আল-ফারাবীর সত্তার ধারণা ব্যাখ্যা করুন। আল-ফারাবীর মুখ্য নীতিগুলোর পরিচয় দিন।

আল-ফারাবীর চিন্তাধারার গভীরতার স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর অধিবিদ্যায়। যুক্তিবিদ্যার মত
অধিবিদ্যায় তাঁর মৌলিক অবদানের জন্য তিনি খ্যাত। ফারাবীর বিজ্ঞানের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু দখল
করে আছে পদার্থবিদ্যা এবং অধিবিদ্যায়। তাঁর অধিবিদ্যা আবার তাঁর রাষ্ট্রতত্ত¡ ও নীতিশাস্ত্রের সঙ্গে
ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যায় আল-ফারাবীর অধিবিদ্যক আলোচনা তাঁর
সামগ্রিক দর্শনের মূল বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। মুসলিম দর্শনে সত্তা, পরমসত্তা এবং বিশ্বজগতের
আলোচনাই মুখ্য আলোচনা। এ হিসেবে ফারাবীর সুশৃ´খল দর্শনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা
দেখব তাঁর অধিবিদ্যার আলোচনা এ দর্শনের মধ্যস্থানে অবস্থিত। এবার আমরা তাঁর অধিবিদ্যা
আলোচনা করে দেখি তাঁর অধিবিদ্যা সম্পর্কে উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য।
সত্তা, পরমসত্তা এবং বিশেষ বিজ্ঞানের ভিত্তিস্বরূপ প্রতিপাদনের মুখ্য নীতিসমূহের আলোচনার নাম,
ফারাবীর মতে, অধিবিদ্যা। অধিবিদ্যার এই সংজ্ঞা থেকে তিনটি মুখ্য বিষয় পাওয়া যায়। এর প্রথমটি
হল সত্তা, দ্বিতীয়টি পরমসত্তা বা আল্লাহ এবং আল্লাহর ধারণায় পৌঁছানোর জন্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদি
এবং তৃতীয়টি হল বিশেষসমূহের প্রতিপাদনের মূলনীতিসমূহ।
অধিবিদ্যার উপরোক্ত সংজ্ঞা এবং এর মধ্যে নিহিত বিষয়াবলীর দিকে লক্ষ্য রেখে আল-ফারাবী
অধিবিদ্যাকে তিনভাগে ভাগ করেন। বিভাগগুলো নি¤œরূপÑ
১। সত্তার অস্তিত্বের আলোচনা বা সত্তাতত্ত¡
২। অজড়ীয় দ্রব্যসমূহ, তাদের প্রকৃতি, সংখ্যা এবং তাদের উৎকর্ষের মাত্রার আলোচনা। এই
আলোচনা পরিশেষে পরমসত্তায়, যার চেয়ে আর বৃহত্তম কোন কিছুর ধারণা করা যায় না এমন
এক পরম সত্তার আলোচনায় পরিণত হয়। এ সত্তা সমুদয় বস্তুসমূহের সর্বোচ্চ বা চূড়ান্ত নীতি যা
থেকে প্রতিটি বস্তু এর সত্তা লাভ করে। এই বিভাগটিকে বলা হয় ধর্মতত্ত¡।
৩। তৃতীয় বিভাগটি বিশেষ বিজ্ঞানের ভিত্তিস্বরূপ প্রতিপাদনের মুখ্য নীতিসমূহের আলোচনা।
আল-ফারাবীর মতে, এ তিনটি অংশের বিষয়বস্তুর সমনি¦ত আলোচনার নামই অধিবিদ্যা। তিনি তাঁর
অধিবিদ্যা আলোচনায় এ্যারিস্টটলের তথাকথিত ধর্মতত্তে¡র (ঞযবড়ষড়মরপধ) সাহায্য গ্রহণ করেন।
এবার আমরা প্রথমে প্রথম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তু ‘সত্তাতত্ত¡' নিয়ে আলোচনা করব।
