সংক্ষেপে আল-কিন্দির অধিবিদ্যা আলোচনা করুন। যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আল-কিন্দির অভিমত ব্যাখ্যা করুন।

মুসলিম দার্শনিকদের দর্শনের সবচেয়ে মূল্যবান আলোচ্য বিষয় অধিবিদ্যা। এক্ষেত্রে মুসলিম
দার্শনিকদের প্রধান অবদান হল ইতিহাসের অবদান। তাঁরা প্লেটো, এ্যারিস্টটল বা এ্যারিস্টটলের
পরবর্তী যুগের দার্শনিকদের দ্বারা প্রভাবিত হলেও অধিবিদ্যার জ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেকেই তাঁদের নিজস্ব
ভাবধারা বজায় রাখেন। কারণ, দেখা যায় যে স্বর্গীয় জ্ঞানের মধ্যে এক সংঘাত উপস্থিত হয়। এ
ধরনের সংঘাত এড়িয়ে দার্শনিক চিন্তাধারার অগ্রগতি সাধন করা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ ছিল। অবতীর্ণ
গ্রন্থের এবং রাসূলের ভাবধারা একদিকে এবং হেলেনীয় দর্শন পদ্ধতির প্রয়োগ অন্যদিকে। চিন্তার
ক্ষেত্রে হেলেনীয় দর্শনের প্রয়োগ অবতীর্ণ গ্রন্থের ভাবধারাকে বিনষ্ট করছে এরূপ ধারণার বশবর্তী হয়ে
এক শ্রেণীর চিন্তাবিদ মুসলিম চিন্তাধারার মধ্যে এ ধরনের চিন্তাধারার অনুপ্রবেশকে প্রচন্ড অনিষ্টকর
মনে করেন এবং তা প্রচার করতে থাকেন। এমতাবস্থায় আল-কিন্দি এই দু'ধারার কোন একটি বেছে
না নিয়ে এ দুটি ধারার সমন¦য় সাধনে ব্রতী হন। এটি কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু আল-কিন্দির প্রগাঢ়
পাÐিত্যের ফলে এ্যারিস্টটলীয় দর্শনের সংগে ইসলামী ভাবধারার সমন¦য় সাধন সম্ভব হয় এবং এ
সমন¦য় সাধনের ব্যাপারে তিনি যুক্তিবিদ্যাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। তাঁর অধিবিদ্যা বা এবং যুক্তিবিদ্যার আলোচনা করলে এর সত্যতা অনুধাবন করা যাবে। এ কারণে এখানে
আমরা প্রথমে তাঁর অধিবিদ্যা আলোচনা করব এবং এরপর তাঁর যুক্তিবিদ্যার ওপর দৃষ্টি আলোকপাত করব।
আল-কিন্দির অধিবিদ্যা
আল-কিন্দির দার্শনিক আলোচনা প্রথম দর্শনকে অধিবিদ্যা বলা হয়। অধিবিদ্যা
বা প্রথম দর্শন প্রথম কারণের জ্ঞান আর দর্শনের অন্যসব কিছুই এ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।
আল-কিন্দির মতে অধিবিদ্যা ঐসব কিছুর বিজ্ঞান যা চলমান নয় (উড়বং হড়ঃ সড়াব) অথবা অধিবিদ্যা
হল স্বর্গীয় বস্তুর বিজ্ঞান। তিনি অধিবিদ্যাকে সকল প্রকার দর্শনের মধ্যে সর্বোত্তম এবং সর্বোচ্চ বলে
অভিহিত করেন; কারণ এর অনুসন্ধানের বিষয় সকল সত্তার মধ্যে সর্বোচ্চ এবং মহত্তম। তাঁর মতে,
অধিবিদ্যা “প্রধান সত্যের” বিজ্ঞান এবং এ সত্য সকল সত্যের কারণ। অধিবিদ্যা সম্পর্কে আলকিন্দির এ ধারণা এ্যারিস্টটলের ধারণা থেকে যদিও পৃথক তথাপি তিনি এ ব্যাপারে এ্যারিস্টটলের
ধারণার প্রভাবাধীন ছিলেন। তাঁর মতে অধিবিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয় হল সত্তার শ্রেণীকরণ, খোদা
এবং তাঁর প্রকৃতি, তাঁর সৃজনশীল কর্ম এবং তাঁর সঙ্গে জগতের সম্পর্ক।
আল-কিন্দি তাঁর কিতাব ফিল ফালাসিফা আল উলা গ্রন্থে সত্তাকে দু'ভাগে বিভক্ত করে বলেন যে এক
প্রকার সত্তা সংবেদনশীল এবং এর সংবেদীয় জ্ঞান সম্ভব। অন্য প্রকার সত্তা প্রকৃতিগতভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক
এবং এর জ্ঞানও বুদ্ধিবৃত্তিজাত। অবস্থান, পরিমাণ এবং গুণের দিক দিয়ে প্রথম ধরনের সত্তা ক্ষণস্থায়ী,
পরিবর্তনশীল এবং বিকারযোগ্য। জ্ঞানের দিক দিয়ে কল্পনা শক্তির (ওসসধমরহধঃরাব ভধপঁষঃু) মধ্যে
এর আকার প্রতিভাত হয়, বুদ্ধি দ্বারা নয়। আল-কিন্দি এখানে বুঝাতে চান যে আমরা জাগতিক বস্তুর
জাত বা সারধর্মকে কখনও জানতে পারি না, যদিও এগুলি বাস্তব অস্তিত্বের দিক দিয়ে আমাদের খুবই
নিকটবর্তী। দ্বিতীয় প্রকার সত্তাকে সংবেদন দ্বারা জানা যায় না বা এর কোন জাগতিক অস্তিত্ব নেই।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে জেনাস বা জাতি এবং উপজাতিকে (স্পেসিস) কেবল বুদ্ধি দ্বারা জানা
সম্ভব, কারণ এদের কোন জাগতিক অস্তিত্ব নেই। মানুষের মনে এগুলির বুদ্ধিবৃত্তিজাত ধারণা, এগুলির
বাস্তবতা আছে, কিন্তু মনের ঊর্ধ্বে কোন অস্তিত্ব নেই। সুতরাং সর্বজনীন বা ইউনিভারসালকে (জেনাস,
স্পেসিস ইত্যাদি) কেবল বুদ্ধি দ্বারা জানা যায়। কিন্তু ব্যক্তি বা বিশেষকে সংবেদনের সাহায্যে জানা যায়।
ব্যক্তি ও সর্বজনীন
আল-কিন্দি সর্বজনীন এবং ব্যক্তির মধ্যে এ ধরনের পার্থক্য নির্দেশ করে বলেন যে সর্বজনীন বিশেষের
মতই বাস্তব; কিন্তু এদের নিজস্ব কোন জগৎ নেই। এক শ্রেণীর ব্যক্তির সাধারণ গুণের মধ্যেই এদের
অস্তিত্ব বোধগম্য হয়। তিনি বলেন “রুহ হয় সর্বজনীন না হয় বিশেষ। সর্বজনীন বলতে আমি
উপজাতীর (স্পেনিসের) প্রেক্ষিতে জাতি (জেনাস) কে বুঝি এবং ব্যক্তির প্রেক্ষিতে উপজাতিকে
(স্পেসিস) বুঝি এবং আমি ‘বিশেষ' বলতে উপজাতির (স্পেসিস) প্রেক্ষিতে ব্যক্তিকে বুঝি।” আলকিন্দি এখানে সর্বজনীন এবং ব্যক্তির আবশ্যক সম্পর্কের কথা বুঝাতে চান। তিনি বলেন
সর্বজনীন ছাড়া কোন ব্যক্তির অস্তিত্ব নই এবং ব্যক্তি ছাড়া সর্বজনীনের কোন অস্তিত্ব নেই। এভাবে তিনি ব্যক্তি ও সর্বজনীনের মধ্যে কোনটি পূর্বের এবং কোনটি পরের তার সমাধান করেন।
তিন প্রকার সত্তা ও বস্তুর দ্বিত্ত¡বাদ
তাত্তি¡ক দিক দিয়ে আল-কিন্দি তিন প্রকার সৃষ্ট সত্তার কথা বলেন। প্রথম প্রকার হচ্ছে ঐসব সত্তা
যেগুলি দেহজ। দ্বিতীয় প্রকার সত্তা হচ্ছে যেগুলি তাদের সূক্ষè প্রকৃতির কারণে জড় থেকে পৃথক।
তৃতীয় প্রকার সত্তা হচ্ছে আধ্যাত্মিক সত্তা, যাদের দেহজ কোন কিছু নেই। ব্যক্তি প্রথম প্রকার, আত্মা
দ্বিতীয় প্রকার এবং “স্বর্গীয় বস্তু” তৃতীয় প্রকারের সত্তা আল-কিন্দি অংকশাস্ত্রকে দ্বিতীয় প্রকারের অর্থাৎ
আত্মার সঙ্গে যুক্ত করেন। এ তিন প্রকার সত্তার সংগে সংবেদনশীলতার কথা ব্যাখ্যা করার সময় তিনি
বলেন যে সর্বজনীন এবং ব্যক্তি হচ্ছে সারবস্তু। আর সংবেদনশীলতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল
এর আত্ম-অস্তিত্ব বা আত্ম-প্রাণযাত্রা। আল-কিন্দি অন্য দু'প্রকার সত্তার কথা
আলোচনা না করে কেবলমাত্র দ্বিতীয় প্রকার সত্তার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। এর পেছনে তাঁর প্রধান
উদ্দেশ্য হল-আত্মাকে দেহহীন সারবন্তু প্রমাণ করা। তিনি মনে করেন যে, দেহহীন সারবস্তু
সর্বজনীনের আকারেই অস্তিত্বশীল। আল-কিন্দি এখানে বস্তুর-দ্বিতত্ত¡বাদের ধারণা পোষণ করেন।
একদিকে তিনি বলেন যে আল্লাহ অস্তিত্ববান; তাঁর সত্তা আমাদের বিবরণ ক্ষমতার বাইরে এবং আত্ম-
অস্তিত্ববান হিসেবে সারবস্তুর সংজ্ঞা তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অন্যদিকে উপরে
আলোচিত তিন প্রকার বস্তুকে তিনি সৃষ্ট-সত্তা বলে অভিহিত করেছেন। আল-কিন্দি এখানে প্লেটো ও
এ্যারিস্টটলের খোদার ধারণা থেকে দূরে সরে গিয়ে প্রমাণ করেন যে একদিকে আছে পূর্ণ চিরন্তন এবং
অন্যদিকে শূন্য থেকে সৃষ্টবস্তু। তাঁর চিন্তার অভ্যন্তরের দ্বিতত্ত¡বাদ আল্লাহ এবং তাঁর সৃষ্টির মধ্যে। আলকিন্দির মতে, খোদাই হচ্ছেন একমাত্র সত্তা যিনি সম্পূর্ণরূপে চিরন্তন। অন্যদিকে তিনি বলেন আত্মা
সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের ঊর্ধ্বে, কিন্তু এর চিরন্তনতা সীমামুক্ত এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আত্মা সৃষ্ট।
আল-কিন্দি এখানে দার্শনিক ধারণার সংগে ইসলামে বর্ণিত খোদার ধারণা মিলিয়ে একটি নতুন ধারণা দেন। এটি নিঃসন্দেহে তাঁর চিন্তাধারায় অভিনবত্বের প্রকাশ।
আল-কিন্দির যুক্তিবিদ্যা
দর্শনের অন্যান্য শাখার মত আল-কিন্দি যুক্তিবিদ্যা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। তাঁর গ্রন্থ তালিকা দেখে
মনে হয় যুক্তিবিদ্যায় তিনি তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক
হলেও সত্য যে যুক্তিবিদ্যা সংক্রান্ত তাঁর গ্রন্থের কোনো হদিস পাওয়া যায় না। ফলে এক্ষেত্রে তাঁর
নিজস্ব কি অবদান সে সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলা কঠিন। তবে যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানের কিছু পরিচয় দেওয়া সম্ভব। আমরা এখানে সে চেষ্টা করব।
সাধারণত আরবীয় যুক্তিবিদ্যা এ্যারিস্টটলিয়ান যুক্তিবিদ্যা দ্বারা প্রভাবিত। এদের ওপর স্টয়িক ও নিও-
প্লেটোনিক যুক্তিবিদ্যারও প্রভাব ছিল। মুসলিম দার্শনিকরা যুক্তিবিদ্যার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখান। ফলে
মুসলিম চিন্তাধারার জগতে যুক্তিবিদ্যার একটি বিশিষ্ট স্থান ছিল। এ কারণে গ্রীক বিজ্ঞানের মধ্যে
যুক্তিবিদ্যার গ্রন্থাবলী প্রথমদিকে আরবী ভাষায় অনুবাদ করা হয়। মুসলিম চিন্তাবিদদের মধ্যে কেউ
এ্যারিস্টটলের যুক্তিবিদ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে স্টয়িক যুক্তিবিদ্যাকে গ্রহণ করেন। আবার অন্যান্যদের
মধ্যে অনেকেই এ যুক্তিবিদ্যাকে গ্রহণ না করে এর বিভিন্ন নীতির ওপর তাঁদের যুক্তিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেন।
আল-কিন্দি দর্শনের সাথে যুক্তিবিদ্যার সম্পর্ক সম্বন্ধে তেমন কিছু বলেননি। তাঁর লিখিত বিভিন্ন গ্রন্থে
তিনি বলেননি যে যুক্তিবিদ্যা দর্শনের অংশ বা কেবল দর্শনের হাতিয়ার। তবে এটুকু বুঝা যায় যে,
তিনি যুক্তিবিদ্যাকে দার্শনিক অনুসন্ধান কর্মের হাতিয়ার বলে মনে করেন এবং তা মনে করেন অনেকটা
অপ্রত্যক্ষভাবে। আল-কিন্দি যুক্তিবিদ্যা এবং এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করেননি। তবে
প্রচ্ছন্নভাবে ধরে নেয়া যায় যে তিনি যুক্তিবিদ্যাকে ন্যায় অনুমানের যুক্তি সম্পর্কিত পাঠ বলে মনে
করেন। তাঁর মতে, যুক্তিবিদ্যা দার্শনিককে প্রস্তুত করার জন্য আবশ্যকীয়; কিন্তু গণিতশাস্ত্রের মত
তেমন জরুরী নয়। এ্যারিস্টটলের যুক্তিবিদ্যার ওপর ‘অষ্টম পুস্তক' সম্পর্কিত আল-কিন্দির ট্রিটিজটি একমাত্র উৎস।
সে কারণে এই ট্রিটিজের ওপর ভিত্তি করে আল-কিন্দির অভিমত ব্যাখ্যা করা বিপদজনক নয়। আলকিন্দি মনে করেন যে মোট চার প্রকারের সত্তা আছে। অন্যান্য সকল অস্তিত্বশীল বস্তুগুলি এসব সত্তার
মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে তিন প্রকার হচ্ছে সারবস্তু (অ'ুধহ)যার মধ্যে ব্যক্তি, জাতি এবং উপজাতি
) অন্তর্ভুক্ত। অবশিষ্ট শ্রেণীটি জাত্যার্থের ওপর ভিত্তিশীল ধারণা এবং
জাত্যার্থের জাতি থেকে উপজাতিগুলিকে পৃথক করে।
আল-কিন্দি বলেন দার্শনিকদের ব্যবহৃত শিক্ষা ও অনুসন্ধানের পদ্ধতি চার প্রকার; (১) বিভক্তি, (২) বিশ্লেষণ, (৩)সংজ্ঞা এবং (৪) প্রতিপাদন বা প্রত্যক্ষ প্রমাণ। প্রতিপাদিত বা অভিব্যক্তিশীল যুক্তিকে
তিনি সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন; কারণ এর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান অত্যন্ত প্রসারিত এবং এটি
সকল ধরনের লোকই ব্যবহার করেন। প্রতিপাদিত যুক্তি ( ব্যবহারকারী
লোকজন বিভিন্ন প্রকার হয় যেমন শিশুদের যুক্তি আত্মকেন্দ্রিক; বয়স্কদের মধ্যে যাদের যুক্তি অ্যানালজি
বা সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তিশীল তারা জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাতকে অনুমান করেন; এরপরে আছেন স্কলার
জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ যারা দ্বান্দি¡ক যুক্তি পদ্ধতিতে দক্ষ এবং যাদের ঢ়ৎবসরংব বা আশ্রয়বাক্য সত্য, মিথ্যা বা
দুর্বোধ্য হতে পারে। সর্বশেষ শ্রেণী হল জ্যামিতিক প্রমাণ এবং যুক্তিবিদ্যঅয় দীক্ষিত বা অভিমন্ত্রিত
ব্যক্তি। এসব ব্যক্তি সংবেদন বা আরোহণের মাধ্যমে যেসব বস্তুকে জানা যায় না সেসব বস্তুর জ্ঞান
অর্জনের জন্য ন্যায় অনুমানভিত্তিক (ঝুষষড়মরংঃরপ) যুক্তি ব্যবহার করেন। এসব দীক্ষিত ব্যক্তির জ্ঞানকে
প্রতিপাদিত জ্ঞান বলা যায়। আল-কিন্দি এরপর প্রতিপাদিত যুক্তির উদাহরণ দেন এসব তত্ত¡ প্রমাণের
সাহায্যে ঃ (১) কোন শূন্যতা নেই; (২) বিশ্বের বাইরে কোন শূন্যতা বা বস্তুপূর্ণ স্থান নেই এবং (৩) এ পৃথিবী কোন এক সময় লয়প্রাপ্ত।
সর্বশেষে আল-কিন্দি যুক্তিবিদ্যার লক্ষ্যকে নীতিশাস্ত্রের লক্ষ্যের সমার্থক বলে বর্ণনা করেন। উপরোক্ত
আলোচনার দিকে লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে আল-কিন্দি ইউক্লিডিও নীতিকে ন্যায় অনুমানভিত্তিক
যুক্তির ভিত্তি বলে মনে করেন। আল-কিন্দির এ ধরনের পদ্ধতি নিঃসন্দেহে সমস্ত মুসলিম দার্শনিকদের
পদ্ধতির চেয়ে অভিনব। আপনি হয়ত লক্ষ্য করেছেন যে আল-কিন্দির বিবেচনায় সর্বজনীনের কোন
বাস্তব অস্তিত্ব নেই; সর্বজনীনকে কেবল বুদ্ধি দ্বারাই বুঝা যায়। কারণ এগুলি চিন্তার বস্তু যা সম্ভাব্যতা
থেকে বাস্তবতায় উত্তরণ করে। একইভাবে কোন বস্তুর সারধর্মকে বুদ্ধি দ্বারা জানা যায় আর এর বাস্তব
অস্তিত্বকে জানা যায় সংবেদনের মাধ্যমে। তাঁর মতে জ্ঞান এবং সত্তা পর্যায়ক্রমিক। সুতরাং গৌণ
সারবস্তুকে জানতে হলে অবশ্যই মুখ্য সারবস্তুকে জানতে হবে। আর মুখ্য সারবস্তুকে জানার একমাত্র
উপায় হচ্ছে অংকশাস্ত্রের জ্ঞান।
আল-কিন্দির এসব তত্তে¡র দিকে দৃষ্টিপাত করলে বুঝা যায় যে তিনি এ্যারিস্টটলীয় এবং স্টয়িক
যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান আহরণ করেন এবং তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারায় নিজস্ব ভঙ্গিতে এ জ্ঞান প্রয়োগের প্রয়াস
পান। এ কারণেই তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এ্যারিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যাকে পদ্ধতির চেয়ে অংকশাস্ত্রীয়
জ্ঞান তথা দার্শনিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকর।
অনুশীলনী
আল-কিন্দির অধিবিদ্যা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন। তাঁর যুক্তিবিদ্যা পাঠ করে সারাংশ বের করে লিখুন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
সত্য-মিথ্যা
১। আল-কিন্দির অধিবিদ্যার অপর নাম সত্য/মিথ্যা
২। আল-কিন্দির মতে সর্বজনীনকে সংবেদন দ্বারা জানা যায়। সত্য/মিথ্যা
৩। আল-কিন্দির মতে সৃষ্টসত্তা তিন প্রকার। সত্য/মিথ্যা
৪। আল-কিন্দি যুক্তিবিদ্যাকে দর্শনের শাখা বলেন। সত্য/মিথ্যা
৫। আল-কিন্দির মতে প্রথম কারণ আল্লাহ। সত্য/মিথ্যা
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। সর্বজনীনকে জানা যায়
(ক) বুদ্ধি দ্বারা (খ) স্বজ্ঞা দ্বারা
(গ) কোনটির দ্বারা নয়।
২। আল-কিন্দির মতে ব্যক্তি ছাড়া সর্বজনীনের অস্তিত্ব
(ক) নেই (খ) আছে
(গ) কোনটিই নয়
৩। আল-কিন্দির মতে পৃথিবী কোন এক সময়ে
(ক) সৃষ্ট (খ) সৃষ্ট নয়
(গ) স্বয়ংসৃষ্ট (ঘ) কোনটিই নয়
৪। আল-কিন্দির মতে তাত্তি¡ক দিক দিয়ে সত্তা
(ক) তিন প্রকার (খ) চার প্রকার
(গ) পাঁচ প্রকার (ঘ) কোন প্রকারভেদ নেই
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সংক্ষেপে আল-কিন্দির অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।
২। যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আল-কিন্দির অভিমত ব্যাখ্যা করুন।
৩। আল-কিন্দির অধিবিদ্যা এবং যুক্তিবিদ্যার ওপর এ্যারিস্টটলের কোন প্রভাব আছে কি? থাকলে কিভাবে আছে?
উত্তরমালা
সত্য-মিথ্যা
১। সত্য ২। মিথ্যা ৩। সত্য ৪। মিথ্যা ৫। সত্য
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। খ ২। ক ৩। খ ৪। ক।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]