আধ্যাত্মিক সুখবাদী মিশকাবীর সা‘আদা সম্পর্কিত তত্ত¡টি ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন করুন।

ইউরোপীয় নৈতিক চিন্তায় এর প্রভাব অত্যন্তগভীর। এ মতবাদের শুরু হয়েছিল প্রাচীন গ্রীসে এবং
কালের গন্ডি পেরিয়ে এ ভাবধারা আধুনিক ইউরোপের তথা ইউরোপ প্রভাবাধীন বিশ্বের নৈতিক
চিন্তায় এখনো সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠতে পারে, প্রাচীন ও আধুনিক কালের
মধ্যবর্তী সময়টিতে মানুষের নৈতিক চিন্তা কি একদম নিষ্ক্রিয় ছিল? এই মধ্যবর্তী সময়টিকে আমরা
মধ্যযুগ বলে থাকি এবং একথা সবার জানা, এটা ছিল ইউরোপের জন্য একটা অন্ধকার যুগ। এ যুগে
আরববিশ্ব জ্ঞানের চর্চা অব্যাহত রেখেছিল আর দর্শনের ক্ষেত্রে আরব পন্ডিতরা যে গ্রিকদের দ্বারা
খুবই প্রভাবিত ছিলেন তা মসুলিম দর্শনের ছাত্রমাত্রই জানেন। তাঁদের নৈতিক চিন্তায়ও এ প্রভাব
লক্ষণীয়। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, আরব তথা মুসলিম দার্শনিকদের প্রায় সকলেরই চেষ্টা
ছিল ইসলামের শিক্ষা ও গ্রিক দর্শনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। এই সমন্বয় প্রচেষ্টা তাঁদের নৈতিক
চিন্তার মধ্যেও দেখা যায়। আল্লাহতায়ালা ভাল কাজের জন্য পরকালে পুরস্কার (সুখ) এবং মন্দ
কাজের জন্য শাস্তির (দুঃখ) ব্যবস্থা রেখেছেন, ইসলামের এই মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁরা গ্রিক
সুখবাদের সমন্বয় সাধন করেন। এই সমন্বয়কে আধ্যাত্মিক সুখবাদ নাম দেয়া যেতে পারে; কেননা
তাঁরা সুখের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা গতানুগতিক কোন সুখ নয়। এর প্রেক্ষিতটি আধ্যাত্মিক।
মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে প্রায় সকলের মধ্যেই এই ধরনের চিন্তাধারার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। তবে
যিনি প্রথম অত্যন্তসুসংবদ্ধভাবে এই আধ্যাত্মিক সুখবাদের বর্ণনা দেন তিনি হচ্ছেন আহমদ বিন
মোহাম্মদ মিশকাবী (৯৩৬-১০৩০)। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গ্রিকদের সুখ বা আনন্দের
প্রতিশব্দ হিসেবে মুসলিম দার্শনিকরা ‘সা’আদা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আমরা নি¤েœমিশকাবীর
সাআদা তত্ত¡টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।
সা’আদা যে গতানুগতিক কোন সুখ নয় তা প্রমাণ করতে গিয়ে মিশকাবী নি¤েœাক্ত যুক্তিসমূহ উপস্থাপন করেন:
(১) সুখ তার নিজস্ব গুণে কাম্য নয়; এ হলো একটি কাম্য ক্রিয়ার ফল, এর উদ্দেশ্য নয়। কিছু
