আল-ফারাবী কিভাবে আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণায় উপনীত আদর্শ রাষ্ট্রের প্রধান শাসকের গুণাবলী উল্লেখ করুন। আল-ফারাবীর মতে অধ:পতিত রাষ্ট্রের কারণগুলো

আল-ফারাবীর মুখ্য চিন্তাধারা মূলত দু'টি প্রধান ভাগে বিভক্ত। এর একটি অধিবিদ্যা এবং অন্যটি রাষ্ট্র
বা রাজনীতির দর্শন। তিনি নিওপœাটনিক এবং স্টয়িক চিন্তাধারার প্রতি অত্যন্ত সহানুভ‚তিশীল ছিলেন
বলে তাঁর চিন্তাধারায় অধিবিদ্যা এবং রাষ্ট্র দর্শনকে একই বিজ্ঞানের দুটি দিক বলে বিবেচনা করা যায়।
এই একই বিজ্ঞানের এই দুটি শাখার বা দিকের লক্ষ্য ছিল সত্যের ভিত্তিতে সুখ অনে¦ষণ করা। প্লেটো
তাঁর রিপাবলিক গ্রন্থে রাষ্ট্র এবং ব্যক্তির মধ্যে এক সমান্তরাল রেখা টানেন এবং একদিকে ব্যক্তি
হিসেবে ও অন্যদিকে সামাজিক জীব হিসেবে চিহ্নিত করে ঐ রেখার ব্যবহার করেন। অনুরূপভাবে
আল-ফারাবী মানুষ এবং সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও জীবন্ত সমান্তরাল রেখা অঙ্কন
করেন। এখানে তিনি এর মধ্যে মানুষকে কেবল অংশ হিসেবে নয়, বরং তার প্রকৃতিকে আরও বিশাল
স্কেলে বা ক্ষেত্রে পরিস্ফুট করে তোলেন। তিনি তাঁর সামাজিক ও রাষ্ট্র চিন্তাধারায় প্লেটোর দ্বারা
প্রভাবিত থাকা সত্তে¡ও নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে রাষ্ট্রদর্শনের এক নূতন ব্যাখ্যা প্রদান
করেন। তাঁর এ ব্যাখ্যা প্লেটোর বিশ্লেষণ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। এ কথার সমর্থন মেলে যখন রোজেন্থাল
বলেন, “মানুষ সুখলাভ করতে পারে এই রকমের ক্ষুদ্রতম রাজনৈতিক ইউনিট হিসেবে। আলফারাবীর ‘মাদীনা' প্লেটোর ভাবধারার অনুরূপ। কিন্তু সমগ্র সভ্য জগতকে নিয়ে বৃহৎ সংস্থা এবং
মধ্যাকৃতির জাতি সম্পর্কে আল-ফারাবী যা বলেছেন তা সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র ইসলামিক পরিবেশ থেকেই
উৎসারিত।” উপরোক্ত ভ‚মিকা কতটুকু সত্য, তা আমরা এখন এই পাঠে খতিয়ে দেখব। আলোচনার
সুবিধার্থে এবং আল-ফারাবীর আলোচনার ধারা অনুযায়ী তাঁর সামাজিক এবং রাষ্ট্রদর্শন আলাদাভাবে
আলোচনা না করে আমরা প্রায় সময় একই সঙ্গে আলোচনা করব।
আল-ফারাবীর সামাজিক ও রাষ্ট্রদর্শন
আল-ফারাবীর সামাজিক ও রাষ্ট্রদর্শন সংক্রান্ত আলোচনা বিশাল আকারের। তিনি সামাজিক ও
রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে মোট পাঁচটি গ্রন্থে তাঁর তত্ত¡ ব্যাখ্যা করেন। গ্রন্থগুলো হলÑ (১) সিয়াসাতুল মাদানীয়া
(২) আরাউয়াল আহলিল (৩) মাদীনা আল-ফাজিলা (৪) জাওয়া মিনুস সিয়াসাত এবং (৫) ইজতিমাউ
মাদানীয়াত। প্লেটোর ‘লজ' গ্রন্থটির অনুবাদও তাঁর এ কাজের সহায়তায় আসে।
ইসলামের ইতিহাসের প্রথম পর্যায়ে ইসলাম দ্রæতগতিতে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন
দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে স্বল্পকালের মধ্যে এক বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই
সাম্রাজ্যের বিচিত্র চরিত্রের লোকজনের সামাজিক পটভ‚মি পর্যবেক্ষণ এবং সামাজিক ঐক্য গড়ে তোলার
একটি দৃষ্টিকোণের প্রয়োজন দেখা দেয়। মুসলিম চিন্তাবিদ এবং দার্শনিকদের মধ্যে আল-ফারাবীই
সর্বপ্রথম এই প্রয়োজনীয়তার কথা সম্যক উপলব্ধি করেন। এ কারণে তিনি আল-কিন্দির মত সর্বতোভাবে প্রজ্ঞান চর্চার চেয়ে মানব প্রকৃতি বিশ্লেষণ এবং সমাজচিন্তা ও রাষ্ট্রচিন্তার দিকে মনোনিবেশ
করেন।
আল-ফারাবী প্লেটো ও নিও-প্লেটোনিক চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও কার্যক্ষমতাকে মানব
