মূল্যের শ্রেণীকরণ নির্দেশ করুন। মানসিক মূল্যগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করুন।

মূল্য সম্পর্কীয় সমস্যা অতীত কালের ন্যায় বর্তমানে কেবলমাত্র দার্শনিক সম্প্রদায়ের মধ্যে
সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা কঠোর বস্তুবাদী বিজ্ঞানী থেকে সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনার মধ্যেও
পরিলক্ষিত হয়। সম্ভবত মানুষের চিন্তা-ভাবনার বিবর্তন ও জগতের সাথে আরও বেশি একাÍতা
অনুভবই মূল্যের আলোচনার প্রয়োজনীয়তাকে বাড়িয়ে তুলেছে। তাই সঙ্গত কারণেই অন্যান্য
বিষয়ের মতই মূল্যের শ্রেণীকরণ করা হয়েছে।
মান বা মূল্যের প্রকারভেদ
প্রকৃতপক্ষে দৈহিক মূল্য নামে কোনো মূল্যকে স্বীকার করা হবে কি হবে না, তা নিয়ে বেশ
বিতর্কের অবকাশ আছে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে যুক্তির তাগিদে দৈহিক মূল্যকে স্বীকার করে নিতে
হয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যৌন বাসনা, স্বাস্থ্য প্রভৃতিকে দৈহিক মূল্য নামে অভিহিত করা হয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতা বা আÍিক পরিপূর্ণতা মানব জীবনের চরম লক্ষ্য। বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতা
ব্যতীত অন্য কোনো আদর্শ মানব জীবনের আদর্শ হতে পারে না বা তা কোনো প্রকারে
মানবীয় বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নিষ্কন্টক জীবন কোনো কিছু লাভের সহায়ক নয়।
বরং প্রতিবন্ধকতার মাঝে মানুষ তার আপন বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর বা উজ্জ¦ল হয়ে ওঠে। পার্থিব
জীবনের যাবতীয় কামনা-বাসনাকে সুনিয়ন্তিত করে প্রকৃত মুক্তি বা মানবতার বিজয়ের স্বাদ
লাভ করা যায়। প্রকৃত অর্থে আমরা যে আত্মাকে উপলব্ধি করি তা দেহের অস্তিত্বের জন্যই
সম্ভবপর হয়। কাজেই দেহ ও আত্মা একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। অর্থাৎ দেহ
মানব আকাক্সিক্ষত পরম লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক ভ‚মিকা পালনে আবশ্যকীয়, যা প্রকারান্তরে
দৈহিক মূল্যকে স্বীকার করে এবং গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে বৃদ্ধি করে।
অর্থনৈতিক মূল্য
আদিম সাম্যবাদী সমাজে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে কিছু ছিল না। সব কিছু ছিল
সামষ্টিক। মানুষ ইচ্ছে মত যে কোন দ্রব্য ভোগ করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষের চিন্তা-
চেতনার বিবর্তনের ফলে সম্পত্তি সামষ্টিক থেকে গোষ্ঠীগত এবং অবশেষে ব্যক্তিগত সম্পত্তি
রূপে ধারণা লাভ করলো। কাজেই যে আদিম সাম্যবাদী সমাজে বস্তুর মূল্যের কোনো
আবশ্যকতা ছিল না, তা আজকের সমাজ বাস্তবতায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আর এ বিষয়টি
অর্থনৈতিক মূল্যকে নির্দেশ করে।
পুঁজিবাদী সমাজ কাঠামোতে কোনো ব্যক্তিই তার মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য সকল দ্রব্যের
মালিক নয়। কাজেই চাহিদা প রণে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা আবশ্যক। পুঁজিবাদী সমাজ
