সদ্গুণ ক? নৈতিক অবধারণের সাথে সদ্গুণের সম্পর্ক আলোচনা করুন।

, নৈতিকতা কতগুলো নৈতিক অবধারণের মাধ্যমে প্রকাশ
পায়। এ থেকেই বুঝা যায়, নীতিবিদ্যা সম্পর্কিত আলোচনায় নৈতিক অবধারণের গুরুত্ব কত। একে
অনেকে মূল্যবোধক অবধারণ, আদর্শমূলক অবধারণ ও বলে থাকেন। ভাষার এ ভিন্নতা সত্তে¡ও সবাই এ ব্যাপারে একমত যে নৈতিক
অবধারণে আমরা নৈতিক আচরণ বা আচরণকারীর ওপর কোন নৈতিক গুণ, বাধ্যবাধকতা, দায়িত্ব
ইত্যাদি অথবা ইত্যাদির অভাব আরোপ করি। কেউ কেউ এই সব অবধারণের পিছনে যুক্তি রয়েছে
কিংবা তাদের পক্ষে যুক্তি দেয়া সম্ভব এমন ধারণাও পোষণ করেন। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে
অনেক নীতি দার্শনিক নীতিবিদ্যায় যুক্তিবিদ্যার ভ‚মিকা প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন। যাকে ডিওনটিক
লজিক বলা হয় তা এ চিন্তারই ফসল।
এটা খুবই প্রচলিত ধারণা যে, নৈতিক অবধারণের সঙ্গে এমন এক ধরনের অনুভ‚তির যোগাযোগ
রয়েছে যা আমাদেরকে নৈতিক কাজে উৎসাহ যোগায়। যেমন যখন আমি বলি যে, কাজটি ভাল
তখন এ জাতীয় কাজ করার জন্য আমি নিজেও উদ্যোগী হই (সুযোগ এলে)। আরেকটা অতিরিক্ত
ব্যাপার যা নৈতিক অবধারণের সঙ্গে যুক্ত থাকে তা হচ্ছে, প্রশংসা-নিন্দা বা কাউকে দায়ী করার
একটা প্রবণতা। যেমন আমি যদি বলি, লোকটি খারাপ কাজ করেছে, তাহলে তার সঙ্গে লোকটিকে
আমি যে প্রচ্ছন্নভাবে নিন্দা করছি তা বুঝা যায়।
নৈতিক অবধারণের আর একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এ কিছু নীতি, আদর্শ বা সদ্গুণের সঙ্গে যুক্ত।
নীতি ও আর্দ্শ সম্পর্কে আমরা এই পুস্তকের পরবর্তী পাঠগুলো থেকে এমনিতেই বেশ ধারণা পাব।
এখানে সদগুণ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হলো।
নৈতিক অবধারণ ও সদ্গুণ
সদ্গুণ নৈতিক অবধারণের প্রয়োজনীয় দিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আমরা যখন বলি ‘লোকটি ভাল’ তখন
আমরা লোকটির চরিত্রে এমন কিছু বাস্তব লক্ষণের উপস্থিতি নির্দেশ করি যা আমরা সবাই অনুমোদন
করি এবং যার প্রশংসা করি। যখন আমরা তাকে খারাপ বলি তখন বিপরীত কিছু লক্ষণের কথা চিন্তা
করি। প্রথমোক্ত লক্ষণগুলোকে আমরা সদ্গুণ বলি, আর শেষোক্ত লক্ষণগুলোকে বলি অসদ্গুণ। সত্যি বলতে কি নৈতিক জীবনের প্রত্যক্ষ লক্ষ্য হচ্ছে সদ্গুণ অর্জন করা।
ইংরেজিতে যাকে বলে বাংলায় তাকেই আমরা সদ্গুণ বলি। শব্দটির আভিধানিক
অর্থ হচ্ছে বা উৎকর্ষতা। এই হিসেবে মানুষের চরিত্রের যে সব লক্ষণগুলো তার
চরিত্রের উৎকর্ষতা প্রমাণ করে তাদেরকেই সদ্গুণ বলা হয়। অ্যারিস্টটলের মতে এই সদ্গুণগুলো
