দার্শনিক রচনা লেখার কৌশলসমূহ ,দার্শনিক রচনায় ব্যাকরণের নিয়মনীতি মেনে চলার প্রয়োজন নেই।

দর্শন একটি বিষয় হিসেবে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। দার্শনিক চিন্তা
যেমন সূ² তেমনই বিমূর্ত। দার্শনিক রচনায় থাকে যুক্তি, বিশ্লেষণ ও সমালোচনা। এই যুক্তি,
বিশ্লেষণ ও সমালোচনার কিছু বিশেষ পদ্ধতি ও কৌশল রয়েছে। এজন্য দর্শনে পরীক্ষা প্রদান ও রচনা লিখনের কৌশল জানা ও আয়ত্ত করা প্রয়োজন।
নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা
দর্শনের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার স্বরূপ অন্যান্য অধিকাংশ বিষয় ) এর নৈর্ব্যক্তিক
পরীক্ষাসমূহের অনুরূপ; অর্থাৎ এ ধরনের পরীক্ষা পরীক্ষার্থীকে পাঠ্য বই ও শ্রেণীপাঠসমূহের
অন্তর্গত বিষয়কে সনাক্ত করতে বলে, কোনো ব্যক্তিগত মতামত দিতে বলে না। তথাপি
দর্শনের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা নিæোক্ত দিক দিয়ে ভিন্ন হয়ে উঠতে পারে :
১) এটি পরীক্ষার্থীকে স্বাতন্ত্র্য বা পার্থক্যসমূহকে উপলব্ধি করতে বলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ
সত্য-মিথ্যা নিরূপণের বিষয় উল্লেখ করা যায় : “অবরোহী যুক্তি নিশ্চয়তা প্রদান করে।
অন্যদিকে, আরোহী যুক্তি কেবল সম্ভাব্যতা প্রদান করে। - সত্য / মিথ্যা।”
২) এটি পরীক্ষার্থীকে অন্যান্য জ্ঞানশাখার অন্তর্গত ঘটনাবলীর তুলনায় স্বরূপত অধিকতর
বিমূর্ত বা ধারণামূলক ঘটনাবলীকে উপলব্ধি করার জন্য বলতে
পারে। উদাহরণস্বরূপ, “মানবপ্রকৃতি ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সরলীকরণযোগ্য কোন বিষয়কে বিস্তৃত করে তোলা কখনই ঠিক নয়। - সত্য / মিথ্যা।”
তবে আপনি যদি ভাল অধ্যয়ন কৌশল, যা আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি, অনুসরণ করেন এবং অন্যান্য জ্ঞানশাখার সাথে দর্শনের পার্থক্য কি তা বুঝতে পারেন, তাহলে আপনার
লিখতে-পড়তে-বুঝতে কোনো অসুবিধা হবে না। নিচের পরামর্শ দুটিও মেনে চলুন :
১) আপনার ব্যবহৃত পাঠ্যবই অথবা আপনার শিক্ষকের দেয়া পাঠ-সহায়িকা (ংঃঁফু
মঁরফবং) বা পাঠোত্তর প্রশ্নাবলী ভালভাবে অনুশীলন করুন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমান
গ্রন্থের প্রতিটি পাঠের পাঠোত্তর মূল্যায়ন গভীর মনোযোগ ও সতর্কতার সাথে অনুশীলন করা প্রয়োজন।
২) পরীক্ষার আগে-ভাগে মুখস্থ করে পার পাবার আশায় পড়াশোনা ফেলে বা জমিয়ে রাখবেন
না। কখনো ধরে নিবেন না যে, পড়াশোনা না করেই আপনি দর্শনের যে কোনো নৈর্ব্যক্তিক
পরীক্ষায় পাশ করে যাবেন। অন্যান্য জ্ঞানশাখার সাথে তুলনা করলে আপনি দেখতে পাবেন
যে, দর্শনের বিষয়বস্তু সচরাচর অতিশয় নতুন ও অতিশয় ধারণামূলক (পড়হপবঢ়ঃঁধষ) হয়ে
থাকে; আর সে কারণে হয়ে থাকে কিছুটা অসরল। এজন্য পূর্ব থেকেই বা প্রথম থেকেই
আপনাকে সময়ানুবর্তিতা মান্য করে আগ্রহ ও আন্তরিকতা নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে
হবে। এরূপ করলে বিষয়বস্তু আপনার কাছে সরল ও সহজসাধ্য হয়ে যাবে।
দর্শন লিখন
দর্শন তথা দার্শনিক বিষয়াদি লিখন বিবরণমূলক লিখন
গবেষণামূলক লিখন, ব্যাখ্যামূলক লিখন প্রভৃতি লিখনের অনুরূপ
হতে পারে। তবে দর্শনের অধিকাংশ লেখাই বিশ্লেষণ, সমালোচনা ও যুক্তি সহযোগে গড়ে
ওঠে। আর এসবের জন্য প্রায়শ বিশেষ প্রণালী ও কৌশলের প্রয়োজন হয়:
সাধারণ পরামর্শ
যে কোনো ভাল লেখার অনেকগুলো প্রণালী দর্শনের ক্ষেত্রেও একই :
১) লেখার আগেই সর্বদা সুসংগঠিতভাবে যাত্রা শুরু করুন, ঠিক করুন- আপনি কি শ্রেণীকক্ষে বসে পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর লিখছেন, না তার বাইরে কোনো বিচারমূলক বা ব্যক্তিগত দার্শনিক রচনা লিখ্ছেন।
২) মৌলিক পদগুলোকে পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করুন।
৩) প্রধান ধারণাগুলোকে পরিষ্কারভাবে বিবৃত করুন।
৪) উদাহরণ ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে এসব ধারণাগুলোর অর্থকে পরিষ্কারভাবে ও পূর্ণভাবে তুলে
ধরুন।
৫) প্রথমে একটা খসড়া লেখা দাঁড় করান। সতর্কতার সাথে প্রƒফ দেখুন এবং সংশোধন
করুন। অতপর এটিকে পুনরায় লিখুন।
৬) যথাযথ ব্যাকরণ , প্রয়োগরীতি , বাক্য-কাঠামো ও
অনুচ্ছেদ ব্যবহার করুন। কিছু শিক্ষার্থী মনে করেন, দর্শনের ক্ষেত্রে ব্যাকরণ তথা
ভাষার নিয়মনীতি মেনে চলার তেমন প্রয়োজন নেই। কেননা এটি কোন ভাষা-কোর্স
নয়। এ ধারণা খুবই ভ্রান্ত। দার্শনিক লেখার ক্ষেত্রে ভাষার যথাযথ
ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে শব্দাড়ম্বরপূর্ণ ও অতিঅলংকৃত ভাষা বর্জন করুন, এ ধরনের ভাষায় বক্তব্য অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থক হয়ে পড়ে। সর্বদা সোজাসুজি ও যথাযথভাবে লেখার চেষ্টা করুন।
৭) আপনার পড়ার টেবিলে সর্বদা অন্তত একটি ভাল বাংলা ও একটি ভাল ইংরেজি ব্যাকরণ
বই এবং এই দুই ভাষার অন্তত একটি করে দুটি ভাল অভিধান রাখুন এবং প্রয়োজনে তার
সাহায্য নিন।
দার্শনিক লেখার জন্য আরও কিছু পরামর্শ
নিচের নির্দেশনাদি বিশেষত দার্শনিক লেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত এই নির্দেশনাদি দার্শনিক লেখার সাথে অন্যান্য জ্ঞানশাখার লেখার মৌলিক পার্থক্যও প্রকাশ করে। প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার লেখায় নিচের নির্দেশনাদি অনুসরণ করুন :
১) বিশেষ সমস্যা ও বিষয়সমূহকে যেমন- তেমনি অপরের ধারণা, তত্ত¡ ও যুক্তিসমূহকে
বিশ্লেষণ করুন এবং তার সবিচার মূল্যায়ন করুন। তত্ত¡ ও সমস্যার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ
করা যায়: জড়বাদ, বাস্তববাদ, দেহ-মন সমস্যা, স্রষ্টার অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব সমস্যা প্রভৃতি।
২) বিভিন্ন দার্শনিক সমস্যা সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত মতামত উপস্থাপন করুন।
৩) অবরোহী ও আরোহী উভয় প্রকার যুক্তিবিন্যাস এর সাথে ইন্দ্রিয়
সাক্ষ্যকে কিভাবে একত্র করা যায় তা শেখার চেষ্টা করুন। (১) ও (২) নির্দেশনা অনুশীলনের ক্ষেত্রে কিভাবে যৌক্তিক অনুপপত্তিসমূহকে সনাক্ত করা ও এড়ানো যায় তা শেখারও চেষ্টা করুন।
দার্শনিক যুক্তি বিশ্লেষণের কৌশল
কোনো দার্শনিকের তত্ত¡ বা যুক্তিসমূহকে বিশ্লেষণ বা সবিচার মূল্যায়ন করা তথা লেখার জন্য নিচের নির্দেশনা অনুসরণ করুন :
১) সতর্কতার সাথে দার্শনিকের তত্ত¡গত অবস্থান তুলে ধরুন। এজন্য কোনো সমালোচনা বা
মূল্যায়ন ছাড়াই দার্শনিকের দেয়া যুক্তির মূল দিক বা বৈশিষ্ট্যসমূহের তালিকা প্রদান করুন এবং
তিনি পদসমূহের কোনো বিশেষ সংজ্ঞা দান করলে তা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করুন। এক কথায়,
দার্শনিকের যে কোনো প্রকার বক্তব্যকেই অবিকৃতভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্ক হবেন।
২) কোনো দার্শনিকের অবস্থানকে সমর্থন বা আক্রমণ যাই করুন না কেন, তার অবস্থান বা
তত্ত¡কে একটি সংগঠিত ও পদ্ধতিগত রীতিতে বিশ্লেষণ ও সবিচার মূল্যায়ন করুন। প্রায়শ
দেখা যায়, দার্শনিকের অবস্থানের একটা সামগ্রিক মূল্যায়ন দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে একটার পর একটা বিষয়ের সমর্থন বা খন্ডনই হলো সর্বোত্তম কৌশল।
৩) দার্শনিকের তত্ত¡ সম্পর্কিত আপনার সকল যুক্তি বা অবস্থানকে সাক্ষ্য ও যুক্তি সহকারে,
আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব পূর্ণভাবে, সমর্থন করুন এবং সেসবের ন্যায্যতা
প্রতিপাদন করুন। আপনি যদি একই সমস্যা বা বিষয়ের উপর দুজন দার্শনিকের যুক্তিসমূহের
তুলনা এবং সেসবের সবিচার মূল্যায়ন করেন, তাহলে সাক্ষাৎ পূর্ববর্তী কৌশল উভয়
দার্শনিকের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
দার্শনিক সমস্যা বা বিষয় বিশ্লেষণের কৌশল
কোনো বিশেষ দার্শনিক সমস্যা বা বিষয় (যেমন দেহ-মন সমস্যা বা ঘটনা ও মূল্য সমস্যা বা
ঈশ্বরের অস্তিত্ব সমস্যা)-কে বিশ্লেষণ ও সবিচার মূল্যায়নের জন্য নিচের কাজগুলো করুন : ১) মূল পদগুলোর সংজ্ঞাদানপূর্বক সমস্যা বা বিষয়টিকে সতর্কভাবে ও স্পষ্টভাবে বিবৃত
করুন।
২) সমস্যাটির উভয় দিকের শক্তিশালী যুক্তিসমূহ এবং এসব যুক্তির পেছনে যে ভিত্তি ও
যুক্তিবিন্যাস নিহিত রয়েছে তা উপস্থাপন করুন।
৩) উভয় দিকের যুক্তিবিন্যাস ও যুক্তির ক্ষেত্রে সাক্ষ্যের অভাব ও অনুপপত্তিসমূহ প্রদর্শনপূর্বক
প্রতিটি দিকের যুক্তিসমূহকে বিশ্লেষণ ও সবিচার মূল্যায়ন করুন।
৪) প্রয়োজনবোধ করলে আপনার নিজস্ব মত এবং সে মতের সপক্ষে যুক্তিসমূহ পেশ করুন।
অতঃপর আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব পূর্ণভাবে মতটিকে মূর্ত করে তুলুন এবং তার ন্যায্যতা
প্রতিপাদন করুন।
ব্যক্তিগত দার্শনিক অভিমত লেখার কৌশল (ঝঃৎধঃবমরবং ভড়ৎ ডৎরঃরহম চবৎংড়হধষ
চযরষড়ংড়ঢ়যরপধষ ঠরবংি)
যদি কোনো বিষয় বা বিষয়সমূহের উপর আপনার ব্যক্তিগত দার্শনিক মত লেখার
প্রয়োজনবোধ করেন তাহলে :
১) নিশ্চিত হতে চেষ্টা করুন যে, আপনার পরীক্ষক আপনার কাছ থেকে যা আশা করেন তা
আপনি বুঝতে পেরেছেন।
২) এই ইউনিটের তৃতীয় পাঠে বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার যে সাতটি ধাপ উল্লেখ করা হয়েছে তা
পুনরীক্ষণ করুন। উল্লেখ্য, আপনাকে সমস্যার সপক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তিসমূহ সম্বন্ধে অবহিত হতে হবে।
৩) সমস্যা বা বিষয়টিকে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা ও উপস্থাপন করুন।
৪) বিষয়টি প্রসঙ্গে আপনার অবস্থান কি তা যতটা সম্ভব পূর্ণভাবে ও স্পষ্টভাবে উপস্থাপন ও
আলোচনা করুন।
৫) আপনার মত বা অবস্থান সমর্থনের জন্য আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব বেশি সাক্ষ্য সুবিন্যস্ত
করুন। আপনার নিজস্ব যুক্তি ও যুক্তিবিন্যাসে কোনো যৌক্তিক অনুপপত্তি ও দুর্বলতা আছে
কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হন।
৬) আপনার অবস্থানের মূল দিকগুলো (সধরহ ঢ়ড়রহঃং) পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার জন্য
আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব বেশি উদাহরণ ও ব্যাখ্যা প্রদান করুন।
৭) আলোচ্য বিষয়ে অন্যান্য দার্শনিকদের অভিমত আপনার লেখায় প্রয়োজনানুযায়ী অন্তর্ভুক্ত
করুন। এই অন্তর্ভুক্তির সময় অবশ্যই গৃহীত বা উদ্ধৃত বক্তব্যের উৎস ফুটনোটে বা গ্রন্থপঞ্জিতে
উল্লেখ করবেন। তবে অন্যান্যদের অভিমতকে প্রশ্নহীনভাবে গ্রহণ বা উপস্থাপন করবেন না।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। দার্শনিক রচনা লেখার কৌশলসমূহ বর্ণনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। দর্শনের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার স্বরূপ বর্ণনা করুন।
২। ব্যক্তিগত দার্শনিক অভিমত লেখার কৌশল বর্ণনা করুন।
৩। দার্শনিক যুক্তি বিশ্লেষণের কৌশলসমূহ উল্লেখ করুন।
ক) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় ব্যক্তিগত মতামত প্রদান করতে হয়।
২। দর্শনের বিষয়বস্তু সচরাচর অতিশয় ধারণামূলক হয়ে থাকে।
৩। দার্শনিক রচনায় থাকে যুক্তি, বিশ্লেষণ ও সমালোচনা।
৪। দার্শনিক রচনায় ব্যাকরণের নিয়মনীতি মেনে চলার প্রয়োজন নেই।
সঠিক উত্তর
ক) ১। মি ২। স ৩। স ৪। মি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]