সুখপ্রদ জিনিষ আছে যা মোটেই কাম্য নয়। আর বহু জিনিষ আছে যাদেরকে, তারা যে সুখ বয়ে
আনে তা বাদ দিলেও মূল্যবান মনে করা যেতে পারে।
(২) সুখ শরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত, আর তাই সুখকে সা’আদা ধরলে আত্মাকে শরীরের অনুগত হিসেবে
ধরতে হবে; কেননা সা’আদা সব সময়ই আত্মার কাম্য। এ শরীরের অনুগত হতে পারে না এজন্য
যে, প্রকৃতিতে নিচে থেকে উপরে যাবার ব্যবস্থা আছে, উপর থেকে নিচে নয়।
(৩) সুখ সব সময়ই নঞর্থক; কেননা ব্যথা থেকে মুক্তির নামই সুখ। এই দিক থেকে এ কখনো
স্বকীয়ভাবে কোন কাজের উদ্দেশ্য হতে পারে না।
(৪) সুখের সঙ্গে সব সময়ই একটি লজ্জার ভাব থাকে এবং সুখ অপরিমিতভাবে চাওয়া যায় না,
কারণ এতে করে এ অশুভ ডেকে আনে। সা’আদার ক্ষেত্রে একথা খাটে না।
মিশকাবী সা’আদাকে সম্মান, সমৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ইত্যাদি থেকে পৃথক দেখান। তাঁর মতে, সম্মানের মধ্যে
সা’আদা নেই, কারণ যাঁকে সম্মান দেওয়া হয় তাঁকে এ যতটা না আলোড়িত করে তার চেয়ে যারা
সম্মান দেয় তারাই বেশি আলোড়িত হয়। সম্পদ ও স্বাস্থ্যের মধ্যেও সা’আদা থাকতে পারে না,
কেননা এগুলোকেও কেউ তাদের নিজস্ব খাতিরে চায় না, চায় অন্য কোন উদ্দেশ্য সাধনের উপায়
হিসেবে।
সা’আদা তাহলে কী? মিশকাবীর মতে প্রত্যেকের প্রকৃত কাজে পূর্ণতা লাভের মাঝেই সা’আদা
নিহিত। যেমন তরবারীর সা’আদা নিহিত তার ধারের মধ্যে, ঘোড়ার সা’আদা নিহিত তার দ্রæত
গতির মধ্যে, আর মানুষের সা’আদা নিহিত তার যথার্থ কর্ম বুদ্ধির চর্চায় পূর্ণতা লাভের মধ্যে। এ
সম্পর্কে তাঁর মত অ্যারিস্টলের অনুরূপ এবং অরিস্টটলের মত মিশকাবীকেও একজন পূর্ণতাবাদী
বলা যেতে পারে (পূর্ণতাবাদ সম্পর্কিত আলোচনা এ ইউনিটের ৮ ও ৯ নং পাঠে এ করা হবে)।
তবে আধ্যাত্মিক সুখের ওপর গুরুত্বারোপের কারণে তাঁকে আমরা সুখবাদী হিসেবেই গণ্য করব।
মিশকাবী অরিস্টটলের অনুসরণে মানুষের সা’আদাকে এভাবে বর্ণনা করেন :
(১) সা’আদা বুদ্ধির পূর্ণতায় নিহিত, তবে এ বুদ্ধিকে বুঝতে হবে তাত্তি¡ক ও ব্যবহারিক এই দু’দিক
থেকেই। তাত্তি¡ক বুদ্ধি ব্যবহারিক বুদ্ধির চেয়ে উৎকৃষ্টতর। প্রথমটি মানুষের ধী-শক্তির সঙ্গে আর
দ্বিতীয়টি তার ক্ষুধা, তাড়না ও আবেগের বিন্যাস ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত। ব্যক্তিক ও সামাজিক
উভয় ক্ষেত্রেই এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই হিসেবে মানুষের সার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নয়, তার
অবান্তর বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়েই ব্যবহারিক বুদ্ধির কারবার। মূলত তাত্তি¡ক বুদ্ধিকে মিশকাবী পরম
