ইবনে সিনার শিক্ষা ও কর্মজীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।

মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে ইবনে সিনা অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি একাধারে
ইনসাইক্লোপেডিস্ট, দার্শনিক, চিকিৎসক, দেহতত্ত¡বিদ, অংকশাস্ত্রবিশারদ, জ্যোতির্বিদ এবং কবি
ছিলেন। অনেকের মতে তিনি ছিলেন ইসলাম জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক এবং সর্বজাতি,
সর্বস্থান ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে অন্যতম। মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে
তাঁর দর্শনের গুরুত্ব সর্বোচ্চ। এজন্য আরববাসীগণ তাঁকে ‘আল-শেখ আল-রাইস' বলে আখ্যায়িত
করেন। এ মহান দার্শনিকের পূর্ণ দর্শন আলোচনা করা এখানে সম্ভব নয় বলে তাঁর দর্শনের কিছু মূল
বিষয় এ ইউনিটে আলোচনা করা হল। এর সাথে যতদূর সম্ভব হবে আমরা চেষ্টা করবÑ তাঁর দর্শনে
তাঁর নিজস্ব অসাধারণ অবদান ও পদ্ধতি কোথায় সংকলিত তা খতিয়ে দেখা। মধ্যযুগীয় দর্শন চিন্তার ইতিহাসে ইবনে সিনা একজন অসাধারণ চিন্তাবিদ। মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে
আধুনিক যুগ পর্যন্ত তাঁকেই সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি যেমন কালজয়ী
একজন দার্শনিক, তেমনি তাঁর জীবন প্রবাহও বৈচিত্র্যে ভরা। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের উত্থান ও পতন
তাঁর কর্মশক্তি বিনষ্ট করতে পারেনি। বরং উত্থানের সময় যেমন তিনি চিন্তাধারার বিকাশের কাজে লিপ্ত
থাকতেন, তাঁর জীবনের সংকটময় মুহ‚র্তেও তিনি তেমনিভাবে গ্রন্থ রচনায় কালক্ষেপণ করতেন। তাঁর
ঘটনাবহুল জীবন দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। কিন্তু তিনি বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর জীবনকালে যে অবদান রেখেছেন
তা আজও অমূল্য সম্পদ। আমরা এই পাঠে এ দার্শনিকের ঘটনাবহুল জীবনের সঙ্গে পরিচিত হব এবং
তিনি যেসব কালজয়ী গ্রন্থাবলী রেখে গেছেন সেসব গ্রন্থের মধ্যে কিছু গ্রন্থের পরিচয় এই পাঠে পাব।
ইবনে সিনার চিন্তাধারায় হেলেনীয় ভাবধারার প্রভাব ছিল বটে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দর্শন চিন্তায় যে
পদ্ধতি তিনি প্রয়োগ করেন তা একান্তভাবে তাঁর নিজস্ব। তাঁর জীবনী ও গ্রন্থাবলীর আলোচনার ফাঁকে
আমরা তাঁর এ অভিনব পদ্ধতির দিকেও যতটুকু সম্ভব লক্ষ্য রাখব।
ইবনে সিনার জীবনী
ইবনে সিনার জীবনী সম্পর্কে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করে তাঁর
জীবন ও কর্মের বিবরণ দেওয়া হল।
আবু আলী আল-হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে সিনা পাশ্চাত্য জগতে
‘আভিসেনা' নামে পরিচিত। আভিসেনা ল্যাটিন নাম। হিব্রæ ভাষায় তাঁকে ‘আভেন সিনা' নামে ডাকা
হয়। অধুনা ইউরোপে তিনি ইবনে সিনা নামে পরিচিত হন। তিনি বুখারার নিকটবর্তী বিশাল গ্রাম
