দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়? দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।

জগৎ, জীবন ও জ্ঞানের বিষয়ে সাধারণত আমরা যেসব ধারণা বা বিশ্বাস করি তার যৌক্তিকতা
ও মূল্যাবধারণই দর্শনের কাজ। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞানের সম্ভাবনা, জড়, প্রাণ, মন ও
স্রষ্টার অস্তিত্ব আমরা মেনে নিলেও দার্শনিকরা এগুলোর স্বরূপ নির্ধারণের চেষ্টা করেন। বিচার
করে দেখেন - আমাদের পক্ষে কতটুকু জানা সম্ভব? জ্ঞানের সীমা কি? জ্ঞানের সত্যতা কিসের
উপর নির্ভর করে? জড়ের সাথে প্রাণের স¤পর্ক কি? স্রষ্টা আছেন কি? স্রষ্টার সাথে জীব ও
জগতের স¤পর্ক কি? ইত্যাদি। সুতরাং দর্শনের বিষয়বস্তুর পরিসর খুবই ব্যাপক। সমস্ত বিশ্বই
দার্শনিক আলোচনার বিষয়বস্তু। কেয়ার্ড (ঈধরৎফ) বলেন, “মানুষের অভিজ্ঞতার এমন কোনো
দিক নেই, সমগ্র বিশ্বসত্তার মধ্যে এমন কিছু নেই, যা দর্শনের আওতার বাইরে পড়ে বা
দার্শনিক অনুসন্ধান কার্য যার দিকে প্রসারিত হয় না”। তবে দর্শন সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্যে
তার আলোচ্য বিষয়ের ব্যাখ্যা দেয়। দর্শনের আলোচ্য বিষয়কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা
যায়:
১) অধিবিদ্যা ২) জ্ঞানতত্ত¡ ও ৩) মূল্যবিদ্যা। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো
অধিবিদ্যা
দর্শনের যে শাখা দেশ, কাল, কার্যকারণ তত্ত¡, জড়, প্রাণ, মন ও স্রষ্টার স্বরূপ নিয়ে আলোচনা
করে তার নাম অধিবিদ্যা। অধিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়কে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়: ক.
বিশ্বতত্ত¡ খ. তত্ত¡বিদ্যা ও গ. মনোদর্শন।
ক. বিশ্বতত্ত¡
অধিবিদ্যার যে শাখায় বিশ্বজগতের পরিদৃশ্যমান দিকের অনুসন্ধান করা হয় তাকে বিশ্বতত্ত¡
বলে। দেশ, কাল, জড়, প্রাণ, কার্যকারণ তত্ত¡, বিশ্বজগতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, অর্থাৎ সৃষ্টি
ও বিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে এ শাখা আলোচনা করে। বস্তুর পরিদৃশ্যমান বা বাহ্যিক রূপ নিয়ে
আলোচনা করে বলে একে রূপবিজ্ঞান বা অবভাস বিজ্ঞান বলে।
বিভিন্ন বিজ্ঞান এই অবভাস বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।
খ. তত্ত¡বিদ্যা
বিশ্বজগতের প্রকৃত সত্তা স¤পর্কীয় আলোচনাকে তত্ত¡বিদ্যা বলে। ‘’ শব্দটি গ্রিক
শব্দ ‘অনটজ’ এবং ‘লগজ’ () থেকে উদ্ভ‚ত হয়েছে। ‘’ শব্দটির
অর্থ সত্তা এবং শব্দটির অর্থ বিদ্যা বা বিজ্ঞান। তাই ঙহঃড়ষড়মু-র অর্থ হচেছ সত্তা
স¤পর্কীয় বিজ্ঞান (ঝপরবহপব ড়ভ ইবরহম)। তত্ত¡বিদ্যায় একত্ববাদ, দ্বৈতবাদ, বহুত্ববাদ,
জড়বাদ, অধ্যাÍবাদ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। তত্ত¡বিদ্যায় বিশ্বজগতের আদি সত্তা
অর্থাৎ স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে কিনা, থাকলে তার সাথে জীব ও জগতের কি স¤পর্ক ইত্যাদি বিষয়
আলোচিত হয়।
গ. মনোদর্শন
মনোদর্শনে প্রধানত মন বা আত্মার স্বরূপ, দেহ ও মনের স¤পর্ক, ইচছার স্বাধীনতা, আত্মার
অমরত্ব ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। মনোদর্শন সা¤প্রতিককালে দর্শনের একটি বিশেষ
শাখা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
জ্ঞানতত্ত¡
দর্শনের যে শাখা জ্ঞানের স্বরূপ, উৎপত্তি, সম্ভাবনা, সীমা ও যথার্থতা নিয়ে আলোচনা করে,
তাকে জ্ঞানতত্ত¡ বলে। জীবন, জগৎ ও স্রষ্টার স্বরূপ স¤পর্কে জ্ঞানলাভ করার আগে দার্শনিককে
বিচার করে দেখতে হবে যে, যথার্থ জ্ঞান কি এবং তা লাভ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব কিনা?
যথার্থ জ্ঞান লাভের উপায় কি? আমরা কতটুকু জানতে পারি? আমাদের জ্ঞানের উৎপত্তি
কিভাবে হয়? যথার্থ জ্ঞানের শর্ত কি কি? জ্ঞানের সত্যতা এবং মিথ্যাত্ব কিভাবে নিরূপণ করা
যায়? জ্ঞান স¤পর্কীয় এসব জিজ্ঞাসাই জ্ঞানতত্তে¡র আলোচ্য বিষয়।
মূল্যবিদ্যা (অীরড়ষড়মু)
দর্শনের যে শাখা মূল্যাবধারণ ও মূল্যবিষয়ক বচন নিয়ে আলোচনা করে তাকে মূল্যবিদ্যা
বলে। মূল্যবিষয়ক বচনের স্বরূপ, সত্য-মঙ্গল-সুন্দরের স্বরূপ অবধারণ মূল্যবিদ্যার কাজ।
মূল্যবিদ্যার ৪টি শাখা:
ক. যুক্তিবিদ্যা
খ. নন্দনতত্ত¡
গ. নীতিবিদ্যা
ঘ. সমাজ দর্শন
ক. যুক্তিবিদ্যা (খড়মরপ)
মূল্যবিদ্যার যে শাখা সত্যের প্রকৃতি ও আকার নিয়ে আলোচনা করে তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে।
বেঠিক যুক্তি থেকে কিভাবে সঠিক যুক্তিকে পৃথক করা যায় তার বিভিন্ন নিয়ম-কানুন
যুক্তিবিদ্যায় আলোচিত হয়।
খ. নন্দনতত্ত¡ (অবংঃযবঃরপং)
মূল্যবিদ্যার যে শাখা সৌন্দর্যের প্রকৃতি নির্ণয় করে তাকে নন্দনতত্ত¡ বা সৌন্দর্যবিদ্যা বলে।
সৌন্দর্যবিদ্যায় সৌন্দর্যের স্বরূপ, সৌন্দর্য নিরূপণের মানদন্ড প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়।
গ. নীতিবিদ্যা
মূল্যবিদ্যার যে শাখা সামাজিক ব্যক্তির কল্যাণের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে তাকে
নীতিবিদ্যা বলে। নীতিবিদ্যা শুভ বা মঙ্গলের স্বরূপ, শুভের মানদন্ড, এককথায় মানবীয় কর্মের ভাল-মন্দ নিয়ে আলোচনা করে।
ঘ. সমাজ দর্শন
মূল্যবিদ্যার যে শাখা সমাজ কল্যাণের প্রকৃতি নির্ণয় করে তাকে সমাজ দর্শন বলে। সামাজিক
রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির মূলে কোনো উদ্দেশ্য, আদর্শ ও মূল্য আছে
কিনা- এসব বিষয় সমাজদর্শনে আলোচিত হয়।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, দর্শনের আলোচ্য বিষয়কে প্রধানত তিন ভাগে
ভাগ করা হলেও এদের আবার বিভিন্ন উপ-বিভাগ আছে। তদুপরি দর্শনের আলোচ্য বিষয়ের
ব্যাপকতার কারণে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক দার্শনিক আলোচনা গড়ে উঠেছে যথা- ইতিহাস দর্শন,
অর্থনৈতিক দর্শন, রাজনৈতিক দর্শন, শিক্ষা দর্শন, ধর্ম দর্শন প্রভৃতি।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। দর্শনের বিষয়বস্তু আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়? দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে
অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।
২। দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে মূল্যবিদ্যা ব্যাখ্যা করুন।
৩। দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে জ্ঞানতত্ত¡ আলোচনা করুন।
ক. বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত
র) ২ ভাগে ভাগ করা যায়
রর) ৩ ভাগে ভাগ করা যায়
ররর) ৪ ভাগে ভাগ করা যায়
রা) ৫ ভাগে ভাগ করা যায়
২। যুক্তিবিদ্যা কোনো বিভাগের অন্তর্গত
র) অধিবিদ্যার
রর) জ্ঞানতত্তে¡র
ররর) মূল্যবিদ্যার
রা) কোনোটারই নয়
৩। সমাজবদ্ধ ব্যক্তির মঙ্গল নিয়ে
আলোচনা করে
র) যুক্তিবিদ্যা
রর) নন্দনতত্ত¡
ররর) সমাজ দর্শন
রা) নীতিবিদ্যা
৪। জ্ঞানের উৎপত্তি, স্বরূপ, সম্ভাবনা
ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে
র) জ্ঞানতত্ত¡
রর) অধিবিদ্যা
ররর) মূল্যবিদ্যা
রা) মনোদর্শন
খ. সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। বস্তুর পরিদৃশ্যমান রূপ নিয়ে আলোচনা করে তত্ত¡বিদ্যা।
২। স্রষ্টার অস্তিত্ব আছে কিনা আলোচনা করে বিশ্বতত্ত¡।
৩। অধিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় তিন ভাগে বিভক্ত।
৪। মনোদর্শন মন বা আত্মার স্বরূপ, ইচছার স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে।
সঠিক উত্তর
ক.
১। রর) ৩ ভাগে ভাগ করা যায় ২। ররর) মূল্যবিদ্যার ৩। রা) নীতিবিদ্যা ৪। র) জ্ঞানতত্ত¡
খ. ১। মি ২। মি ৩। স ৪। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]