উদ্দেশ্য হিসেবে এবং ব্যবহারিক বুদ্ধিকে সে উদ্দেশ্য সাধনের উপায় হিসেবে দেখেছেন। বস্তুর
আকার ও উপাদানের মধ্যে যে সম্পর্ক তাদের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা তাই।
(২) সা’আদা প্রাপ্তির জন্য বংশমর্যাদা, সম্পদ ও সৌন্দর্যের প্রয়োজন রয়েছে যদিও এরা এর
অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ নয়। একথা সত্য যে, প্রকৃতপক্ষে যাঁরা সা’আদার অধিবাসী তাঁরা কখনো
ক্লেশকর অবস্থায় থাকেন না বা তাদেরকে কখনো কোন ক্লেশ স্পর্শ করতে পারে না। তবু একথা
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সম্পদ, সৌন্দর্য, ক্ষমতা, সন্তান-সন্তুতি ও বন্ধুত্ব এসব জাগতিক
সুবিধাগুলো মানুষকে সা’আদার অধিকারী হতে সাহায্য করে।
মানুষের সা’আদা তার বুদ্ধির পূর্ণতায় নিহিত, একথা বলার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, মানুষ কখন তার
বুদ্ধির পূর্ণতায় পৌঁছে? এর উত্তরে মিশকাবী তাঁর বিখ্যাত বিবর্তনবাদের শরণাপন্নহন। এ মতবাদ সা’আদা গতানুগতিক সুখ নয়।
অনুযায়ী জড় জগতে একটি বিবর্তনের ধারা রয়েছে যার মূলে কাজ করছে আত্মা। মানুষের নিচের
স্তরে আত্মা অচেতন ও সুপ্ত অবস্থায় থাকে। মানুষের মধ্যে এ সম্পূর্ণ সচেতন তথা পুরোপুরি
বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন। আত্মার জন্য এই সচেতনতা এক ধরনের মুক্তি নির্দেশ করে আর তা তার জন্য এক
দীর্ঘ যাত্রার ইঙ্গিত দেয়। নব্য প্লেটোবাদীদের অনুসরণে মিশকাবী আত্মার এ যাত্রাকে একটি ধাপ
বিন্যাসের আকারে পেশ করেন যাতে তিনি এই ধারণা ব্যক্ত করেন যে, আল্লাহ থেকেই আত্মার
আগমন এবং আল্লাহতেই তার প্রত্যাবর্তন। মিশকাবীর মতে এই প্রত্যাবর্তনটি সাধিত হয় চিন্তনের
মাধ্যমে। আত্মা চিন্তনের মাধ্যমে বুদ্ধির সঙ্গে মিলিত হয় এবং এরপর বুদ্ধি হিসেবে এ আল্লাহকে চিন্তা
করে ও তার সাথে মিলিত হয়। এই মিলনের মাধ্যমে আত্মা সর্বোচ্চ আনন্দ বা প্রশান্তিলাভ করে।
আর এই হলো সর্বোচ্চ সা’আদা।
মিশকাবী তথা মুসলিম দার্শনিকদের এই সা’আদা তত্ত¡ পরবর্তী ধর্মতত্ত¡বিদ ও দার্শনিকদেরকে কিরূপ
প্রভাবিত করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় ইমাম গাজালীর বিখ্যাত পুস্তক, ‘কিমিয়ায়ে সা’আদার’
(সা’আদার রসায়ন) নামকরণের মধ্যে। এরও পরে প্রকাশিত কয়েকটি নীতিবিদ্যার পুস্তকেও এ
বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পেয়েছে।
সুখবাদের মূল্যায়ন
মানমূলক নীতিবিদ্যায় সুখবাদ যেমন একদিকে প্রাচীন মতবাদ, তেমনি জনপ্রিয় মতবাদও। কিন্তু এ
