নৈতিক আপেক্ষিকবাদ বলতে কী বুঝায়? উদাহরণসহ আলোচনা করুন।

নীতিবিদ্যার কাজ নৈতিকতা নিয়ে, আর নৈতিকতা মূলত একটি সামাজিক ব্যাপার। যে সমাজের
বাইরে বাস করে তার কোন নৈতিকতার প্রয়োজন নেই। তাই নৈতিকতাকে বুঝতে হলে এর
সামাজিক প্রেক্ষিতটিকে আগে বুঝতে হবে। সমাজ যেহেতু ব্যক্তির সমষ্টি এবং নৈতিকতা যেহেতু
ব্যক্তির উপরই আরোপ করা হয় সেহেতু নৈতিক ব্যাপারে ব্যক্তির ভ‚মিকা সম্বন্ধে ব্যাখ্যার প্রয়োজন
রয়েছে; আরো প্রয়োজন রয়েছে নৈতিক অবধারণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার; কেননা এর
মাধ্যমেই নৈতিকতাকে প্রকাশ করা হয়। একবার নৈতিকতাকে বুঝতে পারলে এরপর নীতিবিদ্যাকে
বোঝা সহজ হয়ে যায়। এ পর্যায়ে নীতিবিদ্যার একটি উপযুক্ত সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং এর পরিধি ও
বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এর সঙ্গে নীতিবিদ্যার বিভিন্ন ধারা এবং নৈতিক
অবধারণের প্রকৃতি ও প্রকার নির্দেশ করতে পারলে বিষয়টি আরো সহজ হয়। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের বিভিন্ন জনের সঙ্গে সে বিভিন্ন সম্পর্কে সম্পর্কিত। এসব সম্পর্কের
প্রকৃতি বড়ই বিচিত্র। সন্তানের সঙ্গে পিতার যে সম্পর্ক একই বয়সের অন্য ছেলে-মেয়েদের সাথে
একজন বয়স্ক লোকের সে সম্পর্ক সাধারণত গড়ে উঠে না। দু‘জন সাধারণ নর-নারীর বন্ধুত্বের সঙ্গে
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেরও রয়েছে বিস্তর তফাৎ। একইভাবে ছাত্র-শিক্ষক, ক্রেতা-বিক্রেতা, খাতকমহাজন এবং আরো যে কত রকমের সম্পর্ক রয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
বিচিত্র প্রকৃতির এসব সম্পর্ক টিকে থাকে মূলত মানুষের নিজস্ব প্রয়োজনে। কিন্তু এ ব্যাপারে
সামাজিক চাপের একটা বড় ভ‚মিকা রয়েছে। সাধারণত বিভিন্ন সম্পর্কের
ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চাপ কাজ করে। একই সম্পর্কের ক্ষেত্রে একাধিক ধরনের চাপও খুবই
প্রচলিত। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথাই ধরা যাক। স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করার ব্যাপারে স্বামীর একটা
বাধ্যবাধকতা রয়েছে যার ব্যত্যয় ঘটলে স্ত্রী বিচারকের দ্বারস্থ হতে পারেন। কিন্তু এ ধরনের আইনী
বাধ্যবাধকতার ঊর্ধ্বেও স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এমন কিছু করণীয় রয়েছে যা কোন বিচারকের পক্ষে
সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এসব ক্ষেত্রে পাড়া-প্রতিবেশীদের নিন্দা-স্তুতি ইত্যাদি আশাতীত কাজ
দেয়। খাতক-মহাজনের সম্পর্কের মধ্যেও আইনী বাধ্যবাধকতা এবং সামাজিক চাপ, এ দু’ধরনের
ব্যাপারই লক্ষণীয়। পিতা-পুত্র এবং ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের মধ্যে আবার বাধ্যবাধকতার ব্যাপারটি
তেমন প্রবলভাবে বিদ্যমান নেই, যেমন আছে সামাজিক চাপের ব্যাপারটি। পুত্রের প্রতি পিতার কিছু
করণীয় রয়েছে, যেমন রয়েছে পিতার প্রতি পুত্রের; ছাত্রের প্রতি শিক্ষকের যেমন কিছু করণীয়
রয়েছে, শিক্ষকের প্রতিও ছাত্রের রয়েছে কিছু করণীয়। এসব করণীয়কে দায়িত্ব কিংবা কর্তব্যও বলা
যেতে পারে। যার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে তার সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ লোকের সম্পর্ক বেশির ভাগ
ক্ষেত্রেই একটি কর্তব্যের সম্পর্ক, যদিও ক্ষেত্রবিশেষে এটি আইনী বাধ্যবাধকতায় গড়াতে পারে।
আইনী বাধ্যবাধকতা এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে এই যে একটা পার্থক্য দেখা যাচ্ছে তাকে আমরা
কিভাবে ব্যাখ্যা করব? সাধারণত বলা যায় যে, বাধ্যবাধকতার সম্পর্কটি মোটেই স্বতঃস্ফূর্ত নয়, এতে
অনভিপ্রেত একটা শাস্তির ভ্রæকুটি রয়েছে, দায়িত্ব বা কর্তব্যের ক্ষেত্রে যা নেই। শেষোক্ত ক্ষেত্রে মানুষ
তার আচার-আচরণে এক ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে; তবে পাড়াপ্রতিবেশীর প্রশংসা কিংবা নিন্দা
তাকে সাধারণত দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে। এর অর্থ হচ্ছে সামাজিক অনুমোদন কিংবা অননুমোদনের দ্বারাই মানুষ মূলত কর্তব্য পালনে আগ্রহী হয়।
সমাজ মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে তার অনুমোদন কিংবা অননুমোদনকে সাধারণত ভাল-মন্দ,
উচিত-অনুচিত, সঠিক-বেঠিক, সৎ-অসৎ, মূল্যবান-মূল্যহীন প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে প্রকাশ করে
থাকে। এসব শব্দাবলী এবং তাদের সংযোগে গঠিত বাক্য বা অবধারণের মাধ্যমে মানুষের যে
চিন্তা- চেতনার প্রকাশ ঘটে তাকে এককথায় বলা হয় তার মূল্যবোধ; আর মানুষের এ মূল্যবোধেরই
আরেক নাম হচ্ছে নৈতিকতা।
নৈতিকতা বিষয়ক সামাজিক চিন্তা-চেতনা যেসব অবধারণের মাধ্যমে প্রকাশ পায় তাদেরকে আমরা
এককথায় নৈতিক অবধারণ বা নীতিবাক্য বলতে পারি। এই সব নীতি-বাক্যগুলো ‘চুরি করা অন্যায়’,
‘মিথ্যা বলা ভাল নয়’ ইত্যাদি আকারে প্রতিনিয়ত আমরা ব্যবহার করি।
নৈতিক অবধারণের ভিত্তি সামাজিক হলেও এর ব্যক্তিবাদী দিকটি কিন্তু গুরুত্বহীন নয়। আচরণের
ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততা তথা স্বাধীনতাকে অন্যতম শর্ত হিসেবে নেয়ায় নৈতিকতা ব্যক্তির আত্ম-নিয়ন্তণ
তথা আত্ম-নির্দেশনাকে তার এক মৌলিক নীতি হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য। পাশ্চাত্য নীতি-দর্শনের
আদি গুরু হিসেবে পরিচিত সক্রেটিস থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালের সকল দার্শনিক এ বিষয়ের
উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে উইলিয়াম. কে. ফ্রাংকেনার বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য : “যেমন
সক্রেটিস ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং সমকালীন দার্শনিকরা জোরের সঙ্গে বলেন (হয়ত একটুবেশি),
নৈতিকতা ব্যক্তির পক্ষ থেকে যুক্তির ব্যবহার ও তার জন্য এক ধরনের স্ব-শাসনের উৎসাহ অথবা
এমনকি তাগিদ প্রদান করে থাকে। তার পরিপক্ক ও স্বাভাবিক অবস্থায় এটা তাকে নিজস্ব সিদ্ধান্ত
নিতে বলে যদিও সম্ভবত কারো উপদেশক্রমে। এটা এমনকি যে নীতি বা লক্ষ্যের আলোকে তার
সিদ্ধান্তনিতে হবে তার ব্যাপারে চিন্তা করে সিদ্ধান্তনেয়ার জন্য তাকে উদ্দীপ্ত করে। শুধু তাই নয়,
জীবনের সামাজিক বিধান হিসেবেও নৈতিকতাকে চিন্তা করা হয় এমন একটি বিষয় হিসেবে যা তার
সদস্যদের মধ্যে যৌক্তিক আত্ম-নির্দেশনা ও আত্ম-নিয়ন্তণকে লক্ষ্য হিসাবে নেয়।”
নৈতিকতার এই ব্যক্তিবাদী দিকটিকে একটি ক্রম-বিকাশমান প্রক্রিয়া হিসাবে গণ্য করা যায়।
ফ্রাংকেনা একে বর্ণনা করেছেন এভাবে :
“নৈতিকতার শুরু হয় সাংস্কৃতিকভাবে সংজ্ঞায়িত কিছু লক্ষ্য এবং এই সব লক্ষ্যের বাস্তবায়নের জন্য
যে সব নিয়ম রয়েছে সে হিসেবে। এগুলো ব্যক্তির জন্য কম বেশি বাহ্যিক, যা তার উপর চাপিয়ে
দেওয়া হয় কিংবা অভ্যাস হিসেবে যা সে লালন করে। এই লক্ষ্য ও নিয়মগুলো অন্ততঃ কতক
পরিমাণে অন্তঃস্থকৃত বা অন্তঃকৃত হতে পারে বা সাধারণত হয়। এর অর্থ হলো ব্যক্তি এগুলোকে
নিজস্ব বলে গ্রহণ করে এবং তার নিজ আচরণকে এদের দ্বারা নিয়ন্তণ করে; সে একটা ‘বিবেক’ বা
‘উচ্চতর সত্তা’ গড়ে তোলে। অন্তঃস্থকরণের এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক হতে
পারে, কিন্তু নৈতিকতার একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে তার অনুশীলনের সঙ্গে যুক্তি প্রদর্শনের অন্ততঃ
কিয়ৎ পরিমাণ প্রচেষ্টা থাকে। যেমন, আমরা যখন ঐ বয়সে পৌঁছে যখন তারা বিচারবুদ্ধি প্রদর্শনে
সক্ষম হয় তখন তাদেরকে কোন নৈতিক নির্দেশ দিলে তার সঙ্গে তার কারণও নির্দেশ করি এবং
আমরা এমনকি তাদেরকে এই ধরনের ভাবনা ভাবতেও প্ররোচিত করি যে কারণ জিজ্ঞেস করাটা একটা যথোচিত ব্যাপার।”
নৈতিকতার ব্যাপারে যুক্তিকে উৎসাহ প্রদানের ব্যাপারটি অবশ্য অনেক সময় অনেককে কোন কোন
নৈতিক প্রশ্নে সমাজের বিপক্ষে দাঁড়াতেও উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সংস্কারকদের মধ্যে এই প্রবণতাটি
বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। সকল নৈতিক সংস্কার যেহেতু পরিণামে সমাজের জন্য মঙ্গলজনক
বলেই বিবেচিত হয় সেজন্য ব্যক্তির যৌক্তিক ভ‚মিকা ব্যক্তিকে সমাজের সঙ্গে দ্ব›েদ্ব নিক্ষেপ করলেও
তা পরিণামে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিটে যায়। কিন্তু এ দ্ব›েদ্বর অন্য একটি মাত্রাও বিদ্যমান যা নিয়ে নৈতিক অবধারণের
ভিত্তি সামাজিক হলেও এর একটি ব্যক্তিবাদী
দিক রয়েছে । ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নৈতিকতার
অন্যতমশর্ত। নৈতিকতার ব্যক্তিগত
দিকটি একটি ক্রম বিকাশমান প্রক্রিয়া যা
নৈতিকতার সংগে পরিণামে যুক্তিকে সম্পৃক্ত
করে। নৈতিকতার ব্যাপারে যুক্তিকে উৎসাহ প্রদান
করায় অনেক সময় সমাজ ও ব্যক্তির মধ্যে দ্ব›দ্ব বাঁধে যা মিটানো সম্ভব। ব্যক্তির সংগে সমাজের দ্ব›েদ্বর মূল
কারণ হচ্ছে সমাজ কর্তৃক ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক নৈতিকতার স্বীকৃতি ।
ইদানিং বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। যে কারণে এসব আলোচনা তার মূলে রয়েছে সমাজ কর্তৃক ব্যক্তি
এবং কোন কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নৈতিকতার ব্যাপারে পার্থক্যকরণ। ‘পাবলিক ও
প্রাইভেট মরালিটি’ শিরোনামে এই ধরনের আলোচনার অবতারণা এখন খুবই জনপ্রিয়। বিষয়টিকে
এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়: সমাজ ব্যক্তিজীবনে এমন অনেক বিধি নিষেধ আরোপ করে যা সামষ্টিক
ব্যাপারে সে সব প্রযোজ্য বলে মনে করে না। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। নর-হত্যা
সব সমাজেই নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু সমাজ-অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠান, যেমন-
সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, এমনকি রাষ্ট্রদ্রোহী কোন গেরিলা বাহিনীও যদি কোন হত্যাকান্ড
সংঘটিত করে তাহলে সে তাকে অনৈতিক মনে করে না। তেমনি কারো সম্পত্তি জোর করে দখল
করা কোন সমাজই নৈতিক বলে বিবেচনা করে না। কিন্তু ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, অপরের দেশ
আক্রমণ ও দখল কোন কালেই অনৈতিক বিবেচিত হয়নি। অবশ্য ব্যক্তি যেমন তার নৈতিক
আচরণের জন্য কিছু যুক্তির অবতারণা করতে শিখে, তেমনি সমাজও তার বিভেদমূলক আচরণের
জন্য কিছু যুক্তি দাঁড় করায় এবং কিছু নীতির আলোকে তার সামষ্টিক নৈতিকতাকে সমর্থন করে।
নীতিগুলো অবশ্য কোন কোন ব্যক্তি কিংবা ভিন্ন সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে; কিন্তু
এটা খুব বড় সমস্যা নয়, কেননা, আমরা আগেই দেখেছি স্বাধীনতা এবং সেই সূত্রে ভিন্নমত
নৈতিকতার এক অতি প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য। আসল কথা হচ্ছে, যেখানে নৈতিকতা আছে সেখানে
নীতির একটি ব্যাপার থাকে, আর পরিস্থিতি কিংবা অন্য কোন কারণে (যেমন সংস্কারকদের চাপে)
সমাজ প্রায়শঃই এই নীতিগুলো পরিবর্তন করে থাকে। তবে এটা সমাজের জন্য স্ববিরোধিতা কিংবা
নৈতিক নমনীয়তা নয়; বরং নতুন নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তথা নৈতিকতার প্রবর্তনা মাত্র। অবশ্য
নৈতিকতার বৈশিষ্ট্যই এই যে সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে যে কেউ চ্যালেঞ্জও করতে পারে।
নৈতিকতার সঙ্গে সমাজের সম্পৃক্ততার ফলে সৃষ্ট অন্য একটি পরিস্থিতি হচ্ছে নৈতিক আপেক্ষিকবাদ।
এর অর্থ হচ্ছে সমাজে সমাজে সাংস্কৃতিক ভিন্নতার ফলে তাদের নৈতিক চিন্তা-চেতনাও ভিন্ন হতে
বাধ্য। এমতাবস্থায় নৈতিকতাকে একটি আপেক্ষিক ব্যাপার হিসেবে গণ্য করতে আমরা বাধ্য হই,
যদিও মানব জীবনে নৈতিকতার গুরুত্বের কথা বিবেচনা করলে এই ধরনের অভিধা নৈতিকতার
পক্ষে মোটেই মর্যাদাপূর্ণ মনে হয় না। এর উত্তরে এই বলা যায় যে, বিভিন্ন সমাজে নৈতিক নীতিতে
পার্থক্য থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় এই নীতিগুলো কোন না কোন সর্বজনীন নীতির অংশ হিসেবেই
কাজ করে। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আমাদের সমাজে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি সদয়
আচরণ করা একটা সুপ্রাচীন প্রথা। কিন্তু শোনা যায় এস্কিমোদের মধ্যে কিছু দিন আগেও এই প্রথা
বিদ্যমান ছিল যে, পিতা-মাতা বৃদ্ধ হলে তাদেরকে মেরে ফেলাকে তারা বেশ শুভ কাজ বলে মনে
করতো। কোন কোন আফ্রিকান গোত্রও তাদের পিতা-মাতা মরে গেলে তাদের মাংস খেয়ে ফেলাকে
নাকি খুবই পুণ্যের কাজ বলে ভাবতো। এসব কটি কাজই কিন্তু একই নৈতিক ভাবনার বিভিন্নরূপ যা
হচ্ছে পিতা-মাতা কিংবা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি সদয় আচরণের অনুক‚ল। এস্কিমোদের জীবন এমনি
কঠিন যে মানুষ তার শারীরিক শক্তি-সামর্থ হারিয়ে ফেললে তাদের দুঃখ কষ্টের সীমা থাকে না।
এমতাবস্থায় তাদেরকে হত্যা করে সে দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে এস্কিমো সমাজ তাদের প্রতি সদয়
আচরণ করে বলেই মনে করে।
আফ্রিকার অসভ্য সমাজও তার পূর্ব পুরুষদের প্রতি সদয় ব্যবহার ও সম্মান প্রদর্শনের জন্যই তাদের
মাংস ভক্ষণ করে। কেননা তারা চায় যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধরা তাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে এবং তাদেরকে ধারণ
করে তারা নিজেরাও বরকত লাভ করবে। আমাদের সমাজে যেমন কোরবাণীর গোশত বা কোন
পীরের দরগার শীরনী খাওয়াকে বরকতময় বলে মনে করা হয়, এটা অনেকটা ঐ রকম। এসব থেকে
যা প্রতিফলিত হয় তা হল নৈতিকতা সমাজের ব্যাপার, একথা বলার মাঝে একটা বিশ্ব-সমাজের নৈতিকতার সংগে সমাজের সম্পৃক্ততা পরিণামে নৈতিক আপেক্ষিকবাদের জন্ম দেয়। কিন্তু চিন্তা করলে দেখা যায় সার্বজনীনতা নৈতিকতার চ‚ড়ান্ত লক্ষ্য।
ধারণা সুপ্তভাবে সক্রিয় রয়েছে। অন্যকথায় বলা যায়, সর্বজনীনতা নৈতিকতার চ‚ড়ান্তলক্ষ্য। এ ব্যাপারে যথাস্থানে আমরা আরো বিস্তারিত আলোচনা করব।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। নৈতিকতা বলতে আপনি কী বোঝেন? উদাহরণসহ বর্ণনা করুন।
২। নৈতিক আপেক্ষিকবাদ বলতে কী বুঝায়? উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
৩। নৈতিকতার সঙ্গে সমাজ ও ব্যক্তির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। নৈতিক অবধারণের ভিত্তি
ক. রাষ্ট্রিক খ. পারিবারিক
গ. গোত্রভিত্তিক ঘ. সামাজিক
২। নৈতিকতা বিষয়ক অবধারণের প্রকৃতি
ক. বর্ণনামূলক খ. মূল্যায়নমূলক
গ. নিরপেক্ষ ঘ. সমাজ
৩। নৈতিক আচরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ
ক. স্বাধীনতা খ. বাধ্যবাধকতা
গ. স্বেচ্চাচারিতা ঘ. উপরের কোনটিই নয়।
৪। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ লোকের সম্পর্ক বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটি
ক. কর্তব্যের সম্পর্ক খ. সাধারণ সম্পর্ক
গ. আইনগত সম্পর্ক ঘ. উপরের কোনটিই নয়
৫। নৈতিক আচরণ স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায়
ক. পরিবর্তিত হতে পারে
খ. পরিবর্তিত হতে পারে না
গ. পরিবর্তন করলে শাস্তিপেতে হয়
ঘ. কিছুদিন পর পর পরিবর্তন হতে পারে।
সত্য মিথ্যা
১। আইনী বাধ্যবাধকতার ঊর্ধ্বেও স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এমন কিছু করণীয় রয়েছে কোন বিচারকের
পক্ষে যা সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়- সত্য/মিথ্যা।
২। সাধারণত বলা যায় যে, বাধ্যবাধকতার সম্পর্কটি মোটেই স্বতঃস্ফ‚র্ত নয়- সত্য/মিথ্যা।
৩। মানুষের সামাজিক সম্পর্কের আলোকেই নৈতিকতার বিষয়টি বিবেচিত হয়- সত্য/মিথ্যা।
৪। নৈতিকতার জন্য ব্যক্তির আচরণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা আবশ্যক নয়- সত্য/মিথ্যা।
৫। নৈতিকতার ব্যাপারে যুক্তি উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই- সত্য/মিথ্যা।
সঠিক উত্তর
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন: ১। ঘ ২। খ ৩। ক ৪। ক ৫। ক
সত্য/মিথ্যা: ১। সত্য ২। সত্য ৩। সত্য ৪। মিথ্যা ৫। মিথ্যা

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]