কারমাইথান (সূর্য্যরে স্থান) গ্রামে সফর ৩৭০ হি:/ আগস্ট ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা
বলখের (গ্রীক ভাষায় ‘ব্যাকট্রা') অধিবাসী ছিলেন। ইবনে সিনার জন্মের পূর্বে তাঁর পিতা আবদুল্লাহ্
তাঁর নিজ জন্মভ‚মি বলখ ত্যাগ করে বুখারায় আসেন। এ সময়ে বুখারা রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও বুদ্ধিবৃত্তি
চর্চার এক বিখ্যাত কেন্দ্র ছিল। ইবনে সিনার পিতা মনসুরের পুত্র দ্বিতীয় নুহ কর্তৃক কারমাথাইনের
গভর্ণর নিযুক্ত হন। এ ধরনের নিয়োগ থেকে বুঝা যায় সিনার পিতা একজন মর্যাদাসম্পন্ন লোক
ছিলেন। আবদুল্লাহ এখানে বিবাহ করেন এবং দু'পুত্র লাভ করেন। ইবনে সিনা দু'ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ
ছিলেন।
ইবনে সিনার বয়স যখন ছয় বছর, তখন তাঁর পিতা বুখারায় গমন করেন। ইবনে সিনার বাল্যশিক্ষা
এখানে শুরু হয়। মাত্র দশ বছর বয়সে তিনি পুরো কোরান মুখস্ত করেন। এর সাথে আরও কিছু
প্রাসঙ্গিক বিদ্যা রপ্ত করায় তিনি তখনই খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর তিনি ফিক্হ শাস্ত্র এবং কালাম
অধ্যয়ন করেন। এর পাশাপাশি তিনি সাহিত্যেও শিক্ষালাভ করেন। এ সময় ইসমাঈলীদের বিদ্যা
চর্চায় খ্যাতি ছিল। বুখারায় তাঁর পিতার মাধ্যমে তিনি এদের সংস্পর্শে আসেন। জানা যায়,
ইসমাঈলীদের সংস্পর্শে আসায় বিভিন্ন বিদ্যার প্রতি তাঁর অনুরাগ সৃষ্টি হয়। এ সময়ে তিনি নিজে
মুসলিম ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করছিলেন। ঘটনাচক্রে এই সময়ই নাতেলী নামক একজন চিন্তাবিদ বুখারায়
আগমন করলে সিনার পিতা তাঁকে নাতেলীর নিকট শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য নিয়ে যান। তিনি নাতেলীর
নিকট ন্যায়-দর্শন, জ্যামিতি, জ্যোতিষ্ক বিজ্ঞানের শিক্ষালাভ করেন। নাতেলী পরফাইরীর ‘ইসাগোগ'
দিয়ে ছাত্রের শিক্ষা শুরু করেন। ইবনে সিনা নাতেলীর ‘জাতি' সম্পর্কেও সংজ্ঞাদানের সময় নিজে এ
সম্পর্কে এমন ব্যাখ্যা দেন যে নাতেলী তাঁর পিতাকে বলেন ইবনে সিনাকে যেন শিক্ষা ছাড়া অন্য কিছুর
সঙ্গে সংযুক্ত না করা হয়। ইবনে সিনা এ সময়ে যুক্তিবিদ্যার কিছু অংশ শিক্ষকের কাছে শিখেন এবং
বাকী অংশ মন্তব্যসহ নিজে আয়ত্ত করেন। তিনি এমন প্রতিভাবান ছিলেন যে, শিক্ষক তাঁকে যে শিক্ষা
দিতেনÑ তিনি নিজে তাঁর চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকতেন। এভাবে নাতেলীর কাছে দ্রæত তিনি
ইউক্লিডের জ্যামিতি, টলেমির আলসাগেস্ট প্রভৃতি শিক্ষা গ্রহণ করেন। নাতেলীর গুরুগৃহ ত্যাগ করার
পর ইবনে সিনা নিজে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও অধিবিদ্যা অধ্যয়ন করেন। প্লেটো এবং এ্যারিস্টটলের
দর্শনচর্চাও শুরু হয় এ সময়ে।
এরপর ইবনে সিনা চিকিৎসাশাস্ত্রে শিক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন এবং এ বিষয়ের ওপর প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ
পড়ে ফেলেন। তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের গ্রন্থকে কঠিন মনে করতেন না বলে অল্পদিনের মধ্যেই এ শাস্ত্রে
প্রভ‚ত জ্ঞান লাভ করেন। এরপর তিনি ধর্মীয় আইন ও বিতর্কের বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন প্রায় একই
সঙ্গে। তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করার পর চিকিৎসাকার্যে অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের সাহায্যে
লব্ধ জ্ঞানের পরিপূর্ণতা সাধন করেন। তাঁর চিকিৎসাশাস্ত্রে জ্ঞানের প্রসঙ্গে বলা হয় যে, ‘যখন চিকিৎসা
শাস্ত্রের অস্তিত্ব ছিল না, তখন হিপোক্রিটাস এর জন্ম দেন। যখন এ শাস্ত্র মৃত প্রায়, তখন গ্যালেন এ
শাস্ত্রকে পুনর্জীবিত করেন। আর যখন এ শাস্ত্র বিক্ষিপ্ত ও গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন আল-রাজী একে
সুসংবদ্ধ করেন। আর এ শাস্ত্র যখন অসম্পূর্ণ ছিল তখন ইবনে সিনা এ শাস্ত্রকে সম্পূর্ণতা ও পরিপূর্ণতা দান করেন।'
ইবনে সিনা অধ্যয়নে এমন নিমগ্ন থাকতেন যে, তাঁর নিজস্ব বর্ণনা অনুসারে তিনি এক সময়
একনাগাড়ে আঠার মাস ঘুমাননি। এ সময় তিনি যুক্তিবিদ্যা এবং দর্শনের বিভিন্ন বিষয় অধ্যয়ন
করছিলেন। তিনি দিবারাত্র অধ্যয়ন করতেন ও লিখতেন এবং লিখিত বিষয়গুলো ফাইলবন্দী করে
রাখতেন। যখন কোন বিষয় বুঝতে তাঁর অসুবিধা হত, তখন তিনি মসজিদে যেতেন এবং প্রার্থনারত
থাকতেন। তিনি বলেন প্রার্থনারত অবস্থায় তিনি সমস্যার সমাধান লাভ করতেন। সন্ধ্যায় বাতি নিয়ে
বসে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতেন। ঘুম আসলে বা দুর্বলতা বোধ করলে এক গাঁস সুরা পান
করতেন এবং আবার কাজে মনোনিবেশ করতেন।
এভাবে দিবারাত্র অধ্যয়ন করে তিনি যুক্তিবিদ্যা, প্রকৃতি বিজ্ঞান ও অংকশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। এ
সময়ে এ্যারিস্টটলের মেটাফিজিক্স গ্রন্থটি তিনি চল্লিশবার অধ্যয়ন করেও বুঝতে সক্ষম হননি।
অকস্মাৎ রাস্তার বই বিক্রেতা তাঁকে সস্তা দামে একটি বই কেনার অনুরোধ করলে তিনি অনিচ্ছা
সহকারে তা ক্রয় করেন। এ বইটি মেটাফিজিক্স' গ্রন্থের ওপর আল-ফারাবীর আলোচনা সংক্রান্ত গ্রন্থ।
তিনি দ্রæত গৃহে ফিরে এসে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে গ্রন্থটি অধ্যয়ন করেন এবং এ্যারিস্টটলের দর্শন
বুঝতে সক্ষম হন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পরবর্তী দিন তিনি দরিদ্রদেরকে অর্থ দান করেন এবং আল্লাহ্র প্রতি
কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সিজদা করেন।
ইবনে সিনার জীবনের মোড় এ সময়ে ঘুরতে শুরু করে। তাঁর বয়স এ সময় ১৮ বছর। চিকিৎসাশাস্ত্রে
তাঁর জ্ঞানের কথা ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক এ সময় একদিন বুখারার শাসনকর্তা নূহ ইবনে মনসুর অসুস্থ
হয়ে পড়েন। তাঁর চিকিৎসক রোগ আরোগ্যে ব্যর্থ হয়ে ইবনে সিনার শরণাপন্ন হন। ইবনে সিনার
চিকিৎসায় মনসুর আরোগ্য লাভ করেন। শাসনকর্তা মনসুর খুশি হয়ে তাঁকে সামানিদ শাসনকর্তাদের
লাইব্রেরী ব্যবহার করার অনুমতি দেন। এই গ্রন্থাগারে অনেক ধরনের গ্রন্থের মধ্যে তিনি গ্রীক দর্শন
সংক্রান্ত বহু গ্রন্থের সন্ধান পান এবং সেগুলো অধ্যয়ন করে নিজস্ব মন্তব্য লিখেন। ইবনে সিনা তাঁর
অতুলনীয় স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও বোধশক্তির সাহায্যে এখানে প্রভ‚ত জ্ঞান লাভ করেন। তিনি এ সম্পর্কে বলেন,
পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, ইবনে সিনার জীবন ছিল ঘটনাবহুল। তাঁর কর্ম জীবনের ঘটনা এখান থেকেই
শুরু। তাঁর বয়স যখন বিশ বছর তখন তাঁর পিতার মৃত্যু হলে জীবিকা অর্জনের জন্য তিনি গুরগঞ্জে
চাকুরী গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি বুখারা ছেড়ে কেন সেখানে যানÑ তা জানা যায়নি। যাহোক এ সময়ে
বুখারার শাসনকর্তার মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর ফলে সেখানে রাজনৈতিক গোলযোগ শুরু হলে ইবনে সিনা
বুখারা ত্যাগ করেন। জানা যায়, তিনি ১০০১ খ্রিষ্টাব্দে খাওয়ারিজমে পৌঁছেন। সেখানে পৌঁছার পূর্বে
তিনি কাঁসা, বাওয়াদ, তুস, সাক্কান, সাসনিকান, জাসারম এবং সর্বশেষে সুলতান কাবুসের সঙ্গে মিলিত
হওয়ার জন্য জুরমান পৌঁছেন। খাওয়ারিজমে তিনি আলী ইবনে মামুনের দরবারে আল-বিরুনী, আবু
নসর আল-ইরাকী, আল-খামমার এবং আবু সায়্যিদ আল খায়ের প্রমুখ দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও সুফীর
সঙ্গে পরিচিত হন। কথিত আছেÑ এ সময়ে গযনীর সুলতান মাহমুদ ইবনে সিনা, আল-খামমার, আল
আররাক এবং আল-বিরুনীকে তাঁর দরবারে হাজির হওয়ার জন্য বিশেষ দূত প্রেরণ করেন। গযনীর
সুলতান মাহমুদের বদান্যতার কথা শুনে খামমার, আররাক এবং বেরুনী গযনী রওয়ানা হন। কিন্তু
ইবনে সিনা তথায় না গিয়ে গোপনে গুরগঞ্জ থেকে পলায়ন করেন। সুলতান একথা শুনে খুব রাগানি¦ত
হয়ে পেন্টার আররাককে দিয়ে ইবনে সিনার ছবি আঁকিয়ে তা বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেন এবং তাঁকে
ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন। এরপর তিনি এবং মন্ত্রী মাসিহী বিভিন্ন জায়গা ঘুরে তুসে
পৌঁছেন। কিন্তু মাসিহি মরুভ‚মির উত্তপ্ত রোদের জ্বালায় ইন্তেকাল করেন। ইবনে সিনা এরপর রায়ে
গমন করে রাজ অনুগ্রহ লাভ করেন।
রায় থেকে তিনি হামাদানে গমন করেন। এখানে তাঁর প্রভ‚ত খ্যাতির কথা কারও অজানা ছিল না।
এসময় এখানে একজন প্রভাবশালী মহিলা শাসনকার্যে নিয়োজিত ছিলেন। ইবনে সিনা এখানে সক্রিয়
রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী হিসেবে কাজ করার
সময় সেখানকার সৈন্যবাহিনীর রোষানলে পড়ে তিনি কারারুদ্ধ হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ারও দাবি
