আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে ইহুদি ধর্মের মতামত, আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের মতামত, আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে কর্মবাদ ব্যাখ্যা করুন।

আত্মার অমরতা সম্পর্কে ধর্মীয় যুক্তি বিভিন্ন ধর্মের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। পৃথিবীর
বেশীরভাগ ধর্মেই একজন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সত্তার কথাকে স্বীকার করা হয়েছে। যিনি
এই পৃথিবীর সকল মানুষের কর্মের ফলাফল বিচার করবেন এবং মানুষকে সেই ফলাফল ভোগ
করতে হবে। আর এই ফলাফল ভোগ করার জন্য মানুষের আত্মাকে অবশ্যই অমর হতে
হবে।
আত্মার অমরতা সম্পর্কে ধর্মীয় যুক্তি
ইহুদি ধর্ম
পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে ইহুদি ধর্মেই প্রথম ব্যক্তিগত অমরত্বের কথা বলা হয়। অবশ্য
ইহুদি চিন্তার প্রথম পর্বে পরলোকের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল তা হলোপরলোক নয়,
ইহলোকই উপভোগ্য; আর যতটুকু সম্ভব এ জীবনকে উপভোগ করাই মানুষের কাম্য। মৃত্যুর
পরপারে রয়েছে শেওল; ওখানে শান্তির যেমন কোনো ব্যবস্থা নেই, উপভোগ করার মতোও
কিছু নেই। পরবর্তীতে বলা হয়, মৃত্যুর পর পরলোকে ব্যক্তির পুনরুত্থান হবে এবং কুণ্যবানরা
লাভ করবেন ঈশ্বরের সান্নিধ্য। ইহুদি পয়গম্বররা আত্মার অমরত্ব ও আনন্দঘন পারলৌকিক
জীবনের যে আশ্বাস দেন তা থেকেই ইহুদি দর্শনে গড়ে ওঠে আত্মার অমরত্ববিষয়ক মতবাদ।
খ্রিস্ট ধর্ম
খ্রিস্ট ধর্ম মতে, দেহাবসানের পরও আত্মা অমর থাকে। এ ধর্ম মৃত্যুর পরেও ব্যক্তি তার
ব্যক্তিত্বের যাবতীয় বৈশিষ্ট্যসহ অমর থাকে এবং ঈশ্বরের সাথে মিলনের সুযোগ লাভ করে।
আত্মার অমরত্বের জন্য প্রয়োজন নৈতিক দিক থেকে সৎ ও শুভ পার্থিব জীবন। যারা সৎ ও শুভ জীবনের পুরস্কারস্বরূপ অমরত্ব লাভ করেন, তাদের জন্য মৃত্যু একটি আপতিক
ঘটনামাত্র। মৃত্যুতে ইহলোক ও পরলোকের মধ্যে যোগস ত্র স্থাপিত হয় এবং পুণ্যবানরা
পরলোকে তাদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য নিয়ে বেঁচে থাকেন।
ইসলাম
ইসলাম ধর্ম অনুসারে, আত্মা অমর। কিন্তু দেহের মৃত্যু মানব জাতির অভিন্ন ও অলঙ্ঘনীয়
নিয়তি। কুরআন শরীফে আত্মাকে আল্লাহ্র একটা আদেশ বলে অভিহিত করা হয়েছে। “বল,
আত্মা হলো, আমার প্রভুর আদেশের মধ্যে একটি” - আল কুরআন। ইসলাম ধর্ম অনুসারে,
মৃত্যুর পর আত্মা বেঁচে থাকবে এবং শেষ বিচারের দিন তার পূর্বের দেহ ধারণ করবে। আল্লাহ্
সকলের প্রতি পূর্ণ ন্যায় ও সুবিচার করবেন। প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মের ফল ভোগ করবে।
পাপীরা দোযখের আগুনের দুঃসহ যন্ত্রণা এবং পুণ্যাত্মারা বেহেস্তের অনন্ত সুখ ভোগ করবে। এজন্যই আত্মাকে অমর হতে হবে।
হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম : কর্মবাদ
হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে আত্মার অমরতা সম্পর্কে কর্মবাদের কথা স্বীকার করা হয়েছে। কর্মবাদ
অনুসারে, এক জনমের আনন্দ-বিষাদের ফলাফলের প্রেক্ষিতে পরবর্তী বার মানুষকে আবার
পৃথিবীতে ফিরে আসতে হয়। কর্মবাদের মূল বক্তব্য হলো ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’। পুণ্যবান
আত্মা নির্বান বা মুক্তি লাভ করে। কিন্তু যে আত্মা পাপী তার নির্বাণ লাভ না হওয়া পর্যন্ত পুনঃ
পুনঃ জন্মের মাধ্যমে কর্মফল ভোগ করতে হয়। সুতরাং আত্মা অমর।
সমালোচনা
১) ইহুদি, খ্রিস্টান, ইসলাম প্রভৃতি ধর্মে পরকালের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ মৃত্যুর মাধ্যমে
দেহের অবসান ঘটবে, আর আত্মা পরকালে চিরকাল বেঁচে থাকবে। এর কোনো ধ্বংস নেই।
