গাযালী তাঁর পূর্ববর্তী দার্শনিক মতবাদের তীব্র সমালোচনা করে তাঁর ‘তাহ্ফাত-উল-ফালাসিফাহ্’
গ্রন্থটি রচনা করেন। এই গ্রন্থে তিনি অ্যারিস্টটল, ফারাবী ও সিনার যেসব মতবাদ খন্ডন করেন তার
মধ্যে জগতের চিরন্তনতা, আল্লাহর জ্ঞান ও দেহের পুনরুত্থান উল্লেখযোগ্য। তাঁর মতে, এ মতবাদগুলি
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই আপত্তিজনক। যেসব মুসলমান এই ধরনের মতবাদ সমর্থন ও প্রচার
করেন তারা প্রকৃত মুসলমান নন এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নিæে গাযালীর
মতবাদগুলি আলোচনা করা হল।
জগতের চিরন্তনতা
মুসলিম দার্শনিক ফারাবী, সিনা ও তাঁদের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ জগতের স্রষ্টা। কিন্তু
অ্যারিস্টটলের মতবাদের সমর্থন করে তাঁরা বলেন, জগৎ সৃষ্ট হলেও জগতের কোন কালিক শুরু ছিলো
না, অর্থাৎ জগৎ কোন বিশেষ সময়ে সৃষ্ট নয়। আসলে মুসলিম দার্শনিকগণ অ্যারিস্টটলের ধারণার
সাথে ইসলামের ধারণাকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্যই এই মতবাদ প্রদান করেন। তাঁদের মতে, জগৎ
বিস্তৃতির দিক থেকে সসীম, আর স্থিতির দিক থেকে অসীম, অনন্তকাল ধরে জগৎ অস্তিত্বশীল। অর্থাৎ
জগতের অস্তিত্ব আল্লাহর মতই অনন্ত। গাযালী তাঁদের মতের বিরোধিতা করে বলেন, একটি জিনিস
একই সাথে সসীম ও অসীম দুই-ই হতে পারে না। দেশ ও কালকে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বলা যায় না।
কাল যদি অসীম হয় তাহলে দেশও অসীম হবে। তাঁর মতে, দেশ ও কাল কোন বস্তু নয়, বস্তুর সম্বন্ধ
বিশেষ। তিনি বলেন, দেশকে যদি বাহ্যিক প্রত্যক্ষণের আকার বলা যায় তাহলে কাল হবে আন্তর
প্রত্যক্ষণের আকার। তাঁর এই অভিমত কান্টের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হলেও তিনি দেশ ও কালকে আল্লাহ
সৃষ্ট বলে মনে করেন এবং এগুলি আল্লাহ আমাদের মনে জগতের বিভিন্ন বস্তু ও ধারণার মধ্যে
সম্বন্ধস্বরূপ সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহর জ্ঞান
দার্শনিকদের মতে, আল্লাহ পরম সত্তা এবং তাঁর সারসত্তা হল চিন্তন। এই চিন্তন দ্বারাই তিনি সব
কিছুকে জানেন এবং সৃষ্টি করেন। তিনি যা কিছু জানেন তা-ই অস্তিত্বশীল হয়ে যায়। চিন্তার মাধ্যমেই
তিনি জগতের সমস্ত কিছু দেখতে পান। গাযালী তাদের মতবাদের সমালোচনা করে বলেন চিন্তন নয়,
ইচ্ছা শক্তিই হল আল্লাহর সারসত্তা। আল্লাহ নিজের ইচ্ছায় জগৎ সৃষ্টি করেছেন। চিন্তন ইচ্ছা শক্তির
অনুগামী। আত্মচেতনাও ইচ্ছা শক্তির ওপর নির্ভরশীল। তাঁর মতে, চিন্তন থেকে কোন কিছুর উদ্ভব
সম্ভব নয় বরং ইচ্ছাশক্তি থেকেই জগতের সমস্ত কিছর উদ্ভব।
দার্শনিকদের মতে, আল্লাহ শুধু সার্বিককেই জানেন, বিশেষকে নয়। আল্লাহর জ্ঞান চিরন্তন ও শাশ্বত
এবং তাঁর জ্ঞান কোন বিশেষ স্থান-কালনির্ভর নয়। আল্লাহ কোন ঘটনা ঘটার আগেই তা ধারণা
হিসেবে জানেন। তাদের মতে, কোন বিশেষ ঘটনা যে সব কার্য-কারণ দ্বারা গঠিত হবে সেগুলো তিনি
আগে থেকেই জানেন, কিন্তু কোন বিশেষ ঘটনাকে তিনি জানেন না এবং জানা তাঁর কাজ নয়। তেমনি
বিশেষ ব্যক্তিকেও তিনি জানেন না, তিনি জানেন সার্বিক মানুষকে এবং দেশ-কাল নিরপেক্ষভাবে।
গাযালী তাদের মতের সমালোচনা করে বলেন, আল্লাহ্ বিশেষ ব্যক্তি বা ঘটনাকে জানেন না বা