দর্শনের যে শাখায় অস্তিত্বের স্বরূপ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তত্তে¡র আলোচনা করা হয়Ñ সেই শাখাটি হল
অনটোলজি বা সত্তার (নবরহম) আলোচনা বিষয়ক শাখা। আল-ফারাবী এ শাখায় সত্তা সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে চরমতম এবং বিশ্বজনীন ধারণা হল সত্তার ধারণা। সত্তাকে
সংজ্ঞায়িত করা যায় না, কারণ সত্তা সকল ধারণার পূর্ববর্তী এবং সরলতম ধারণা। কোন ধারণা বা
প্রত্যয়ের সংজ্ঞায়িত করার অর্থ হল এর আধেয় বা বিষয়বস্তুকে বিশ্লেষণ করা। কিন্তু সত্তার কোন
আধেয় না থাকায়, সত্তাকে চিন্তনমূলক উপাদানের মধ্যে আনয়ন করা কঠিন; কারণ সত্তা নিজেই এ
কর্মে বাঁধা দেয়। সত্তাকে শব্দের সাহায্যে সংজ্ঞায়িত করার প্রচেষ্টা কেবলমাত্র আমাদের মনকে এর
দিকে মনোযোগী করে নির্দেশিত করে, কিন্তু এর ধারণার ব্যাখ্যা করে নাÑ কারণ যেসব শব্দের দ্বারা
ধারণাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়Ñ সত্তার ধারণা তার চেয়েও পরিষ্কার। এক সময় আল-ফারাবী, এ
সত্তাকে (নবরহম) বাস্তবায়নের (ৎবধষরঃু) সঙ্গে একীভ‚ত করেন অনেকটা পারমিনাইডিসের পদ্ধতিতে।
আল-ফারাবী সত্তাকে দু'ভাগে ভাগ করেন। এর একটি হল অনিবার্য সত্তা, অন্যটি সম্ভাব্য সত্তা।
অনিবার্য সত্তা স্বয়ং অস্তিত্বশীল বা এই সত্তা এমন যা অস্তিত্বশীল না হয়ে পারে না। এর অনস্তিত্বের
কথা অচিন্তনীয়, যেমন পরমসত্তা খোদার অস্তিত্ব পূর্ণভাবে নিশ্চিত। তাঁর অস্তিত্বের কারণ তিনি
নিজেই। নিজেই যিনি তাঁর নিজ অস্তিত্বের কারণÑ এটিই তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ। এই অনিবার্য সত্তা
অন্য সব বস্তুর অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। এই পরম সত্তার মধ্যে সত্য ও বাস্তবতা একীভ‚ত হয়ে
আছে। এই অনিবার্য সত্তা এক এবং একাধারে বাহ্য ও অন্তর, অন্তরব্যাপী এবং অন্তর্বর্তী। তাঁর মতে
এই একক পরম অনিবার্য সত্তাই আল্লাহ।
আল-ফারাবীর মতে, সম্ভাব্য সত্তা হল সেই সত্তা যা অন্যের নিকট থেকে এর
অস্তিত্ব গ্রহণ করে বা অন্যের দ্বারা অস্তিত্ববান হয়। এর অনস্তিত্ব চিন্তনীয় বা সম্ভাব্য। উদাহরণস্বরূপ
বলা যায়Ñ এই পৃথিবী এবং এর অভ্যন্তরীণ বস্তুসমূহ সম্ভাব্য সত্তা কারণ এরা পরম সত্তার দ্বারাই
অস্তিত্ববান।
আল-ফারাবী এ্যারিস্টটলীয় দর্শনের অনুসরণ করে বলেন যে, সম্ভাব্যতা হচ্ছে
অস্তিত্বশীল হওয়ার ক্ষমতা। প্রত্যেকটি সৃজিত বস্তু প্রকৃত অর্থে অস্তিত্বশীল হওয়ার পূর্বে অস্তিত্বশীল
হওয়ার সম্ভাবনার মধ্যে ছিল। অর্থাৎ ঐ বস্তু সুপ্ত অবস্থায় বা সম্ভাব্যতায় নিহিত ছিল।