ধর্মের এই মত যুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত নয়। তাই আত্মা যে অমর তা নিশ্চিত করে বলা যায়
না।
২) কর্মবাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ হলো, পূর্ববর্তী জীবনের কর্মফলের পুরস্কার বা
তিরস্কার অর্থবহ হবে তখনই, যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনে পূর্ববর্তী জীবনের সুস্পষ্ট স্মৃতি অক্ষুণœ
থাকবে। পূর্বজন্মের মানুষকে পরবর্তী জীবনে পশু হিসেবে পাঠিয়ে শাস্তি দেয়া ফলপ্রসূহবে
তখনই যখন সেই প্রাক্তন মানুষটি তার পূর্ববর্তী মানবীয় জীবনের স্মৃতিচারণ করে বর্তমান
পাশবিক জীবনে অধঃপতনের জন্য মর্মবেদনা ও অপমানবোধ করবে। কিন্তু পূর্ববর্তী জীবনের
কোনো স্মৃতি বা চেতনাসম্পন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না।
উপসংহার
ধর্মবিষয়ক যুক্তিটি মূলত গড়ে উঠেছে ধর্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। পৃথিবীর প্রধান প্রধান
ধর্মগুলো আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসী। প্রায় সকল ধর্মেই এক সর্বময় সত্তার কথা এবং মানুষের
দেহাবসানের পরে পার্থিব কর্মের দায়-দায়িত্ব আত্মাকে বহন করতে হবে বলে স্বীকার করা
হয়। পার্থিব জীবনের কর্মের দায়িত্ব আত্মাকে বহন করতে হবে -এই স্বীকৃতি মানুষের পার্থিব
জীবনকে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ করে তোলে। সুতরাং যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে আত্মার অমরত্ব যদি স্বীকৃত নাও হয় তথাপি এর ব্যবহারিক মূল্য অনেক।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কীয় ধর্মবিষয়ক যুক্তিটি ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে ইহুদি ধর্মের মতামত বর্ণনা করুন।
২। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের মতামত ব্যাখ্যা করুন।
৩। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে কর্মবাদ ব্যাখ্যা করুন।
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে ধর্মীয় যুক্তি
গড়ে উঠেছে
র) প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে
রর) মুক্তির উপর ভিত্তি করে
ররর) ধর্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে
রা) নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে
২। “মৃত্যুর মাধ্যমে ইহলোক ও
পরলোকের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত
হয় এবং পূণ্যবানরা পরলোকে
তাদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য নিয়ে
বেঁচে থাকে” - বক্তব্যটি
র) ইহুদি ধর্মের
রর) খ্রীষ্টান ধর্মের
ররর) ইসলাম ধর্মের
রা) হিন্দু ধর্মের
৩। “বল, আত্মা হলো আমার প্রভুর
আদেশের মধ্যে একটি।” - উক্তিটি করা
হয়েছে
র) তাওরাতে
রর) যাবুরে
ররর) ইঞ্জিলে
রা) কোরআনে
৪। কর্মবাদের মূল বক্তব্য হলো
র) যেমন কর্ম তেমন ফল
রর) যেমন কুকুর তেমন মুগুর
ররর) যেমন ওস্তাদ তেমন শিষ্য
রা) যেমন গুড় তেমন মিষ্টি
ঘ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১. পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলাম ধর্মেই সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত অমরতার কথা বলা হয়।
২. ইহুদি ধর্ম অনুযায়ী, মৃত্যুর পরপারে রয়েছে শেওল।
৩. খ্রিস্ট ধর্ম অনুযায়ী, আত্মার অমরত্বের জন্য প্রয়োজন নৈতিক দিক থেকে সৎ ও শুভ পার্থিব
৪. জীবন।
৫. হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী, কেবল পাপী আত্মাই নির্বাণ লাভ করবে।
সঠিক উত্তর
ক)
১। ররর) ধর্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ২। রর) খ্রীষ্টান ধর্মের
৩। রা) কোরআনে ৪। র) যেমন কর্ম তেমন ফল
খ) ১। মি ২। স ৩। স ৪। মি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]