জানতেই পারবেন না, এ হতে পারে না, এ মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, আল্লাহ ইচ্ছা করেন
ও সৃষ্টি করেন, তিনি জগতের প্রতিটি ধ লিকণাকেও জানেন। তাঁর ইচ্ছাই সব কিছুর কারণ। তাঁর
অনন্ত জ্ঞান প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিসকে অন্তর্ভুক্ত করে। এজন্য তাঁর একত্ব বিঘিœত হয় না। পৃথিবীতে
এক চিরন্তন দয়ালু হিসেবেই আল্লাহ বিদ্যমান। কালের পার্থক্য দ্বারা তাঁর জ্ঞানে কোন পার্থক্য সৃষ্টি
করা যায় না।
দেহের পুনরুত্থান
দার্শনিকদের মতে, আত্মা অমর আর দেহ ধ্বংসশীল। মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে আত্মা দেহ থেকে
মুক্তি পেয়ে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়, আর দেহ ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বেহেস্ত ও
দোযখের ব্যাপার পুরোটাই মানসিক ব্যাপার, এখানে দেহের কোন প্রয়োজন নেই। যদিও কোরআনের
কোন কোন বাণীতে পারলৌকিক জীবনকে পার্থিব অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু এসব বাণীকে
আক্ষরিক অর্থে না বুঝে বুঝতে হবে রূপক ও প্রতীকী অর্থে। এগুলো সাধারণ মানুষের বুঝার সুবিধার্থে
করা হয়েছে। কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তিদের এসব বাণীর মর্মার্থ বুঝতে হবে।
গাযালীর বক্তব্য হল এই সমস্ত দার্শনিক কোরআনের ঐ সব বাণীকে বাছাই করে নিয়েছেন যেগুলো
তাদের মত সমর্থন করে। কিন্তু মরণোত্তর দৈহিক পুনরুত্থানকে অস্বীকার করা চলে না। শুধু আত্মাই
নয়, দেহও অমর। আল্লাহ্ যদি প্রথমবার অর্থাৎ জন্মকালে দেহ ও আত্মাকে একত্রে সৃষ্টি করতে পারেন
তাহলে দ্বিতীয়বার অর্থাৎ মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের সময় কেন দেহ ও আত্মার পুনঃমিলন ঘটাতে
পারবেন না? যে যুক্তিতে তিনি দুটি ভিন্ন জিনিসকে প্রথমবার একত্রিত করতে পেরেছেন সেই একই
যুক্তিতে দ্বিতীয়বারও একত্রিত করতে পারবেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং কোন কিছু করার জন্য
আল্লাহর ইচ্ছাই যথেষ্ট। আল্লাহ্ ন্যায় বিচারক। আর এই ন্যায় বিচারের স্বার্থে দেহের পুনরুত্থান হবে।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। জগতের চিরন্তনতা সম্পর্কে গাযালীর মতবাদ ব্যাখ্যা করুন।
২। আল্লাহ্র জ্ঞান সম্পর্কীয় গাযালীর মতবাদটি বর্ণনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। সংক্ষেপে আল্লাহ্র জ্ঞান সম্পর্কে গাযালীর মতবাদ ব্যাখ্যা করুন।
২। সংক্ষেপে দেহের পুনরুত্থান সম্পর্কে গাযালীর মতবাদ আলোচনা করুন।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। মুসলিম দার্শনিক ফারাবী, সিনা ও তাদের অনুসারীদের মতে জগৎ
ক) অসীম খ) সসীম
গ) উভয়ই ঘ) কোনটি নয়
২। ফারাবী, সিনা ও তাদের অনুসারীদের মতে, আল্লাহ্র সারসত্তা হল
ক) চিন্তন খ) ইচ্ছাশক্তি
গ) সৃষ্টি নিপুণতা ঘ) ন্যায় পরায়ণতা
৩। গাযালীর মতে, আল্লাহ্র সারসত্তা হল
ক) চিন্তন খ) ইচ্ছাশক্তি
গ) সৃষ্টি নিপুণতা ঘ) ন্যায় পরায়ণতা
৪। দেহের পুনরুত্থান সম্ভব
ক) ফারাবীর মতে খ) সিনার মতে
গ) গাযালীর মতে ঘ) অ্যারিস্টটলের মতে
সঠিক উত্তর
১। গ ২। ক ৩। খ ৪। গ
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত