আল-গাযালী ছিলেন এগার শতকের একজন প্রসিদ্ধ মুসলিম দার্শনিক। তাঁকে ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’
অর্থাৎ ‘ইসলামের রক্ষক’ বলা হয়। কারণ তিনি তাঁর পূর্ববর্তী চিন্তাবিদদের বিচ্ছিন্ন মতবাদের সমন্বয়ে
ইসলামের পরিপূর্ণ রূপ তুলে ধরেন।
জীবনী (খরভব)
আল-গাযালী ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের তুস নগরের পাশে গাযালা নামক পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পুরো নাম ইমাম আবু হামিদ মুহাম্মদ বিন আহ্মদ আল-গাযালী। কারো কারো মতে, গাযালা
নামক পল্লীতে জন্মগ্রহণ করায় তিনি গাযালী নামে পরিচিত। আবার কারো কারো মতে, তাঁর পূর্ব
পুরুষগণ ‘গাযালী’ অর্থাৎ সূতা ব্যবসায়ী ছিলেন, তাই তিনি গাযালী নামে পরিচিত। তবে দ্বিতীয় মতটি
হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। ছোটবেলায় তিনি বাবাকে হারান। বাবার মৃত্যুর পর বাবার বন্ধু আহ্মেদ
সাহেব তাঁর লালন-পালন ও লেখাপড়ার ভার গ্রহণ করেন। কিন্তু আহ্মেদ সাহেবের আর্থিক অবস্থা
খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে গাযালী পল্লীর মক্তব ছেড়ে তাঁর নির্দেশে শহরের অবৈতনিক মাদ্রাসায়
ভর্তি হন। সেখানে তিনি মহামনীষী আবু হামেদ আসফারায়েনী, আবু মোহাম্মদ যোবেনী প্রমুখ
মহাজ্ঞানী শিক্ষকের নিকট অধ্যয়ন করেন। খ্যাতনামা ফেকাহ্ শাস্ত্রবিদ আহমেদ ইবনে মোহাম্মদ
রাযকানীর নিকট তিনি ফেকাহ্ শাস্ত্রের প্রাথমিক গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন।
তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর জন্মভ‚মি তেহেরান শহর ছেড়ে ‘জুরজান’ শহরে যান। সেখানে
তিনি আবু নছর ইসমাঈলের নিকট শিক্ষা গ্রহণ করেন। তীক্ষ মেধা ও অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী
গাযালীকে তিনি পুত্র-¯েœহে শিক্ষাদান করেন। তিনি আবু নছর ইসমাঈলের নিকট যে শিক্ষা গ্রহণ
করেন তা নোট আকারে লিপিবদ্ধ করেন।
জুরজান শহরে শিক্ষা অর্জনশেষে তিনি যখন বাড়ী ফিরছিলেন তখন একদল দস্যু তাঁর অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে নোটগুলিও নিয়ে যায়। তখন তিনি দস্যু সরদারের কাছে তাঁর নোটগুলির জন্য আবেদন
জানান এবং বলেন, এগুলো আমার বড় পরিশ্রমলব্ধ বস্তু, এগুলো হারালে আমার দীর্ঘদিনের সকল
কষ্টই বৃথা হয়ে যাবে। আমার অর্জিত সকল বিদ্যাই এগুলোর মধ্যে রয়েছে। শুনে দস্যু সরদার ব্যঙ্গ
করে বললেন, তুমি তো বেশ পড়ালেখা করেছ, অর্জিত বিদ্যা কাগজে সঞ্চিত রয়েছে, মনে কিছুই নেই,
খুব তো পড়েছ। আর হাসতে হাসতে সেগুলো ফেরত দিলেন।
এই ব্যঙ্গোক্তির কারণে তাঁর মনে নিজের পড়ালেখার প্রতি নিজেরই ধিক্কার দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হল।
ফলে তিনি তিন বছরের সমস্ত নোটগুলি এমনভাবে আয়ত্ত করলেন যা তাঁর মন থেকে আর মুছে গেল
না।
এরপর তিনি খোরাসানের অন্তর্গত নিশাপুর শহরের ‘নিযামিয়া মাদ্রাসা’-র প্রধান শিক্ষক মহাজ্ঞানী
(ইমামুল হারামাইন উপাধিধারী) আবদুল মালিকের নিকট জ্ঞান অর্জন করেন। নিশাপুরে অবস্থান
কালেই তিনি মৌলিক গবেষণার সঙ্গে গ্রন্থ রচনা শুরু করেন। তাঁর অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় পেয়ে
বাগদাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে নিজামিয়া মাদ্রাসার ধর্মতত্তে¡র অধ্যাপক নিযুক্ত
করেন। কিন্তু কিছুদিন পরই আবার তিনি জ্ঞানের সন্ধানে বের হয়ে যান এবং শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন
গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করে জ্ঞান অর্জন করেন। অবশেষে আবার
নিজামিয়া মাদ্রাসায় ফিরে আসেন এবং অধ্যাপনা শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী ফাখরুল মূলক গুপ্ত ঘাতকের
হাতে নিহত হলে তিনি খুব দুঃখ পান এবং নিজামিয়া মাদ্রাসা ছেড়ে নিজ গ্রামে ফিরে যান। তাঁর বাড়ী
থেকে অল্প দূরে তিনি একটি খানকা স্থাপন করে বিদ্যা অর্জনে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়ে
জীবনের বাকী সময় অতিবাহিত করেন। এই মহামনীষী ১৮ ডিসেম্বর ১১১১ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ
করেন।
রচনাকর্ম
ইমাম গাযালী তত্ত¡বিদ্যা, নীতিবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, দর্শন, ধর্মতত্ত¡ প্রভৃতি বিষয়ে ছোট বড় সত্তর খানি গ্রন্থ
রচনা করেন। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে এহ্ইয়া-উল-উলুমুদ্দিন, তাহ্ফাতুল ফালাসিফাহ্, কিমিয়াই-সা’
আদাত, এলজামুল আওয়াম, আসমাউল হাসান, হাকীকাতুল রুহ, আজাইবুল মাখলুকাত, জওয়াহিরুহ
কোরআন, ইয়াকুত্তাবিল ফীত্তাযাসীর, মিনহাজুল আবেদীন, তালিমুর্দ্দিনে কাশফু উলুমিল আখেরাত,
মিশকাতুল আনওয়ার, বিদায়াতুল হিদায়াহ্, মা-আনী আসমায়িল্লাহ, মাকাসিদুল ফালাসিফা প্রভৃতি
উল্লেখযোগ্য।
তাঁর গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘এহ্ইয়া-উল-উলুমুদ্দিন’ (ধর্মীয় জীবনের পুনর্জীবন) সমধিক গুরুত্বপূর্ণ।
গাযালী ছিলেন মূলত একজন ধর্ম সংস্কারক, ইসলামকে ব্যাখ্যা করতে তিনি এই গ্রন্থটি রচনা করেন।
এই গ্রন্থে তিনি ইসলামের একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষ্য প্রদান করেন। এছাড়া তিনি প্রচলিত দার্শনিক
মতবাদগুলি অস্বীকার করেন এবং বলেন, একমাত্র ঐশীজ্ঞানই সত্যের সন্ধান দিতে পারে, অন্য কিছু
নয়।
‘তাহ্ফাত-উল-ফালাসিফাহ্ (দর্শনের ধ্বংস) ইমাম গাযালীর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। তিনি এই
গ্রন্থে পাশ্চাত্যের কিছু দার্শনিকের কিছু মতবাদকে ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেন। বিশ্বের অস্তিত্ব, আত্মার
অমরত্ব ইত্যাদি বিষয়ক মতবাদের আলোচনা এখানে করা হয়।
‘কিমিয়াই-সা’আদাত’ (সৌভাগ্যের পরশমর্ণি)-ও তাঁর একখানি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এই গ্রন্থে তিনি
আত্মদর্শন, তত্ত¡ দর্শন, সংসার দর্শন, নামায, যাকাত, রোযা, হজ্জ্ব ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। গাযালীর জীবনী ও রচনাকর্ম সম্বন্ধে যা জানেন বর্ণনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। গাযালীর আত্মজীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিন।
২। গাযালীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ কি কি?
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। গাযালী জন্মগ্রহণ করেন
ক) ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে খ) ১১৫৮ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে ঘ) ১৩৫৮ খ্রিস্টাব্দে
২। গাযালী মৃত্যুবরণ করেন
ক) ১১১১ খ্রিস্টাব্দে খ) ১২১২ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১২১১ খ্রিস্টাব্দে ঘ) ১১২২ খ্রিস্টাব্দে
৩। গাযালীর বিখ্যাত গ্রন্থ
ক) এহ্ইয়া-উল-উলুমুদ্দিন খ) তাহ্ফাতুল ফালাসিফাহ
গ) কিমিয়াই-সা‘আদাত ঘ) হাকীকাতুল রুহ
৪। তাহফাত-উল-ফালাসিফাহ্ অর্থ
ক) সৌভাগ্যের পরশমণি খ) দর্শনের ধ্বংস
গ) ধর্মীয় জীবনের পুনর্জীবন ঘ) ওপরের কোনটিই নয়।
সঠিক উত্তর
১। ক ২। খ ৩। ক ৪। খ
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত