ইসলামী চিন্তাধারায় গাযালীর গুরুত্ব ও অবদান বর্ণনা করুন।

গাযালীকে বলা হয় হুজ্জাতুল ইসলাম। অর্থাৎ ইসলামের রক্ষক। কারণ তাঁর আগমন ঘটে এমন সময়ে
যখন ইসলামের বিভিন্ন চিন্তাগোষ্ঠী জ্ঞানের উৎসের এক একটি দিকের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে
নিজেদের চিন্তা ভাবনাকে ইসলামের আলোকে প্রকাশ করে। যার ফলে ইসলামের সামগ্রিক রূপ
প্রকাশিত না হয়ে বিচ্ছিন্ন রূপই প্রকাশিত হয় এবং মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। গাযালী এই
সমস্ত বিচ্ছিন্ন চিন্তাগোষ্ঠীর চিন্তা ভাবনার ভাল দিকগুলির সমন্বয় সাধন করে ইসলামের পরিপূর্ণ রূপ
প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করেন।
ইসলামের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক চিন্তার বিকাশে গাযালীর অবদানের জন্য কেউ কেউ তাঁকে মহানবীর
পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ বলে অভিহিত করেন। গাযালী একদিকে যেমন একজন সুপ্রসিদ্ধ মুসলিম দার্শনিক
ছিলেন তেমনি আবার একজন ধর্ম সংস্কারকও ছিলেন। তিনি বিভিন্ন অনৈসলামিক প্রভাব থেকে
ইসলামকে রক্ষা করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘এহইয়া-উল-উলুমউদ্দীন’ ধর্মতত্তে¡র ওপর একটি বিখ্যাত
গ্রন্থ। তিনি ধর্ম ও দর্শনের আলোচনা করে ধর্মকে দর্শনের ওপর স্থান দেন। তাঁর মতে ওহীর জ্ঞানই
একমাত্র জ্ঞান। আর সমস্ত দার্শনিক জ্ঞানকে ওহীর মাধ্যমে যাচাই করে গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাঁর
মতে প্রজ্ঞার একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে যার বাইরে প্রজ্ঞা যেতে পারে না। তাই প্রকৃত জ্ঞান লাভের
জন্য স্বজ্ঞারও প্রয়োজন রয়েছে।
তাই তিনি সুফীবাদকে অনৈসলামিক প্রভাব মুক্ত করে সুফীবাদের সংস্কার সাধন করেন এবং
সুফীবাদকে ইসলামে একটি সম্মানজনক অবস্থানে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি আশ’সারী মতবাদের
ত্রæটিগুলি দূর করে এ মতবাদকে সমৃদ্ধ করেন।
ইমাম গাযালী মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে একজন স্বাধীন চিন্তাবিদ। তাঁর সব দিক বিবেচনা করে
অধ্যাপক ম্যাকডোনাল্ড (গধপফড়হধষফ) ইসলামে তাঁর প্রভাবকে চার ভাগে বিভক্ত করেন :
(১) গাযালী মুসলমানদেরকে সমস্ত অনৈসলামিক প্রভাব মুক্ত করে কোরআন ও হাদীস অধ্যয়নের
দিকে ফিরিয়ে আনেন।
(২) তিনি দোযখের ভীষণ আযাবের বর্ণনা দিয়ে মানুষের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করেন যাতে মানুষ নৈতিক
জীবন যাপন করে। তাঁর মতে, দোযখের আগুনের ভয় মানুষের নৈতিক জীবনের এক মস্ত বড় চালিকা
শক্তি। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে, শিক্ষিত মানুষের মধ্যে এই ভয় ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
(৩) গাযালীই সুফীবাদকে রক্ষনশীল ইসলামে একটি সুদৃঢ় ও সুসংবদ্ধ স্থানে অধিষ্ঠিত করেন।
(৪) তিনি সাধারণ মানুষের কাছে দর্শনকে সহজবোধ্য করে তোলেন যাতে মানুষ দর্শনের দুর্বলতা
সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং ধর্মকে দর্শনের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। এর ফলে সাধারণ মানুষ দর্শন
পাঠের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এবং দর্শন জনপ্রিয়তা লাভ করে।
মুসলিম দর্শনে গাযালীর গুরুত্ব বিবেচনা করে বিভিন্ন পন্ডিতগণ তাঁর সম্বন্ধে বিভিন্ন মন্তব্য করেন :
যেমন, ডিবুওর বলেন, ‘‘গাযালী নিঃসন্দেহে মুসলিম জাহানের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য
চিন্তাবিদ।
আর. এ. নিকলসন ( বলেন, ‘‘গাযালী সমুন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী মনীষী।
আল্লামা স্যার মুহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘‘১৮’শ শতকে জার্মানীর কান্ট যে প্রচারকের ভ‚মিকা গ্রহণ
করেছিলেন গাযালীর ভ‚মিকাও তেমনি ছিল প্রচারধর্মী’’।
ওপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে গাযালীর অবদানকে আমরা নিæোক্ত কয়েকটি ভাগে সংক্ষেপে
আলোচনা করতে পারি :
১। প্লেটোনিক ও অ্যারিস্টটলীয় চিন্তাভাবনা ও যুক্তিবাদের হাত থেকে গাযালী ইসলামকে রক্ষা করেন।
সাধারণ মানুষকে গ্রীক দর্শনের বিনষ্টকারী প্রভাব থেকে মুক্ত করে কোরআন ও হাদীসের শিক্ষায়
তাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। জনগণকে দর্শন ও ধর্মের পার্থক্য সম্বন্ধে অবহিত করেন এবং ধর্মের স্থান
দর্শনের অনেক ওপরে বলে অভিহিত করেন।
(২) বেহেস্তের সুখ এবং দোযখের ভয় মানুষকে সৎ এবং নৈতিক, অন্যায় ও অবিচার থেকে নিজেকে
বাঁচিয়ে রাখে। তাই তিনি মানুষকে দোযখের ভয়াবহ আযাবের ভয় দেখাতেন এবং বেহেস্তের
নানামুখী সুখের কথা শুনাতেন। আর মানুষের মধ্যে ধর্মকে সুদৃঢ় করার জন্য ঈমান বা বিশ্বাসকে আশা
ও ভয়ের মধ্যে স্থাপন করেন। বিশ্বাসকে কার্যকরী করার জন্য ধর্ম-কর্মের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তাঁর মতে ধর্মই কেবল একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মানবে পরিণত করতে পারে।
(৩) গাযালী শুধু মুসলিম দার্শনিকদেরই পূর্বসূরি ছিলেন তা নয়, তিনি পাশ্চাত্য ও ইউরোপীয়
দার্শনিকদের অনেক চিন্তা ভাবনারও পূর্বসূরি ছিলেন। যেমন, ডেকার্ট, হিউম, কান্ট, বার্গস, মার্টিনো,
প্যাসকল, টমাস একুইনাস প্রমুখ দার্শনিকদের চিন্তা ভাবনার পূর্বাভাস তাঁর চিন্তা ভাবনায় পাওয়া যায়।
(৪) তিনি স্বজ্ঞাকে যুক্তি তর্ক ও বিচার-বুদ্ধির ঊর্ধ্বে স্থান দেন। তাঁর মতে, ওহী বা প্রত্যাদেশই প্রকৃত
জ্ঞান লাভের এক মাত্র মাধ্যম। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ প্রেমই আল্লাহর জ্ঞান লাভের সুনিশ্চিত
পথ। আর এজন্যই তিনি আধ্যাত্মিক তন্ময়তা তথা সুফীবাদকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন এবং সুফীবাদের ত্রæটিগুলি দূর করে সুফীবাদকে ইসলামের একটি সুদৃঢ় অবস্থানে অধিষ্ঠিত করেন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইসলামী চিন্তাধারায় গাযালীর গুরুত্ব ও অবদান বর্ণনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। গাযালী সম্পর্কে বিভিন্ন পন্ডিতগণের মন্তব্য ব্যক্ত করুন।
২। গাযালী সম্পর্কে ম্যাকডোলান্ডের মন্তব্য বর্ণনা করুন।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। গাযালীকে বলা হয়
(ক) ইসলামের রক্ষক (খ) ইসলামের ভক্ষক
(গ) ইসলামের গুরু (ঘ) ইসলামের শিষ্য
২। ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ অর্থ
(ক) ইসলামের জনক (খ) ইসলামের ঈমাম
(গ) ইসলামের গুরু (ঘ) ইসলামের রক্ষক
৩। গাযালীর মতে প্রকৃত জ্ঞান লাভের একমাত্র উৎস হল
(ক) ওহী (খ) বুদ্ধি
(গ) প্রজ্ঞা (ঘ) অভিজ্ঞতা
৪। মানুষকে নৈতিক জীবনের প্রতি অনুপ্রাণিত করার জন্য গাযালী মানুষকে ভয় দেখান
(ক) সাপের (খ) বাঘের
(গ) দোযখের (ঘ) লোকের
সঠিক উত্তর
১। ক ২। খ ৩। গ ৪। গ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]