ব্যবস্থার আগে প্রাক-পুঁজিবাদী সমাজে দ্রব্যের বিনিময়ে দ্রব্যের ব্যাপক প্রচলন ছিল। কিন্তু
তাতে যে সমস্যা ছিল তা হলো বিনিময়কারী দুই ব্যক্তির মাঝে সেই সকল পণ্যের
প্রয়োজনীয়তা। এই অচলাবস্থা নিরসনে কাগুজে মুদ্রার প্রচলন হয়েছে যা দ্বারা নির্দিষ্ট মূল্যে
কোনো দ্রব্য ক্রয় সম্ভব। অর্থাৎ মুদ্রার মাধ্যমে যে সকল বস্তু বা দ্রব্যের বিনিময় সম্ভব তাই সে
দ্রব্যের অর্থনৈতিক মূল্যকে উপস্থাপন করে।
মানসিক মূল্য
চিন্তা, অনুভ‚তি ও কৃতি ( এ তিনটি মনের বৃত্তি। এ
তিনটি বৃত্তি যথাক্রমে সত্য, সুন্দর ও মঙ্গলকে নির্দেশ করে। এগুলোই মানসিক মূল্য নামে
অভিহিত। মানব জীবনের পরম মূল্যকে এরাই প্রতিনিধিত্ব করে। কেবলমাত্র এদেরই স্বতঃমূল্য
বিদ্যমান। কেননা সুন্দরকে সুন্দর, মঙ্গলকে মঙ্গল এবং সত্যকে সত্য বলেই আমরা গ্রহণ
করি। নিচে প্রত্যেকটির আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হলো:
চিন্তার মূল্য : মানুষ মাত্রই চিন্তাশক্তির অধিকারী। এটা তার
আপন বৈশিষ্ট্য। ক্রমাগত চিন্তাশক্তির ব্যবহার ও তাকে শাণিত করে চিন্তার আদর্শ সত্যকে
লাভ করাই মানব জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। সত্যকে লাভ করা সম্ভব কি সম্ভব নয় এ সংশয়ে
কালক্ষেপণ না করে সত্য লাভের তৎপরতায় চিন্তার অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করার দায় বর্তায়।
ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বা জাতিতে জাতিতে ‘সত্য’ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা বিদ্যমান। তবে এটা
অত্যন্ত স্বাভাবিক, কেননা প্রত্যেকেই আলাদা সামাজিক পরিমন্ডলের মাঝে বেড়ে উঠেছে,
জীবনের কাছে প্রত্যাশা ও জীবনকে নিজ নির্দিষ্ট সত্যের মানদন্ডে চালনা করাই তার অভীপ্সা।
তবে যতই পার্থক্য বা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হোক না কেন সত্যকামী এবং আত্ম-উন্নয়নশীল
ব্যক্তির মাঝে প্রাথমিক পর্যায়ে সত্য সম্পর্কে একটি অস্পষ্ট ধারণা থাকবে, পর্যায়ক্রমে তা
সুস্পষ্ট ও দৃঢ় ধারণায় রূপান্তর লাভ করবে। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিন্তা সত্যের
সর্বজনীন মানদন্ড দাঁড় করাতে অগ্রগামী হয়।
কৃতির মূল্য : কৃতি বা কর্মের আদর্শ মঙ্গল। সুখী-সমৃদ্ধশালী সমাজ
গঠনে কর্মসজীবতা বা কর্মচঞ্চলতার বিকল্প নেই। প্রকৃতপক্ষে সেই কাজই গ্রহণযোগ্য যা
মঙ্গল আনয়নে সক্ষম। দর্শনের অন্যান্য বিষয়ের মত মঙ্গলের প্রকৃত রূপ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ
পরিলক্ষিত হয়। একচেটিয়াভাবে এক দল দার্শনিক যেমন বলেন, দৈহিক সুখই মঙ্গল, আবার
অন্য একদল দার্শনিক বলেন, মানসিক সুখই মঙ্গল। আবার সমন্বয়বাদী ধারা বা নীতি
অবলম্বন করে কোনো কোনো দার্শনিক দু’য়ের সমন্বয়ের মাঝে মঙ্গলের আভা দেখতে পান।
তবে যতই বিতর্ক থাকুক না কেন বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ
লাভ’- এই ধারণা বা আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যে কর্মপ্রচেষ্টা তার মাঝেই প্রকৃত মঙ্গল নিহিত।
অনুভ‚তির মূল্য অনুভ‚তির আদর্শ হচ্ছে সুন্দর। সুন্দরকে
যথার্থভাবে প্রকাশিত করার মাধ্যমেই অনুভ‚তির মূল্য নিহিত। ‘সৌন্দর্য’ ধারণাটি বেশ চমকপ্রদ
ও বিতর্কিত বিষয়। সাধারণত: দার্শনিকগণ দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে সৌন্দর্য সম্পর্কীয় মতবাদ
ব্যক্ত করেছেন। প্রথমত: একদল দার্শনিক বলেন, সৌন্দর্য আত্মগত। যাবতীয় সৌন্দর্য মানুষের
মন থেকে উৎসারিত। বস্তুতে কোনো সৌন্দর্য নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিæোক্ত কবিতার
লাইনগুলোতে এ মনোভাব ব্যক্ত হয়ে ওঠে -
“আমার চেতনার রঙে পান্না হলো সবুজ,
চুনি উঠল রাঙা হয়ে।
আমি চোখ মেললুম আকাশে-
জ্বলে উঠল আলো
পূবে পশ্চিমে
গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ‘সুন্দর’-
সুন্দর হলো সে।”
দ্বিতীয়ত: আরেক দল দার্শনিক মনে করেন, সৌন্দর্য সম্পূর্ণরূপে বস্তুগত। এখানে মানুষের
মনের কোনো ভ‚মিকা নেই। যা সুন্দর তা আপনাতেই সুন্দর; মানুষের মনের মাধুরী মেশানোর
কোনো আবশ্যকতা নেই। গোলাপ ফুলে, আকাশের তারায়, জোৎøা রাতে যে সৌন্দর্য তা
কোনো ব্যক্তিমন পর্যবেক্ষণ না করলেও আপন সৌন্দর্যে ভাস্বর।
প্রকৃত পর্যালোচনায় এ বিষয়টি স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, উভয় মতবাদই চরম মতবাদ। উভয়
মতবাদই একদেশদর্শিতাদোষে দুষ্ট। কাজেই সমন্বয়বাদী ধারা বা নীতি অবলম্বন করে বলা
যায় যে, সৌন্দর্য অংশত: ব্যক্তিনির্ভর, অংশত: বস্তুনির্ভর। এ বিষয়টি ল্যাংফেল্ড
-এর বক্তব্যে আরো পরিষ্কারভাবে বিধৃত হয়েছে: “সৌন্দর্য সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত
অনুভ‚তির উপর অথবা অনুভ‚ত বস্তুর উপর নির্ভর করে না। এটা ব্যক্তিগত নয় বা বস্তুগত নয়।
এটা কেবল চিন্তাজাত কর্মের ফল নয় বা বস্তুজাত মূল্য নয়। এটা হলো পরিবর্তনশীল ব্যক্তি ও বস্তু- এ দুটোর সম্পর্ক বা সম্বন্ধ।”
মূল্যের অনুক্রম পরম্পরা
গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা, কোনো বিষয়ের আলোচনা, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের আবশ্যকতাকে
বাড়িয়ে তোলে। নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর কোন্ োকোন্ োঅংশে বেশি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে
আর কোন্ কোন্ োঅংশে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্ব আরোপ করতে হবে তা বিষয়টি
পর্যায়ক্রমিকভাবে আলোচনা করলে বোধগম্য হয়ে ওঠে। নিæে গুরুত্বের দিক থেকে মূল্যের
আলোচনা করা হলো।
স্বত:মূল্য ও পরত:মূল্য
মূল্যের নিজস্ব মূল্য থাকা বা না থাকার উপর ভিত্তি করে মূল্যকে স্বত:মূল্য ও পরত:মূল্য
হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়। যে মূল্যের নিজস্ব মূল্য আছে এবং একান্তভাবে নিজের জন্য
চাওয়া হয়, তাকে স্বত:মূল্য বলা হয়। স্বত:মূল্য সাপেক্ষ নয়, স্বতন্ত ও স্বাধীন।
উদাহরণস্বরূপ, সুখ বা প্রশান্তি স্বত:মূল্য, কেননা সুখ কেবলমাত্র নিজের জন্য চাওয়া হয় এবং
নিজস্ব মূল্যের দাবিদার। সত্য, সুন্দর ও মঙ্গল- এগুলো হলো স্বত:মূল্য। সত্য সত্য বলেই,
মঙ্গল মঙ্গলময়তার জন্যই এবং সুন্দর, সৌন্দর্য বিকাশের সহায়ক বলেই তা আমদের কাম্য।