ত্রæটিমুক্ত নয়। এর যে ত্রæটিটি প্রথমে নজর পড়ে তা অবশ্য মনস্তাত্তি¡ক সুখবাদ সম্পর্কিত। আমরা
আমাদের আলোচনার প্রথমেই এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছি। পুনরাবৃত্তি হলেও আমরা এখানে
বিষয়টিকে এককথায় এভাবে প্রকাশ করতে পারি যে, সমালোচকদের মতে আমরা সরাসরি সুখ চাই
না; চাই অন্য কোন বস্তু বা বিষয় যা আমাদেরকে সুখ দেয়। কিন্তু নৈতিক মতবাদ হিসেবে সুখবাদের
সমালোচনায় এ ধরনের মন্তব্য যথেষ্ট নয়। নৈতিক সুখবাদের সমালোচনায় এ প্রসঙ্গে আমাদের যে
প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তা হচ্ছে, আমাদের কি সত্যি সুখ চাওয়া উচিত? অথবা সত্যিই কি এ
আমাদের কাম্য? এ ব্যাপারে জে. এস. মিলের যুক্তিটি সবচাইতে বেশি পরিচিত। প্রকৃতির দিক থেকে
মনস্তাত্তি¡ক হলেও এর আসল শক্তি বা দুর্বলতা একটি ভাষাগত ব্যাপার। মিলের যুক্তি হচ্ছে, আমরা
যা দেখি তা যদি ‘দৃশ্যযোগ্য’ হয়, কিংবা আমরা যা শুনি তা যদি ‘শ্রবণযোগ্য’
হয়, তাহলে আমরা যা কামনা করি তাই কামনাযোগ্য বা কাম্য হবে। জি. ই. ম্যূরের মতে এখানে
মিল বড় রকমের ভাষাতাত্তি¡ক বিপত্তি ঘটিয়েছেন; কেননা আমরা যা দেখি তা দৃশ্যযোগ্য (ঠরংরনষব)
একথা বলার অর্থ এই নয় যে, তা আমাদের দেখা উচিত; এর অর্থ হচ্ছে এই যে, এ দৃষ্টিগ্রাহ্য।
তেমনি যা আমরা শুনি তা শ্রবণযোগ্য , একথা বলার অর্থ এই নয় যে, তা আমাদের শ্রবণ
করা উচিত; বরং এর অর্থ হচ্ছে এ শ্রæতিগ্রাহ্য। অপরপক্ষে যা আমরা কামনা করি তা কামনাযোগ্য
একথা বললে কিন্তু একই অর্থ প্রকাশ পায় না। কামনাযোগ্য অর্থ যা কামনা করা উচিত
বা যা কাম্য। অতএব নৈতিক সুখবাদের পক্ষে তা সে আত্ম-সুখই হোক, কিংবা সর্বজনীন সুখই
হোক, মিলের যুক্তিটি খাটে না।
সুখবাদের প্রকৃতির প্রশ্নে প্রাচীন সাইরেনিকরা এবং আধুনিক বেনথাম প্রমুখ স্থ‚লবাদী প্রবণতা প্রদর্শন
করেছেন। অপরপক্ষে সক্রেটিস, এপিকিউরাস, মিল স‚² সুখবাদ সমর্থন করেছেন। এ বিবাদে
অনেকেই মিলের যুক্তিকে যথার্থ মনে করেন। মানুষ যে নিছক অন্যান্য জীবের মত নয় এবং এ
কারণে তার সুখ যে গুণগতভাবে তাদের সুখ থেকে ভিন্ন হবে তা বলে তিনি মানবীয় শ্রেষ্ঠত্বের সেই বিবর্তন প্রক্রিয়ায় বুদ্ধি তার পূর্ণতায় পৌঁছে এবং আল্লাহর সাথে মিলিত হয়। তখনই আসল সা’আদার প্রাপ্তি ঘটে।
পুরনো তত্ত¡কেই সমর্থন করেছেন। কিন্তু এর বিরুদ্ধেও যুক্তি আছে। জি. ই. ম্যূর মনে করেন, যদি
আমরা সুখের পরিমাণকে অস্বীকার করি এবং গুণের ওপর জোর দেই তাহলে সুখবাদ একটি
আত্মঘাতী মতবাদ হিসেবে পরিগণিত হবে। কেননা তাঁর ভাষায়, “যদি একটি সুখ অন্য একটি সুখ