প্রকৃতির ভিত্তি গণ্য করেন। তিনি এ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রের উৎপত্তির মূলকথা ‘মানব সমাজে পরস্পর
সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার' দিকে দৃষ্টিপাত করেন এবং তাঁর সামাজিক তত্ত¡ বিশ্লেষণ করেন। তিনি
বলেন মানুষের কল্পনা, বাসনা, চাহিদা এবং প্রয়োজন সংখ্যাতীত হতে পারে। কিন্তু এগুলো পূরণের
ক্ষমতা সীমিত। সুতরাং মানুষের একার পক্ষে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ করা তার সাধ্যের মধ্যে
সীমাবদ্ধ নয় বলে মানুষ একাকী বসবাস করতে পারে না। তার মৌলিক এবং সামাজিক চাহিদা
পূরণের জন্য তাকে অবশ্যই অন্যের সহযোগিতা কামনা করতে হয়। যেহেতু মানুষ একাকী তার
প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম নয়, সেহেতু তার অস্তিত্ব রক্ষার ও জীবনের উন্নতির জন্য পারস্পরিক
সহযোগিতার প্রয়োজনে তাদেরকে একত্রিত হতে হয়। তিনি মনে করেনÑ এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে
মানুষ সংঘবদ্ধ ও সম্প্রদায়ভুক্ত হয় এবং সমাজ গড়ে তোলে। এভাবে বিশ্লেষণ করে তিনি এ সিদ্ধান্তে
পৌঁছেন যে, পরস্পর সহযোগিতা করা, সংঘবদ্ধ হওয়া এবং সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়া মানুষের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য।
আল-ফারাবীর মতে সমাজে বসবাসরত মানুষের পরস্পর সহযোগিতা একত্রিত হওয়া বা সমাজবদ্ধ
হওয়ার উৎস। আবার পরস্পর সহযোগিতার ব্যাপ্তি, গভীরতা ও মূল উদ্দেশ্য, সংঘবদ্ধতার রূপ
বিস্তৃতির আকার ও আদর্শগত চরিত্রের পরিমাণ নির্ধারণ করে। উচ্চতা, পরিমাপ ও রূপের ত্রিবিধ
মানদন্ডের প্রয়োগ করে তিনি বৈজ্ঞানিক উপায়ে মানব সমাজের মূল্যায়ন করেন। তাঁর মতে, সর্বপ্রকার
সংঘবদ্ধতা একরকম নয়। তিনি এটিকে পূর্ণ এবং অপূর্ণ এই দু'ভাগে ভাগ করেন এবং বলেন যে,
অপূর্ণ সংঘগুলি অপূর্ণ বলে অন্যের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু পূর্ণ সংঘগুলো নিজেদের নিরাপত্তা বিধান ও
প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম বলে অপরের ওপর তেমন নির্ভরশীল নয়।
কিন্তু এর পরেও, আল-ফারাবীর মতে, কথা থেকে যায়। সকল মানুষের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এক রকম
নয় বলে পূর্ণ সংঘ থাকা সত্তে¡ও কোন কোন সময় অপূর্ণতা এসে যায়। সে কারণে আরও মজবুতভাবে
মানুষের সমাজবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। এই আবশ্যকতাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ সমাজ বা গোষ্ঠী
সংঘবদ্ধ হলেও মানুষের মধ্যে আরও এমন সমস্যা দেখা দেয়Ñ সেগুলো পূরণের জন্য বৃহত্তর পরিমাপে
সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আল-ফারাবী এ চিন্তা থেকেই সমাজবদ্ধ মানুষের
রাষ্ট্রীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। কারণ রাষ্ট্রই কেবল মানুষের মধ্যে শান্তি, শৃ´খলা ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
আল-ফারাবী বলেন, প্রত্যেক সমাজে সাধারণত বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষ বসবাস করে। এদের মধ্যে
সরল, বোকা, ধূর্ত, সদয়, দয়ালু, নির্দয়, কঠিন, লোভী, প্রকৃত বুদ্ধিমান বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষ আছে।
এদের মধ্যে পরস্পর সম্পর্ক এবং দ্রব্য সামগ্রীর আদান প্রদানজনিত কারণে সমাজে অসামঞ্জস্যতার
সৃষ্টি হয়। ফলে সমাজে নানান সংকট ও সমস্যার উদ্ভব হয়। এ জাতীয় সমস্যা ও সংকট মানুষের
জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। ফলে জীবনযাপন ব্যাহত হয় এবং ক্রমান¦য়ে বসবাস করা দু:সাধ্য হয়ে
ওঠে। সমস্যা ও সংকটের দ্বারা জর্জরিত হয়ে শেষাবধি জনগণ উপলব্ধি করে যে, সকল মানুষকে
তাদের নিজস্ব প্রকৃতি অনুযায়ী স্বাধীনভাবে চলতে দিলে সমাজকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা এবং
টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন ও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এই উপলব্ধির ভিত্তিতে জনগণ সম্মিলিত হয়ে
তাদের জীবনের জটিলতা, সমস্যা ও সংকট সম্পর্কে আলোচনা করে। ফলে পরস্পর সহযোগিতা ও
সম্মতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষমতা পরিহার করার সংকল্প গ্রহণ করে। প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয়
ক্ষমতা বা অধিকার পরিহার করে এ শর্তে যে সকলের সম্মিলিত সম্মতি ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে শান্তি,
শৃ´খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং সকলের অনুমোদন ছাড়া কেউ কারও ব্যাপারে হস্তক্ষেপ
করবে না। আল-ফারাবী মনে করেন, এরূপে মানুষ স্বীয় ক্ষমতা বা অধিকার পরিত্যাগ করে একটি
সামাজিক চুক্তিতে উপনীত হয়। ফলে তারা তাদের জীবনের শান্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ভিত্তি স্থাপন
করে। এ চুক্তির ব্যতিক্রম হলে নাগরিকরা সম্মিলিতভাবে এর মোকাবেলা করে। এ চুক্তির ফলেই
রাষ্ট্রের উদ্ভব এবং সুশৃ´খল রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
আল-ফারাবী তাঁর সময়কালের জ্ঞান বিজ্ঞানের ধারা লক্ষ্য করেন। এর সাথে সাথে সে সময়ের
বাগদাদের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক দুর্বলতার ফলে উদ্ভূত বিশৃ´খলা ও অরাজকতা এবং সমাজে
অস্থিতিশীলতা লক্ষ্য করেই আইনের শাসনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন ও এ জাতীয় সামাজিক
চুক্তির অবতারণা করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, আল-ফারাবী বর্ণিত অবস্থা অনুধাবন করে অষ্টাদশ
শতাব্দীতে হবস, লক এবং রুশো সামাজিক চুক্তিতত্তে¡র উন্মেষ ঘটান।
সে যাহোক, আল-ফারাবী রাষ্ট্রীয় জীবনের পত্তনের কথা বলে ক্ষান্ত হননি। তিনি এরপর আরও
গভীরভাবে চিন্তা করে রাষ্ট্রের রূপরেখা, নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য এবং অধ:পতিত রাষ্ট্রের কারণ সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করেন। তাঁর উপরোক্ত সমাজ দর্শনের প্রেক্ষাপটে এখন তাঁর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে
আলোচনা করা হবে।
রাষ্ট্রের উৎপত্তির ব্যাপারে আল-ফারাবী যে ধরনের চুক্তিবাদের কথা বলেন, তা সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ
শতাব্দীর ইউরোপীয় চুক্তিবাদের মত নয়। তিনি ইউরোপীয় চুক্তিবাদের ন্যায় প্রাকৃতিক আইনে বা
কোন কাল্পনিক রাজ্যে বিশ্বাসী ছিলেন না। চুক্তির ফলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছেÑ সেকথাও তাঁর
মুখ্যকথা নয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে পরিকল্পিতভাবে বলেন, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব আগে থেকেই বিদ্যমান। কিন্তু
এ রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, বিশৃ´খলা, নিরাপত্তাহীনতা ও অশান্তি দূর করার লক্ষ্যে ন্যায়বিচার বা
ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এ প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ চুক্তিবদ্ধ হয় এবং সুখ-শান্তি ও ইনসাফ