ওঠে। তিনি আবার আত্মগোপন করেন। শাম্স উদ-দৌলা কালিক রোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে আবার
খুঁজে বের করা হয়। আমীর তাঁর সুচিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করে তাঁর প্রতি কৃত আচরণের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করেন এবং ইবনে সিনাকে পুনরায় মন্ত্রী নিয়োগ করেন। শামস-উদ-দৌলার মৃত্যুর পর
সৈন্যবাহিনী তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
করে আত্মগোপন করেন। এ সময় তিনি যুক্তিবিদ্যা ও অধিবিদ্যার গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেন।
কিন্তু তাঁর জীবনে কোথাও নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান করা সম্ভব ছিল না বলে তাঁকে আবার দেশ থেকে
দেশান্তরে ফিরতে হয়। জানা যায়, তিনি অবশেষে ইস্পাহানের আমীর আলা-উদ-দাওলার
পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। এই আমীর স্বাধীন চিন্তা ও মতবাদের পোষক এবং জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন।
১০৩০ খ্রিস্টাব্দে ইস্পাহানের পতন হলে আমীর আলা-উদ-দৌলা পলায়ন করেন। তাঁর সাথে ইবনে
সিনাও ছিলেন। পলায়নকালে তিনি কালিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তাঁকে ফেলে তাঁর সঙ্গী
আমির চলে যেতে পারেন- এ চিন্তায় তিনি খুব সাহসী ভ‚মিকা নিয়ে নিজের চিকিৎসা নিজেই করেন।
তিনি তাঁর জ্ঞান অনুসারে ইনজেকশন দিতে থাকেন। অতিরিক্ত ইনজেকশন প্রয়োগের ফলে তাঁর
মূত্রাশয় আলসারগ্রস্থ হয়। তারপরও তিনি হাল ছাড়েননি। তিনি মনোবল বজায় রেখে নিজের চিকিৎসা
নিজে চালিয়ে যান এবং শেষপর্যন্ত আবার ইস্পাহানে পৌঁছেন। এ সময় তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে
পড়েন। কিছুক্ষণ সুস্থ হয়ে ওঠে আবার রাজদরবারে যাতায়াত শুরু করেন। এ সময় আলা-উল-দৌলা
পুনরায় হামাদান রওয়ানা হলে তিনিও তাঁর সঙ্গী হন। পথে তিনি পুনরায় অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন
এবং অনুভব করেন যে, এবার তাঁর পরপারে যাত্রার পালা। তিনি সর্বপ্রকার চিকিৎসা পরিহার করেন
এবং বলেন, ইবনে সিনা এ অবস্থায় আর বেশিদিন
বাঁচেননি। ১০৩৭ খ্রিষ্টাব্দে (হিজরী ৪২৮ সনে) জুলাই মাসে হামাদানে তিনি ইন্তেকাল করেন। এ সময়
তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। তাঁর কবর হামাদানে এখনও বিদ্যমান।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ইবনে সিনা কি একজন আরবীয় ছিলেন নাকি পারসিয়ান? তাঁর
পিতার বংশানুক্রমিক পরিচয় সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। কিন্তু পরবর্তীকালে কেউ তাঁকে আরবীয় বলে
দাবি করেন। আবার তাঁর মত মহান দার্শনিককে তুর্কি বংশোদ্ভূত বলে দাবি করতেও অনেকে কুণ্ঠাবোধ
করেননি। তাঁকে পারসীয় বলে দাবি করারও জোর কম ছিল না। এখন তাঁকে কি বলে চিহ্নিত করা
