বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে আল-কিন্দির অবদান কোথায় তা চিন্তা করে বের করুন ও লিখুন।

আত্মা ও বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে আল-কিন্দির গ্রন্থ
আত্মা সম্পর্কে আল-কিন্দির লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা তেমন খুব একটা বেশী নয়। আত্মা ও বুদ্ধিবৃত্তির গ্রন্থটিতে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তিনি প্লেটো ও এ্যারিস্টটলের আত্মার ধারণা সমন¦য়ের
মাধ্যমে তাঁর নিজস্ব ধারণায় পৌঁছানোর কৌশল অবলম্বন করেন। তাঁর এক বন্ধুর অনুরোধে আত্মা ও
এর উদ্দেশ্যাবলী সম্পর্কে দার্শনিকদের মতবাদ ব্যাখ্যা করে তিনি গ্রন্থটি রচনা করেন। এ গ্রন্থে
এ্যারিস্টটলের চেয়ে প্লেটো ও নিও পাইথগোরীয় অভিমতের প্রতি তিনি বেশী গুরুত্ব আরোপ করেন।
তাঁর আত্মা সম্পর্কিত সংজ্ঞা থেকে বুঝা যায় তিনি এ ব্যাপারে এ্যারিস্টটলের প্রভাবমুক্ত হয়ে তাঁর
নিজস্ব মতবাদ ব্যক্ত করেন। অ উরংপড়ঁৎংব ড়হ ঃযব ঝড়ঁষ গ্রন্থে অবশ্য তিনি প্লেটো ও এ্যারিস্টটলের
আত্মার ধারণার সম্মিলন ঘটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আত্মা ও বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে তাঁর অভিমত
অনেকটা প্লেটোর অভিমতের মতই। তবে একথা ভুললে চলবে না যে আত্মা ও বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে
প্লেটোর ধারণার সঙ্গে তিনি তাঁর নিজের ধারণা সংযুক্ত করে এক নতুন ধারণায় উপনীত হওয়ার চেষ্টা
করেন।
আত্মা সম্পর্কে আল-কিন্দির ধারণা
আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে আল-কিন্দি যে কোন ধরনের জড়বাদী ধারণার পরিপন্থী। তাঁর মতে, “আত্মা
সরল, পূর্ণ এবং মহৎ প্রকৃতির। এর সারমর্ম সৃষ্টিকর্তার সারমর্ম থেকে নির্গত ঠিক তেমনিভাবে,
যেমনিভাবে সূর্য থেকে সূর্যের আলো নির্গত হয়। তাঁর মতে আত্মা দেহ থেকে ভিন্ন এবং আলাদা।
প্রকৃতির দিক দিয়ে আত্মার সারমর্ম স্বর্গীয় এবং আধ্যাত্মিক। দেহের প্রতি এ আত্মা আকর্ষণহীন এবং এ আত্মা বুদ্ধিময় দ্রব্য।
স্বর্গীয় ও আধ্যাত্মিক প্রকৃতির হওয়ায় মানুষ এই আত্মাকে উন্নত ও বিশুদ্ধ করে এ জগতে ও পরজগতে
চরম উৎকর্ষ, মহত্ত এবং আশির্বাদ অর্জন করতে পারে। আত্মা জড় বা সংবেদীয় কলুষতার ঊর্ধ্বে
থাকলে পলিস্ড বা পরিশোধিত থাকবে। এই পরিশোধিত আত্মা ঝকঝকে আয়নার মত যে আয়নায়
যা কিছু প্রতিফলিত হয় তা যেমন পরিষ্কারভাবে দেখা যায় ঠিক অনুরূপভাবে পলিস্ড বা বিশুদ্ধ আত্মার