এ তিনটি মানব জীবনের মহৎ আদর্শ। এ তিনটি আদর্শের সম্মিলনে মানব জীবন পেতে পারে পরিপূর্ণ ও সার্থক জীবন।
যে মূল্যের নিজস্ব কোন মূল্য নেই, কিন্তু অপর মূল্য লাভের সহায়ক তাকে পরত:মূল্য বলা
হয়। পরত:মূল্য আপেক্ষিক ও শর্তসাপেক্ষ। পরত:মূল্য কোনো কিছুলাভের উপায় হিসেবে
কাজ করে। পরত:মূল্য মানব জীবনের কোনো পরম লক্ষ্য নয়, বরং উপলক্ষ্যমাত্র। যেমনঅর্থ, ব্যায়াম প্রভৃতি হলো পরত:মূল্য। অর্থ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আনয়নের সহায়ক এবং ব্যায়াম সুস্থ
ও কর্মক্ষম দেহ তৈরিতে সহায়ক।
ব্যক্তিগত ও বস্তুগত মূল্য
কোনো কোনো দার্শনিকের মতে, মূল্য হলো আত্মগত বা ব্যক্তিনির্ভর। ব্যক্তির পছন্দ, আগ্রহ,
মনোভাব ইত্যাদি কোনো বস্তুতে মূল্য আরোপ করে। মূল্য যদি বস্তুগত হতো তাহলে তা সবার
কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য মনে হত। যেমন, এক টুকরা স্বর্ণ সভ্য মানুষের কাছে অত্যন্ত
মূল্যবান বলে গৃহীত, কিন্তু কোনো বন্য সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে তা গুরুত্ব বহন করে না।
সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও এর গ্রহণযোগ্যতা ব্যাখ্যাত হয়; যেমন, উদারমনা কোনো ব্যক্তি রবীন্দ্র
সঙ্গীত পছন্দ করে, অন্যদিকে সংকীর্ণ মনোভাবাপন্ন কোনো ব্যক্তি তা সর্বদা অপছন্দ করে।
বাস্তববাদী দার্শনিগণ মনে করেন যে, মূল্য হলো অনিবার্যভাবে বস্তুগত বা বস্তুনির্ভর। মূল্যবান
বস্তুতে এমন কিছুউপাদান বিদ্যমান যা সবার দৃষ্টিকে আকর্ষিত করে। যেমন, ‘মোনালিসা’
শিল্পকর্মটি যথার্থ সুন্দর বলে সবার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য।
প্রকৃত পর্যালোচনায় এ সত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মূল্য সম্পূর্ণরূপে আত্মগত কিংবা সম্পূর্ণরূপে
বস্তুগত নয়। বরং দুয়ের সমন্বয়স্বরূপ। পার্থিব প্রয়োজনে অধিকতর আবশ্যকীয় বস্তুসমূহ যা
প্রকৃত অর্থেই নির্দিষ্ট কিছু উপাদান ধারণ করে তাতেই আমরা মূল্য আরোপ করি।
আপেক্ষিক ও পরম মূল্য (জবষধঃরাব ধহফ অনংড়ষঁঃব ঠধষঁব)
আপেক্ষিক ও চরম এই দু’ভাবেও মূল্যের মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। সত্য, সুন্দর ও মঙ্গল
হলো পরম মূল্য। কেননা এগুলো নিজ গুণেই লভ্য। এ তিনটি মানব জীবনের পরিপূর্ণ
বিকাশের সোপান। অন্যদিকে দৈহিক মূল্য, অর্থনৈতিক মূল্য ইত্যাদি আপেক্ষিক; কেননা
এগুলো চরম মূল্য লাভের সহায়কমাত্র। পরম মূল্যগুলো বস্তুগত, কেননা এরা ব্যক্তির দ্রব্যমূল্য
নিরূপণের বাইরে থেকে ব্যক্তির মূল্য নিরূপণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া, ঈশ্বর যেহেতু পরম
সত্তা, তাই সকল স্বত:মূল্য বস্তুগত, এবং চরম মূল্যের সাথে ঈশ্বর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে সম্পৃক্ত।
মানসিক মূল্যগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক
মানসিক মূল্যগুলো আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করা হলেও সেগুলো যে পরস্পর থেকে
পৃথক, এমন ধারণা করলে ভুল হবে। বরং সামাজিক ব্যক্তিত্ব লাভের বিকাশে ও ব্যক্তির
চেতনার উত্তরণে এগুলোর প্রত্যেকের ভ‚মিকা সমান এবং একে অপরের অনুগামী। কোনো
কোনো দার্শনিক ‘সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ লাভের’ কথা ব্যক্ত করে বলেন যে, কর্মের আদর্শ
মঙ্গলই একমাত্র প্রধান মূল্য। অন্যান্য মূল্যগুলোর পৃথক কোনো অস্তিত্ব নেই। বরং তা মঙ্গলের
সাথে একীভ‚ত। এ মতবাদের প্রবক্তারা আরো স্পষ্ট করে বলেন যে, কোনো বস্তুর সৌন্দর্য ও
সততা নির্ভর করে কতটুকু মঙ্গল লাভে তা সক্ষম তার উপর।
আবার অনেকে সুন্দরকে একমাত্র মূল্য বলে দাবি করেন। সত্য ও মঙ্গলের পৃথক কোনো
অস্তিত্ব নেই, বরং তা সৌন্দর্যের উপর নির্ভরশীল। তারা বলেন যে, মানুষ যেহেতু উন্নততর
চেতনাসম্পন্ন জীব, সে কারণে চেতনার উত্তরণ তার লক্ষ্য। আর এই চেতনার উত্তরণের সাথে
সাথে সৌন্দর্যের ধারণার সম্মিলন আবশ্যক। মঙ্গলের ধারণা চিন্তা ও অনুভ‚তির সাথে
ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সৌন্দর্য বিচারের ক্ষেত্রে সত্য ও মঙ্গলের ধারণা আনয়নের আবশ্যকতা
পরিলক্ষিত হয়। যেমন, শিল্পের কাজ সৌন্দর্য সৃষ্টি, কিন্তু সে সৌন্দর্যের সাথে যদি মঙ্গল ও
সত্যের কোনো সম্পর্ক না থাকে তবে তা যথাযথ আবেদন সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়। পরিশেষে
বলা যায় যে, সত্য, মঙ্গল ও সুন্দর পরস্পর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ। যদি পৃথকভাবে তাদের
ধারণা লাভ করতে অগ্রসর হই, তবে মূল প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্যুত হবার সম্ভাবনাই প্রবল।
উপসংহার
মূল্যের শ্রেণীকরণে সকল দার্শনিক ও চিন্তাবিদ যে ঐক্যমত পোষণ করেছেন তা নয়। বরং
অনেক ক্ষেত্রেই তাদের বক্তব্য অস্পষ্ট এবং বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তদুপরি মূল্য সম্পর্কিত এ শ্রেণীকরণ আধুনিক সমাজ বাস্তবতা ও চিন্তা-ভাবনার সাথে এমনকি দৈনন্দিন কার্যক্রমের সাথে অধিকতর সঙ্গতিপূর্ণ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। মূল্যের শ্রেণীকরণ নির্দেশ করুন। মানসিক মূল্যগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত রচনামূলক প্রশ্ন
১। দৈহিক মূল্য প্রকৃত মূল্য কিনা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা দিন।
২। স্বত:মূল্য ও পরত:মূল্য বলতে কি বুঝায়? উদাহরণসহ বর্ণনা করুন।
৩। মানসিক মূল্যগুলোর ভিতরে কোন একটি কি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে? ব্যাখ্যা দিন।
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। স্বতঃমূল্য হলো
র) যার নিজস্ব মূল্য আছে
রর) যার নিজস্ব মূল্য নেই
ররর) যে মূল্য অন্য কিছু দ্বারা নির্ধারিত হয়
রা) যার নিজস্ব মূল্য কখনো থাকে আবার কখনো থাকে না
২। পরতঃমূল্য হলো
র) যার নিজস্ব মূল্য আছে
রর) যার নিজস্ব মূল্য নেই
ররর) যার নিজস্ব মূল্য আছে এবং নেই
রা) উপরের কোনোটিই নয়
৩। মানসিক মূল্য
র) সত্য
রর) সুন্দর
ররর) মঙ্গল
রা) উপরের সব কয়টি
৪। পরতঃমূল্য কোনোটির আছে
র) কলম
রর) ঘড়ি
ররর) টেবিল
রা) টাকা
সঠিক উত্তর
ক)
১। র) যার নিজস্ব মূল্য আছে
২। রর) যার নিজস্ব মূল্য নেই
৩। রা) উপরের সব কয়টি
৪। রা) টাকা

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]