যায়? আসলে তিনি আরব দেশীয় ছিলেন না। কারণ জানা যায় যে তাঁর জীবনের প্রথমদিকে তিনি
আরবী ভাষা তেমন জানতেন না। আরবী ভাষায় তাঁর জ্ঞান নিয়ে বিদ্রƒপ করলে তিনি এমনভাবে আরবী
ভাষা আয়ত্ত করে ভাষাতত্তে¡র ওপর গ্রন্থ রচনা করেন যে, খোদ আরবী ভাষাভাষী পÐিতদের পক্ষেও তা
বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি একজন তুর্কিও নন কারণ, তাঁর জীবনকালে সব সময় দেখা গেছেÑ
তিনি তুর্কি পৃষ্ঠপোষকতা সর্বদাই পরিহার করেছেন এবং পারসিয়ান পৃষ্ঠপোষকতা অনে¦ষণ করেছেন।
তাঁর মাতা ছিলেন একজন পারসিয়ান নাম আফ সানেহ। এ থেকে বুঝা যায় পারসিয়ানদের প্রতি তাঁর
মমত্ববোধ। সেজন্য গবেষকরা তাঁকে পারসিয়ান বলেই অভিহিত করেন এবং এর পক্ষেই যুক্তির পাল্লা ভারী।
ইবনে সিনার গ্রন্থাবলী
ইবনে সিনার জীবনী আলোচনার সময় তাঁর প্রতিভার পরিচয় ইতোপূর্বে পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর প্রতিভার
পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যাবে তাঁর রচিত গ্রন্থাবলী থেকে। যতদূর জানা যায়, ইবনে সিনা তাঁর অস্থির ও
ঘটনাবহুল জীবনে প্রায় দু'শত গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে সংশয়মুক্ত গ্রন্থের সংখ্যা একশতটি।
সৌভাগ্যক্রমে এসব গ্রন্থের মধ্যে তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলো পাওয়া গেছে। দু:খজনক ব্যাপার
হল ইস্পাহানে যখন তাঁর গ্রন্থাগারটি পুড়িয়ে দেওয়া হয় তখন পরিণত বয়সে লেখা তাঁর মূল্যবান গ্রন্থ
কিতাব আল-ইনসাফ গ্রন্থটি পুড়ে যায়। তবে এর কিছু অংশ যে কোনভাবে অক্ষত থাকে।
ইবনে সিনার গ্রন্থাবলীর কথা বলতে গিয়ে অবশ্যই তাঁর শিষ্য এবং ভক্তদের কথা উল্লেখ করতে হয়।
কারণ তারাই তাঁর গ্রন্থের ক্রম এবং পারম্পর্য (ংবয়ঁবহপব) রক্ষা করেন। তিনি যেসব গ্রন্থ রচনা করেন,
তাঁর অধিকাংশই আরবী ভাষায় লেখা। তিনি কিছু গ্রন্থ ফারসি ভাষায় লিখেন। ভাষার প্রতি তাঁর তেমন
লক্ষ্য না থাকলেও দার্শনিক ধারা এবং শব্দাবলী পরবর্তীকালের দর্শনের উন্নয়নে যথেষ্ট সাহায্য করে।
ইবনে সিনার আরবী ভাষা আল-কিন্দি এবং আল-ফারাবীর চেয়ে অনেক প্রাঞ্জল ছিল। তাঁর গ্রন্থে
ব্যবহৃত শব্দাবলী, ধনংঃৎধপঃ শব্দের সমাহার এবং এগুলো আরবীয়দের পছন্দসই ছিল না। এসব
শব্দাবলী গ্রীক বা সিরিয়াক শব্দ নয়, বরং এগুলো ফারসি ভাষায় তাঁর জ্ঞান থেকে নেওয়ার ইঙ্গিত
দেয়। এ কারণে পারস্যবাসীরা এসব শব্দকে প্রাকৃতিক ও সন্তোষজনক মনে করলেও আরববাসীদের
মতে এগুলো কর্কশ শব্দ ছিল।
ইবনে সিনার গ্রন্থাবলীর মধ্যে আরেকটি বিশেষত্ব হল যে তিনি তাঁর চিন্তাধারাকে বিভিন্ন বিভাগে এবং
উপ-বিভাগে বিভক্ত করে প্রকাশ করেন। তিনি যে কোন গ্রীক দার্শনিকের চেয়ে বেশি ভাগ এবং উপভাগের সূচনা করেন। এক সময় পাশ্চাত্য চিন্তাধারায় এ ধরনের ক্লাসিফিকেশন বা বিভক্তিকরণকে
ফবারপব বা পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ইবনে সিনার গ্রন্থে এ ধরন আরও স্পষ্টভাবে দেখা
