমস সেথ
৪। জৈবিক সত্তা যখন বৌদ্ধিক সত্তার
নিয়ম মেনে চলে তখনই নৈতিক জীবনের
আদর্শ পূর্ণতা লাভ করে, কথাটি বলেন
র) কান্ট
রর) হেগেল
ররর) হফডিং
রা) জেমস সেথ
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। কান্ট আত্মার অমরত্বকে নৈতিকতার স্বীকার্য সত্য বলে গণ্য করেন।
২। জেমস সেথ বলেন, নৈতিক আদর্শ হলো সসীম, আর এ জগৎ হলো অসীম।
৩। হফডিং বলেন, নৈতিক জীবনের জন্য আত্মার অমরতার কোনো প্রয়োজন নেই।
৪। মার্টিনিউ তাঁর ‘স্টাডি অফ রিলিজিয়ন’ গ্রন্থে মানবাত্মার অমরতা নিয়ে আলোচনা করেন।
সঠিক উত্তর
ক)
১। রর) কান্ট ২। রর) তিন ভাগে
৩। রর) হফডিং ৪। র) কান্ট
খ) ১। স ২। মি ৩। মি ৪। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]