অভ্যাসের মাধ্যমে অর্জিত হয় এবং কম বেশি স্থায়ী মেজাজের রূপ নেয়। তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক সদ্গুণ
এবং নৈতিক সদগুণের মধ্যে পার্থক্য করেছিলেন। নৈতিক সদ্গুণের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই
যে, সময় এবং সমাজভেদে এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ভিন্ন হতে পারে। তদ্সত্তে¡ও বলা যায়, কিছু কিছু
সদ্গুণ প্রায় সর্বকালে এবং সর্বদেশেই আদৃত, যেমন ন্যায়, সততা, সত্যবাদিতা, ইত্যাদি।
প্লেটো ৪টি প্রধান সদ্গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে : প্রজ্ঞা,
সাহস, মিতাচার ও ন্যায়। এদের মধ্যে ন্যায়কেই তিনি রাষ্ট্র ও ব্যক্তি উভয়ের ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ
অত্যাবশ্যকীয় সদ্গুণরূপে অভিহিত করেন। তবে ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের মধ্যে যখন অন্য তিনটি সদ্গুণের
অস্তিত্ব থাকে তখনই ন্যায়রূপ সদ্গুণের অভ্যুদয় ঘটে। অ্যারিস্টটল তাঁর বিখ্যাত পুস্তক
‘নিকোমেকীয়ান এথিক্স্’ এ সদ্গুণ উদ্ভবের কারণ হিসেবে জীবনে মধ্যপথ অবলম্বনের ওপর জোর
দেন। এটা স্পষ্ট যে, এই নীতি গ্রহণ করলে মানুষের মধ্যে যে সদ্গুণের সৃষ্টি হয় তা মানুষ ছাড়াও
অন্যান্য সকল কিছুর বেলায়ই সকল কাজকর্মে একজন ব্যক্তিকে একই নীতি অনুসরণ করে একটি
ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন করতে অনুপ্রাণিত করে। আর এভাবেই মনুষ্য-সমাজের বাইরেও
নৈতিকতা বিস্তৃত হয়।
মধ্যযুগে খ্রিস্টীয় প্রভাবে এমন কিছু সদগুণের ওপর জোর দেয়া হতো যা গ্রিক দর্শনে প্রায়
অনুপস্থিত। যেমন, প্রেম, বিনয়, নম্রতা, দয়ার্দ্রতা ইত্যাদি। সুফী ধারার ইসলাম এর সঙ্গে আরো
যেসব সদ্গুণ যোগ করে তা হচ্ছে ধৈয্য, একাগ্রতা, খোদা-ভীওæতা এবং আরো কিছু পরকালমুখী
গুণাবলী। তবে নৈতিক দিক থেকে দেখলে বলা চলে, সদ্গুণের ব্যাপারে ইসলাম একটা সমন্বয়ধর্মী
মনোভাব পোষণ করে এবং অ্যারিস্টটলের মধ্যপন্থারই সমর্থক।
আধুনিককালে পরমত সহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক মানসিকতা, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা, পারস্পরিক
সহযোগিতা ইত্যাদিকে সদগুণ হিসেবে সর্বাধিক মূল্য দেয়া হয়। এই সব সদ্গুণকে উৎসাহিত করার
কারণে আজকাল বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানের বহু বিবৃতিই নৈতিক অবধারণের রূপ নিয়েছে। ফলে
নীতিবিদ্যার সঙ্গে এদের ঘনিষ্ঠতা বেশ বেড়েছে।
নৈতিক অবধারণের প্রকার
নৈতিক অবধারণ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। বিশেষ ও সাধারণ নৈতিক
অবধারণ খুবই পরিচিত কথা। যখন বলা হয়, “তোমার বিপন্ন লোকটিকে সাহায্য করা উচিত” এবং
যখন শুধু বলা হয়, “বিপন্ন লোককে সাহায্য করা উচিত” তখন এ দু‘ধরনের অবধারণের পার্থক্য
আমাদের কাছে স্পষ্ট ধরা পড়ে। নৈতিক নীতিগুলো সাধারণ নৈতিক অবধারণ হিসেবে বিশেষভাবে
পরিচিত। এই ভিন্নতা ছাড়াও পুরুষ এবং কাল ভেদে বিভিন্ন ধরনের নৈতিক
অবধারণ হতে পারে। কিন্তু এই ধরনের শ্রেণীকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ যে দু‘ধরনের
নৈতিক অবধারণ রয়েছে তাদেরকে বলা যেতে পারে : (১) বাধ্যতামূলক নৈতিক অবধারণ ।
প্লেটো চারটি প্রধান সদগুণের কথা বলেছিলেন। অ্যারিস্টটল মধ্যপন্থাকে সদ্গুণ উদ্ভবের কারণ বলেছিলেন। মধ্যযুগে ধর্মভিত্তিক সদ্গুণের ওপর জোর দেয়া হতো। আধুনিককালে ধর্মনিরপেক্ষ সদ্গুণের ওপর জোর দেয়া হয়। দু’ধরনের নৈতিক অবধারণ নৈতিক দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাধ্যতামূলক নৈতিক অবধারণ কোন কাজ সম্পর্কে হয়।
বাধ্যতামূলক অবধারণ বলতে বুঝায়, ঐসব অবধারণ যাতে কোন বিশেষ কাজকে আমরা
নৈতিকভাবে যথোচিত, অযথোচিত, বাধ্যতামূলক, কর্তব্য ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করি; অথবা তা
করা উচিত কি অনুচিত তা বলি।
নৈতিক মূল্যবোধক অবধারণে আমরা কোন কাজ সম্পর্কে কথা বলি না, বরং কোন ব্যক্তি অথবা তার
প্রেষণা, অভিপ্রায়, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সম্পর্কে কথা বলি এবং আমরা যা বলি তাতে যে
শব্দগুলি ব্যবহার করি তা হচ্ছে নৈতিকভাবে ভাল-মন্দ, সৎ বা অসৎ গুণ সম্পন্ন, দায়িত্বপূর্ণ,
নিন্দার্হ, সাধুসুলভ, ঘৃণ্য ইত্যাদি। নি¤েœদু‘ধরনের অবধারণেরই কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি:
বাধ্যতামূলক নৈতিক অবধারণ বিশেষ
১. আমার উচিত ছিল তোমাকে সাহায্য করা।
২. যথোচিত হতো যদি তুমি সত্য কথা বলতে।
৩. সে যা করেছে তা অযথোচিত।
সাধারণ
১. প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত।
২. চুরি করা অন্যায়।
৩. সকলেরই অধিকার রয়েছে কথা বলার।
মূল্যবোধক নৈতিক অবধারণ
বিশেষ
১. তিনি একজন ভাল লোক।
২. তাঁর উদ্দেশ্য ভাল ছিল।
৩. তিনি উন্নত চরিত্রের অধিকারী।
সাধারণ
১. দয়া একটি বড় সদ্গুণ।
২. কাউকে ঘৃণা করা মন্দ কাজ।
৩. ভাল মানুষ অন্যের কুৎসা গায়না।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে বাধ্যতামূলক এবং মূল্যবোধক অবধারণে যেসব শব্দ ব্যবহৃত
হয়েছে সেগুলো নৈতিক প্রেক্ষিত ছাড়াও ব্যবহার করা যায়। তবে নৈতিকতাকে বুঝতে হলে এই সব
শব্দের ঐ ধরনের ব্যবহারের প্রকৃতি বোঝা অনেক সময় দরকার হয়ে পড়ে। সমকালীন অনেক
দার্শনিকের লেখায় দেখা গেছে যে, তাঁরা প্রথমে উপর্যুক্ত শব্দগুলোর নৈতিকতা-নিরপেক্ষ ব্যবহার
ব্যাখ্যা করেছেন এবং এরপর নৈতিক প্রেক্ষিত থেকে তাদের চরিত্র উদ্ঘাটন করেছেন। এ কারণে
এখানে নৈতিকতা-নিরপেক্ষ বাধ্যতামূলক অবধারণ এবং মূল্যবোধক অবধারণের কিছু উদাহরণ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
বিশেষ
১. তোমার এভাবে চাল দেয়া (দাবার) উচিত হয়নি।
২. আকরাম ঠিক বল করেনি।
সাধারণ
১. নৌকা বানাতে ভাল কাঠ ব্যবহার করা উচিত।
২. সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্তনেয়া সঠিক কাজ।
নৈতিকা-নিরপেক্ষ মূল্যবোধক অবধারণ
বিশেষ
১. রহিম একজন ভাল খেলোয়ার।
২. তাঁর জীবনটি খুব ভাল কাটেনি।
সাধারণ:
১. তাড়াহুড়া করলে ভাল ফল করা যায় না।
২. গণতান্তিক সরকারই উত্তম সরকার।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। নৈতিক অবধারণের প্রকৃতি সবিস্তারে আলোচনা করুন।
২। সদ্গুণ ক? নৈতিক অবধারণের সাথে সদ্গুণের সম্পর্ক আলোচনা করুন।
৩। বিভিন্ন প্রকার নৈতিক অবধারণ উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। প্লেটো সদ্গুণের কথা বলেছেন
ক. দুইটি খ. চারটি
গ. তিনটি ঘ. নয়টি
২। “নিকোমেকীয়ান এথিক্স” লিখেছেন
ক. প্লেটো খ. সক্রেটিস
গ. রাসেল ঘ. অ্যারিস্টটল
৩। নৈতিকতা-নিরপেক্ষ বাধ্যতামূলক অবধারণ
ক. রহিম একজন ভাল খেলোয়ার খ. ধ মপান করা ভাল নয়
গ. বড়দের শ্রদ্ধা করা উচিত ঘ. আকরাম ঠিক বল করেনি
৪। নৈতিক মূল্যবোধক অবধারণের উপজীব্য বিষয়
ক. ব্যক্তি খ. ব্যক্তির প্রেষণা
গ. ব্যক্তির অভিপ্রায় ঘ. উপরের সব কয়টি
৫। মধ্যযুগে জোর দেয়া হত
ক. ধর্মভিত্তিক সদ্গুণের ওপর খ. ধর্মনিরপেক্ষ সদ্গুণের ওপর
গ. রাজনৈতিক সদ্গুণের ওপর ঘ. উপরের কোনটির ওপর নয়
সত্য/মিথ্যা
১। নৈতিক অবধারণ কিছু নীতি, আদর্শ বা সদ্গুণের সঙ্গে যুক্ত- সত্য/মিথ্যা।
২। মধ্যপন্থাকে সদ্গুণ উদ্ভবের কারণ বলেছিলেন প্লেটো- সত্য/মিথ্যা।
৩। মধ্যযুগে ধর্মভিত্তিক সদুগুণের ওপর জোর দেয়া হত- সত্য/মিথ্যা।
৪। নৈতিক মূল্যবোধক অবধারণে আমরা কোন কাজ সম্পর্কে কথা বলি- সত্য/মিথ্যা।
৫। নৈতিক অবধারণে ব্যবহৃত শব্দের নৈতিকতা নিরপেক্ষ ব্যবহারও আছে- সত্য/মিথ্যা।
সঠিক উত্তর
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন: ১। খ ২। ঘ ৩। ঘ ৪। ঘ ৫। ক
সত্য/মিথ্যা: ১। সত্য ২। মিথ্যা ৩। সত্য ৪। মিথ্যা ৫। সত্য

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]