প্রখ্যাত মনস্তত্ত¡বিদ ইবনে সিনা তাঁর আত্মা, মন ও জ্ঞানতত্তে¡র ওপর বিখ্যাত গ্রন্থ সিফা, নাজাত এবং
ইশারাতে দীর্ঘ আলোচনা করেন। মনের বিভিন্ন রকম শক্তির বিভাগ করে তিনি যেভাবে মনকে ব্যাখ্যা
করেন তা অভিনবত্বের দাবি রাখে। আত্মা কি? আত্মা এক না বহু? এই আত্মা কি দেহের সৃষ্টি, না
দেহ আত্মার সৃষ্টি? আত্মার সঙ্গে দেহের সম্পর্ক কি এবং এ আত্মা কি অমর? আত্মা সম্পর্কে ইবনে
সিনা এসব প্রশ্ন উত্থাপন করে অত্যন্ত সূক্ষèভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তাঁর আত্মা-তত্তে¡র সঙ্গে
তাঁর জ্ঞানতত্ত¡ও জড়িত। যদিও প্লেটো, এ্যারিস্টটল ও বিশেষভাবে নব্য-প্লেটোবাদীদের চিন্তাধারা তাঁর
জ্ঞানতত্তে¡র ওপর প্রভাব বিস্তার করে তবুও একথা বলা অসমীচীন হবে না যে, ইবনে সিনা তাঁর
জ্ঞানতত্তে¡ তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারারও অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন। যেমনÑ তাঁর নিজস্বতার বিকাশ আমরা তাঁর
যুক্তিবিদ্যা ও অধিবিদ্যার আলোচনায় লক্ষ্য করেছি। এ পাঠে আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলোর সরল ও
সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।
মন ও আত্মা
আমরা প্রথমে মন সম্পর্কে আলোচনা করব। ইবনে সিনা তাঁর কিতাবুল নাফ্স গ্রন্থে মন সম্পর্কে
আলোচনা করেন। তিনি তাঁর নিজস্ব উদ্ভাবিত রীতি অনুযায়ী মনকে বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে ব্যাখ্যা
করেন। মনকে তিনি একক জাতি বলেন এবং দেহের সঙ্গে মনের সম্পর্কের ব্যাপারে বলেন মন দেহ
থেকে আলাদা সত্তা এটি দেহের কোন অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। মন একটি ব্যক্তিক দ্রব্য
)। মনকে তিনি বিশ্লেষকের জন্য নিæলিখিত বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করেন। তিনি
বলেন প্রথমত মন তিন প্রকার। এর প্রথমটি (ক) উদ্ভিদ মন বা নাফসে নুবাকী)। এ
মনের তিন প্রকার শক্তি আছে:
(১) প্রথম শক্তিটি হচ্ছে খাদ্য সংগ্রহকারী বা পুষ্টিসাধক শক্তি এ হঁঃৎরঃরাব বা পুষ্টিসাধক শক্তি দেহে অবস্থানকালে অন্য দেহকে পূর্ব আকারে পরিবর্তন করার ক্ষমতা
ধারণ করে।
(২) উদ্ভিদ মনের দ্বিতীয় প্রকার শক্তিটি হচ্ছে বর্ধন শক্তি। এ শক্তি পূর্ণতা (ঢ়বৎভবপঃরড়হ) প্রাপ্ত না হওয়া
পর্যন্ত নিজের আকার ঠিক রেখে ক্রমাগত নিজেকে বৃদ্ধি করতে থাকে।
(৩) উদ্ভিদ মনের তৃতীয় শক্তিটি হচ্ছে প্রজনন শক্তি। এ প্রজনন শক্তি দেহ থেকে নিজের অনুরূপ কিছু
শক্তি সংগ্রহ করে বাস্তবে এর অনুরূপ অন্যদেহ সৃষ্টি বা উৎপাদন করতে পারে।
(খ) জীব-মন (ধহরসধষ সরহফ) দুটি শক্তির সমন¦য়ে গঠিত। এর একটি (১) প্রেষণামূলক শক্তি ও
অন্যটি (২) প্রত্যক্ষণমূলক শক্তি। প্রেষণামূলক শক্তি দু'ভাগে বিভক্ত। এর একটি হচ্ছে ক্ষুণিœবৃত্তির শক্তি
এবং অন্যটি ক্রিয়াশক্তি। ক্ষুণিœবৃত্তি আকর্ষণীয় বা বিকর্ষী হতে পারে। ক্ষুণিœবৃত্তি আকর্ষণীয় হলে এর
প্রকাশ হয় কামনা দ্বারা; আর বিকর্ষী হলে এর প্রকাশ ঘটে রুক্ষ মেজাজের মাধ্যমে। কর্মশক্তি বা