বাস্তবতা (ধপঃঁধষরঃু) হল বাস্তবেই যা অস্তিত্বশীল। আল-ফারাবীর মতে, যা বাস্তবতায় অস্তিত্বশীল তা
পূর্ণ এবং যা সম্ভাব্যতায় অস্তিত্বশীল হওয়ার জন্য অপেক্ষমান তা সম্ভাব্য বলে অপূর্ণ এবং এ সত্তাই
ভবন (নবপড়সরহম)। তাঁর মতে, কেবলমাত্র আল্লাহ-ই কার্য বা কারণ এসবে তা ইঙ্গিত করে না। কারণ
কোন বস্তু আসলেই অস্তিত্বশীল কিনা তা না জেনেই, এর সারধর্ম সম্পর্কে চিন্তা করা যায়। কিন্তু
অনিবার্য সত্তা সম্পর্কে তা করা যায় না। তাই একমাত্র এক পরম সত্তাই হলেন আল্লাহ যার সারধর্মই
হচ্ছে তাঁর অস্তিত্ব।
আল-ফারাবী, আল্লাহ এবং তাঁর সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করার জন্য সারধর্ম এবং অস্তিত্বের
মধ্যে যৌক্তিক পৃথকীকরণের ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, আল্লাহ স্বয়ং অস্তিত্বশীল এবং অনিবার্য
সত্তা যিনি পূর্ণ বাস্তবতা বলে পূর্ণতম। সারধর্ম এবং অস্তিত্বের মধ্যে দ্বৈততা নেই বলে এটাই প্রমাণিত
হয় যে, তিনি অস্তিত্ববান এবং সম্পূর্ণরূপে একক সত্তা।
আল-ফারাবীর মতে সৃষ্টবস্তু দুটি নিয়মের সমন¦য়ে গঠিত। নিয়ম দুটি হচ্ছে জড় ও আকার (সধঃঃবৎ
ধহফ ভড়ৎস)। জড় বা বিস্তৃতি দ্রব্যত্ব ছাড়া আর কিছু নয়। এ দ্রব্যত্ব অনির্ধারিত। আকার
অনুযায়ী কোন বস্তুতে পরিণত হওয়াই এর একমাত্র ধর্ম। আকারই মূলনীতি। এই আকার জড় কোন্
বস্তুতে পরিণত হবে তা নির্ধারণ করে। জড় আকার ছাড়া অস্তিত্বশীল হতে পারে না; আবার আকার
জড় ছাড়াও পরিস্ফুটিত হয় না। এ্যারিস্টটলের মত আল-ফারাবীও বলেন, এ দু'টির একটিকে সরিয়ে
নিলে কোন বস্তুর অস্তিত্ব থাকে না।
আল-ফারাবী সত্তার আলোচনায় দ্রব্য এবং অবান্তর লক্ষণকে (ধপপরফবহঃ) টেনে আনেন।
তাঁর মতে, দ্রব্য নিজেই অস্তিত্বশীল অন্য কিছুতে নয়। অবান্তর লক্ষণ হল এমন যার জন্য দ্রব্য
প্রয়োজনীয়, কারণ এ দ্রব্যে এবং এর দ্বারা এ লক্ষণ অস্তিত্বশীল হয়।
আল-ফারাবী দ্বিতীয় অংশে অধিবিদ্যক ধর্মতত্তে¡র বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন। আমরা সত্তার
আলোচনা থেকে জেনেছি যে, তাঁর মতে পরম সত্তা বা অনিবার্য সত্তাই আল্লাহ। তিনি স্বয়ম্ভূ,
স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সর্বজ্ঞাতা। তিনি সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু তিনি স্বয়ং সৃজিত নন। তিনি তাঁর
সৃজিত সব কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত। কিন্তু সৃজিত মানুষ কি তাঁর সম্পর্কে কোন জ্ঞানলাভ করতে পারে? বা
আরও সহজ করে প্রশ্ন উত্থাপন করলে প্রশ্নটি দাঁড়ায়Ñ তিনি সব কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত, কিন্তু তাঁকে কি
জানা যায়?
