মূল্য কি? মূল্য নির্ধারণের নীতিসমূহ আলোচনা করুন।

বিশেষ বিশেষ বস্তু বা ঘটনাকে মূল্যবান বলার ক্ষেত্রে কতিপয় নীতিকে আমরা সনাক্ত করতে
পারি। তবে যেহেতু মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল, তাই এসব নীতিসমূহের ব্যতিক্রমও থাকতে পারে। মূল্য নির্ধারণের এসব নীতিসমূহ নি¤œরূপ হতে পারে :
ক) স্থায়ীত্ব
খ) সুখ ও আনন্দদায়কতা
গ) মূল্য নিরূপণে স্বাধীন ইচ্ছার ভ‚মিকা (
ঘ) উৎকর্ষ
ঙ) সৃষ্টিশীলতা ও সঙ্গতি
আলোচ্য পাঠে মূল্য নির্ধারণের এসব নীতিগুলো নিয়েই আমরা আলোচনা করবো।
স্থায়ীত্ব
কোনো বস্তুর মূল্যের ক্ষেত্রে তার স্থায়ীত্বের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিছু মূল্য আছে যা
ক্ষণস্থায়ী। যেমন- একটা ভাল নৈশ ভোজ। আবার কিছু মূল্য আছে দীর্ঘস্থায়ী। যেমন- একটা
উত্তম বৈবাহিক সম্পর্ক এবং পুত্র-পৌত্রসহ একটি সুখী পরিবার। কখনো কখনো আমরা
জীবনের স্থায়ী এবং দীর্ঘ মেয়াদী মূল্যের অনুষঙ্গগুলোকেই উচ্চতর মূল্য হিসেবে গ্রহণ করি।
এই স্থায়ীত্বের সঙ্গে যুক্ত হয় নিরাপত্তা এবং গভীরতর মূল্য জ্ঞাপকতা। যেমন- বেশির ভাগ
মানুষই এমন একটি চাকুরি বা পেশাককে মূল্যবান বলে মনে করেন যা দীর্ঘস্থায়ী, নিরাপদ
এবং যা আনন্দপূর্ণ। অন্য কোনো চাকুরী বা পেশার চেয়ে কম অর্থকরী হলেও এ ধরনের
কাজকে মানুষ মূল্যবান মনে করতে পারে। সকল মানুষের জন্য সত্য না হলেও সাধারণভাবে
সেসব বস্তু গুণকে মানুষ বেশি মূল্যবান মনে করে যা অধিকতর স্থায়ী প্রকৃতির হয়। তবে সব দীর্ঘস্থায়ী গুণসম্পন্ন বস্তুই মূল্যবান হবে এমন নয়। সুখ ও আনন্দদায়কতা
আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, সব মানুষই আনন্দ এবং সুখদায়ক বস্তুকেই মূল্যবান বলে
গণ্য করে, এবং যা পরিণামে দুঃখ ও যন্ত্রণা বয়ে আনে তাকে মূল্যহীন বলে গণ্য করে। তবে
সাবধানতার সাথে মূল্যবান ও মূল্যহীন বস্তুর পার্থক্য করা প্রয়োজন। কেননা কিছু কিছু সময়
মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু যন্ত্রণা ও দুঃখকে মেনে নেয় এবং এর দ্বারা দূরবর্তী কোনো
সুখদায়ক লক্ষ্যে সে পৌঁছে যায়। যেমন- সুখি ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য অনেক সময়ই
আমরা অস্ত্রোপচারের মত যন্ত্রণাদায়ক চিকিৎসাকেও স্বাগত জানাই। কখনো কখনো আমরা
নিরানন্দ ও কষ্টদায়ক কাজও করে থাকি, যখন তার মাধ্যমে আমরা অর্থ উপার্জন করি এবং সুখলাভ করি।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আনন্দ ও সুখ কথাগুলোকে গ্রহণ করতে হবে ব্যাপক
অর্থে। তা কেবল তাৎক্ষণিক ইন্দ্রিয় সুখের ভেতর সীমাবদ্ধ নয় । যারা ইন্দ্রিয় সুখের পক্ষপাতী
বা স্থ‚ল ইন্দ্রিয় সুখবাদী তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা এরকম যে, ‘খাও দাও ফ‚র্তি কর’, যেহেতু কাল তুমি
বেঁচে নাও থাকতে পারো। কিন্তু সুখ ও আনন্দদায়কতা কম ইন্দ্রিয় ঘনিষ্ঠ ব্যাপারের মধ্যেও
রয়েছে; যেমন, বুদ্ধিবৃত্তিক, আধ্যাত্মিক ও মানবিক কাজের মধ্যেও সুখ ও আনন্দদায়কতা
বিদ্যমান। সুতরাং সুখ ও আনন্দদায়কতার একটা পরিব্যাপ্ত অর্থ আছে, তা যেমন ইন্দ্রিয় ঘনিষ্ঠ
হতে পারে, তেমনি মানসিক পর্যায়েরও হতে পারে। একথা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি,
যে সকল কাজের মধ্যে সুখ ও আনন্দ বিরাজ করে তাকেই আমরা মূল্যবান বলে আখ্যায়িত করে থাকি।
মূল্য নির্ধারণে স্বাধীন ইচ্ছার ভ‚মিকা
এটা সত্য যে, ব্যক্তির উপর যেসব মূল্য বাইরে থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়, তার চেয়ে যেসব
মূল্যকে সে নিজে স্বাধীন ইচ্ছার দ্বারা, বোঝাপড়ার মাধ্যমে গ্রহণ করে, সেগুলোই তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, মানুষের চারপাশের অধিকাংশ মূল্যই তো আগে থেকে প্রতিষ্ঠিত। মানুষকে কোনো একটি জটিল সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারে জন্মাতে হয়, যেখানে
মূল্য আগে থেকে তৈরি হয়ে আছে; যাকে পরিবার, স্কুল, সমাজ ও রাষ্ট্র- ব্যক্তির উপর চাপিয়ে
দেয়।
এখানে সতর্ক বিবেচনার বিষয়টি এই যে, সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্র আগে থেকে একটা তৈরি
মূল্য আমাদের উপর চাপিয়ে দিলেও, আমরা অবিকল সেভাবেই মেনে নেব তেমন নয়। আমরা
ঐ মূল্যকে গ্রহণ করি আমাদের নিজস্ব যুক্তি-প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে যাচাইয়ের মাধ্যমে। আমরা
সেগুলোকে মূল্যায়ন করি এবং যদি তা তাৎপর্যহীন হয় তবে সেগুলোকে পরিত্যাগ করি।
সুতরাং মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বাধীন ইচ্ছার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা আছে। অন্ধভাবে
কোনোও মূল্যকে গ্রহণ করা অনুচিত, যতক্ষণ না তা ব্যক্তির কাছে স্বাধীন বোঝাপড়ার মাধ্যমে
মূল্যবান বলে বিবেচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক কোনো একজন লোক একটি ধর্মের
আবহের ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠেছে। সে ব্যক্তি ঐ ধর্মের যাবতীয় নিয়ম-কানুনকে কোনো
বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই পালন করেছে। একদিন সে বুঝতে পারলো ঐ ধর্মীয় মূল্যগুলো সম্পর্কে
সে কখনো কোন প্রশ্ন তোলেনি, স্বাধীনভাবে কখনও বিচার-বিশ্লেষণ করেনি। আসলে ঐসব
ধর্মীয় মূল্য কৃত্রিমভাবে তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। যদি ঐ মূল্যগুলোকে সে স্বাধীন বিচারবিশ্লেষণের মাধ্যমে গ্রহণ করতো তাহলেই কেবল ওগুলোর মাধ্যমে নতুন নৈতিক
বিষয়গুলোকে তার পক্ষে বিচার-বিশ্লেষণ করা সম্ভব হতো। সুতরাং যে মূল্যগুলোকে ব্যক্তি
স্বাধীন ও সতর্ক বোঝাপড়ার মাধ্যমে গ্রহণ করে সেগুলো অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ। উৎকর্ষ
আরেকটি গুণ যা মূল্য নির্ধারণে বিশেষ ভ‚মিকা রাখে সেটি হলো উৎকর্ষ। কোনো কিছু যখন
সুচারুভাবে সম্পন্ন করা হয়, কিংবা কোনো বিশেষ পদ্ধতি যা একটি কাজকে সুচারুভাবে
সম্পন্ন করার জন্য মানুষ সর্বাধিক প্রত্যাশা করে, তাই হচ্ছে উৎকর্ষ। যেমন, যখন কেউ
কমলার গন্ধ ও স্বাদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকে, তখন সে বাগানের যে বিশেষ কমলাটি
স্বাদে-গন্ধে সব থেকে শ্রেষ্ঠ সেটাকেই মূল্যবান বলে গণ্য করবে। আবার, কেউ যখন সঙ্গীত
পছন্দ করে তখন সে সর্বোৎকৃষ্টভাবে পরিবেশিত সঙ্গীতকেই মূল্যবান বিবেচনা করবে। সুতরাং
বস্তুর উৎকর্ষ, মূল্য নির্ধারণে একটি সুনির্দিষ্ট মান হিসেবে কাজ করে।
সৃষ্টিশীলতা ও সঙ্গতি
মূল্য গঠনে ভ‚মিকা রাখে এমন আরো দুটি মান হলো, সৃষ্টিশীলতা ও সঙ্গতি। সৃষ্টিশীলতার
অভাব এবং অসঙ্গতির বিপরীতে তাদেরকে আমরা মূল্যবান বলে গ্রহণ করি। সমাজের বেশীর
ভাগ মানুষই তাদের জীবনে প্রতিপার্শ্ব এবং অন্যান্যদের মধ্যকার সম্পর্ককে সঙ্গতিপূর্ণ
হওয়াটাকে বাঞ্ছনীয় বলে মনে করে। তাছাড়া, কিছু লোক আছে যারা এমন কর্মক্ষেত্রকে
মূল্যবান বলে বেছে নেয়, যেখানে জীবনযাপনে এবং তাদের প্রাত্যহিক কাজ-কর্মে সৃষ্টিশীলতা
আনতে সক্ষম হতে পারে। যেমন, কোনো লোককে তার কর্মক্ষেত্রে যদি এমন পরিবেশের
মধ্যে কাজ করতে হয়, যেখানে তাকে কেবল রুটিন ওয়ার্ক করতে হয়, যেখানে সৃষ্টিশীল হবার
সুযোগ নেই এবং তার পরিবারের সাথে সম্পর্ক রক্ষায় সঙ্গতিপূর্ণ অবস্থা তৈরিতে বাধা সৃষ্টি
করে, এমন কর্মক্ষেত্র খুব বেশি লাভজনক হলেও সে পরিত্যাগ করতে পারে। বরং এমন
কর্মক্ষেত্রকেই সে পছন্দ করবে, যেখানে কাজে সৃষ্টিশীলতা আছে এবং যা পরিবারের সাথে
একটি সুসঙ্গতি তৈরিতে সাহায্য করে। সৃষ্টিশীলতা ও সঙ্গতি সম্পর্কে একটি অনুসিদ্ধান্ত,
এখানে উল্লেখ্যযোগ্য যে, তাদেরকে হতে হবে গঠনমূলক। অনেক সময় ধ্বংসাÍক কাজেও
কারো সৃষ্টিশীলতা প্রখর হতে পারে কিংবা তা তার অবস্থান অনুযায়ী সঙ্গতিপূর্ণও হতে পারে কিন্তু তা মূল্যের মাপকাঠি হতে পারে না।
উপসংহার
যদিও বস্তুর মূল্য নির্ধারণ একটি জটিল বিয়য়, তবুও আলোচিত মানগুলো বস্তু বা ঘটনার মূল্য
নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। আমরা মূল্য সমস্যার প্রকৃতি বিচার করে আলোচিত মানগুলো থেকে প্রযোজ্য মানটির আলোকে মূল্য নিরূপণ করতে পারি।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। মূল্য কি? মূল্য নির্ধারণের নীতিসমূহ আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। মূল্য নির্ধারণের নীতি হিসেবে ‘স্বাধীন ইচ্ছার ভ‚মিকা’ সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
২। মূল্য নির্ধারণের নীতি হিসেবে ‘সুখ ও আনন্দদায়কতা’ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। মূল্য নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড হলো ঘটনা বা বস্তুর
র) স্থায়ীত্ব ও উৎকর্ষ
রর) সুখ ও আনন্দদায়কতা
ররর) মূল্য নির্ধারণে ইচ্ছার ভ‚মিকা, সৃষ্টিশীলতা ও সঙ্গতি
রা) উপরের সবগুলোই
২। কখনো কখনো পীড়াদায়ক ঘটনাকেও আমরা মূল্যবান বলি কারণ
র) তাতে স্থায়ীত্ব ও উৎকর্ষ থাকে
রর) পরিণামে তা সুখকর ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠতে পারে
ররর) মূল্য নির্ধারণে এখানে ইচ্ছার ভ‚মিকা থাকে
রা) পীড়াদায়ক কাজ সৃষ্টিশীল ও সঙ্গতিপূর্ণ
৩। মূল্যবান হওয়া উচিত
র) রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার যাকে মূল্যবান বলে স্বীকৃতি দেয়
রর) ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী যা মূল্যবান
ররর) ইচ্ছার স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তি যাকে মূল্যবান বিবেচনা করে
রা) যার স্থায়ীত্ব আছে
৪। বস্তুর মূল্য নির্ধারণে একটি সুনির্দিষ্ট মান হিসেবে কাজ করে
র) সৌন্দর্য
রর) সুগঠন
ররর) উৎকর্ষ
রা) পছন্দ
সঠিক উত্তর
ক)
১। ররর) মূল্য নির্ধারণে ইচ্ছার ভ‚মিকা, সৃষ্টিশীলতা ও সঙ্গতি
২। রর) পরিণামে তা সুখকর ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠতে পারে
৩। ররর) ইচ্ছার স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তি যাকে মূল্যবান বিবেচনা করে
৪। ররর) উৎকর্ষ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]