কুয়াতুল ফায়েলাহ দৈহিক গতি বা ¯œায়ুমন্ডলী এবং মাংসপেশীর ওপর ক্রিয়াশীল এবং প্রসারণ ও
সংকোচনের কারণ হিসেবে কাজ করে।
জীব-মনের প্রত্যক্ষণমূলক শক্তি বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ হয়। বাহ্যিক
শক্তির মধ্যে দর্শন, শ্রæতি, ঘ্রাণ, স্বাদ এবং স্পর্শ অন্তর্ভুক্ত। এগুলোকে পঞ্চ ইন্দ্রিয় বলা হয়।
অভ্যন্তরীণ শক্তির আরম্ভ হয় সাধারণ জ্ঞান দ্বারা। উচ্চ বৃত্তির সাহায্যে বিশ্লেষিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত
প্রত্যক্ষণগুলো এখানে একত্রিত হয়। মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে সাধারণ জ্ঞান অবস্থান করে। যে শক্তি
প্রত্যক্ষণের ওপর প্রথম ক্রিয়া করে তা হয় গঠনমূলক না হয় কল্পনাশক্তি। এরা মস্তিষ্কের মধ্যভাগে
অবস্থিত। কল্পনাশক্তি ইন্দ্রিয়জাত প্রত্যক্ষণকে দেশ-কাল ও পরিমাণের অবস্থা থেকে মুক্ত করে মনকে
বস্তুর প্রতিরূপ গঠনে সাহায্য করে। এর ফলে ইন্দ্রিয়ের ওপর এ অবস্থায় আর কোন প্রভাব পড়ে না।
গঠনমূলক শক্তির পর আসে চিন্তামূলক শক্তি। এ শক্তির কাজ হচ্ছে প্রত্যক্ষণ ও প্রতিরূপ থেকে
সাধারণ উপাদানসমূহকে বিমূর্ত করা এবং এদের থেকে ধারণা গঠন করা। মূল্যায়নিক শক্তি এসব
ধারণাকে দলবদ্ধ করে অবধারণ গঠন করে। ইবনে সিনা এ জাতের অবধারণকে সহজাত শক্তি বলে
চিহ্নিত করেন। মূল্যায়নিক শক্তি জীবের প্রত্যক্ষণ শক্তি বা বৌদ্ধিক শক্তি গঠন করে। ফলে জীব
তাদের আপদ বিপদ সম্পর্কে অবহিত হয় এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। অর্থাৎ বিপদ থেকে বাঁচার
জন্য পলায়ন করে বা রুখে দাঁড়ায়। জীব মনের স্মৃতিশক্তি আছে এবং সিনার মতে তা মস্তিষ্কের
পশ্চাদভাগে অবস্থিত।
(গ) মানব মনÑমানব মন প্রাথমিক অনুভ‚তিসমূহকে বুদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন গুণ
অর্জন করে। এ গুণগুলো বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ হতে পারে। বাহ্যিক গুণাবলীর প্রথমটি হল মন দৃষ্টি বা
ফ্যান্টাসি। এ মন:দৃষ্টি সমস্ত দৃষ্ট-অদৃষ্ট বস্তুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং এগুলো পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব
করা যায়। এর পরবর্তী গুণগুলো হল রূপায়ণ শক্তি (কুয়াতুল মাসুরাত), কল্পনা শক্তি (কুওয়াতুল
মাখিলাত) বা চিন্তাশক্তি (কুওয়াতুল ফাকরাত), ধারণা শক্তি ও স্মরণ শক্তি (কুওয়াতুল জাকেরাত)।
ইবনে সিনার মতে এগুলো মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে সম্পর্কিত। নাফস আল-নাতেকাতের সঙ্গে এ
শক্তির দুটি রূপ প্রকাশ পায়:
(১) জ্ঞানশক্তি বা প্রজ্ঞাশক্তি (কুওয়াতুল আলেমাত) বা চিন্তাশক্তি এবং (২) ব্যবহারিক শক্তি
(কুওয়াতুল আমেলাত)। অবিমিশ্র জ্ঞান তথা ব্যবহারিক জ্ঞান পদার্থ থেকে পদার্থোত্তর স্তরের দিকে
অর্থাৎ ঊর্ধ্ব জগতের দিকে গতিশীল হয়; আর প্রজ্ঞাশক্তি বা কুওয়াতুল আলেমাত নিæতর জগতের
দিকে অগ্রসর হয়। এরূপ জ্ঞান সম্পর্কে ইবনে সিনা বৈয়াকরণ ইয়্যাইয়ার ধারণাসমূহের আরো
বিশদরূপ ব্যাখ্যা দান করেন। তিনি ইয়্যাইয়ার মতবাদ আল-কিন্দি ও আল-ফারাবীর মাধ্যমে লাভ
করেন। ইবনে সিনা বলেন মানুষের অমূর্ত জ্ঞান যখন নিæতর জগৎ থেকে উচ্চতর জগতের দিকে
উন্নীত হয়, তখন এ জ্ঞান চারটি পর্যায়ে বিভক্ত হয়Ñ (১) জড় বা বস্তুজ্ঞান (আকল হায়উলানী) যা
সর্বতোভাবে একটি জড়শক্তিরূপে বিদ্যমান, তার সম্ভাবনাসমূহ স্পষ্ট নয়। (২) আকল বিলফায়াল-এর
সম্ভাবনাসমূহ পরিষ্কারভাবে আত্মপ্রকাশ করে। (৩) আল আকল বিল মালাকুত-এর চরমসীমা পর্যন্ত
পৌঁছায় এবং (৪) আল-আকাল আল-মুস্তাফাদ বা এর আকর্ষণ শুধু বুদ্ধিগ্রাহ্য ধারণাসমূহের প্রতি ও
পরিশেষে এটি চরম সৃজনীয় জ্ঞান (ড়িৎষফ ংঢ়রৎরঃ)-এর সঙ্গে মিলিত হয়। ইবনে সিনার মনের ধারণা
সম্পর্কে নিচে একটি চিত্র দেওয়া হল:
মানব মন
জীব মন
উদ্ভিদ মন
১. বর্ধন শক্তি
২. বিকাশ শক্তি
৩. পুনরুৎপাদন শক্তি
প্রেষণামূলক শক্তি প্রত্যক্ষমূলক শক্তি
ক্ষুন্নিবৃত্তি শক্তি ক্রিয়াশীল শক্তি বহি:ইন্দ্রিয় আন্ত:ইন্দ্রিয়
১ দর্শন
২. শ্রবণ
৩. সংস্পর্শ
৪. স্বাদ
৫. ঘ্রাণ
১. সাধারণ বুদ্ধি
২. কল্পনা
৩. চিন্তন শক্তি
৪. মূল্যায়নিক
৫. স্মৃতি শক্তি
বিশুদ্ধ বুদ্ধি ব্যবহারিক বুদ্ধি
বিমূর্ত চিন্তন সক্রিয় বুদ্ধি
সম্ভাবনাময় অভ্যাসগত অভ্যাসগত প্রকৃত অর্জিত
ইবনে সিনার উপরোক্ত বর্ণনা ও চিত্র থেকে আমরা তাঁর মন সম্পর্কীয় ধারণা পাই। কিন্তু তাঁর মতে
মনই কি রুহ বা ংড়ঁষ? এর প্রশ্নের উত্তর আত্মা সম্পর্কীয় তত্তে¡র আলোচনায় পাওয়া যাবে।
রুহ বা আত্মা সম্পর্কীয় আলোচনা
আত্মা বা ‘রুহ' সম্পর্কে ইবনে সিনা কিতাবুন নাফস এবং ইশারাত গ্রন্থে দীর্ঘ আলোচনা করেন। তিনি
ব্যবহারিক মনস্তত্ত¡ থেকে তত্ত¡গত মনস্তত্তে¡র আলোচনার সূত্র ধরে আত্মার গতিধারাকে
সুফীতত্তে¡র সঙ্গে সংযুক্ত করেন। ইবনে সিনা বলেন আত্মা জড়বস্তু নয়; বরং সুরত বা আকারেরই এক
প্রকারভেদ। আত্মার প্রথম পরিপূর্ণতাই দেহের পরিপূর্ণতা। তিনি বলেন এই অবস্থায় ‘আত্মা কি'? এ
প্রশ্নের পরিবর্তে আত্মা কি করে? এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করাই শ্রেয়। তাঁর মতে আত্মা
‘একটি বিমূর্ত বস্তু' (জাওহার মা'নাভী)। বিমূর্ত আত্মাকে প্রমাণ করার জন্য তিনি কতকগুলো প্রমাণ
উপস্থাপন করেনÑ (১) যেসব প্রাচীন মতবাদে আত্মাকে ‘সাকার' বলে অভিহিত করা হয়েছে
সেগুলোকে ভুল বলে প্রমাণ করা; (২) আত্মার অশরীরী বা আকারবিহীন হওয়ার পক্ষে অবরোহী
(ধঢ়ৎরড়ৎর) প্রমাণসমূহ পেশ করা। তিনি বলেন, আত্মা যদি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মজ্ঞান লাভ
করতে পারে বা দেহের অস্তিত্বের পূর্বেও স্বীয় অস্তিত্বের সত্যতার ঘোষণা করতে পারেÑ তবে স্বীকার
করতে হবে যে, আত্মা একটি বিমূর্ত বস্তু।
ইবনে সিনার মতে রুহ বা আত্মা থেকেই শরীরের গঠন ও পরিপূর্ণতা সাধিত হয়। আত্মা থেকেই
শরীরের অস্তিত্ব এবং এর সাহায্যেই দেহের কর্মশক্তি স্থিত হয়। তিনি বলেন আমরা যখন আত্মাকে
বিমূর্ত বস্তু বলি তখন প্রশ্ন ওঠে- আত্মা কি তবে জড় আকৃতি বিশিষ্ট আদি বুদ্ধি? (আকল-মাদী), না
বস্তুভিত্তিক চেতনা? আত্মা কি বোধগম্য অবয়ব অনুধাবন করতে সক্ষম, নাকি আত্মা কোন মাধ্যম
ছাড়াই নিজেকে অনুধাবন করতে বা জানতে সক্ষম? আত্মার এমন কত গুলো অদৃশ্য (মালাকুত) শক্তি