ওপর বিশ্বের গোপন রহস্যগুলো পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয়। প্লেটোর মতে, আত্মা দেহ ত্যাগ করে
স্বীয় জগতে প্রবেশ করলে জ্ঞানের প্রকৃত ক্ষমতা এবং ‘স্বর্গীয় রূপ' লাভ করে। আত্মা এরূপে হয়
মহাশক্তিমানের মতই। এ ধরনের আত্মার ভ‚ত ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই।
আল-কিন্দি বলেন,“এ ধরনের আত্মা পরিপূর্ণ বিশুদ্ধতা অর্জন করলে স্বপ্নে এ আত্মা বিস্ময়ের জগতের
স্বপ্ন দেখে এবং যাদের আত্মা দেহ থেকে পৃথক হয়ে গেছে তাদের আত্মার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে
পারে। এ আত্মা আল্লাহর আলো (নূর) ও করুণা অর্জন করে এবং খাদ্য, পানীয়, সংযম, শ্রæতি, দৃশ্য,
গন্ধ ও স্পর্শের মত যাবতীয় আনন্দের চেয়ে অনেক উৎকৃষ্টতর চিরন্তন আশির্বাদে নিমগ্ন হয়।
সংবেদনশীল আনন্দে কষ্ট আনে; কিন্তু আশীর্বাদপুষ্ট আত্মা স্বর্গীয় আনন্দে বিভোর থাকে।
বিশুদ্ধ আত্মার স্বপ্ন
আল-কিন্দির মতে, আত্মা হল সরল এবং নিদ্রার সময় দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভবিষ্যৎ জানতে পারে।
অধিকন্তু, এ আত্মা সর্বদা জাগ্রত এবং অমর। আত্মা নিদ্রার সময় সংবেদনশীলতার ওপর নিয়ন্ত্রণ
শিথিল করে কিন্তু চেতনা হারায় না। এ আত্মার জন্য এ জগৎ ক্ষণস্থায়ী। এ জগৎ এই আত্মার জন্য
“ব্রীজ (নৎরফমব)” স্বরূপ, যে ব্রীজ পার হয়ে আত্মা এর সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে গিয়ে স্থায়ী আবাস লাভ
করে এবং সৃষ্টিকর্তাকে বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্যে দর্শন করে।
আল-কিন্দি আত্মার শাস্তিতে নয়, বরং এর পরিণতিমূলক মুক্তিতে বিশ্বাসী। তাঁর মতে সমস্ত আত্মাই
করুণাপ্রাপ্ত হয় না। এসব আত্মার মধ্যে কিছু আত্মা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও পূর্ণরূপে শুদ্ধ থাকে
না। এদের সাথে কিছু অপবিত্রতা থেকে যায় বলে এদেরকে কিছুকাল চন্দ্রের পরিমন্ডলে এবং পরে
বুধের পরিমন্ডলে বাস করতে হয়। যখন এ স্থান-কালে আত্মা জড়ীয় অপবিত্রতা থেকে বিশুদ্ধতা লাভ
করে, তখন এসব আত্মা ওপরের বোধের জগতে আরোহণ করে এবং বিশুদ্ধ আত্মার মত করুণাপ্রাপ্ত
হয়।
আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে আল-কিন্দি ইতোপূর্বে আত্মার সংগে সম্পর্কিত ‘ব্রীজ' কথাটি
ব্যবহার করেছেন। এ কথার দ্বারা তিনি কি আত্মার পূর্ব-অস্তিত্বের কথা বলতে চান? এ প্রসঙ্গে আলকিন্দির অভিমত পরিষ্কারভাবে বলা কঠিন। তবে তাঁর গ্রন্থ থেকে কিছু কিছু ইঙ্গিতের সাহায্যে তাঁর
অভিমত পাওয়া যেতে পারে। প্রথমত এ জগতকে ‘ব্রীজ' হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বুঝাতে
চাচ্ছেন যে আত্মা চিরন্তন জগৎ থেকে পৃথিবীতে স্বল্পকালের জন্য অবস্থান করে, আবার মানুষের মৃত্যুর
পর চিরন্তন জগতে ফিরে যায়। এ জগতে এর অবস্থান চিরন্তন জগতে প্রবেশের জন্যই। সুতরাং এ
জগৎ এর জন্য একটি ব্রীজ ছাড়া আর কিছুই নয়। আল-কিন্দির হারানো অন দি রেমিসিস সেন্সেস অব
দি সোল ইন দি ইনটেলিজিবল ওয়ার্ল্ড বিফোর ইটস ডিসসেন্ট টু দি সেনসিবল ওয়ার্ল্ড গ্রন্থে তিনি
আত্মা সম্পর্কে যা বলেন তাতে মনে হয় তিনি আত্মার পূর্ব-অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন। তাঁর এ মত
যথার্থ বলে ধরে নেওয়া ঠিক হবে না কারণ এ মতের সমর্থনে তাঁর গ্রন্থ এখনও পাওয়া যায়নি। এ
কারণে তাঁকে আত্মার সৃষ্টতা এবং অমরতায় বিশ্বাসী বলে ধরে নেওয়া যুক্তিযুক্ত। এটি ইসলামি মত।
দেহের সঙ্গে আত্মার সম্পর্কের ব্যাপারে আল-কিন্দি বলেন যে এদের সম্পর্ক অ্যাকসিডেন্টাল বা
আকস্মিকমাত্র। তিনি দেহ থেকে আত্মার বিচ্ছিন্নতার কথা জোর দিয়ে বলেন। তাঁর অভিনব একটি
ধারণা হল দেহের ওপর আত্মার কর্ম দেহের আকার গঠন করে। যাহোক তিনি দেহের সঙ্গে আত্মার
সম্পর্ককে উপাদানের রূপান্তর সাধনের মত মনে করেন না। বরং তিনি মনে করেন যে এদের সংযোগ
কর্ম ও প্রবৃত্তির সংযোগ। আত্মা দেহের ওপর কর্ম সাধন করে মাত্র। আত্মা দেহে অনুপ্রবেশ করে কিন্তু
এই আত্মা সর্বদাই জড় জগতের বাধন থেকে মুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টায় প্রবৃত্ত। কারণ এ দুর্বোধ্য জগৎ
আত্মাকে আলোর বা বোধের জগৎ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এই আত্মা অমর এবং দেহের সঙ্গে এর
মৃত্যু হয় না।
আত্মা কিভাবে দেহের ওপর কাজ করে; এ প্রশ্নের উত্তরে আল-কিন্দি আত্মাকে মানুষের মুক্তি বা
বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির সঙ্গে সমার্থক ভাবেন এবং এখানেই আত্মার সঙ্গে সক্রিয় বোধশক্তির সম্পর্কের প্রশ্ন
ওঠে।
প্লেটোর মত আল-কিন্দি আত্মাকে তিনটি অংশে বিভক্ত করেন; (১) বুদ্ধিবৃত্তিক
বা আল-আকলিয়া); (২) আবেগজাত বা আল গাদারিয়াহ) এবং (৩) কাম প্রবৃত্তিজাত
(ঈড়হপঁঢ়রংপবহঃ বা আল শাহওয়ানিয়াহ)। এ তিনটি অংশের পাশাপাশি তিনি তিন প্রকার মানসিক
শক্তির সংযোগ করেন। এর মধ্যে প্রথমটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আত্মার উচ্চতম পর্যায়ের কর্মের
সঙ্গে যুক্ত; দ্বিতীয়টি স্মৃতি সংরক্ষণ, প্রবৃত্তি, পুষ্টি ও প্রবৃদ্ধি এবং কল্পনা শক্তির সঙ্গে যুক্ত; তৃতীয় অংশটি
সংবেদনের সঙ্গে যুক্ত।
আত্মার উপরোক্ত বিভাগের মধ্যে ইনটেলেকচুয়াল ফ্যাকাল্টি বা বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি হচ্ছে আত্মার
বহিঃপ্রকাশ। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে যখন আত্মা ফার্স্ট ইন্টেলেক্টের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। আত্মার
এ অংশের কাজ বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আরও উচ্চ পর্যায়ের। আত্মার দ্বিতীয় মানসিক শক্তির সঙ্গে আকারের
স্মৃতি জড়িত। এই প্রকারের শক্তিকে তিনি কল্পনা শক্তির সঙ্গে যুক্ত করেন। মানসিক শক্তির যে
বিভাগকে তিনি সংবেদনের সঙ্গে যুক্ত করেন-সে অংশে তিনি পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সংযোগের কথা বলেন।
এই অংশে তিনি আকার, স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ এবং শ্রæতির কথা বলেন। এসব বিভাগের প্রত্যেকটির
কর্মক্ষেত্র এবং আত্মার সমনি¦ত কার্যক্রম সম্পর্কে আল-কিন্দি আরও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
কিন্তু এ ক্ষুদ্র পরিসরে এ আলোচনা দীর্ঘায়িত না করে এবার আমরা বুদ্ধিবৃত্তির আলোচনা করব।
আল-কিন্দির বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কীয় তত্ত¡
বুদ্ধিবৃত্তি বা ইন্টেলেক্ট সম্পর্কে আল-কিন্দির গ্রন্থের সংখ্যা খুবই কম। ‘অন দি ইন্টেলেক্ট' গ্রন্থটিই
একমাত্র গ্রন্থ যেখানে এ সম্পর্কে তাঁর মতবাদের কিছুটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। অনেকেরই ধারণা তিনি
এ ব্যাপারে এ্যারিস্টটলের মতবাদের অনুকরণ করেন। আবার কারও কারও মতে তিনি
অ্যাফ্রোডিয়াসের আলেকজান্ডারের তত্তে¡র অনুসরণে তাঁর তত্ত¡ দেন। যহোক, এখন আমরা দেখি তিনি
কিভাবে এ ব্যাপারে তাঁর মতবাদ ব্যাখ্যা করেন।
এ্যারিস্টটল তাঁর ডি-এ্যানিমা গ্রন্থে দু'প্রকার বুদ্ধিবৃত্তির কথা বলেন। এর একটি হল সম্ভাব্য বুদ্ধিবৃত্তি
এবং আরেকটি চালক বুদ্ধিবৃত্তি। সম্ভাব্য বুদ্ধিবৃত্তি বুদ্ধি গ্রহণ করে; কিন্তু চালক বুদ্ধিবৃত্তি বস্তু উৎপাদন
করে। শেষোক্ত বুদ্ধিবৃত্তিকে এ্যারিস্টটল পৃথক, অমিশ্রিত, সর্বদা বাস্তবতায় নিমজ্জিত চিরন্তন এবং দূষণমুক্ত বলে অভিহিত করেন।
এ্যারিস্টটলের বুদ্ধিবৃত্তি
অফ্রোডিসিয়াসের আলেকজান্ডার তাঁর ডি ইন্টেলেক্টু গ্রন্থে তিন প্রকার বুদ্ধিবৃত্তির কথা বলেন। প্রথমটি
জড়ীয় বুদ্ধিবৃত্তি, দ্বিতীয়টি স্বভাবজাত বুদ্ধিবৃত্তি এবং তৃতীয়টি চালক বুদ্ধিবৃত্তি। তিনি এ্যারিস্টটলের
দু'প্রকারের সঙ্গে ইনটেলেকটাস হ্যাবিটাস বা অ্যাডেপ্টাস অর্থাৎ স্বভাবজাত বুদ্ধিবৃত্তির সংযোজন
করেন। তাঁর মতে জড়ীয় বুদ্ধিবৃত্তি সম্ভাব্য এবং ধ্বংসশীল। এটি হল মানুষের ‘আকার' গ্রহণের
ক্ষমতা। স্বভাবজাত বুদ্ধিবৃত্তির ফলে মানুষ জ্ঞান অর্জন করে এবং তা সংরক্ষিত রাখে। এর অর্থ
সম্ভাব্যতা থেকে বাস্তবতায় রূপান্তরের জন্য চালকের প্রয়োজন। এটি হচ্ছে চালক বুদ্ধিবৃত্তি যাকে
ইনটেলিজেনসিয়া এজেন্স বলা হয়। এই বুদ্ধিবৃত্তি অনেকের মতে স্বর্গীয় বুদ্ধিবৃত্তি যা ব্যক্তি মানুষের আত্মায় প্রবিষ্ট হয়।
আরব দার্শনিক আল-কিন্দি তাঁর দি ইন্টেলেক্ট গ্রন্থে এদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে চার প্রকার
বুদ্ধিবৃত্তির কথা বলেন। তিনি স্বভাবজাত বা ইনটেলেকট ইন হ্যাবিটকে দুই ভাগে ভাগ করেন। এর
একটি হচ্ছে ঐ বুদ্ধিবৃত্তি যা জ্ঞানের অধিকারী; কিন্তু ঐ জ্ঞান কার্যে ব্যবহার করে না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে
ঐ বুদ্ধিবৃত্তি যার জ্ঞান আছে এবং যা ঐ জ্ঞানকে কর্মে ব্যবহার করে। প্রথমটি ঐ লেখকের মত যে
লিখতে জানে কিন্তু লেখে না; আর দ্বিতীয়টি ঐ লেখকের মত যে লিখতে জানে এবং লেখে।
বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে আল-কিন্দির উদ্ধৃতি
আল-কিন্দি চার প্রকার বুদ্ধিবৃত্তিকে সাজিয়ে তাঁর দি ইনটেলেক্ট গ্রন্থে এভাবে প্রকাশ করেন-
(১) প্রথম প্রকার বুদ্ধিবৃত্তি ঐ যা সর্বদাই কর্মে প্রবৃত্ত;
(২) দ্বিতীয়টি হচ্ছে ঐ বুদ্ধিবৃত্তি যা সম্ভাব্যতা আত্মার মধ্যে;
(৩) তৃতীয় প্রকার বুদ্ধিবৃত্তি হল তাই যা আত্মার সম্ভাব্যতা থেকে বাস্তবতায় উত্তরণ করেছে;
(৪) চতুর্থটি ঐ বুদ্ধিবৃত্তি যাকে আমরা দ্বিতীয় (ঝবপড়হফ) বলি।
এখানে দ্বিতীয় বলতে তিনি দ্বিতীয় ডিগ্রী বা মাত্রার বাস্তবতার কথা বলেন যা নিষ্ক্রিয় এবং সক্রিয় লেখকের পার্থক্যের মত।
চালক বুদ্ধিবৃত্তি
আল-কিন্দির মতে প্রথম প্রকার বুদ্ধিবৃত্তি পৃথক এবং এ্যারিস্টটলের সক্রিয় বুদ্ধিবৃত্তির বা চালক
বুদ্ধিবৃত্তির মত। এই বুদ্ধিবৃত্তি মানবাÍার বাইরে অবস্থান করে এবং এটি স্বর্গীয় ও সর্বদা বাস্তবতায়
নিমজ্জিত। এই বুদ্ধিবৃত্তি স্বর্গীয় বলে নির্গমন নীতির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে। বুদ্ধিবৃত্তি দেহ
থেকে পৃথক থাকলেও গতিশীল, অবিনশ্বর এবং অমর। দেহ থেকে পৃথক থাকা সত্তে¡ও এই বুদ্ধিবৃত্তি
দেহের ওপর ক্রিয়াশীল। আমরা এ বুদ্ধিবৃত্তিকে চালক বুদ্ধিবৃত্তি বলতে পারি।
আল-কিন্দির দ্বিতীয় প্রকার বুদ্ধিবৃত্তি হচ্ছে সম্ভাব্য বুদ্ধিবৃত্তি আত্মায় এ
বুদ্ধিবৃত্তি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এই বুদ্ধিবৃত্তি বহির্জগৎ থেকে সংবেদীয় ছাপ এবং বুদ্ধিদ্বিপ্ত আকার গ্রহণ
করে থাকে। অন্যকথায় একে মানুষের মন বলা যায় যে মন সংবেদীয় বা বুদ্ধিময় আকার গ্রহণের পূর্ব অবস্থায় থাকে।
অর্জিত বুদ্ধিবৃত্তি
তৃতীয় প্রকার বুদ্ধিবৃত্তি হচ্ছে অর্জিত বুদ্ধিবৃত্তি। এ বুদ্ধিবৃত্তি ঐ ধরনের বুদ্ধিবৃত্তি যা সম্ভাব্যতা থেকে
বাস্তবতায় উত্তরণ করে এবং বুদ্ধিময় আকারের সংগে যুক্ত হয়ে তাদের সংগে একত্রিত হয়ে যায়।
আল-কিন্দি ‘অর্জিত' কথাটি ব্যবহার করেছেন এই অর্থে যে এটি সেই বুদ্ধিবৃত্তি যা আত্মা কর্তৃক বাহির
থেকে অর্জিত হয়। এটি ঐ ধরনের বুদ্ধিবৃত্তি যাকে ‘প্রথম বুদ্ধিবৃত্তি' সম্ভাব্যতা থেকে বাস্তবতায় উত্তরণ
করায় এবং বুদ্ধিময় আকারের সংগে সংযুক্ত করায়। আল-কিন্দি ‘অর্জিত' কথাটিকে আত্মা কর্তৃক
অর্জনের (অপয়ঁরংরঃরড়হ) অর্থেও ব্যবহার করেন। এ অর্জিত বুদ্ধিবৃত্তিকে সম্ভাব্য থেকে বাস্তবতায়
গমনের বুদ্ধিবৃত্তি বলা যেতে পারে এবং আত্মা এটি স্বেচ্ছায় ব্যবহার করতে পারে। আল কিন্দি এ
বুদ্ধিবৃত্তিকে কোন ব্যক্তির লেখার বিদ্যা অর্জনের সংগে তুলনা করে বলেন ঐ ব্যক্তির লেখার জ্ঞান
আছে কিন্তু সে ব্যক্তি লেখে না। এখানে লেখকের লেখার ক্ষমতা অর্জিত হয়েছে।
নির্দেশক বুদ্ধিবৃত্তি
আল-কিন্দির চতুর্থ বুদ্ধিবৃত্তি হচ্ছে আত্মার বহিঃপ্রকাশ এবং এ ধরনের প্রকাশ ঘটে যখন এ বুদ্ধিবৃত্তি
সক্রিয়ভাবে ফার্স্ট ইনটেলেক্ট বা প্রথম বুদ্ধিবৃত্তির সংস্পর্শে আসে। এ বুদ্ধিবৃত্তিকে অর্জিত বুদ্ধিবৃত্তির
অন্যতম নির্দেশক বুদ্ধিবৃত্তি বলা সমীচীন হবে। এ নির্দেশক বুদ্ধিবৃত্তি
প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গে যথার্থ। বুদ্ধিময় বা সুবোধ্যকে প্রকাশ্য কর্মে প্রবৃত্ত করা এর কাজ। উদাহরণস্বরূপ
আল-কিন্দি এ বুদ্ধিবৃত্তিকে ঐ ধরনের লোকের সংগে তুলনা করেন যে লোক লিখনবিদ্যা আয়ত্ত করে
তা কার্যে পরিণত করেন অর্থাৎ লিখেন।
বুদ্ধিবৃত্তির উপরোক্ত আলোচনার পর একথা বলা যায় যে আল-কিন্দি এ সমস্যার খুব একটা গভীরে
প্রবেশ করেননি। কিন্তু পরবর্তী দার্শনিকদের জন্য তিনি চতুর্থ প্রকার বুদ্ধিবৃত্তির সংযোগ করে একটি
আদর্শের (গড়ফবষ) অবতারণা করেন এবং 'বিমূর্তন তত্তে¡র‘ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে অন্যান্য
মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে বিশেষ করে আল-ফারাবী আল-কিন্দির বুদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত তত্ত¡কে পূর্ণতা দান করেন।
অনুশীলনী
১। আত্মা সম্পর্কে আল-কিন্দির অভিমত এবং বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা ব্যাখ্যা করুন।
২। আত্মা ও বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে চিন্তা করে তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা আলোচনা করুন।
৩। আত্মা ও বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে চিন্তা করে আপনার নিজের মত প্রকাশ করুন।
সত্য-মিথ্যা
১। আত্মা সম্পর্কীয় চিন্তাধারায় আল-কিন্দির ওপর এ্যারিস্টটলের কোন প্রভাব নেই। সত্য-মিথ্যা
২। আল-কিন্দির মতে আত্মা জড়ীয় পদার্থ। সত্য-মিথ্যা
৩। আল-কিন্দির মতে এ জগৎ আত্মার জন্য ‘ব্রীজ'স্বরূপ। সত্য-মিথ্যা
৪। আল-কিন্দির মতে বুদ্ধিবৃত্তি তিন প্রকারের। সত্য-মিথ্যা
৫। আল-কিন্দির মতে আত্মার এ জগতে অবস্থান ক্ষণস্থায়ী। সত্য-মিথ্যা
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। আত্মা সম্পর্কে আল-কিন্দির অভিমত অনেকটা
(ক) এ্যারিস্টটলের মত
(খ) আলেকজান্ডারের মত
(গ) প্লেটোর মত
(ঘ) কোনটির মত নয়।
২। আল-কিন্দির মতে আত্মা দেহ থেকে
(ক) বিচ্ছিন্ন
(খ) দূরবর্তী
(গ) উৎপন্ন
(ঘ) কোনটিই নয়।
৩। আল-কিন্দির মতে আত্মা
(ক) অমর
(খ) ক্ষণস্থায়ী
(গ) ধ্বংসশীল
(ঘ) উপরের কোনটিই নয়।
৪। আল-কিন্দির মতে তৃতীয় প্রকার বুদ্ধিবৃত্তি হচ্ছে
(ক) চালক বুদ্ধিবৃত্তি
(খ) অর্জিত বুদ্ধিবৃত্তি
(গ) সম্ভাব্য বুদ্ধিবৃত্তি
(ঘ) ওপরের কোনটিই নয়
৫। বিমূর্তন তত্ত¡টি
(ক) এ্যারিস্টটলের
(খ) প্লেটোর
(গ) আল-কিন্দির
(ঘ) ওপরের কারও নয়
রচনামূলক প্রশ্ন
১। আত্মা সম্পর্কে আল-কিন্দির অভিমত ব্যাখ্যা করুন।
২। আল-কিন্দির আত্মার সংজ্ঞা পুরোপুরি ইসলামসম্মত নয়। এ ব্যাপারে চিন্তা করুন এবং লিখুন।
৩। বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে আল-কিন্দির ধারণা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।
৪। বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে আল-কিন্দির অবদান কোথায় তা চিন্তা করে বের করুন ও লিখুন।
সমস্যা
মনে করুন আত্মা একটি সত্তা এবং বুদ্ধিবৃত্তি আরেকটি সত্তা। কিন্তু আল-কিন্দি কি এদেরকে দুটি সত্তা
বলেন? যদি বলে থাকেন তাহলে এদের মধ্যে তিনি কোন্ ধরনের সম্পর্কের কথা বলেছেন? যদি দুটি
সত্তা নয় বলেন তবে এদের মধ্যে তিনি কি সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন? চিন্তা করে বের করুন ও
লিখুন।
উত্তরমালা
সত্য-মিথ্যা
১। মিথ্যা ২। মিথ্যা ৩। সত্য ৪। মিথ্যা ৫। সত্য।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
১। গ ২। ক ৩। ক ৪। খ ৫। গ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]