লঘুকরণবাদ ও প্রসারণবাদের পার্থক্য নির্দেশ করুন।

কোনো জিনিস বা বিষয়কে তার ক্ষুদ্রতম বা নি¤œতম উপাদানে বা অংশে বিভক্ত করে বা কমিয়ে
এনে বিবেচনা করলে তা জানা-বোঝা সহজ হয়। একইভাবে কোনো জিনিস বা বিষয়কে
বৃহত্তর পটভ‚মি বা প্রেক্ষাপটে ফেলে বিবেচনা করলে তা জানা-বোঝা সহজ হয়। তবে এই দুই
ক্ষেত্রেই একটা নিয়ম বা পরিমিতি মান্য না করলে অনাবশ্যক জটিলতা বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে
পারে। বর্তমান পাঠে আমরা লঘুকরণ ও প্রসারণ-এর স্বরূপ ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবো। লঘুকরণবাদ (জবফঁপঃরড়হরংস)
এটি যুক্তিবিদ্যারই একটি উত্তম নিয়ম যে, প্রত্যেকেরই উচিত কোনো জিনিস বা বিষয়কে
অনাবশ্যকভাবে জটিল করার চেয়ে বরং কোনো যুক্তির সরলতম অর্থ অথবা বাস্তবতা সংক্রান্ত
কোনো সরলতম মত খোঁজার জন্য কঠোরভাবে চেষ্টা করা। উদাহরণস্বরূপ, যারা গণিতের
ক্ষেত্রে ভগ্নাংশের চর্চা করেছেন তারা জানেন যে, প্রত্যেকের উচিত ভগ্নাংশসমূহকে তাদের
‘নি¤œতম সাধারণ বিভাজক’-এ কমিয়ে আনা। কোনো কিছু না ছেড়ে বা পরিত্যাগ না করে
কোনো জিনিসকে কমিয়ে আনা যায়- এটি নিশ্চিত করেই প্রত্যেকের উচিত, বাস্তবতা সম্পর্কিত তত্ত¡ ও যুক্তির ক্ষেত্রে এই লঘুকরণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা।
আজ আমরা যে উপগ্রহটিকে শুকতারা বলি, এককালে প্রাচীন মানুষেরা তাকে দেখে ভাবতো
তারা দুটি ভিন্ন তারা (তারকা) দেখে : প্রভাত তারা ও সন্ধ্যাতারা। যখন আবিষ্কৃত হলো,
আসলে এটি একটিই তারা, তখন দুটি নামের বদলে নাম দাঁড়ালো একটি। একই জিনিসকে
দুই নামে ডাকা হতো একটা বাজে ব্যাপার, এতে অনাবশ্যক জটিলতা সৃষ্টি হয়। মানুষের
সারসত্তা সংক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা আর একটি উদাহরণ খুঁজে পেতে পারি। কতিপয়
দার্শনিক ‘আত্মসত্তা’ , ‘আত্মা’ ‘মন’ (সরহফ) ও ‘জীবনীশক্তি’
নামক পদগুলোকে পরস্পর বিনিমেয় হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু
এসব পদগুলো যদি একই জিনিসকে বুঝায়, তাহলে কেন একই জিনিস বর্ণনার জন্য চারটি পদ ব্যবহার করতে হবে? সুতরাং প্রত্যেকের উচিত একটি পদকে নির্দিষ্ট করা বা তাতে অটল
হওয়া এবং সেটিকে সতর্কভাবে সংজ্ঞায়িত করা। এটি করলে পুরো সমস্যাটি সরল হয়ে উঠবে এবং পদসমূহের অনাবশ্যক প্রসারণ ও তদ্জনিত জটিলতা দূর করা যাবে।
তবে লঘুকরণনীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সবাইকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যে, আদতে হ্রাস
করা যায় না এমন দুই বা ততোধিক জিনিসকে যেন একটিতে হ্রাস করা না হয়। অর্থাৎ তারা
যখন বাস্তবে একটি নয় দুটি জিনিস, তখন তাদেরকে একটিতে হ্রাস করা যাবে না।
উদাহরণস্বরূপ, দ্বৈতবাদীদের পক্ষ থেকে জড়বাদের সমালোচনা উল্লেখ করা যায়। জড়বাদীরা
যুক্তিসহকারে বলেন যে, মন বলে কিছু নেই, আছে কেবল মস্তিষ্ক। দ্বৈতবাদীরা বলেন,
জড়বাদীদের এই যুক্তি আসলে লঘুকরণবাদী যুক্তি। দ্বৈতবাদীদের মতে, জড়বাদীরা মনকে
মস্তিষ্কে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেন, অথচ মন মস্তিষ্ক থেকে পুরোপুরি ভিন্ন কিছু। তাদের
মতে, জড়বাদীরা অনাবশ্যক লঘুকরণবাদের অপরাধে অপরাধী।
প্রসারণবাদ
প্রসারণবাদ হলো লঘুকরণবাদের বিপরীত। সুতরাং এটিরও লঘুকরণবাদের মত সুবিধাঅসুবিধা দুই-ই রয়েছে, তবে তা লঘুকরণবাদের বিপরীতক্রমিক। অর্থাৎ সাধারণভাবে,
লঘুকরণবাদের অসুবিধা হলো প্রসারণবাদের সুবিধা এবং লঘুকরণবাদের সুবিধাসমূহ হলো