কায়েম করে। কোন রাষ্ট্রে ইনসাফ বা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলেই সে রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন
হয়ে যায়, তিনি এখানে প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করার সংকল্পের মতই ইনসাফসম্পন্ন আদর্শ
রাষ্ট্রের কথা বলেন।
আল-ফারাবী বলেন, যে সংঘ স্বয়ংসম্পূর্ণ সেগুলোকে নগর রাষ্ট্র বলা যায়। আর যেগুলো অসম্পূর্ণ
সেগুলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নয়। তাঁর মতে নগর রাষ্ট্র ক্ষুদ্র সংঘগুলোর তুলনায় বৃহত্তর আবার এ ধরনের
বৃহত্তর নগর রাষ্ট্র স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র সংঘগুলোর তুলনায় ক্ষুদ্রতর। এভাবে ক্ষুদ্রতর ও বৃহত্তরের
সমীকরণের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সর্বশেষে বিশ্বব্যাপী একটি বিশ্বরাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কারণ
পরস্পর সহযোগিতার সূত্র থেকে মানব জীবনের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের বৃহত্তর সুবিধা অর্জনের
তাগিদে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়। ক্রমে বৃহত্তর সুবিধা, সুযোগ এবং স্বাচ্ছন্দ্য অর্জনের জন্য মানব গোষ্ঠীর
পরস্পর সহযোগিতা এ পর্যায়ে পৌঁছে যে, যেসব কারণে ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়, সেসব কারণে
বিশ্বরাষ্ট্রেরও উৎপত্তি হতে পারে। আল-ফারাবী এ সম্পর্কে সতর্ক ছিলেন বলে তিনি মনে করেন যে, এ
ধরনের বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় না বিভিন্ন কারণে। এদের প্রধান দু'টি কারণ হলÑ ভৌগোলিক ও
কৃত্রিম। কাজেই বিশ্বরাষ্ট্রের ধারণার পরিবর্তে তিনি জাতীয় রাষ্ট্র ও নগর রাষ্ট্রের প্রতি নজর দেন। তিনি
বলেন যে, একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধার পরিমাপ ও পরিমাণ সাধারণভাবে এর আয়তনের
ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আয়তনে বৃহত্তর হলেও কোন রাষ্ট্র গুণগত দিক দিয়ে সর্বোত্তম নাও হতে
পারে। তাঁর মতে, যে রাষ্ট্রের নাগরিকগণ পরস্পর ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে একে অপরের সুখ
অর্জনে সহায়তা করে এবং এভাবে পরম সুখ অর্জন করতে পারে, সেই রাষ্ট্রই ‘আদর্শ রাষ্ট্র'। ইসলাম ও
পরকালের পরম সুখ অর্জনের জন্য মূল আদর্শই হবে ঐ রাষ্ট্রের ভিত্তি যা আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করে।
আর আদর্শভিত্তিক এ রাষ্ট্রকেই যথার্থ অর্থে আদর্শ রাষ্ট্র বলা যায়। এজন্য আল-ফারাবী তাঁর গ্রন্থে
বলেন, যে রাষ্ট্রের নাগরিকগণ ঐ জিনিস অর্জন করতে একে অপরকে পরস্পর সাহায্য করে, যার
মাধ্যমে পরম সুখ লাভ করা যায়, তাই আদর্শ রাষ্ট্র।
প্লেটো তাঁর রিপাবলিক গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের কল্পনা করতে গিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে যে বিষয়টি
বিবেচনা করেনÑ তাহল নেতৃত্বের কথা। রাষ্ট্রের নেতৃত্ব যদি সঠিক ও আদর্শসম্মত না হয় তবে সে
রাষ্ট্রও আদর্শ হতে পারে না। প্লেটোর এ চিন্তাধারার সূত্র ধরে আল-ফারাবীও আদর্শ রাষ্ট্রের নেতা ও নেতৃত্বের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তাঁর গ্রন্থে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সমাজ এবং রাষ্ট্রে ঐক্য ও শান্তি
বজায় রাখতে হলে যথার্থ নেতৃত্বের প্রয়োজন। তাঁর মতে, যারা যুক্তিপূর্ণ ও প্রজ্ঞাময় চিন্তার মাধ্যমে
যথার্থ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম, তাঁরাই নেতৃত্বের উপযুক্ত।
আল-ফারাবী বলেন, সব মানুষই একই রকম যোগ্যতার অধিকারী হতে পারে না। কিছু লোক যুক্তি ও
জ্ঞান প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিকতর দক্ষ। যারা তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে,
নিজেদের ভাব ব্যক্ত করতে এবং অন্যদেরকে নিজেদের মনোভাব বুঝাতে দক্ষ, তারাই নেতৃত্বের
উপযুক্ত। অন্যদিকে যারা নিজেরা বুঝতে পারে কিন্তু অন্যদের বুঝাতে অক্ষম, তারা নেতৃত্বের গুণ
বিবর্জিত। সুতরাং যারা নেতৃত্বের গুণে গুণানি¦ত ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ, তারা অন্যদেরকে নেতৃত্ব দিবে।
আল-ফারাবী মানুষের মধ্যে নিহিত বিভিন্ন রকম গুণের কথা চিন্তা করে বলেন যে, একই নেতার পক্ষে
সকলকে সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান অসম্ভব। সেহেতু অধিকতর দক্ষতাসম্পন্ন লোক, অপেক্ষাকৃত কম
দক্ষতা সম্পন্ন লোককে নেতৃত্ব দিতে পারে। আবার অন্যভাবে তিনি বলেনÑ একজন নেতার পক্ষে শুধু
ঐসব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করা বাঞ্ছনীয়, যেক্ষেত্রে তিনি অন্যদের চেয়ে শ্রেয়তর। এভাবে প্রয়োজন
অনুসারে একই ক্ষেত্রে একজন প্রধান নেতা একজন দ্বিতীয় নেতা এবং দক্ষতা অনুযায়ী আরও নেতা
থাকতে পারে। এ অবস্থায় প্রধান নেতা দ্বিতীয় নেতাকে এবং দ্বিতীয় নেতা, তৃতীয় নেতাকে এবং
পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নেতাদেরকে নেতৃত্ব দিতে পারে। উন্নত স্বভাব-চরিত্র, শিক্ষা-দীক্ষা ও অন্যান্য
গুণাবলীর জন্য যিনি সব সমস্যা পর্যবেক্ষণ এবং হৃদয়ঙ্গম করেন এবং অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে
নিজেই সমস্যার সমাধান দিতে পারেন তিনিই প্রধান নেতা। আল-ফারাবী এ ধরনের নেতাকে রইসআল-আওয়াল বলেছেন।
আল-ফারাবীর মতে এ ধরনের রইস আল-আওয়াল কেবল একজনই হবেন, যার ওপর আর কোন
নেতা থাকবে না। এ প্রধান নেতা নিজে শ্রেষ্ঠতম নেতৃত্বের দ্বারা রাষ্ট্রের সমস্ত কার্য ও কল্যাণ নিয়ন্ত্রণ
করতে সক্ষম। আদর্শ রাষ্ট্রে বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যক্রমের জন্য যে বিভিন্ন কর্মচারী শ্রেণী থাকবে, তাদের
পরিচালনার দায়িত্বও এ প্রধান নেতার। ফলে তিনি হবেন কর্মচারী বাহিনীর ‘সর্বাধিনায়ক'। এ নেতা
আদেশ প্রদান করবেন কিন্তু আদেশ গ্রহণ করবেন না। এরূপ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক প্রধান নেতা
সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে অনুভব করেন এবং মহাপ্রভুর গুণাবলীর অনুসরণ
করে রাষ্ট্রে বসবাসকারী নাগরিকদের প্রত্যেককে উপযুক্ততা ও মর্যাদা অনুযায়ী যথাস্থানে নিয়োগ দেবেন
এবং এ ব্যাপারে ন্যায়নীতি বজায় রাখবেন।
প্লেটোর মত আল-ফারাবীও আদর্শ রাষ্ট্রের আদর্শ শাসকের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার কথা বলেন; যদিও
প্লেটোর শিক্ষা কর্মসূচি তিনি গ্রহণ করেননি। তবে এ শিক্ষার পেছনে তাঁর লক্ষ্য ছিল প্রকৃত খাঁটি এবং
উপযুক্ত ইমাম বা নেতা তৈরি করা। তিনি মনে করেন যে, শিক্ষা শেষ করে এবং যুক্তিবিজ্ঞানের
পারদর্শী হয়ে ওঠার পর এসব শিক্ষিত ব্যক্তিদেরকে নগর রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে নিযুক্ত করা হবে।
এরপর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ক্রমে ক্রমে তাঁরা অগ্রসর হবেন এবং শেষপর্যন্ত বৃহত্তর রাষ্ট্রের
স্তরে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। আল-ফারাবীর নেতা তৈরি করার পদ্ধতি
অনেকটা প্লেটোর মতই, তবে পারলৌকিক জ্ঞান ও সুখ অর্জনের জ্ঞানের প্রসঙ্গ আল-ফারাবীর নিজস্ব।
আল-ফারাবী আদর্শ রাষ্ট্রের প্রধান নেতা এবং পরবর্তী স্তরের নেতাদের জন্য তাঁর ফুসুস আল-মাদানী
এবং মাদিনাতুল ফাজিলা গ্রন্থে অনেকগুলো গুণের কথা বলেন। কোন ব্যক্তির মধ্যে এ গুণগুলোর
সমাবেশ ঘটলেই তাঁর নেতৃত্বের উপযুক্ততা অর্জিত হবে। আদর্শ রাষ্ট্রের “প্রথম শাসকের” জন্য যেসব
গুণ প্রয়োজনীয়, আল-ফারাবী সেসব গুণের মধ্যে তাঁর ফুসুস আল-মাদানী গ্রন্থে মোট ছয়টি গুণের কথা উল্লেখ করেন। গুণগুলো এরূপÑ
১। শাসনকার্যে দক্ষ হওয়া।
২। সৎ চরিত্র, দার্শনিক ও রসুল বা প্রত্যাদিষ্ট হওয়া।
৩। সত্য প্রকাশের জন্য ভাষাগত ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন হওয়া।
৪। নাগরিকগণকে ইহ ও পরকালের পরম সুখের দিকে পরিচালিত করার যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া।
৫। যে কোন রাষ্ট্রীয় কর্ম সম্পাদন করার সামর্থসম্পন্ন হওয়া।
৬। জিহাদ পরিচালনা করার ব্যাপারে ব্যক্তিগত যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া।
এছাড়া তিনি তাঁর গ্রন্থ মাদিনাতুল ফাজিলায় প্রধান শাসকের জন্য আরও বারটি গুণের উল্লেখ করেন।
আদর্শ রাষ্ট্রের ইমাম বা প্রধান শাসকের নিæলিখিত গুণ থাকলে তিনি বিশ্বরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দান করারও
ক্ষমতা সম্পন্ন হতে পারেন। গুণগুলো হলÑ
১। সু-স্বাস্থ্য ও শারীরিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দিক দিয়ে নিখুঁত হওয়া।
২। মেধা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব হওয়া যাতে যে কোন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে কারও কথা শুনে অতি
সহজে বুঝতে পারেন।
৩। প্রখর স্মৃতিসম্পন্ন হওয়া যাতে তিনি যা শুনেন, দেখেন এবং প্রত্যক্ষণ করেন তা মনে রাখতে
পারেন।
৪। দূরদর্শিতা ও বুদ্ধিমান হওয়া যাতে তাঁর সম্মুখে উপস্থাপিত যে কোন সমস্যার প্রেক্ষিত বুঝে কাজ
করতে পারেন।
৫। বাগ্মিতা যাতে তাঁর মনের কথা তিনি যেভাবে মনে করেন সেভাবে প্রকাশ করতে পারেন।
৬। শিক্ষা এবং জ্ঞানার্জনে প্রবল আগ্রহ এবং জানার্জনে কোন বিরক্তি প্রকাশ না করার ব্যাপারে
সংযমী হওয়া।
৭। খাদ্য, পানীয় ও সংগমের প্রতি নির্লোভ হওয়া, খেলাধুলা পরিহার করা এবং এগুলোর প্রতি
বিতৃষ্ণ হওয়া।
৮। সত্য এবং সত্যবাদীর প্রতি বন্ধুত্বসম্পন্ন হওয়া এবং মিথ্যার প্রতি ঘৃণাবোধ থাকা।
৯। হৃদয়ের প্রশস্ততা, মহত্ব থাকা এবং নীচতা বোধ থেকে দূরে থাকা।
১০। যে কোন প্রকার ধনসম্পদের প্রতি নির্লোভ ও অমনোযোগী হওয়া।
১১। প্রকৃতিগতভাবে ন্যায়বিচার ও ন্যায়বানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা এবং অন্যায় ও অবিচারের প্রতি
ঘৃণাবোধ থাকা।
১২। দৃঢ়চেতা, সাহসী এবং দ্রæতগতিসম্পন্ন হওয়া এবং এ ব্যাপারে কোন প্রকার দুর্বলতার চিহ্ন
প্রদর্শন না করা।
এখানে লক্ষণীয় যে, কোন ব্যক্তির পক্ষে উপরোক্ত গুণসম্পন্ন হওয়া অত্যন্ত কঠিন ও অবাস্তব। আদর্শ
রাষ্ট্রে কোন ব্যক্তির মধ্যে এরূপ গুণের অভাব দেখা গেলে পূর্ববর্তী প্রধান শাসকের আইন অথবা তাঁর
উত্তরসূরি শাসন কার্য পরিচালনা করবেন। তবে এরূপ গুণে যিনি গুণানি¦ত হবেন তিনি হবেন “প্রধান
শাসক”, যার উদাহরণ হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর দ্বারা শাসিত মদিনার রাষ্ট্র।
‘প্রধান শাসকের' পর যিনি দ্বিতীয় পর্যায়ের শাসক হবেন, আল-ফারাবীর মতে তাঁকে নিæলিখিত
গুণাবলীর অধিকারী হতে হবেÑ
১। তাঁকে প্রজ্ঞাসম্পন্ন এবং দার্শনিক হতে হবে।
২। জ্ঞানী এবং প্রথম আদর্শ শাসকের প্রদত্ত আইন, রীতি-নীতি ও অনুশাসনগুলো যথার্থ জ্ঞান ও
এগুলো তাঁর নিজের জীবনে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় কথায় ও কাজে প্রয়োগ করার ক্ষমতা সম্পন্ন
হওয়া।
৩। কোন আইন তাঁর সামনে না থাকলে নতুন নীতি নিয়ম খুঁজে বের করার ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত
দক্ষ হবেন।
৪। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী তিনি পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে নতুন নিয়ম-কানুন
প্রণয়নে সক্ষম।
৫। প্রভ‚ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং বাগ্মিতা যাতে তাঁকে শরীয়াহ্ অনুসারে জনগণ অনুসরণ করে সে
ব্যাপারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে, পরিচালনার পথ প্রদর্শনে সহায়তা করে।
৬। শারীরিকভাবে সক্ষম ও যুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী হওয়া।
অন্যকথায়, এ শাসকের থাকবে গভীর অন্তর্দৃষ্টি যার দ্বারা তিনি তাঁর পূর্বসূরির নিকট প্রাপ্ত রীতি-নীতি
থেকে অনুমানের ভিত্তিতে ঘটনাবলীর ত্বরিৎ সমাধান দিতে পারেন এবং রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি সাধন করতে
পারেন। অন্যকে বিশ্বাসী করে তোলার ক্ষমতা তাঁর থাকবে এবং তিনি হবেন অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী।
এই সার্বভৌম শাসককে ঐতিহ্যের রাজা বলা হবে এবং রাষ্ট্রকে আল-মূলক আল-সুন্নাহ বলা হবে।
ওপরে বর্ণিত গুণাবলী যদি এক ব্যক্তির মধ্যে উপস্থিত না থাকে এবং যদি এমন দু'জন ব্যক্তি যাদের
একজন জ্ঞানী এবং অন্যজন অন্যান্য গুণাবলীর অধিকারী হন তবে এই দুই ব্যক্তিই একত্রে রাষ্ট্রের
শাসক হবেন। এরা তৃতীয় পর্যায়ের শাসক বলে বিবেচিত হবেন।
আদর্শ শাসক হওয়ার মত উপযুক্ত একজন নেতা পাওয়া না গেলে যদি দুই-এর অধিক ব্যক্তির মধ্যে
বা এমন ধরনের একদল লোকের মধ্যে ঐসব গুণাবলী বর্তমান থাকে যারা একত্রে কাজ করতে সম্মত,
তবে আদর্শ শাসকের দায়িত্ব তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হবে। তাঁরা একযোগে প্রথম আদর্শ
শাসকের আদর্শ অনুযায়ী সমবেতভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। এ পর্যায়ের শাসকগণকে আলফারাবী চতুর্থ পর্যায়ের শাসক বলে অভিহিত করেন।
আল-ফারাবী বলেন, জ্ঞান যদি রাষ্ট্রের অংশ গঠন না করে এবং অন্যান্য অবস্থা পূর্ণ থাকে, তবে রাষ্ট্র
সার্বভৌম ছাড়া উত্তম রাষ্ট্র হবে, তবে এ রাষ্ট্র ধ্বংসের সম্মুখীন হতে পারে। দার্শনিক ছাড়া যে কোন
রাষ্ট্র অতি শীঘ্রই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
আল-ফারাবী প্লেটোর ন্যায় অধ:পতিত রাষ্ট্রের বিষয়েও সম্যক জ্ঞাত ছিলেন। তিনি তাঁর সমকালীন
ধারণা ও উদাহরণগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নয় প্রকার অধ:পতিত রাষ্ট্রের উল্লেখ করেন। এগুলো
হলÑ
১। প্রয়োজনভিত্তিক (জরুরিয়া) রাষ্ট্র যেখানে সংবেদনশীল কর্মকাÐই মুখ্য;
২। ধনতন্ত্রবাদী (নসালা) রাষ্ট্র যেখানে ধন অর্জনই মুখ্য উদ্দেশ্য;
৩। ইন্দ্রিয়সেবী (খদিষা) রাষ্ট্র যেখানে জনগণ ইন্দ্রিয়পরায়ণ হয়ে ওঠে;
৪। গৌরববাদী (করাবা) রাষ্ট্রে গৌরব অর্জন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য;
৫। বশীভ‚ত করার আকাক্সক্ষা (তগলুব) রাষ্ট্র যেখান পরস্পরকে বশীভ‚ত করা মুখ্য উদ্দেশ্য;
৬। গণতন্ত্রকামী (জেবাইয়া) রাষ্ট্র যেখানে সবাই নিজেদেরকে স্বাধীন ও সমান মনে করে;
৭। ভ্রষ্ট (ফাসেক) রাষ্ট্র যেখানে জনগণ অন্যায় ও মিথ্যার অনুসারী হয়;
৮। পরিবর্তনবাদী (মুতবাদিলা) রাষ্ট্র যা ‘ভাল' মতের পরিবর্তে ‘মন্দ' জনমত দ্বারা বিতাড়িত।
৯। আদর্শচ্যুত (দল্লা) রাষ্ট্র, যেখানে জনগণ ভ্রান্তধারায় বিশ্বাসী।
আল-ফারাবীর মতে ওপরের রাষ্ট্রগুলো স্বাধীন ও আদর্শ রাষ্ট্ররূপে টিকে থাকে না।
উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, আল-ফারাবী নি:সন্দেহে একজন বড় মাপের সমাজ ও রাষ্ট্র দার্শনিক ছিলেন।
অনুশীলনী
১। আল-ফারাবীর সমাজ দর্শনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিন।
২। আল-ফারাবীর সামাজিক চুক্তি মতবাদ ব্যাখ্যা করুন। তাঁর রাষ্ট্র দর্শনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ
দিন এবং এ ব্যাপারে আপনার চিন্তাপ্রসূত মতামত দিন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
সত্য/মিথ্যা
১। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ফারাবীর মতবাদ এ্যারিস্টটলের মতই। সত্য/মিথ্যা
২। হবস, লক, রুশো ও আল-ফারাবীর সামাজিক চুক্তি মতবাদ একই রকম। সত্য/মিথ্যা
৩। আল-ফারাবী বিশ্ব রাষ্ট্রের ধারণা পোষণ করতেন। সত্য/মিথ্যা
৪। আল-ফারাবী বলেন রইস আল-আওয়াল একজনই হবেন। সত্য/মিথ্যা
৫। ফারাবীর মতে প্রধান শাসকের বত্রিশটি গুণ থাকতে হবে। সত্য/মিথ্যা
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। আল-ফারাবীর চিন্তাধারাকে বিভক্ত করা যায়
(ক) তিনভাগে (খ) দু'ভাগে
(গ) নয় ভাগে (ঘ) কোনভাগেই নয়।
২। আল-ফারাবীর সামাজিক চুক্তি মতবাদের ভিত্তি হল
(ক) পরস্পর সহযোগিতা (খ) দ্বন্দ¡ কলহ
(গ) সামাজিক আচরণ (ঘ) স্বার্থ সংরক্ষণ
৩। আদর্শ রাষ্ট্রের প্রধান শাসকের গুণ থাকবে মোট
(ক) পাঁচটি (খ) বারটি
(গ) বিশটি (ঘ) ওপরের কোনটিই নয়।
৪। আল ফারাবী মতে দ্বিতীয় প্রধান শাসকের গুণ থাকবে
(ক) ছয়টি (খ) আঠারটি
(গ) একটি (ঘ) ওপরের কোনটিই নয়।
৫। আল-ফারাবীর অধ:পতিত রাষ্ট্রের সংখ্যা হল
(ক) দশটি (খ) তিনটি
(গ) নয়টি (ঘ) পঁচিশটি (ঙ) ওপরের কোনটিই নয়।

রচনামূলক প্রশ্ন
১। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আল-ফারাবীর মতবাদ ব্যাখ্যা করুন।
২। আল-ফারাবী কিভাবে আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণায় উপনীত হন তা ব্যাখ্যা করুন।
৩। আদর্শ রাষ্ট্রের প্রধান শাসকের গুণাবলী উল্লেখ করুন।
৪। আল-ফারাবীর আদর্শ রাষ্ট্রের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকার শাসকের গুণাবলী ব্যাখ্যা করুন।
৫। আল-ফারাবীর মতে অধ:পতিত রাষ্ট্রের কারণগুলো উল্লেখ করুন। সমস্যা
ক. আল-ফারাবী বিশ্বরাষ্ট্র স্থাপনের কথা বলেন। কিন্তু তিনি নিজেই বলেনÑ এ ধরনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
করা সম্ভব নয়। এখানে এ ধরনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমস্যা কোথায়?
খ. তিনি প্লেটো ও এ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রদর্শনের অনুসরণ করে তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা দেন। কিন্তু
তাঁর ধারণা ও প্লেটো এবং এ্যারিস্টটলের ধারণার মধ্যে বিশেষ পার্থক্য স্পষ্ট। কোন সমস্যার
কারণে তিনি এ পার্থক্য আনয়ন করতে বাধ্য হন? লিখুন।
উত্তরমালা
সত্য/মিথ্যা
১। মিথ্যা ২। মিথ্যা ৩। সত্য ৪। সত্য, ৫। মিথ্যা
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। খ ২। ক ৩। খ ৪। ক ৫। গ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]