যায়। ইবনে সিনার আরেকটি কৃতিত্ব হল আরবী ভাষার যথার্থ এবং শুদ্ধ ব্যবহার। তিনি আরবী শব্দের
সংজ্ঞা ও বিশেষীকরণ প্রদান করে আরবী ভাষায় যে গ্রন্থটি লিখেন তা এককথায় অনবদ্য। ইবনে
সিনাকে ফারসি ভাষায় দর্শন চর্চার প্রকৃত উদ্ভাবক বলা যায়Ñ কারণ তিনি দর্শন, যুক্তিবিদ্যা ও
প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় তাঁর দানিশ নামেহ গ্রন্থে যে ফারসি ভাষা ব্যবহার করেনÑ তা প্রায়
ইসলামপূর্ব যুগের ফারসি ভাষা। এতে আরবী শব্দের খুবই উপযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিভাষা ব্যবহার করা হয়।
ইবনে সিনা আরবী ভাষায় কবিতা রচনা করেন। এসব কবিতা চিন্তাধারা ও বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে
চিত্তাকর্ষক। তিনি যুক্তিবিদ্যার ওপর কবিতা লিখেন। চিকিৎসার ওপরও তাঁর কিছু কবিতা আছে।
কারও কারও মতে, উমর খৈয়ামের কিছু কবিতা আসলে ইবনে সিনার রচিত।
ইবনে সিনার গ্রন্থাবলীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উপরোক্ত আলোচনার পর এবার আমরা তাঁর গ্রন্থাবলীর নাম
উল্লেখ করব। তবে তাঁর সমুদয় গ্রন্থের উল্লেখ এখানে অতি দীর্ঘ হবে বলে নিয়ে কেবলমাত্র তাঁর
বিখ্যাত কিছু গ্রন্থের উল্লেখ করা হল:
(১) কিতাব আশ-শিফা ঃ এ গ্রন্থটি তিনি অল্প বয়সে রচনা করেন। কিন্তু এটি একটি বিখ্যাত গ্রন্থ।
এ গ্রন্থে দর্শন, যুক্তিবিদ্যা এবং অধিবিদ্যার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন।
(২) আন-নাজাত ঃ এটি একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ এবং এর এক অংশ আশ-শিফা থেকে সংকলিত।
(৩) আল-ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ঃ এটি তাঁর আরেকটি বিখ্যাত গ্রন্থ। এটি ফারসি ভাষায়
অনূদিত হয়।
(৪) আল-কামুন ফিত তিব্ব বা সংক্ষেপে আল-কানুন ঃ চিকিৎসা সংক্রান্ত এটি একটি মহামূল্যবান
গ্রন্থ। এই গ্রন্থ আকারে বৃহৎ এবং অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের গ্রন্থ। জানা যায়, সপ্তদশ শতক পর্যন্ত
চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যাপনা এবং চর্চা এই কানুনের ওপর ভিত্তি করেই হতো। এ গ্রন্থে
মনোবিশ্লেষণ থেকে শুরু করে প্রায় সর্বপ্রকার রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ইউরোপে
এ গ্রন্থ নামে খ্যাত।
(৫) আল-আদরিয়াতুল কালবিয়া ঃ এই গ্রন্থটি তুর্কি ভাষায় অনূদিত হয়। উপরোক্ত গ্রন্থগুলো ছাড়াও
তাঁর রচিত এবং বিখ্যাত গ্রন্থগুলো হল:
(৬) মাজমু (কমপেনডিয়াম);
(৭) বাদ-দীন (অশুভ ধর্ম সম্পর্কে);
(৮) আল-মুখতাসার আল-আসওয়াত (মধ্যবর্তী সারসংক্ষেপ)
(৯) আল-হাসিল ওয়া আল-মাহসুল (দ্রব্য সম্পর্কিত গ্রন্থ);
(১০) আল-বিরওয়া আল-ইসম (শুভ কর্ম এবং মন্দ সম্পর্কিত গ্রন্থ);
(১১) আল-মাদা ওয়াল মা'বাদ (প্রারম্ভ এবং প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে);