আল-ফারাবী এ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে এর উত্তর দিতে ইতস্ততবোধ করেন। তিনি বলেনÑ আল্লাহ
জ্ঞাতব্য (শহড়ধিনষব) এবং অজ্ঞাতব্য প্রকাশ্য এবং গোপনীয়। তিনি ফুসুম আলহিসাম গ্রন্থে বলেন তাঁর সম্পর্কে সর্বোত্তম জ্ঞান হল এটুকু জানা যে, তিনি এমন যাঁকে আমাদের মন
বিস্তারিতভাবে জানতে পারে না। তাঁর মতে, আল্লাহ কি তা জানা অত্যন্ত কঠিন। এর কারণ হল
আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির সীমাবদ্ধতা। আলোর সাহায্যে রং দৃশ্যমান হয়। তাহলে এখানে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত
হলÑ উজ্জ্বল আলো উজ্জ্বল দৃষ্টিশক্তি উৎপাদন করবে। কিন্তু এখানে আল্লাহর ব্যাপারে বিষয়টি
অন্যরূপ। উজ্জ্বলতম আলো দৃষ্টিশক্তিকে ধাঁধিয়ে দেয়। আল্লাহর ক্ষেত্রে বিষয়টি এরূপ। তিনি এমন
অকল্পনীয়ভাবে উজ্জ্বল যে, তাঁর দর্শন মানব চক্ষুর সহ্যক্ষমতার ঊর্ধ্বে। তিনি অন্তহীনভাবে পূর্ণ
(ঢ়বৎভবপঃ)। তাঁর অসীম পূর্ণতা আমাদের মনকে হতভম্ব' করে তোলে। এরূপ অন্তহীন পূর্ণতমকে
সীমিত শক্তিসম্পন্ন এবং অপূর্ণ মানব মন কিভাবে বুঝতে সক্ষম হবে?
আল্লাহকে জানার ব্যাপারে আল-ফারাবীর ইতস্ততবোধ সত্তে¡ও তিনি বলেন যে, সমগ্র দর্শনের প্রধান
লক্ষ্য হল আল্লাহর জ্ঞানলাভ করা; আর মানুষের উচিত এমন স্তরে নিজেকে উন্নীত করা যে স্তরে
পৌঁছলে মানুষ নিজেকে মহাসত্য আল্লাহর মধ্যে বিলীন করে দিতে পারে। আল-ফারাবী এখানে
মরমীবাদের ইঙ্গিত করেন। আল্লাহকে জানা যাবে কিনা এ ব্যাপারে তিনি ইতস্তত বোধ করলেও
আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে তিনি কোনভাবেই ইতস্ততবোধ করেননি। আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য তিনি
নিæলিখিত যুক্তি পেশ করেনÑ
(ক) গতি থেকে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ ঃ আল-ফারাবী এ্যারিস্টটলকে অনুসরণ করে বলেন যে, এ
পৃথিবীর বস্তুসমূহ চলমান বা বস্তুসমূহ চলে (সড়াব)। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, প্রতিটি চালিত
বস্তু একজন চালকের নিকট থেকে চলার গতি গ্রহণ করে। এখন অন্য কিছুকে চালনা করার
পূর্বেই স্বয়ং চালকের মধ্যে যেমন গতি আছে বলে ধরে নেওয়া যাবে, তেমনি এ চালকেরও একে
চালিত করার জন্য আরেকজন চালক অবশ্যই থাকবে বলে ধরে নিতে হবে। তাহলে পরবর্তী
চালকেরও আরেকজন চালক থাকবে। এভাবে চলতে থাকবে এবং এর কোন অন্ত থাকবে না।
কিন্তু অন্তহীনভাবে চালকচক্রের এবং চালিত বস্তুসমূহের পেছনে ধাওয়া করা অসম্ভব। সুতরাং
অবশ্যই একজন অচালিত চালক থাকবে। এই অচালিত চালকই হচ্ছেন আল্লাহ।
(খ) নিমিত্ত কারণ থেকে খোদার অস্তিত্বের প্রমাণ ঃ আল-ফারাবী বলেন, নিমিত্ত কারণ চক্রের মধ্য
থেকে অন্তহীনভাবে একটি নিমিত্ত কারণের ধারণা করা অসম্ভব। যা ধারণামূলক নয় তা সম্ভব
নয়। সুতরাং নিমিত্ত কারণ চক্রের বাইরে অবশ্যই একটি অসৃজিত নিমিত্ত কারণ থাকবে এবং এ
কারণই হলেন আল্লাহ।
(গ) অনিশ্চিত সম্ভাবনা থেকে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ ঃ এই যুক্তিটি অনিবার্য সত্তা এবং সম্ভাব্য সত্তার
পার্থক্যের ওপর নির্ভরশীল। অনিবার্য সত্তা স্বয়ং অস্তিত্বশীল বা অস্তিত্বশীল না হয়ে পারে না।
অনিবার্য সত্তার অনস্তিত্ব অচিন্তনীয়। সম্ভাব্য সত্তা তাই যা অন্য সত্তা থেকে এর অস্তিত্ব গ্রহণ করে
এবং এর অনস্তিত্ব সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, এই পৃথিবীর অস্তিত্ব নাও থাকতে পারত
অথবা এর অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, এই পৃথিবী অস্তিত্বশীল। সুতরাং এর
অস্তিত্ব অন্য কোন সত্তার কারণে সম্ভব হয়েছে, এর নিজস্ব সত্তার কারণে নয়। এই পৃথিবীর
অস্তিত্বের কারণ ঐ অন্য সত্তাটি সম্ভাব্য হতে পারে বা সম্ভাব্য নাও হতে পারে। এই সত্তা যদি সম্ভাব্য সত্তা হয় তবে এর অস্তিত্বের জন্য অন্য একটি সত্তার ধারণা করা যায়। এই অন্য সত্তাটি
আবার সম্ভাব্য হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এভাবে সম্ভাব্য সত্তাচক্র চলতে থাকলে
কখনই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সুতরাং কার্য-কারণ চক্রের অন্ত থাকা উচিত এবং এই
অন্তে এমন একটি সত্তা থাকবে যে সত্তা স্ব-অস্তিত্বশীল। এভাবে শেষাবধি আমরা এমন এক
অনিবার্য সত্তার ধারণায় পৌঁছি যার অনস্তিত্ব অচিন্তনীয় এবং যার ধারণার মধ্যেই অনিবার্যভাবে
তাঁর অস্তিত্ব নিহিত আছে। এই অনিবার্য সত্তাই আল্লাহ।
আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে উপরোক্ত যুক্তিগুলো বিশ্বতাত্তি¡ক যুক্তির বিভিন্ন বক্তব্য। শেষ যুক্তিটি অবশ্য
তত্ত¡বিষয়ক যুক্তিরও আওতাভুক্ত। সে যাহোক, ওপরে প্রদত্ত যুক্তিগুলোর প্রত্যেকটিতে আল-ফারাবী
বাস্তব ঘটনা থেকে আরম্ভ করেন, একটি নীতি প্রয়োগ করেন এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছেন। বাস্তব ঘটনা
হচ্ছে গতি, সৃজিত সত্তা এবং অনিশ্চিত সম্ভাবনা। এভাবে নীতিগুলো হলÑ ‘যা চালিত হয় তা অন্যের
দ্বারা চালিত হয়; কার্য-কারণের ইঙ্গিত দেয় এবং সম্ভাব্য সত্তা অনিবার্য সত্তার ইঙ্গিত বহন করে। এর ফলে যে সিদ্ধান্ত আসে তা হল আল্লাহ অস্তিত্বশীল'।
আল-ফারাবী এভাবে তাঁর অধিবিদ্যক ধর্মতত্তে¡ আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের পর আল্লাহর গুণাবলী, একত্ব
ও সরলত্ব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। অধিবিদ্যার দ্বিতীয়াংশের আলোচনার পর আমরা এবার এর তৃতীয়াংশের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।
বিশেষ বিজ্ঞানের ভিত্তিস্বরূপ, আল-ফারাবী তাঁর অধিবিদ্যার তৃতীয়াংশে মুখ্য নীতি বা
সম্পর্কে আলোচনা করেন। তাঁর এ নীতিসমূহ সত্তার ধারণার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আলফারাবীর মতে, সত্তার ধারণা যদি সত্য হয়, তবে মুখ্য নীতিগুলো একইভাবে সত্য। সত্তার ধারণা যদি
বাস্তবতার ওপর নির্ভরশীল হয়, তবে এই নীতিগুলোও বাস্তবতার ওপর নির্ভরশীল। এই
নীতিগুলো কেবল চিরন্তন কর্মের নিয়ম নয়, বাস্তবতারও নিয়ম। তাঁর মতে, আসলে প্রত্যেকটি মুখ্য
নীতি সত্তার মৌলিক ধারণার ইঙ্গিত বহন করে। এই মুখ্য নীতিগুলো হলÑ (১) বিরোধবাধক নীতি
(৩) কার্য-কারণ তত্ত¡ ( এবং (৩) মধ্যপদ
লোপ নীতি
আল-ফারাবী এ্যারিস্টটলের একান্ত ভক্ত ছিলেন বলে এ নীতিগুলোর মধ্যেই তাঁর প্রভাব লক্ষ্য করা
যায়। এ্যারিস্টটলের নিকট যুক্তিবিদ্যা হল সত্যে উপনীত হওয়ার পদ্ধতি। কিন্তু আল-ফারাবীর নিকট
যুক্তিবিদ্যা সত্যে উপনীত হওয়ার পদ্ধতি এবং স্বয়ং সত্যও বটে। আল-ফারাবী যুক্তিবিদ্যা এবং
সত্তাবিষয়ক বিদ্যার মধ্যে পার্থক্যহীনতার চিন্তা করেন। তাঁর মতে চিন্তনের ব্যাপারে
যা সত্য, বাস্তবতার ব্যাপারেও তা সত্য। সুতরাং এ কথার সূত্র ধরে বলা যায়Ñ আল-ফারাবী
এ্যারিস্টটলের বিপরীতধর্মী একজন পূর্ণ ভাববাদী ছিলেন।
অনুশীলনী
১। আল-ফারাবীর অধিবিদ্যার তিনটি অংশ ভালভাবে পাঠ করুন এবং এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখুন।
২। সত্তা সম্পর্কে আল-ফারাবীর ধারণার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিন এবং নিজের মত প্রকাশ করুন। ৩। অধিবিদ্যক আলোচনায় আল-ফারাবী এ্যারিস্টটলকে কিভাবে অনুসরণ করেন?
সত্য/মিথ্যা
১। আল-ফারাবীর অধিবিদ্যা তিনটি অংশে বিভক্ত। সত্য/মিথ্যা
২। আল-ফারাবী সত্তাকে তিন ভাগে ভাগ করেন। সত্য/মিথ্যা
৩। আল-ফারাবীর মতে অনিবার্য সত্তাই আল্লাহ। সত্য/মিথ্যা
৪। আল্লাহ্র অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য আল-ফারাবী পাঁচটি যুক্তি দেন। সত্য/মিথ্যা
৫। আল-ফারাবী মোট পাঁচটি মুখ্য নীতির উল্লেখ করেন। সত্য/মিথ্যা
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। আল-ফারাবীর মতে সত্তাকে সংজ্ঞায়িত
(ক) করা যায় (খ) করা যায় না
(গ) করা অসম্ভব (ঘ) ওপরের কোনটিই নয়।
২। ফারাবীর মতে সত্তা
(ক) দু' প্রকার (খ) পাঁচ প্রকার
(গ) তিন প্রকার (ঘ) সাত প্রকার
৩। আল-ফারাবীর মতে আল্লাহকে
(ক) জানা যায় না (খ) জানা যায়
(গ) পূর্ণভাবে জানা যায় না (ঘ) ওপরের কোনটিই সত্য নয়।
৪। ফারাবীর মতে অচালিত চালক হচ্ছেন
(ক) আল্লাহ (খ) দ্রব্য
(গ) অস্তিত্ব (ঘ) ওপরের কোনটিই নয়।
৫। আল-ফারাবীর মতে অনিবার্য সত্তার অনস্তিত্ব
(ক) অচিন্তনীয় (খ) অকল্পনীয়
(গ) অবাস্তব (ঘ) ওপরের কোনটিই নয়।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। আল-ফারাবীর সত্তার ধারণা ব্যাখ্যা করুন।
২। অধিবিদ্যক ধর্মতত্তে¡ আল-ফারাবীর আল্লাহ সম্পর্কীয় ধারণার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
৩। আল-ফারাবীর মুখ্য নীতিগুলোর পরিচয় দিন।
উত্তরমালা
সত্য/মিথ্যা
১। সত্য ২। মিথ্যা ৩। সত্য ৪। মিথ্যা ৫। মিথ্যা
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। খ ২। ক ৩। গ ৪। ক ৫। ক ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]