প্রসারণবাদের অসুবিধাসমূহ। মাঝে-মাঝে, সাময়িক প্রসারণবাদ উপকারী হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, কেউ দার্শনিক আলোচনায় মানব প্রকৃতি সম্পর্কীয় মতসমূহ উল্লেখ করতে
যেয়ে দর্শন, মনোবিজ্ঞান প্রভৃতি জ্ঞানশাখার এতদ্সংক্রান্ত মতামত আলোচনা করতে পারেন।
এই প্রসারিত বা বিস্তারিত আলোচনা মানবপ্রকৃতির সকল দিককে যতটা সম্ভব ব্যাপকভাবে
উন্মোচিত করে তোলে। ফলে এটিকে গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা যায়। তবে
লঘুকরণবাদী সমালোচকগণ বলতে পারেন যে, আত্মা, জীবনীশক্তি, আবেগ ও ইচ্ছা- মানব
প্রকৃতির এসব বিভিন্ন দিককে আলোচনা করে মানব প্রকৃতির সংজ্ঞাকে বড় বেশী জটিল করে
তোলা হয়েছে। তারা যুক্তি দিয়ে বলতে পারেন, এসব বিভিন্ন দিককে আসলে মন ও দেহে
অথবা কেবল দেহে বা কেবল মনে কমিয়ে আনা যায়।
তথাপি প্রসারণবাদের সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে পরীক্ষণীয় যে কোনো বিষয়ের বিভিন্ন অংশ বা
দিকসমূহের মধ্যে পার্থক্য করা যায়। এটির অসুবিধা হলো, প্রয়োজনাতিরিক্ত অংশ বা ভিন্নতা
সৃষ্টি করে এটি বিবেচ্য বিষয়কে অধিকতর জটিল করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, প্রকৃতি ও
বিশ্বব্রহ্মান্ডকে কে সৃষ্টি করেছেন তা খোঁজাই যেখানে কঠিন ও জটিল এক ব্যাপার সেখানে
তাদের সৃষ্টি অতিপ্রাকৃতিক কিছু থেকে হয়েছে একথা বলে অধিক জটিলতা সৃষ্টির বিষয়টি
উল্লেখ করা যায়। প্রাকৃতিক কোনো কিছুর বদলে অতিপ্রাকৃতিক কিছু দিয়ে ব্যাখ্যা বা বর্ণনা
করা অধিকতর কঠিন । অতিপ্রকৃতিবাদী বা ধর্মবাদীরা যখন যুক্তি দিয়ে বলেন যে,
অতিপ্রাকৃতিক এক সত্তা রয়েছে, এবং সেই সত্তাই প্রকৃতি ও বিশ্বব্রহ্মান্ডকে অস্তিত্বশীল করেছে তখন প্রকৃতিবাদীরা এই অতিজটিলতা তথা প্রসারণবাদের কথা বলেই তাদের এই যুক্তির সমালোচনা করেন।
উপসংহার
সংক্ষেপে বলা যায়, লঘুকরণবাদ ও প্রসারণবাদ যুক্তিবিচারের ক্ষেত্রে এক ধরনের সমস্যা।
লঘুকরণবাদের অর্থ হলো, বচন, যুক্তি বা বাস্তবতা সংক্রান্ত মতকে তাদের সরলতম রূপে
কমিয়ে আনা। সব কিছুকে হ্রাস বা লঘু করা যায় এ প্রত্যয় বা প্রচেষ্টা ইতিবাচক। অন্যথায়, এসবই হয়ে পড়তো অতিসরলীকৃত। পক্ষান্তরে, প্রসারণবাদের অর্থ হলো, তত্ত¡কে অনেকগুলো অংশে ভাগ করে বিস্তৃতভাবে তুলে ধরা অথবা বাস্তবতা সম্বন্ধে অনেকগুলো ভিন্নধর্মী মত
উপস্থাপন করা। এর সুবিধা হলো, যদি বাস্তবিকই কোনো জটিলতা থেকে থাকে যা সরলভাবে
ব্যাখ্যা করা যায় না, তাহলে প্রসারণবাদ তা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এটির অসুবিধা
হলো, একটি চমৎকার সরল মত বা ধারণা অনেকগুলো দিক বা তত্তে¡র উপস্থাপনের কারণে অধিকতর জটিল হয়ে পড়তে পারে।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। লঘুকরণবাদ ও প্রসারণবাদের পার্থক্য নির্দেশ করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। লঘুকরণবাদ ব্যাখ্যা করুন।
২। প্রসারণবাদের গুরুত্ব বর্ণনা করুন।
ক) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। শামসুল ইসলামকে শামসু সাহেব, এস ইসলাম, শামস্ প্রভৃতি নামে ডাকলে তা হবে
লঘুকরণবাদের দৃষ্টান্ত।
২। একই লেখায় ‘প্রেম’ কথাটি বুঝানোর জন্য কখনো ভালবাসা, কখনো অনুরাগ, কখনো
প্রেম শব্দ ব্যবহার করলে তা হবে প্রসারণবাদের দৃষ্টান্ত।
৩। আত্মা, মন, জীবনীশক্তি, আত্মসত্তা প্রভৃতি শব্দ একই অর্থে একই রচনায় ব্যবহৃত হলে তা
হবে প্রসারণবাদের দৃষ্টান্ত।
৪। লঘুকরণবাদ একটি ধারণাকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করে অধিকতর জটিল করে তোলে।
সঠিক উত্তর
ক) ১। মি ২। স ৩। স ৪। মি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]