(১২) আল-আরসাদ আল-কুল্লিয়া (সাধারণ পর্যবেক্ষণ সম্পর্কিত গ্রন্থ);
(১৩) মুখতাসার আল-মাজুসতি (আলমাগেস্টের সার সংক্ষেপ);
(১৪) কিতাব আল মা'বাদ (প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত গ্রন্থ);
(১৫) কিতাব আল-হিদায়াহ (হেদায়েত সম্পর্কিত গ্রন্থ);
(১৬) রিসালাত হাই ইবনে ইয়াকজান;
(১৭) কিতাব আল-কুলানজ;
(১৮) আল-আদাবিয়াত আল-কালবিয়া (কার্ডিয়াক-রেমেডি সম্পর্কে);
(১৯) কিতাব আল-নাজাত (মুক্তি সংক্রান্ত গ্রন্থ);
(২০) লিসান আল-আরাব (আরবদের ভাষা সম্পর্কিত);
(২১) মুখতালার আল-আসগার (স্মলার এপিটম সম্পর্কে);
(২২) কিতাব আল-ইনসাফ (বিচার সম্পর্কীয় গ্রন্থ);
তাঁর রচিত দু'শত গ্রন্থের মধ্যে উপরোক্ত কয়েকটি বিখ্যাত গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হল। কিন্তু
সামগ্রিকভাবে তাঁর গ্রন্থাবলীর মধ্যে তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়। এসব গ্রন্থের আলোচনায় তাঁর ব্যাপক
দৃষ্টি ও কল্পনাশক্তি এবং শিল্প ও বিজ্ঞানে তাঁর দক্ষতা এত গভীর ছিল যে, বলা যায় পরবর্তী কয়েক
শতাব্দীব্যাপী জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারা তাঁরই নির্দেশিত পথে প্রবাহিত হয়।
অনুশীলনী
১। ইবনে সিনার শিক্ষা ও কর্মজীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
২। সংক্ষেপে ইবনে সিনার জীবনী আলোচনা করুন এবং তাঁর গ্রন্থ তালিকা থেকে দশটি গ্রন্থের নাম লিখুন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
সত্য/মিথ্যা
১। ইবনে সিনার পূর্ণনাম ছিল আবু আলী ইবনে সিনা। সত্য/মিথ্যা
২। তিনি কেবলমাত্র একজন বড় দার্শনিক ছিলেন। সত্য/মিথ্যা
৩। আল-কানুন তাঁর রচিত গ্রন্থ। সত্য/মিথ্যা
৪। তাঁর জন্ম হয় কারমাথাইন নামক গ্রামে। সত্য/মিথ্যা
৫। তাঁর মৃত্যু হয় ১০৭০ খ্রিস্টাব্দে। সত্য/মিথ্যা
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। ইবনে সিনার ল্যাটিন নাম
(ক) আভিসেনা (খ) অ্যাভেরোজ
(গ) আলেকজান্ডার (ঘ) আভেন সিনা।
২। ইবনে সিনা হামাদান রাজ্যের
(ক) দার্শনিক ছিলেন (খ) চিকিৎসক ছিলেন
(গ) মন্ত্রী ছিলেন (ঘ) কোনটিই নয়।
৩। নাতেলী ছিলেন ইবনে সিনার
(ক) ছাত্র (খ) শিক্ষক
(গ) পথ-প্রদর্শক (ঘ) বন্ধু।
৪। ইবনে সিনার গ্রন্থাবলীর ভাষা ছিল
(ক) গ্রীক (খ) ফারসি
(গ) আরবী ও ফারসি (ঘ) হিব্রæ।
৫। ইবনে সিনার বয়স ছিল মাত্র
(ক) একান্ন বছর (খ) বাহাত্তর বছর
(গ) আটান্ন বছর (ঘ) ষাট বছর।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইবনে সিনার জীবনী আলোচনা করুন।
২। তাঁর গ্রন্থাবলীর পরিচয় দিন।
৩। চিকিৎসক হিসেবে তাঁর কৃতিত্ব ও অবদান আলোচনা করুন।
উত্তরমালা
সত্য/মিথ্যা
১। মিথ্যা ২। মিথ্যা ৩। সত্য ৪। সত্য ৫। মিথ্যা
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। ক ২। গ ৩। খ ৪। গ ৫। গ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]