অতিসরলীকরণের অনুপপত্তিসমূহ বর্ণনা করুন।

নুপপত্তি হলো ভুল বা মন্দ যুক্তি বা যুক্তিবিন্যাস। যুক্তি নানা কারণে মন্দ বা অনিখুঁত হতে
পারে। এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য মিথ্যা হলে, কিংবা অপ্রাসঙ্গিক হলে, যুক্তিবিন্যাস অবৈধ
হলে, যুক্তি প্রকাশক ভাষা অস্পষ্ট বা দ্ব্যর্থক হলে যুক্তি মন্দ হয়ে যায়। মন্দভাবে বা ভ্রান্তভাবে
যুক্তিবিন্যাস করার ধরন অগণিত হতে পারে। ফলত মন্দ বা ভুল যুক্তির সংখ্যাও অসীম। তবে
ঐ সমস্ত ভুল যুক্তিকে অনুপপত্তি বলা হয়, যেগুলো ভুল হওয়া সত্তে¡ও যথার্থ বলে প্রতীয়মান
হয়। অর্থাৎ অনুপপত্তি হলো, প্ররোচনামূলক ( ভুল যুক্তি। প্ররোচনামূলক
হওয়ার কারণে আমরা এ ধরনের যুক্তির ফাঁদে পড়তে পারি। যথার্থ বা সঠিক যুক্তিবিন্যাসের স্বার্থে তাই অনুপপত্তি সম্বন্ধে আমাদের অন্তত প্রাথমিক জ্ঞান রাখা উচিত। অনুপপত্তিকে
বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। আমরা অনুপপত্তিকে দুটি প্রধান ভাগে ফেলে আলোচনা করবো :
১। অতিসরলীকরণের অনুপপত্তি ও ২। প্রবঞ্চনামূলক অনুপপত্তি।
অতিসরলীকরণের অনুপপত্তিসমূহ
এ ধরনের অনুপপত্তিতে প্রধান বিষয়কে অতি সরলীকরণ করে ফেলা হয় এবং তাৎপর্যপূর্ণ
ঘটনাকে অগ্রাহ্য বা উপেক্ষা করা হয়। নিচে এ ধরনের কয়েকটি অনুপপত্তি নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করবো :
নিছক উক্তি
জনসাধারণ প্রায়ই ভাবে যে, তারা যদি কোনো কিছু একরকম জোরালো বা নির্দিষ্ট পদের
সাহায্যে ঘোষণা করতে পারে, তাহলে তাদের যুক্তিসমূহ বিশ্বাস জন্মাতে পারবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, “খোদা এটি বলেছেন এবং আমি এটি বিশ্বাস করি, আর এই হলো এটার শেষকথা”। এ কথাটি আসলে কিছুই প্রমাণ করে না। এটি আসলে নিছক বিশ্বাসেরই
এক ঘোষণা। দার্শনিক যুক্তি প্রদর্শনের প্রথম কথাই হলো সাক্ষ্য বা যৌক্তিক নিয়মের সাহায্যেই কেবল কোনো যুক্তি সমর্থন বা প্রমাণ করা যায়। একটি ধারণা বা বিশ্বাস বা তত্ত¡ নিছক ঘোষণা
করলাম, আর প্রত্যাশা করলাম যে, মানুষ এটিকেই খাঁটি যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করবে তাহলে তা হবে নিশ্চিতভাবে একটি অনুপপত্তি।
মিথ্যা দ্বিকত্মানুমান
মিথ্যা দ্বিকত্মানুমানকে ‘সাদা-কালো’ (নষধপশ-যিরঃব), বা ‘হয়-নতুবা’ (বরঃযবৎ-ড়ৎ)
অনুপপত্তি নামেও অভিহিত করা হয়। আমরা যদি কোনো সমস্যা বা বিষয়ের দুইয়ের অধিক
সমাধান (ংড়ষঁঃরড়হং) বা দিক (ধংঢ়বপঃং) থাকা সত্তে¡ও ধরে নেই যে, তার দুটিমাত্র আপাত
সত্য সমাধানই রয়েছে, এবং তার উপর ভিত্তি করে যুক্তিবিন্যাস করি তাহলে মিথ্যা
দ্বিকত্মানুমান অনুপপত্তির উদ্ভব ঘটে। আমরা যদি বলি বিষয়টি হয় ক নতুবা খ হবে, অথচ
তার গ, ঘ, ও ঙ হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে আমরা মিথ্যা দ্বিকত্মানুমান সৃষ্টি করবো।
‘জীববিজ্ঞান নয় অর্থনীতি পুরুষ-প্রাধান্যকে (সধষব ফড়সরহধঃরড়হ) ব্যাখ্যা করতে পারে’।
এই উক্তিটি ধারণা জন্মায় যে, দুটি মাত্র সম্ভাবনাই রয়েছে, হয় জীববিজ্ঞান পুরুষ প্রাধান্য
ব্যাখ্যা করে নতুবা অর্থনৈতিক সফলতা তা ব্যাখ্যা করে। আরও ধারণা জন্মায় যে, দ্বিতীয়
সম্ভাবনাটি, অর্থাৎ অর্থনৈতিক সফলতা হতে পারে পুরুষ প্রাধান্যের সত্যিকার ব্যাখ্যা। অথচ
আমরা জানি যে, আরও অনেক সম্ভাবনাই রয়েছে, যথা- সামাজিক প্রথা, ধর্মীয় প্রত্যয় এবং
অর্থনৈতিক ও জীবতাত্তি¡ক উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের বাস্তবতা। আলোচ্য
উক্তিটি হয় অর্থনীতি নচেৎ জীববিদ্যাকেই পুরুষ-প্রাধান্যের কারণ হিসেবে ভাবতে আমাদের প্ররোচিত করে এবং অন্যান্য সম্ভাবনাগুলোকে আমাদের দৃষ্টি থেকে সরিয়ে দেয়। আর
এভাবেই মিথ্যা দ্বিকত্মানুমানের অনুপপত্তি ঘটায়।
অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি
এরূপ অনুপপত্তির বেলায়, যুক্তিদানকারী এমন একটি অবস্থানে আঘাত হানার চেষ্টা করেন যা
মূল যুক্তির ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক এবং পাঠক বা শ্রোতার মনোযোগকে উপস্থাপিত মূল বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রয়াস পান। অন্যকথায়, সাক্ষ্য বা আশ্রয়বাক্যসমূহ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে
পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হলে অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি নামক অনুপপত্তি ঘটে। উদাহরণস্বরূপ,
অস্ত্রনিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে যুক্তি দিতে গিয়ে যদি কেউ বলেন, প্রতি বছর অস্ত্র দ্বারা যত মানুষ
নিহত হয়, তার চেয়ে বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনার কারণে নিহত হয়। তাহলে এ যুক্তি হবে
অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি। বন্দুকের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে যানবাহন ও যানবাহনজনিত দুর্ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রতি বছর বিভিন্ন কারণে মানুষ মৃত্যুবরণ করে, অস্ত্র নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত কি উচিত না, তার সাথে এসব বাস্তবতার কোনো সম্বন্ধ নেই । মূল বিষয় হলো, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা
উচিত কি উচিত না, অন্যভাবে অধিক সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করে কিনা তা এখানে দেখার > বিষয় নয়।
চক্রক যুক্তি
চক্রক যুক্তিকে ‘প্রশ্নভিক্ষা অনুপপত্তি’ -ও বলা
হয়। কারণ এ যুক্তির আশ্রয়বাক্য তার সিদ্ধান্তের মতই প্রশ্নযোগ্য। যে বিষয়টি প্রমাণ করতে
হবে তা প র্বেই প্রমাণিত বলে ধরে নিয়ে যুক্তি দিলে এই অনুপপত্তি ঘটে। অর্থাৎ সিদ্ধান্তে যা
প্রমাণ করতে হবে তাই যদি আশ্রয়বাক্যে ধরে নেয়া হয় তাহলে চক্রক যুক্তিদোষ ঘটে। কোনো
কিছু প্রমাণ না করে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তে ‘ঘুরে-ফিরে’ একই কথা বলা হয় বলেই এই
অনুপপত্তির নাম হয়েছে চক্রক যুক্তিদোষ বা অনুপপত্তি। উদাহরণস্বরূপ, কাঁচ একটি স্বচ্ছ
পদার্থ, কারণ কাঁচের মাঝ দিয়ে আমরা দেখতে পাই এটি একটি চক্রক অনুপপত্তি।
কেউ যদি বলেন, খোদার অস্তিত্ব রয়েছে, কারণ পবিত্র কোরআনে এটি বলা হয়েছে; অত:পর
অন্য কেউ যদি জিজ্ঞাসা করেন, কোরআনের সত্যতার বিষয়টি আপনি কিভাবে জানলেন,
জবাবে ঐ ব্যক্তি যদি বলেন, কোরআন তো খোদা কর্তৃক প্রত্যাদৃষ্ট, তাহলে তার যুক্তি হবে
চক্রক দোষে দুষ্ট। এখানে খোদার অস্তিত্ব কোরআনের দ্বারা এবং কোরআনের সত্যতা খোদার
অস্তিত্ব দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে। অর্থাৎ খোদার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে প্রথমে বা পূর্বেই খোদার
অস্তিত্বকে ধরে নেয়া হয়েছে। ফলে এ যুক্তিতে খোদার অস্তিত্ব যৌক্তিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।
অজ্ঞতাভিত্তিক যুক্তি বা অজ্ঞানতা দোষ
এরূপ যুক্তিতে কোনো বিষয় প্রমাণ করার চেষ্টা না করে তা অপ্রমাণ করার ভার বিপক্ষের উপর
চাপিয়ে দেয়া হয়। বিপক্ষের অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে নিজের কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়
বলে এরূপ যুক্তিকে অজ্ঞানতা দোষ বা অনুপপত্তি বলে। অজ্ঞানতাভিত্তিক যুক্তির কথা হলো,
আমরা একটি উক্তি বা বচনের সত্যতা ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করবো যতক্ষণ না আমাদের বিপক্ষ
অন্যতর কিছু অর্থাৎ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কেউই প্রমাণ করতে পারেননি
যে, ভ‚ত নেই; অতএব ভ‚ত আছে।
স্টেরিওটাইপিং
স্টেরিওটাইপ হলো এমন গতানুগতিক ধারণা, মত বা বিশ্বাস যা সচরাচর অতিসরলীকৃত বা
অতিস্ফীত হয়ে থাকে। অধিকাংশ স্টেরিওটাইপ সংস্কারের কারণে ঘটে। দল বা গোষ্ঠীগত
বিশ্বাসকে নিশ্চিত করার আকাক্সক্ষা থেকে অথবা প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যের অভাব থাকা সত্তে¡ও দ্রƒত
ও সুবিধাজনক সিদ্ধান্ত টানার আকাক্সক্ষা থেকে এসব সংস্কারের জন্ম হয়।
স্টেরিওটাইপিং নামক অনুপপত্তির তখনই উদ্ভব ঘটে যখন কেউ একটি শ্রেণী সম্বন্ধে মিথ্যা বা
অতিব্যাপক সাধারণীকরণ করেন এবং তা থেকে ঐ শ্রেণীর কোনো
সদস্যকে বিচার করার চেষ্টা করেন। উদাহরণস্বরূপ কেউ যদি ভাবেন যে, সকল মহিলা হয়
আবেগপ্রবণ, দুর্বল ও রোদনপ্রবণ, তাহলে যে-কোনো মহিলা ঐ সব চাকুরি বা কর্মের ক্ষেত্রে
অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন যেখানে মেধাবী, দৃঢ় প্রত্যয়ী ও ধীরস্থির মানুষের প্রয়োজন
রয়েছে। বস্তুত মানুষের ক্ষেত্রে ‘সকল’ কথাটি প্রয়োগের বেলায় আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত।
কোনো কিছুকে অথবা কোনো ব্যক্তিকে কোনো শ্রেণীর নিছক এক সদস্য বলে না ভেবে বরং
অমুক এক, অমুক দুই, অমুক তিন অথবা রহিম বা করিম কিংবা রাবেয়া বা রহিমা -
এরকমভাবে ভাবা উচিত। লক্ষণীয়, নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষ সম্বন্ধীয় স্টেরিওটাইপগুলো বিশেষভাবে মারাÍক: ফরাসিরা হলো মহান প্রেমিক, বাঙালি হয় হুজুগে, মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অস্থিরমতি।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। অতিসরলীকরণের অনুপপত্তিসমূহ বর্ণনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। মিথ্যা দ্বিকত্মানুমান অনুপপত্তি ব্যাখ্যা করুন।
২। অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি ব্যাখ্যা করুন।
ক) বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। যুক্তি মন্দ বা দোষযুক্ত হয় যদি
র) এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য মিথ্যা হয়
রর) এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য
অপ্রাসঙ্গিক হয়
ররর) যুক্তি প্রকাশক ভাষা অস্পষ্ট বা দ্ব্যর্থক হয়
রা) উপরের যে কোনোটি ঘটে
২। হয়-নতুবা অনুপপত্তি নামেও অভিহত
করা হয়
র) নিছক উক্তিকে
রর) অপ্রাসঙ্গিক যুক্তিকে
ররর) চক্রক যুক্তিকে
রা) মিথ্যা দ্বিকত্মানুমানকে
৩। ‘নারীরা হয় ভালবাসে না হয় ঘৃণা
করে’ এই উক্তিটি
র) নিছক উক্তি অনুপপত্তি সৃষ্টি করে
রর) মিথ্যা দ্বিকত্মানুমান সৃষ্টি করে
ররর) চক্রক দোষ সৃষ্টি করে
রা) স্টেরিওটাইপিং অনুপপত্তি সৃষ্টি করে
৪। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা উচিত নয়;
কেননা আজকের অনেক রাজনীতিবিদ
এক সময় ছাত্র নেতা ছিলেন। এ যুক্তির
ফলে
র) মিথ্যা দ্বিকত্মানুমান ঘটে
রর) চক্রক দোষ ঘটে
ররর) অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি অনুপপত্তি ঘটে
রা) অজ্ঞানতা দোষ ঘটে
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। অনুপপত্তি হয় প্ররোচনামূলক।
২। বিশ্বাসের জোরালো ঘোষণা হলো এক প্রকার যুক্তি।
৩। আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তে ঘুরে-ফিরে একই কথা বললে চক্রক দোষ ঘটে।
৪। অপ্রাসঙ্গিক যুক্তিকে প্রশ্নভিক্ষা অনুপপত্তিও বলা হয়।
সঠিক উত্তর
ক)
১। রা) উপরের যে কোনোটি ঘটে ২। রা) মিথ্যা দ্বিকত্মানুমানকে
৩। রা) স্টেরিওটাইপিং অনুপপত্তি সৃষ্টি করে ৪। রর) চক্রক দোষ ঘটে
খ) ১। স ২। মি ৩। স ৪। মি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]