আছে যেগুলো বুদ্ধি ছাড়া পরস্পরকে জানার ক্ষমতাসম্পন্ন নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় অনুভ‚তির
পক্ষে নিজেকে অনুভব করা সম্ভব নয়। কিন্তু বুদ্ধি বা আকল নিজেকে নিজেই বুঝে। ইবনে সিনা
এখানে বলেন যে, আত্মা আসলে একটি জ্ঞানময় সত্তা যা জড় থেকে পৃথক এবং এর কোন জড়
আকৃতি নেই।
এখানে একটি প্রশ্ন উদয় হয় এভাবে আত্মার যদি জড় আকৃতি না থাকে এবং এটি যদি একটি স্বতন্ত্র
সত্তা হয় তবে আত্মার জন্য দেহের প্রয়োজন হল কেন? ইবনে সিনা বলেন আত্মার জন্য দেহের
প্রয়োজন এ কারণে যে, দেহের অস্তিত্বের পূর্বে এর কোন স্বতন্ত্র সত্তা না থাকায়, দেহের সৃষ্টির পর
আত্মা এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে স্বাতন্ত্র্য লাভ করে। কিন্তু আত্মা ও দেহের মধ্যে যদি কোন যোগসূত্র
থাকে এবং দেহের পূর্বে এর কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ছিল না বলে ধরে নেইÑ তাহলে মৃত্যুর পর এর
অস্তিত্ব ও স্থায়িত্বের কি প্রমাণ দেওয়া যায়? ইবনে সিনা বলেন যে, আত্মা পূর্বাপর বা বর্তমান কোন
অবস্থাতেই দেহের অধীন নয়। উপরন্তু এটি একটি অবিমিশ্র সত্তা (বহঃরঃু) যাকে তিনি জাওহার বাশিত
বলেন।
ইবনে সিনা আত্মার ধারণাকে আকৃতির ধারণা থেকে পৃথক করেছেন। তিনি আত্মার ধারণা সম্পর্কে
বলেন যে, প্রথমত আত্মা একক (টহরঃু, হড়ঃ সঁষঃরঢ়ষব) যার জন্য সমস্ত অনুভ‚তি সংক্রান্ত অবস্থার
পরিপূর্ণতা সম্পাদিত হয়। দ্বিতীয়ত আত্মার মূল সত্তার বিবেচনায় সাকারের আকৃতির পরিবর্তন সত্তে¡ও
এর অস্তিত্ব স্বীয় বৈশিষ্ট্যে অটল থাকে।
এরপর আত্মা সম্পর্কে আরেকটি প্রশ্নের উত্তর না দিলে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। প্রশ্নটি হল
আত্মা কি মরণশীল না অমর? ইবনে সিনা এ সম্পর্কে বলেন যে, আত্মা দেহের মৃত্যুর সাথে মরে যায়
না। কারণ আত্মা সর্বতোভাবে দূষণমুক্ত। দেহ দূষণযুক্ত হতে পারে কিন্তু আত্মা মূলত: অজড়ীয় বলে
দেহের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও দূষিত হয় না (হড়ঃ পড়ৎৎঁঢ়ঃবফ)। যা পচনশীল বা দূষিত নয় তা
ধ্বংসশীল নয়। বিধায় আত্মা দেহের মৃত্যুর পর ধ্বংস হয় না। উপরন্তু দেহ আত্মার নিমিত্ত কারণ বা
পরিণতি কারণ নয় বলে এসব কারণের কারণ ধ্বংস হলেও আত্মা অবিকল থাকে।
ইবনে সিনার মতে আত্মার অমরত্বের দ্বিতীয় কারণ হল আত্মা দেহে থেকে আসে না বা জন্ম নেয় না
বা এটি দেহের কোন শক্তিও (ভধপঁষঃু) নয়। আত্মা সম্পূর্ণ পৃথক দ্রব্য (ফরভভবৎবহঃ ংঁনংঃধহপব)। তা
যদি হয়, তবে আত্মার সত্তা অন্য কিছু থেকে আসে দেহ থেকে নয়। আবার আত্মা অবিচ্ছেদ্যভাবে
দেহের সঙ্গেও যুক্ত নয় এবং দেহ এর কারণও নয়। তাই যদি হয় তবে বলা যাবে না যে, দেহের
অস্তিত্ব আত্মার অস্তিত্বের পূর্বে এবং এদের মধ্যে কারণগত পূর্বাপর সম্পর্ক আছে। সুতরাং দেহের
মৃত্যুর সাথে আত্মার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই।
ইবনে সিনা আরও বলেন যে, আত্মা সম্পূর্ণরূপে সরল এবং যৌগিক নয় (হড়ঃ পড়সঢ়ড়ংরঃব)
বলে আত্মা কখনও জড় ও আকারে বিভক্ত নয়। আত্মার মধ্যে জড় বা আকারের মাধ্যমে বস্তুকে
ধ্বংসকারী কারণ হিসেবে কোন দূষণ প্রবিষ্ট হয় না বলে এর মধ্যে অনড় অবস্থানের
ধারণা ) বিদ্যমান। এ ধারণা থেকেই তিনি বলেন আত্মা অমর।
ইবনে সিনা তাঁর মরমীবাদের ধারণায় আত্মা সম্পর্কে বলেন যে, আত্মা সর্বশেষে চালক শক্তির
) সঙ্গে পুন:যুক্ত হয় অর্থাৎ এর পূর্বতন স্থানে ফিরে আসে।
ইবনে সিনার জ্ঞানতত্ত¡
ইবনে সিনার মতে সকল প্রকার জ্ঞান এক ধরনের বিমূর্তন। এ বিমূর্তন কোন জ্ঞাত বস্তুর আকারের
ব্যাপারে প্রযোজ্য। তিনি এখানে বিভিন্ন মাত্রার বিমূর্তন শক্তির ওপর জোর দেন। তাঁর মতে এ বিমূর্তন
শক্তির প্রকাশ হচ্ছে জ্ঞান সম্পর্কীয় বৃত্তির মধ্যে। এ কারণে জ্ঞানজাত কর্মের জন্য সংবেদীয়
প্রত্যক্ষণের প্রয়োজন উপাদানের (সধঃঃবৎ) উপস্থিতি। কল্পনা বাস্তব উপাদানের উপস্থিতি থেকে মুক্ত;
কিন্তু উপাদানগত সংস্পর্শ ছাড়া কল্পনা জ্ঞানীয় পর্যায়ে আসে না। অথচ কেবলমাত্র বুদ্ধিতে বিশুদ্ধ
আকার সর্বজনীনভাবে জ্ঞানে পর্যবসিত হয়। ইবনে সিনা ‘বিমূর্তনের পর্যায় তত্ত¡' বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা
করেন। কারণ তিনি খুব সম্ভবত এ্যারিস্টটলের এ জাতীয় তত্তে¡র প্রতি উত্থাপিত আপত্তিসমূহ পরিহার
করতে চেয়েছেন। এখানে তাঁর সামনে যে প্রশ্নটি আসে তা হলÑ প্রত্যক্ষণ যদি কেবলমাত্র আকারের
জ্ঞান হয়, তবে আমরা কিভাবে জানতে পারব যে, আকার জড়ের মধ্যে অস্তিত্বশীল? অথবা আমরা
কেমন করে জানব যে জড় আদৌ অস্তিত্বশীল কিনা?
প্রত্যক্ষণের ব্যাপারে ইবনে সিনার অবস্থান সাধারণত সরল বাস্তববাদের মত। তিনি প্রত্যক্ষণজাত
গুণাবলীর আপেক্ষিক মতবাদ গ্রহণ করেন। অর্থাৎ এমন বস্তুর কথা বলেন যাদের নিজস্ব কিছু বাস্তব
গুণ আছে। বস্তুগুলো এরূপ মনে হয়, এরূপ-এরূপ পরিস্থিতিতে এবং এরূপ-এরূপ অবস্থানে (ধঢ়ঢ়বধৎ
ধং ংঁপয ধহফ ংঁপয ঁহফবৎ ংঁপয ধহফ ংঁপয পরৎপঁসংঃধহপবং ধহফ ভৎড়স ংঁপয ধহফ ংঁপয ঢ়ড়ংরঃরড়হ)।
এর জন্য ইবনে সিনার কিছু আত্মগত বক্তব্যই দায়ী। তিনি ‘মুখ্য' এবং ‘গৌণ' প্রত্যক্ষণের মধ্যে
পার্থক্য করেন। তাঁর মতে মুখ্য প্রত্যক্ষণ আত্মগত (ংঁনলবপঃরাব) বা প্রত্যক্ষণকারীর মনের অবস্থা এবং
‘গৌণ' প্রত্যক্ষণ হচ্ছে বহির্জগতের বিষয়। ইবনে সিনার এ ধরনের ধারণার প্রতিফলন ঘটে মধ্যযুগীয়
দর্শনে এবং অনেক পরে লকের মুখ্য ও গৌণ গুণের ধারণার মধ্যে।
কিন্তু ইবনে সিনার প্রত্যক্ষণ-তত্তে¡র মূল চাবিকাঠি প্রত্যক্ষণের অভ্যন্তরীণ (রহঃবৎহধষ) এবং বাহ্যিক
(বীঃবৎহধষ) রূপে পার্থক্য করণের মধ্যে নিহিত। তিনি প্রত্যক্ষণকে অভ্যন্তরীণ প্রত্যক্ষণ এবং বাহ্যিক
প্রত্যক্ষণ হিসেবে দু'ভাগে বিভক্ত করেন। তাঁর মতে, বাহ্যিক প্রত্যক্ষণ হচ্ছে বাহ্যিক পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের
কার্যকলাপ। অভ্যন্তরীণ প্রত্যক্ষণকে তিনি পাঁচটি বৃত্তিতে ভাগ করেন। এসব করার পেছনে তাঁর প্রধান
উদ্দেশ্য হল গুণের ভিত্তিতে বিভিন্ন কার্যকলাপ বা ক্রিয়া পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা।
ইবনে সিনার মতে পাঁচ প্রকার অভ্যন্তরীণ প্রত্যক্ষণের মধ্যে (১) প্রথমটি সেনসাস কম্যুনিস যা সমস্ত
ইন্দ্রিয়ের কেন্দ্র। এটি সংবেদোপাত্তের সঙ্গে প্রত্যক্ষণকে সংযুক্ত করে এবং এটি অবশ্যই অভ্যন্তরীণ,
কারণ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কোনটি এ কাজ করতে পারে না (২) দ্বিতীয় অভ্যন্তরীণ প্রত্যক্ষণ হল কল্পনাবৃত্তি
যা প্রত্যক্ষণজাত ভাবমূর্তিকে ধারণ করে (৩) তৃতীয় অভ্যন্তরীণ প্রত্যক্ষণ হল আবার কল্পনা যা ঐ
ভাবমূর্তির ওপর ক্রিয়াশীল হয় একত্রীকরণ ও বিচ্ছিন্নকরণের মাধ্যমে। মানুষের মধ্যে এ বৃত্তি যুক্তি
দ্বারা পরিব্যাপ্ত হয় যাতে মানবীয় কল্পনা চিন্তা করতে পারে এবং ব্যবহারিক বুদ্ধিবৃত্তিতে পরিণত হয়।
চতুর্থ এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রত্যক্ষণ হল ওয়াহাম (ধিযস), পাশ্চাত্যে যা ভিস
এসটিমাটিভা হিসেবে পরিচিত। এটি জড়ীয় বস্তুর মধ্যে প্রেম এবং ঘৃণা, উপকারিতা এবং
অপকারিতার মত অ-জড়ীয় গতিসমূহকে প্রত্যক্ষণ করে এবং যুক্তি দ্বারা প্রভাবিত হোক বা না হোক
এটি আমাদের চরিত্রের মূল ভিত্তি। (৫) পঞ্চম অভ্যন্তরীণ প্রত্যক্ষণ হচ্ছে স্মৃতিতে ঐসব ধারণা
যাদেরকে তিনি “অভিপ্রায়” বলে অভিহিত করেন।
ইবনে সিনার মনস্তাত্তি¡ক শিক্ষায় ওয়াহামতত্ত¡ পরিপূর্ণভাবে আদি উপাদান। এটি আধুনিক যুগের
মনস্তত্ত¡বিদ্যার “øায়বিক প্রতিক্রিয়া” তত্তে¡র মত। এ্যারিস্টটলের মতে কল্পনা বা স্বয়ং প্রত্যক্ষণের দ্বারা
এ কাজ সমাধা করা হয়। কিন্তু ইবনে সিনা বলেন প্রত্যক্ষণ ও কল্পনা আমাদেরকে কেবলমাত্র কোন
বস্তুর প্রত্যক্ষণজাত (ঢ়বৎপবঢ়ঃঁধষ) গুণের কথা বলে। এগুলো হল রং, আকার, সাইজ ইত্যাদি। কিন্তু
এগুলো বস্তুর চরিত্র বা “অর্থ” সম্পর্কে আমাদেরকে কিছুই বলে না। অথচ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অভ্যন্তরীণ
বৃত্তি দ্বারা এগুলো বিকশিত হওয়া আবশ্যক। এজন্য ওয়াহাম তত্তে¡র নৈতিক তাৎপর্য ছাড়াও আরও
দিক আছে। এটি মূলত একটি মনস্তাত্তি¡ক মতবাদ যা পরিবেশের প্রতি আমাদের সহজাত ও
আবেগপ্রসূত প্রতিক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে।
ইবনে সিনা বলেন, “øায়বিক প্রতিক্রিয়া” বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করে। কোন কোন
ক্ষেত্রে এটি বিশুদ্ধভাবে সহজাতÑ যেমন প্রথমেই ভেড়া বাঘ দেখলে পলায়ন করে বা মাতা শিশুর জন্য
ভালবাসা বোধ করে। এগুলো কোন পূর্বতন অভিজ্ঞতা ছাড়াই ঘটে এবং এগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠনের
মধ্যে নিহিত কোন এক প্রকার “প্রাকৃতিক প্রেরণার” মাধ্যমেই ঘটে। দ্বিতীয়ত øায়বিক প্রতিক্রিয়া দৃশ্যত
অভিজ্ঞতাপ্রসূত পর্যায়ে কাজ করে । অতীতে একটি কুকুর
লাঠি অথবা পাথরের ঘায়ে আক্রান্ত হয়ে ব্যথা অনুভব করে। এ ধরনের আনুষঙ্গিক বস্তু ও উদ্দেশ্যের
সঙ্গে বস্তুর ভাবমূর্তির সংযোগ সাধন করে সে পলায়ন করে। এ ধরনের প্রত্যক্ষ সংযোগের ঘটনা
অপ্রত্যক্ষ এবং অযৌক্তিকও হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা সাধারণত প্রাণী এবং স্বল্পবুদ্ধির লোকের
মধ্যে ঘটে থাকে। প্রায় একই রকমের সংযোগ নীতি বা ‘অসহিষ্ণু নীতি' আধুনিক যুগের ব্যবহারিক
মনোবিদ্যায় ‘সাপেক্ষীকরণ' (পড়হফরঃরড়হবফ ৎবভষবী) নীতি হিসেবে বহুল প্রচলিত। সে যাহোক, এটা
পরিষ্কার যে ইবনে সিনা তাঁর ওয়াহামতত্তে¡ বলতে চান যে, ওয়াহাম ধারণার অনুসঙ্গের ভিত্তিতে যে
প্রত্যক্ষণজাত ভবিষ্যৎবাণী করে তার অসংখ্য কারণ আছে এবং এর প্রত্যক্ষণজাত অবধারণ অবৈধ বা
মিথ্যাও হতে পারে। এ্যারিস্টটল প্রত্যক্ষণের এ ধরনের ব্যাখ্যা করতে পারেননি। কারণ তিনি অতীত
অভিজ্ঞতার ওপর উপস্থিত প্রত্যক্ষণজাত অবধারণের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেননি। কিন্তু ইবনে
সিনার মধ্যে এ ধরনের উপলব্ধি স্পষ্ট। এ তত্তে¡র মাধ্যমে তিনি জ্ঞানের প্রত্যক্ষণ পরবর্তী পর্যায়ে
পৌঁছেন।
ইবনে সিনার বুদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত মতবাদ উপরোক্ত আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ তত্তে¡র মাধ্যমে তিনি জ্ঞানের প্রকৃত স্তরে পৌঁছেন। এ মতবাদ অবশ্য একান্তভাবে তার নিজস্ব নয়Ñ
কারণ তাঁর পূর্বে এ্যারিস্টটল সংক্ষেপে, অ্যাফ্রোডিসিয়াসের আলেকজান্ডার এবং আল-ফারাবী
বিস্তারিতভাবে এ মতবাদ ব্যাখ্যা করেন। ইবনে সিনা তাঁদের মতবাদের সঙ্গে নতুন কিছু তত্ত¡ সংযোগ
করেন এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করে তাঁর তত্ত¡ দেন। এ মতবাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে দু'ভাগে ভাগ করা
হয়। এর প্রথমটি হচ্ছে মানুষের অভ্যন্তরীণ সুপ্ত বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানুষের বাহ্যিক সক্রিয় বুদ্ধিবৃত্তি।
দ্বিতীয়টির প্রভাব এবং পরিচালনায় প্রথমটি উন্নীত ও পরিপক্ক হয়।
ইবনে সিনা বলেন যে, মানুষের অভ্যন্তরীণ সুপ্ত বুদ্ধিবৃত্তি অবিভাজ্য, অজড়ীয় এবং অধ্বংসশীল। এ
মতের ধর্মীয় গুরুত্ব আছে। আল-ফারাবীর মতে কেবলমাত্র উন্নত বুদ্ধিবৃত্তি বেঁচে থাকে এবং বাকী সব
দেহের মৃত্যুর সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে যায়। ইবনে সিনা বলেন ঠিক তা নয় বরং সমস্ত মানুষের আত্মা
অমর। বুদ্ধিবৃত্তির অমরতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন যে ধারণা বা “আকার” অবিভাজ্য হওয়ায়
কোন একটি অঙ্গে এটিকে সীমাবদ্ধ করা যায় না। আর যদি তা করা না যায় তবে দৈহিক সমাপ্তির
সঙ্গে এর সমাপ্তি ঘটে না।
ফারাবী বলেন, বিশেষের সংবেদীয় অভিজ্ঞতা থেকে ‘সর্বজনীন' এর বিমূর্তকরণ করা হয়। কিন্তু ইবনে
সিনা বলেন, ‘সর্বজনীন' সংবেদনের ভাবমূর্তি থেকে বের হতে পারে না, কারণ এটি সেখানে অবস্থান
করে না। উপরন্তু, সারসত্তা বাস্তবিকভাবে ‘সর্বজনীন' নয়। এটি কেবল এভাবে আমাদের মনে আচরণ
করে মাত্র। সুতরাং ইবনে সিনা মনে করেন আমাদের মনের কাজ হচ্ছে ‘বিবেচনা করা' এবং সংবেদীয়
অভিজ্ঞতার বিশেষের ওপর চিন্তা করা। এই কার্যক্রম ‘প্রত্যক্ষ স্বজ্ঞার' (ধপঃ ড়ভ রহঃঁরঃরড়হ) কর্মের
সাহায্যে সক্রিয় বুদ্ধিবৃত্তি থেকে সারসত্তাকে গ্রহণের জন্য মনকে প্রস্তুত করে। সর্বজনীন আকারের
প্রত্যক্ষণ তখন বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মার গতি হয়ে যায়। এর ফলে বিশেষকে একক বা সামগ্রিকভাবে প্রত্যক্ষ
করা আর আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা আমাদেরকে এ ধারণায় উপনীত করে। যদি ব্যক্তিক উদাহরণের
প্রত্যক্ষণ এবং এদের সমতুল্যের উল্লেখ বিশ্বজনীন এর উৎপাদনের যথেষ্ট কারণ হত,
তাহলে জ্ঞান অর্জন যান্ত্রিক হয়ে যেত এবং এই যান্ত্রিকতা আবশ্যিকভাবে কার্যকর হতে থাকত।
এটি অবশ্য বাস্তবে সত্য নয় যে, জ্ঞাতকে (পড়মহরঃরড়হ) যান্ত্রিকভাবে এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে উৎপাদন করা
যায়। ইবনে সিনার মতে জ্ঞানের উৎপত্তি রহস্যজনক এবং এ জ্ঞান প্রতিটি স্তরে সত্তাকে জড়িত করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের মধ্যে এটি মোটামুটি সত্য নয় যে, “আমি জানি” (ও শহড়ি রঃ); বরং এটি সত্য যে,
“এটা আমার মধ্যে ঘটে” (ওঃ ড়পপঁৎং ঃড় সব)। ইবনে সিনার মতে জ্ঞান অনে¦ষণকারী সকলের মধ্যেই
এ ধরনের প্রার্থনাসূচক গুণ আছে। এর জন্য মানুষের প্রচেষ্টার প্রয়োজন। এ প্রচেষ্টার ফল প্রদান হল
আল্লাহর কাজ বা সক্রিয় বুদ্ধিবৃত্তির কাজ। ইবনে সিনা এখানে ইলহাম (ওহঃঁরঃরড়হ) বা স্বজ্ঞার সাহায্যে
জ্ঞান উৎপত্তির কথা স্পষ্টভাবে বলেছেন এবং প্রত্যক্ষণ জাতীয় সবকিছুর অনেক ঊর্ধ্বে জ্ঞানের স্থান
চিহ্নিত করেছেন। ইবনে সিনার মতে প্রচেষ্টালব্ধ স্বজ্ঞার ফলে মানুষ বিশুদ্ধ অন্তর্দৃষ্টি (রহংরমযঃ) লাভ
করে। এই অন্তর্দৃষ্টিই বিস্তারিত এবং ম্পষ্ট জ্ঞানের সৃষ্টিকর্তা।
মন এবং আত্মা সম্পর্কে ইবনে সিনার অভিমত চিন্তা করে বের করুন এবং লিখুন। তাঁর জ্ঞানতত্তে¡র
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
সত্য/মিথ্যা
১। ইবনে সিনার মতে মন ছয় প্রকার। সত্য/মিথ্যা
২। উদ্ভিদ মনের কেবল বর্ধনশক্তি আছে। সত্য/মিথ্যা
৩। ইবনে সিনার মতে আত্মা জড়বস্তু নয়। সত্য/মিথ্যা
৪। ইবনে সিনার মতে আত্মা থেকে শরীরের গঠন হয়। সত্য/মিথ্যা
৫। ইবনে সিনার মতে প্রত্যক্ষণই জ্ঞান। সত্য/মিথ্যা
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। উদ্ভিদ মনের দ্বিতীয় প্রকার শক্তি হচ্ছে
(ক) উৎপাদন শক্তি (খ) বর্ধনশক্তি
(গ) প্রজনন শক্তি (ঘ) কোনটিই নয়।
২। ইবনে সিনার মতে আত্মা
(ক) মরণশীল (খ) অমর
(গ) জড়ীয় (ঘ) কোনটিই নয়।
৩। ইবনে সিনার মতে আত্মা দূষণ
(ক) মুক্ত (খ) যুক্ত
(গ) মূলক (ঘ) নিরপেক্ষ।
৪। ইবনে সিনার মতে প্রত্যক্ষণ
(ক) তিন প্রকার (খ) সাত প্রকার
(গ) পাঁচ প্রকার (ঘ) কোন প্রকারই নয়।
৫। ইবনে সিনার মতে জ্ঞান
(ক) প্রত্যক্ষণমূলক (খ) সংবেদনমূলক
(গ) স্বজ্ঞামূলক (ঘ) কোনটিই নয়।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। মন সম্পর্কে ইবনে সিনার ধারণা ব্যাখ্যা করুন।
২। ইবনে সিনার মতে আত্মা কি? তাঁর মতে আত্মা কি আছে?
৩। জ্ঞান সম্পর্কে ইবনে সিনার তত্ত¡ ব্যাখ্যা করুন এবং চিন্তা করে আপনার মন্তব্য লিখুন।
উত্তারমালা
সত্য/মিথ্যা
১। মিথ্যা ২। মিথ্যা ৩। সত্য ৪। সত্য ৫। মিথ্যা
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। খ ২। খ ৩। ক ৪। গ ৫। গ
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত