নীতিবিদ্যায় সদ্গুণের ভ‚মিকা আলোচনা করুন।

নুপপত্তি হলো ভুল বা মন্দ যুক্তি বা যুক্তিবিন্যাস। যুক্তি নানা কারণে মন্দ বা অনিখুঁত হতে
পারে। এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য মিথ্যা হলে, কিংবা অপ্রাসঙ্গিক হলে, যুক্তিবিন্যাস অবৈধ
হলে, যুক্তি প্রকাশক ভাষা অস্পষ্ট বা দ্ব্যর্থক হলে যুক্তি মন্দ হয়ে যায়। মন্দভাবে বা ভ্রান্তভাবে
যুক্তিবিন্যাস করার ধরন অগণিত হতে পারে। ফলত মন্দ বা ভুল যুক্তির সংখ্যাও অসীম। তবে
ঐ সমস্ত ভুল যুক্তিকে অনুপপত্তি বলা হয়, যেগুলো ভুল হওয়া সত্তে¡ও যথার্থ বলে প্রতীয়মান
হয়। অর্থাৎ অনুপপত্তি হলো, প্ররোচনামূলক ( ভুল যুক্তি। প্ররোচনামূলক
হওয়ার কারণে আমরা এ ধরনের যুক্তির ফাঁদে পড়তে পারি। যথার্থ বা সঠিক যুক্তিবিন্যাসের স্বার্থে তাই অনুপপত্তি সম্বন্ধে আমাদের অন্তত প্রাথমিক জ্ঞান রাখা উচিত। অনুপপত্তিকে
বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। আমরা অনুপপত্তিকে দুটি প্রধান ভাগে ফেলে আলোচনা করবো :
১। অতিসরলীকরণের অনুপপত্তি ও ২। প্রবঞ্চনামূলক অনুপপত্তি।
অতিসরলীকরণের অনুপপত্তিসমূহ
এ ধরনের অনুপপত্তিতে প্রধান বিষয়কে অতি সরলীকরণ করে ফেলা হয় এবং তাৎপর্যপূর্ণ
ঘটনাকে অগ্রাহ্য বা উপেক্ষা করা হয়। নিচে এ ধরনের কয়েকটি অনুপপত্তি নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করবো :
নিছক উক্তি
জনসাধারণ প্রায়ই ভাবে যে, তারা যদি কোনো কিছু একরকম জোরালো বা নির্দিষ্ট পদের
সাহায্যে ঘোষণা করতে পারে, তাহলে তাদের যুক্তিসমূহ বিশ্বাস জন্মাতে পারবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, “খোদা এটি বলেছেন এবং আমি এটি বিশ্বাস করি, আর এই হলো এটার শেষকথা”। এ কথাটি আসলে কিছুই প্রমাণ করে না। এটি আসলে নিছক বিশ্বাসেরই
এক ঘোষণা। দার্শনিক যুক্তি প্রদর্শনের প্রথম কথাই হলো সাক্ষ্য বা যৌক্তিক নিয়মের সাহায্যেই কেবল কোনো যুক্তি সমর্থন বা প্রমাণ করা যায়। একটি ধারণা বা বিশ্বাস বা তত্ত¡ নিছক ঘোষণা
করলাম, আর প্রত্যাশা করলাম যে, মানুষ এটিকেই খাঁটি যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করবে তাহলে তা হবে নিশ্চিতভাবে একটি অনুপপত্তি।
মিথ্যা দ্বিকত্মানুমান
মিথ্যা দ্বিকত্মানুমানকে ‘সাদা-কালো’ (নষধপশ-যিরঃব), বা ‘হয়-নতুবা’ (বরঃযবৎ-ড়ৎ)
অনুপপত্তি নামেও অভিহিত করা হয়। আমরা যদি কোনো সমস্যা বা বিষয়ের দুইয়ের অধিক
সমাধান (ংড়ষঁঃরড়হং) বা দিক (ধংঢ়বপঃং) থাকা সত্তে¡ও ধরে নেই যে, তার দুটিমাত্র আপাত
সত্য সমাধানই রয়েছে, এবং তার উপর ভিত্তি করে যুক্তিবিন্যাস করি তাহলে মিথ্যা
দ্বিকত্মানুমান অনুপপত্তির উদ্ভব ঘটে। আমরা যদি বলি বিষয়টি হয় ক নতুবা খ হবে, অথচ
তার গ, ঘ, ও ঙ হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে আমরা মিথ্যা দ্বিকত্মানুমান সৃষ্টি করবো।
‘জীববিজ্ঞান নয় অর্থনীতি পুরুষ-প্রাধান্যকে (সধষব ফড়সরহধঃরড়হ) ব্যাখ্যা করতে পারে’।
এই উক্তিটি ধারণা জন্মায় যে, দুটি মাত্র সম্ভাবনাই রয়েছে, হয় জীববিজ্ঞান পুরুষ প্রাধান্য
ব্যাখ্যা করে নতুবা অর্থনৈতিক সফলতা তা ব্যাখ্যা করে। আরও ধারণা জন্মায় যে, দ্বিতীয়
সম্ভাবনাটি, অর্থাৎ অর্থনৈতিক সফলতা হতে পারে পুরুষ প্রাধান্যের সত্যিকার ব্যাখ্যা। অথচ
আমরা জানি যে, আরও অনেক সম্ভাবনাই রয়েছে, যথা- সামাজিক প্রথা, ধর্মীয় প্রত্যয় এবং
অর্থনৈতিক ও জীবতাত্তি¡ক উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের বাস্তবতা। আলোচ্য
উক্তিটি হয় অর্থনীতি নচেৎ জীববিদ্যাকেই পুরুষ-প্রাধান্যের কারণ হিসেবে ভাবতে আমাদের প্ররোচিত করে এবং অন্যান্য সম্ভাবনাগুলোকে আমাদের দৃষ্টি থেকে সরিয়ে দেয়। আর
এভাবেই মিথ্যা দ্বিকত্মানুমানের অনুপপত্তি ঘটায়।
অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি
এরূপ অনুপপত্তির বেলায়, যুক্তিদানকারী এমন একটি অবস্থানে আঘাত হানার চেষ্টা করেন যা
মূল যুক্তির ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক এবং পাঠক বা শ্রোতার মনোযোগকে উপস্থাপিত মূল বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রয়াস পান। অন্যকথায়, সাক্ষ্য বা আশ্রয়বাক্যসমূহ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে
পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হলে অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি নামক অনুপপত্তি ঘটে। উদাহরণস্বরূপ,
অস্ত্রনিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে যুক্তি দিতে গিয়ে যদি কেউ বলেন, প্রতি বছর অস্ত্র দ্বারা যত মানুষ
নিহত হয়, তার চেয়ে বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনার কারণে নিহত হয়। তাহলে এ যুক্তি হবে
অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি। বন্দুকের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে যানবাহন ও যানবাহনজনিত দুর্ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রতি বছর বিভিন্ন কারণে মানুষ মৃত্যুবরণ করে, অস্ত্র নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত কি উচিত না, তার সাথে এসব বাস্তবতার কোনো সম্বন্ধ নেই । মূল বিষয় হলো, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা
উচিত কি উচিত না, অন্যভাবে অধিক সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করে কিনা তা এখানে দেখার > বিষয় নয়।
চক্রক যুক্তি
চক্রক যুক্তিকে ‘প্রশ্নভিক্ষা অনুপপত্তি’ -ও বলা
হয়। কারণ এ যুক্তির আশ্রয়বাক্য তার সিদ্ধান্তের মতই প্রশ্নযোগ্য। যে বিষয়টি প্রমাণ করতে
হবে তা প র্বেই প্রমাণিত বলে ধরে নিয়ে যুক্তি দিলে এই অনুপপত্তি ঘটে। অর্থাৎ সিদ্ধান্তে যা
প্রমাণ করতে হবে তাই যদি আশ্রয়বাক্যে ধরে নেয়া হয় তাহলে চক্রক যুক্তিদোষ ঘটে। কোনো
কিছু প্রমাণ না করে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তে ‘ঘুরে-ফিরে’ একই কথা বলা হয় বলেই এই
অনুপপত্তির নাম হয়েছে চক্রক যুক্তিদোষ বা অনুপপত্তি। উদাহরণস্বরূপ, কাঁচ একটি স্বচ্ছ
পদার্থ, কারণ কাঁচের মাঝ দিয়ে আমরা দেখতে পাই এটি একটি চক্রক অনুপপত্তি।
কেউ যদি বলেন, খোদার অস্তিত্ব রয়েছে, কারণ পবিত্র কোরআনে এটি বলা হয়েছে; অত:পর
অন্য কেউ যদি জিজ্ঞাসা করেন, কোরআনের সত্যতার বিষয়টি আপনি কিভাবে জানলেন,
জবাবে ঐ ব্যক্তি যদি বলেন, কোরআন তো খোদা কর্তৃক প্রত্যাদৃষ্ট, তাহলে তার যুক্তি হবে
চক্রক দোষে দুষ্ট। এখানে খোদার অস্তিত্ব কোরআনের দ্বারা এবং কোরআনের সত্যতা খোদার
অস্তিত্ব দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে। অর্থাৎ খোদার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে প্রথমে বা পূর্বেই খোদার
অস্তিত্বকে ধরে নেয়া হয়েছে। ফলে এ যুক্তিতে খোদার অস্তিত্ব যৌক্তিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।
অজ্ঞতাভিত্তিক যুক্তি বা অজ্ঞানতা দোষ
এরূপ যুক্তিতে কোনো বিষয় প্রমাণ করার চেষ্টা না করে তা অপ্রমাণ করার ভার বিপক্ষের উপর
চাপিয়ে দেয়া হয়। বিপক্ষের অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে নিজের কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়
বলে এরূপ যুক্তিকে অজ্ঞানতা দোষ বা অনুপপত্তি বলে। অজ্ঞানতাভিত্তিক যুক্তির কথা হলো,
আমরা একটি উক্তি বা বচনের সত্যতা ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করবো যতক্ষণ না আমাদের বিপক্ষ
অন্যতর কিছু অর্থাৎ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কেউই প্রমাণ করতে পারেননি
যে, ভ‚ত নেই; অতএব ভ‚ত আছে।
স্টেরিওটাইপিং
স্টেরিওটাইপ হলো এমন গতানুগতিক ধারণা, মত বা বিশ্বাস যা সচরাচর অতিসরলীকৃত বা
অতিস্ফীত হয়ে থাকে। অধিকাংশ স্টেরিওটাইপ সংস্কারের কারণে ঘটে। দল বা গোষ্ঠীগত
বিশ্বাসকে নিশ্চিত করার আকাক্সক্ষা থেকে অথবা প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যের অভাব থাকা সত্তে¡ও দ্রƒত
ও সুবিধাজনক সিদ্ধান্ত টানার আকাক্সক্ষা থেকে এসব সংস্কারের জন্ম হয়।
স্টেরিওটাইপিং নামক অনুপপত্তির তখনই উদ্ভব ঘটে যখন কেউ একটি শ্রেণী সম্বন্ধে মিথ্যা বা
অতিব্যাপক সাধারণীকরণ করেন এবং তা থেকে ঐ শ্রেণীর কোনো
সদস্যকে বিচার করার চেষ্টা করেন। উদাহরণস্বরূপ কেউ যদি ভাবেন যে, সকল মহিলা হয়
আবেগপ্রবণ, দুর্বল ও রোদনপ্রবণ, তাহলে যে-কোনো মহিলা ঐ সব চাকুরি বা কর্মের ক্ষেত্রে
অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন যেখানে মেধাবী, দৃঢ় প্রত্যয়ী ও ধীরস্থির মানুষের প্রয়োজন
রয়েছে। বস্তুত মানুষের ক্ষেত্রে ‘সকল’ কথাটি প্রয়োগের বেলায় আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত।
কোনো কিছুকে অথবা কোনো ব্যক্তিকে কোনো শ্রেণীর নিছক এক সদস্য বলে না ভেবে বরং
অমুক এক, অমুক দুই, অমুক তিন অথবা রহিম বা করিম কিংবা রাবেয়া বা রহিমা -
এরকমভাবে ভাবা উচিত। লক্ষণীয়, নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষ সম্বন্ধীয় স্টেরিওটাইপগুলো বিশেষভাবে মারাÍক: ফরাসিরা হলো মহান প্রেমিক, বাঙালি হয় হুজুগে, মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অস্থিরমতি।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। অতিসরলীকরণের অনুপপত্তিসমূহ বর্ণনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। মিথ্যা দ্বিকত্মানুমান অনুপপত্তি ব্যাখ্যা করুন।
২। অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি ব্যাখ্যা করুন।
ক) বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। যুক্তি মন্দ বা দোষযুক্ত হয় যদি
র) এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য মিথ্যা হয়
রর) এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য
অপ্রাসঙ্গিক হয়
ররর) যুক্তি প্রকাশক ভাষা অস্পষ্ট বা দ্ব্যর্থক হয়
রা) উপরের যে কোনোটি ঘটে
২। হয়-নতুবা অনুপপত্তি নামেও অভিহত
করা হয়
র) নিছক উক্তিকে
রর) অপ্রাসঙ্গিক যুক্তিকে
ররর) চক্রক যুক্তিকে
রা) মিথ্যা দ্বিকত্মানুমানকে
৩। ‘নারীরা হয় ভালবাসে না হয় ঘৃণা
করে’ এই উক্তিটি
র) নিছক উক্তি অনুপপত্তি সৃষ্টি করে
রর) মিথ্যা দ্বিকত্মানুমান সৃষ্টি করে
ররর) চক্রক দোষ সৃষ্টি করে
রা) স্টেরিওটাইপিং অনুপপত্তি সৃষ্টি করে
৪। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা উচিত নয়;
কেননা আজকের অনেক রাজনীতিবিদ
এক সময় ছাত্র নেতা ছিলেন। এ যুক্তির
ফলে
র) মিথ্যা দ্বিকত্মানুমান ঘটে
রর) চক্রক দোষ ঘটে
ররর) অপ্রাসঙ্গিক যুক্তি অনুপপত্তি ঘটে
রা) অজ্ঞানতা দোষ ঘটে
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। অনুপপত্তি হয় প্ররোচনামূলক।
২। বিশ্বাসের জোরালো ঘোষণা হলো এক প্রকার যুক্তি।
৩। আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তে ঘুরে-ফিরে একই কথা বললে চক্রক দোষ ঘটে।
৪। অপ্রাসঙ্গিক যুক্তিকে প্রশ্নভিক্ষা অনুপপত্তিও বলা হয়।
সঠিক উত্তর
ক)
১। রা) উপরের যে কোনোটি ঘটে ২। রা) মিথ্যা দ্বিকত্মানুমানকে
৩। রা) স্টেরিওটাইপিং অনুপপত্তি সৃষ্টি করে ৪। রর) চক্রক দোষ ঘটে
খ) ১। স ২। মি ৩। স ৪। মি যুক্তিতে জয় লাভের জন্য এরূপ অনুপপত্তি ধূম্রজাল’ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এসব অনুপপত্তি
সত্যতা বা যুক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত বা প্রাসঙ্গিক নয় এমন বিষয় বা জিনিসের প্রতি আবেদন
জানায়।
ব্যক্তিগত আক্রমণ বা নিন্দা দোষ
গতানুগতিক যুক্তিবিদ্যায় এই অনুপপত্তিকে বলা হয় অৎমঁসবহঃঁস ধফ ঐড়সরহবস, যার
আক্ষরিক অনুবাদ হলো, ব্যক্তির দিকে চালিত যুক্তি। এরূপ অনুপপত্তি তখনই ঘটে যখন
ঘোষিত বিষয়ের সত্যতা আক্রমণের চেষ্টা না করে বরং ঘোষণাকারীকে আক্রমণ করা হয়।
যদি কেউ যুক্তি সহকারে বলেন যে, সাবেক রাষ্ট্রপতি অমুকের কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়, কেননা
তিনি ছিলেন স্বৈরাচারী শাসক। অথবা কেউ যদি যুক্তি দিয়ে বলেন, অমুকের বক্তব্য বা প্রস্তাব
গ্রহণযোগ্য নয় বা মিথ্যা, কেননা সে হলো স্বাধীনতা-বিরোধী (বা মৌলবাদী বা কমুনিস্ট),
তাহলে তা হবে অনুপপত্তি দুষ্ট। কারণ, কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত চরিত্র, আচরণ বা অবস্থান ঐ
ব্যক্তির বক্তব্যের সত্যতা বা মিথ্যাত্বের ক্ষেত্রে অথবা ঐ ব্যক্তির যুক্তির সঠিকতা বা বেঠিকতার
ক্ষেত্রে যৌক্তিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক। আমাদের উচিত আমাদের প্রতিপক্ষের যুক্তি, তত্ত¡ বা
মতাদর্শকে আক্রমণ করা; ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে নয়।
সকলেই এটি করে অনুপপত্তি
আমাদের প্রায় সকলেই সম্ভবত এই যুক্তিটি প্রয়োগ করেছেন এবং কোনো না কোনো সময়ে
এই অনুপপত্তি ঘটিয়েছেন। আমরা যদি বলি, রাজনীতিতে মিথ্যা কথা বলা যায়, কেননা
সকলেই তা করে; অথবা ‘উপরি’ নেয়া অন্যায় নয়, কেননা সকলেই তা নেয়; অথবা
প্রত্যেকেই জানে যে, সকল মৌলবাদী হয় সন্ত্রাসী, তাহলে তা হবে অনুপপত্তি দুষ্ট। প্রত্যেকেই
বা অধিকাংশ মানুষই বা সকলেই কোনো কিছু করলে বা জানলে তা যথার্থ বা ন্যায্য হয়ে যায়
না। ১৪৯২ সালের আগে অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করতো যে, পৃথিবী হলো সমতল। কিন্তু
এই বিশ্বাস বা মতামত সত্য বা বাস্তব অবস্থার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
কৃপা উদ্রেক দোষ
কৃপা উদ্রেক দোষ তখনই ঘটে যখন পোষিত বা
গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার স্বার্থে দয়া বা কৃপার আবেদন করা হয়। এরূপ যুক্তির ক্ষেত্রে প্রার্থিত
দয়া বা ভাবপ্রবণতা যুক্তিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং প্রতিপক্ষ বা পাঠক বা শ্রোতাকে
প্রাসঙ্গিক ঘটনা থেকে সরিয়ে দেয়। নিচের যুক্তিটি কৃপা উদ্রেক দোষে দুষ্ট।
আমার সন্তানদের পিতামাতা বলতে আমি একাই, আমিই কেবল তাদের আর্থিক দায়ভারের
জন্য দায়ী।
তুমি যদি এই ট্রাফিক টিকিট আমাকে দাও, তাহলে আমি আমার লাইসেন্সটি হারাবো এবং
কাজের জন্য গাড়ি চালাতে পারবো না।
আমি যদি কাজ করতে না পারি, সন্তানাদিসহ আমি গৃহহীন হয়ে পড়বো এবং ক্ষুধায় মরে যেতে পারি।
সুতরাং আমাকে এই ট্রাফিক টিকিট দেয়া তোমার উচিত নয়।
এরূপ যুক্তির ব্যবহার সচরাচর আদালতে ঘটতে দেখা যায়। আইনজীবী যখন মামলার
ঘটনাকে উপেক্ষা করার নিমিত্তে এবং তার মক্কেলকে খালাস করার জন্য বিচারকদের মাঝে
দয়া বা কৃপা জাগাতে প্রয়াস পান তখন এরূপ অনুপপত্তি ঘটে।
আবেগ উদ্দীপক দোষ
এই অনুপপত্তিটি গ্যালারীর প্রতি আবেদন বা জনতার প্রতি আবেদন নামেও পরিচিত। এ
ধরনের অনুপপত্তি তখনই ঘটায় যখন আমরা একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রতি আবেদন জানিয়ে
কোনো ঘোষণা বা দাবির স্বীকৃতি লাভের চেষ্টা করি। এরূপ অনুপপত্তির ক্ষেত্রে প্রায়শ
আবেগধর্মী ভাষা ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ,
“পর্ণোগ্রাফী অবশ্যই নিষিদ্ধ করা উচিত। এটি হলো মহিলাদের প্রতি হিংস্রতা।”
“হাজার বছর ধরে মানুষ যীশুখ্রিস্ট ও বাইবেলে বিশ্বাস করে আস্ছে। এই বিশ্বাসের একটি
প্রবল প্রভাব রয়েছে ঐ সমস্ত বিশ্বাসী মানুষদের জীবনে। যীশুখ্রিস্ট ছিলেন ঈশ্বরেরই পুত্র - এর
সমর্থনে তুমি আর কি সাক্ষ্য চাও? তুমি কি ঐ সমস্ত মানুষদের বলতে চাচ্ছ যে, তারা সকলেই
বোকা এবং ভুলের মধ্যে আছে?”
অর্থের পরিবর্তন অনুপপত্তি
কোনো যুক্তি-প্রক্রিয়ার মধ্যে মৌল পদ -এর অর্থের পরিবর্তন ঘটালে এই
অনুপপত্তি ঘটে। উদাহরণস্বরূপ কেউ যদি বলেন যে, যেহেতু যীশুখ্রিস্ট বলেছিলেন, “আমি
যেমনটি তোমাকে ভালবাসি সেভাবে তোমরা একে অপরকে ভালবাসিও” সেহেতু তিনি বিয়ের
মধ্যে বা বাইরে যে কোনো প্রকার অসমকামী বা সমকামী ক্রিয়াকলাপকে মার্জনা করেন,
তাহলে তা ‘ভালবাসা’ শব্দটির সংজ্ঞার পরিবর্তন ঘটাবে। যীশুখ্রিস্ট সম্ভবত পদটিকে
আধ্যাত্মিকতা, বন্ধুত্ব ও প্রযতেœর অর্থে ব্যবহার করেছিলেন। অবশ্য, এরূপ অর্থ যে যৌনতা
সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে আলোচিত পদটির ব্যবহারের বেলায় আবশ্যকীয়ভাবে অনুপস্থিত থাকে
এমন নয়। তবে এ থেকে অনুসৃত হয় না যে, তিনি অবৈধ অসমকামী বা সমকামী সম্বন্ধতা বা
ক্রিয়াকলাপকে মার্জনা করেছিলেন। কেননা তিনি মানুষদের একে অপরকে ভালবাসতে
বলেছিলেন। যদি যুক্তি দিয়ে বলা হয় যে, তিনি এমনটিই করেছিলেন (অর্থাৎ মার্জনা
করেছিলেন) তাহলে তা হবে ‘ভালবাসা’ শব্দটির অর্থের পরিবর্তনসাধন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। প্রতারণামূলক অনুপপত্তিসমূহ বর্ণনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। কৃপা উদ্রেগ অনুপপত্তি ও আবেগ উদ্দীপক অনুপপত্তির পার্থক্য নির্দেশ করুন।
২। অর্থের পরিবর্তন অনুপপত্তি ব্যাখ্যা করুন।
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। যুক্তিকে আক্রমণ না করে যুক্তিদাতাকে আক্রমণ করলে
র) আবেগ উদ্দীপক অনুপপত্তি ঘটে
রর) অর্থের পরিবর্তন অনুপপত্তি ঘটে
ররর) নিন্দা দোষ ঘটে
রা) কৃপা উদ্রেক দোষ ঘটে
২। যদি বলা হয় প্রত্যেকেই জানে যে, সকল নাস্তিক হয় কম্যুনিস্ট তাহলে তা হবে
র) নিন্দা অনুপপত্তি
রর) অজ্ঞানতা অনুপপত্তি
ররর) স্টেরিওটাইপিং অনুপপত্তি
রা) সকলেই এটি করে অনুপপত্তি
৩। “আমি আমার মাতা-পিতাকে কুড়াল দ্বারা হত্যা করি! দয়া করে আমাকে দোষী সাব্যস্ত
করবেন না, এতিম হওয়ার কারণে আমি যথেষ্ট যন্ত্রণাভোগ করছি”। এটি একটি
র) নিছক উক্তি অনুপপত্তি
রর) আবেগ উদ্দীপক অনুপপত্তি
ররর) অজ্ঞানতা অনুপপত্তি
রা) কৃপা উদ্রেক দোষ
৪। ইন্টারন্যাশনাল লাক্স হলো তারকাদের পছন্দের সাবান, সুতরাং আপনিও এটি ব্যবহার
করুন। -এটি একটি
র) কৃপা উদ্রেক দোষ
রর) নিছক উক্তি অনুপপত্তি
ররর) আবেগ উদ্দীপক অনুপপত্তি
রা) সকলেই এটি করে অনুপপত্তি
সঠিক উত্তর
ক)
১। ররর) নিন্দা দোষ ঘটে
২। রা) সকলেই এটি করে অনুপপত্তি
৩। রা) কৃপা উদ্রেক দোষ
৪। ররর) আবেগ উদ্দীপক অনুপপত্তি জ, নৈতিকতা এবং নৈতিক অবধারণ সম্পর্কে পূর্বোক্ত পাঠের আলোচনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট তা
হচ্ছে, নৈতিকতা মানব জীবনের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সম্পর্কে মানুষ চিন্তা না করে পারে
না। তবে সাধারণ মানুষের চিন্তার বৈশিষ্ট্য এই যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সে যেকোন বিষয়কে বাস্তব
দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। নৈতিকতার ক্ষেত্রেও তার এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। নৈতিক
নিয়মগুলো সে পালন করতে পারছে কি পারছে না মানুষ এ চিন্তাই বেশি করে। সমাজপতিরাও
নৈতিক নিয়মগুলো লোকেরা কতটুকু পালন করছে তা নিয়েই চিন্তায় থাকেন। নৈতিকতাকে বুঝার
চেষ্টা তাঁরা কমই করেন। সুপ্রাচীনকাল থেকে দার্শনিকরা এ কাজটি করে আসছেন। এ ব্যাপারে
তাঁদের ভাবনা-চিন্তাই নীতিবিদ্যা হিসেবে পরিচিত। সুতরাং আমরা বলতে পারি নীতিবিদ্যা হচ্ছে
মানুষের নৈতিকতাকে বুঝার এক দার্শনিক প্রচেষ্টা। এজন্য একে নীতি-দর্শনও বলা হয়। আমরা
নি¤েœকয়েকজন দার্শনিকপ্রদত্ত নীতিবিদ্যার সংজ্ঞা উদ্ধৃত করছি:
নীতিবিদ্যার কিছু প্রচলিত সংজ্ঞা
উইলিয়াম. কে. ফ্রাংকেনার মতে নীতিবিদ্যা হচ্ছে, “নৈতিকতা, নৈতিক সমস্যা এবং নৈতিক
অবধারণ সম্পর্কিত দার্শনিক চিন্তা”।
পি. ডবিøও. টেইলার নীতিবিদ্যাকে বলেছেন,
“নৈতিকতার প্রকৃতি এবং ভিত্তি সম্পর্কে দার্শনিক অনুসন্ধান।”
ডি.ডি. রাফায়েলের মতে, “আদর্শ বা মূল্য সম্পর্কে, যথোচিত-অযথোচিত এবং শুভ-অশুভের ধারণা
সম্পর্কে অথবা কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয় সে সম্পর্কে দার্শনিক অনুসন্ধান হচ্ছে
নীতিদর্শন”।
জে.এস. ম্যাকেনজি নীতিবিদ্যাকে এমন একটি বিদ্যা হিসেবে গণ্য করেছেন যা মানুষের আচরণের
যথোচিত্য বা ভালত্ব নিয়ে আলোচনা করে। তাঁর ভাষায় “এ হচ্ছে আচরণের সাধারণ মতবাদ এবং নৈতিকতা সম্পর্কে দার্শনিকদের চিন্তা ভাবনাই নীতিবিদ্যা হিসোবে পরিচিত। মানুষকে তাদের যথোচিত্য ও অ-যথোচিত্য এবং তাদের শুভ বা অশুভের প্রবণতার নিরিখে বিবেচনা
করে”।
বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে উইলিয়াম লিলি জে.এস. ম্যাকেনজি-এর ন্যায় একই ধরনের বক্তব্য
রেখেছেন। তাঁর মতে নীতিবিদ্যা হচ্ছে, “সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণের একটি আদর্শনিষ্ঠ
বিজ্ঞান যা যথোচিত-অযথোচিত, ভাল-মন্দ কিংবা অনুরূপ পার্থক্যের ভিত্তিতে আচরণের বিচার
করে”।
নীতিবিদ্যার পরিসর
পূর্বোক্ত পাঠ আলোচনায় এবং উপরে নীতিবিদ্যার যে কটি সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেগুলো থেকে
নীতিবিদ্যার পরিসর সম্পর্কে আমরা সহজেই ধারণা করতে পারি। সামাজিক মানুষের আচরণই মূলত
আলোচনার বিষয়বস্তু। তবে সব আচরণ এর অন্তর্ভুক্ত নয়। পূর্বের আলোচনায় এ বিষয়টির প্রতি
আমাদের কিছুটা ইঙ্গিত রয়েছে। তবে সেখানে আইনী বাধ্যবাধকতার বিপরীতে বিষয়টিকে
উপস্থাপন করা হয়েছে। বাস্তবে অন্য ধরনের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে যেখানে আমাদের আচরণের
অনৈচ্ছিকতা প্রকাশ পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসীদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছিল তার
মাঝে, অন্যকে ‘অনৈচ্ছিক’ আচরণে বাধ্য করার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। যেমন বলা হয়, নাৎসীরা
ইহুদীদেরকে নিধনের জন্য অপরাপর জাতির বন্দীদেরকে হুকুম করতো। বলা হতো, যদি তারা তা
না করে তবে তাদেরকেই নিধন করা হবে। বাধ্য হয়ে ঐ সব বন্দীরা নাৎসীদের হুকুম অনুযায়ীই
কাজ করতো। তাদের এই কাজ নৈতিকতা তথা নীতিবিদ্যার আওতায় পড়ে না।
উইলিয়াম লিলি নীতিবিদ্যাকে “আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান” বলে এর পরিসরকে সুনির্দিষ্ট করতে চেয়েছেন।
বিজ্ঞানের বিষয়টি আমরা একটু পরে আলোচনা করব। এর আদর্শনিষ্ঠ পরিচয় সম্পর্কে সংজ্ঞাটি বলা
যায় যে, এ নীতিবিদ্যার পরিসরকে অনাকাি ক্ষতরূপে সংকীর্ণ করে ফেলে। একজন দার্শনিক যখন
আমাদের আচরণের ঔচিত্য-অনৌচিত্য নিয়ে চিন্তা করেন তখন তিনি শুধু কোন একটি আদর্শ বা
মানদন্ডের আলোকেই আমাদের আচরণকে বিচার করেন না; আচরণটির সূত্র, এর ভিত্তি এবং বাস্তবে
এর প্রয়োগ এসব কিছুই তার বিবেচনায় আসতে পারে। নৈতিক আচরণকে ব্যাখ্যার জন্য যে নৈতিক
অবধারণ ব্যবহৃত হয় তার এবং তার অন্তুর্গত নৈতিক পদগুলোর ভাষাতাত্তি¡ক দিক নিয়েও জটিল
আলোচনায় তিনি মেতে উঠতে পারেন, আর তা নৈতিকতাকে বুঝতে প্রভ‚ত পরিমাণে সাহায্য করতে
পারে। এই সব বিবেচনায় নীতিবিদ্যার আরো কটি ধারা বা ধরনের কথা আমরা চিন্তা করতে পারি।
এ সম্পর্কে একটু পরেই আমরা আলোচনা করব। এর আগে সমকালে নীতিবিদ্যার প্রায়োগিক
দিকটির যে বিকাশ ঘটে চলেছে তার আলোকে এর পরিসর সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গের
অবতারণা করতে হয়। প্রসঙ্গটাকে এভাবে উত্থাপন করা যায়:
নৈতিকতার বিষয়বস্তু যদি হয় সমাজে বসবাসরত মানুষের আচরণ তাহলে এটা স্পষ্ট যে, সমাজেরই
অংশ অন্য মানুষের প্রতিই তার কেবল দায়দায়িত্ব রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। পারিভাষিক দিক
থেকে বললে বলতে হয়, নৈতিকতার ক্ষেত্রে সক্রিয় অংশীদার এবং নিষ্ক্রিয়
অংশীদার ) এই দু’জনেরই প্রয়োজন হয় যারা সমাজেরই বাসিন্দা। সক্রিয় অংশীদার সম্পর্কে প্রচলিত নীতিবিদ্যায় যা বলা হয় সে সম্পর্কে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই, কিন্তু নিষ্ক্রিয় অংশীদার সম্পর্কে যথেষ্ট চিন্তার অবকাশ আছে। তাকে কি একজন মানুষই হতে হবে? মনুষ্য সামাজিক মানুষের অনৈচ্ছিক আচরণ নীতিবিদ্যার আওতায় পড়ে না।
পদবাচ্য নয় এমন কিছু কি নিষ্ক্রিয় অংশীদার হিসেবে মানুষের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না?
নীতিবিদ্যার আওতায় অধুনা যে দুটি অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা এই প্রশ্নকে
অত্যাবশ্যকীয় করে তুলেছে। বিষয় দুটি হচ্ছে : মনুষ্যেতর প্রাণীদের অধিকার এবং পরিবেশ
সংরক্ষণে মানুষের দায়িত্ব।
দুটি বিষয়ই নৈতিকতার পরিসরকে সমাজের বাইরে নিয়ে যায়। অবশ্য অনেকে যুক্তি প্রদর্শন করতে
পারেন যে, এই নব্য নৈতিক চিন্তার মূলে যে ভাবনা কাজ করে তা সমাজকে ছাড়িয়ে যায় না এই
অর্থে যে, প্রকৃতির কাজে বিঘœ সৃষ্টি করলে পরিণামে তা মানুষের জন্য অমঙ্গল ডেকে আনে; এ
অমঙ্গলের ভয় থেকে মনুষ্য সমাজকে রক্ষা করার জন্যই মানুষ প্রকৃতি সংরক্ষণের তত্ত¡ প্রচার করে।
একইভাবে বলা যায়, প্রাণীকুলের নির্বিচার হত্যার ফলে প্রাণী জগতের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং
অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেখা গেছে যে, এটা মানুষের স্বার্থের অনুক‚ল নয়। কিন্তু নৈতিকতার ক্ষেত্রে
স্বার্থের এত উলঙ্গ প্রকাশ এর বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে বেশ কঠিন প্রশ্নের অবতারণা করতে পারে।
আমাদেরকে তাই অধিকতর গ্রহণযোগ্য যুক্তি অন্বেষণ করতে হবে। একটি সহজ যুক্তি হলো: (১)
মানুষ আবেগ অনুভ‚তি সম্পন্ন প্রাণী। সমাজভুক্ত মানুষের সঙ্গে কোন না কোন দিক থেকে মিল
রয়েছে তেমন কিছুর সঙ্গে যখন আমরা পরিচিত হই তখনও তাদের সঙ্গে মানুষের মত ব্যবহার করার
একটা মনস্তাত্তি¡ক তাগিদ আমরা অনুভব করি। প্রাণীদের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে সত্য। কিন্তু
প্রকৃতির ক্ষেত্রে এই ব্যাখ্যা খাটে না। এ ব্যাপারে একটা ভিন্ন, কিন্তু অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা
আমরা দিতে পারি যা হচ্ছে, (২) আমরা যখন সমাজে থেকে নৈতিক জীবন যাপন করি তখন
স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে কিছু সদ্গুণ গড়ে উঠে যাদেরকে আমরা সবিশেষ নৈতিক মূল্য দিয়ে
থাকি। সংগত কারণেই যখন আমরা এমন পরিস্থিতিতে উপনীত হই যেখানে আমাদেরকে সমাজের
বাইরের কোন সত্তা বা অবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে হয়, তখন আমরা আমাদের অর্জিত সদ্গুণ
অনুযায়ী কাজ করাকেই উচিত বলে মনে করি (এটি এক অর্থে নৈতিকতার সম্প্রসারণ হলেও এর
ভিত্তিটি সামাজিকই থেকে যায়।)। এই দিক থেকে সদ্গুণের আলোচনাও নীতিবিদ্যার এক
অত্যাবশ্যকীয় অংশ বলে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। নৈতিক অবধারণের প্রকৃতি ব্যাখ্যার সময় সদগুণ সম্পর্কে আমরা আরো কিছু জানার চেষ্টা করব। মানুষ ছাড়া যেসব নিষ্ক্রিয় অংশীদার রয়েছে তারা নৈতিকতার অন্তর্ভুক্ত এই অর্থে যে তারা মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে, এমন ভাবা ঠিক নয়।
১। নীতিবিদ্যার সংজ্ঞা দিন। এর পরিসর বর্ণনা করুন।
২। মনুষ্যেতর প্রাণীদের অধিকার এবং পরিবেশ সংরক্ষণে মানুষের দায়িত্বের বিষয়টি নীতিবিদ্যার
দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করুন।
৩। নীতিবিদ্যায় সদ্গুণের ভ‚মিকা আলোচনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। উইলিয়াম লিলির মতে নীতিবিদ্যা
ক. বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান খ. আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান
গ. আদর্শনিষ্ঠ কলা ঘ. উপরের কোনটিই নয়
২। নীতিবিদ্যার আলোচনার বিষয় মানুষের
ক. আচরণ খ. সংস্কৃতি
গ. ধর্ম ঘ. কোনটিই নয়
৩। নৈতিক জীবন যাপন করলে আমাদের মধ্যে কিছু
ক. সদ্গুণ গড়ে ওঠে খ. অসদ্গুণ গড়ে ওঠে
গ. বৈরী আচরণ প্রকাশ পায় ঘ. উপরের কোনটিই ঠিক নয়
৪। নাৎসীরা মানুষকে
ক. অনৈচ্ছিক আচরণে বাধ্য করেছিল খ. স্বাধীনতা দিয়ে ছিল
গ. বন্দী করে রেখেছিল ঘ. মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিল
৫। নীতিবিদ্যায় প্রায়োগিক দিকটির বিকাশ লক্ষ্য করা যায়
ক. সমকালে খ. আধুনিককালে
গ. প্রাচীনকালে ঘ. উপরের সবগুলি
সত্য/মিথ্যা
১। নৈতিকতা সম্পর্কে মানুষ চিন্তা না করে পারে না - সত্য/মিথ্যা।
২। সামাজিক মানুষের সকল আচরণই নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়- সত্য/মিথ্যা।
৩। লিলি নীতিবিদ্যাকে “আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান” বলেছেন- সত্য/মিথ্যা।
৪। পারিভাষিক দিক থেকে নৈতিকতার ক্ষেত্রে সক্রিয় অংশীদার এবং নিষ্ক্রিয় অংশীদার দুই-ই
বর্তমান- সত্য/মিথ্যা।
৫। পরিবেশ সংরক্ষণে মানুষের দায়িত্বের বিষয়টি নৈতিকতার ক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়- সত্য/মিথ্যা।
সঠিক উত্তর
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন : ১। খ ২। ক ৩। ক ৪। ক ৫। ক
সত্য/মিথ্যা : ১। সত্য ২। সত্য ৩। সত্য ৪। সত্য ৫। মিথ্যা

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]