থেকে গুণের দিক থেকে পৃথক হতে পারে, এর অর্থ হবে সুখ একটি জটিল ব্যাপার, এমন একটা
কিছু প্রকৃতপক্ষে যা সুখ এবং তার অতিরিক্ত যা সুখ উৎপাদন করে তেমন কিছুর সমাহারমাত্র। যেমন
মিল ইন্দ্রিয় পরায়ণতাকে নি¤œশ্রেণীর সুখ বলেন। কিন্তু ইন্দ্রিয় পরায়ণতা কী? নিশ্চয়ই এ কোন
ইন্দ্রিয়ের কোন উত্তেজনা যার সঙ্গে যুক্ত থাকে ঐ উত্তেজনার ফলে সৃষ্ট সুখ। মিল তাই ইন্দ্রিয়
পরায়ণতাকে সরাসরি অন্য সুখ থেকে নি¤œতর বিবেচনা করা যায় একথা স্বীকার করার মাধ্যমে (যাতে
সুখের মাত্রা একই হতে পারে) ... এ কথাই স্বীকার করেছেন যে, সুখের সঙ্গে যেসব জিনিষ থাকে তা
সুখ থেকে স্ব-নির্ভরভাবেই ভাল বা মন্দ হতে পারে।”
সুখের গুণগত বিচার সুখবাদের জন্য আরেকটা যে আত্মঘাতী অবস্থা সৃষ্টি করে তা হচ্ছে গুণ বিচারের
জন্য সমঝদারের প্রয়োজন হয় যাঁরা বুদ্ধি বিবেচনাসম্পন্ন লোক। তাঁদের বিচারের ফলে সুখবাদ আর
সুখবাদ থাকে না, এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক বিচারবাদে পরিণত হয়।
আত্ম-সুখবাদ ও সর্বজনীন সুখবাদের সম্পর্কের বিষয়েও সমস্যা আছে। মিল বলেছেন, আমরা যদি
প্রত্যেকে প্রত্যেকের সুখ কামনা করি তাহলে দেখা যাবে যে, সকলেই সকলের সুখ কামনা করছি।
কিন্তু এ যুক্তি ‘বিভাগ ও সামষ্টিক অনুপপত্তি’ (ঋধষষধপু ড়ভ ফরারংরড়হ ধহফ পড়সঢ়ড়ংরঃরড়হ) ঘটায়।
বিশ্বের সব মানুষ একসাথে হলে এক অতিকায় মানুষ সৃষ্টি হবে, এমন কথা বললে যেমন ভুল হবে,
এটা এই ধরনেরই একটি ভুল। উইলিয়াম লিলি রসিকতা করে এই ভ্রান্তিটির উদাহরণ দিয়েছেন এ
ভাবে : একটি শহরের প্রত্যেকেরই তার নিজের ঘরের দরজা খোলার অধিকার রয়েছে, অতএব
মিলের যুক্তি অনুযায়ী সকলেরই সকলের ঘরের দরজা খোলার অধিকার রয়েছে।
এসব সমালোচনা সত্তে¡ও একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আত্মসুখবাদী সর্বজনীন সুখবাদের
সমর্থক হতে পারে। সে বলতে পারে সবাই যখন সুখী হয় তখন আমি সুখ অনুভব করি।
সিজউইকের বক্তব্য এটিই। কিন্তু তিনি আত্মসুখবাদ ও সর্বজনীন সুখবাদের মধ্যে সমন্বয় করতে
গিয়ে স্রষ্টাকে ডেকে এনে কিছুটা তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। যেখানে তিনি নিজেই বলছেন যে,
তাঁর এ অভিমতের ওপর তার নিজেরই আস্থা নেই, সেখানে একে স্ববিরোধিতা বলা অন্যায় নয়।
আধ্যাত্মিক সুখবাদ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তাতে স্পষ্ট দেখা যায় যে, মিশকাবী এবং অন্যান্য
মুসলিম দার্শনিকরা গ্রিক দর্শনের সঙ্গে ইসলামের সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে যা বলেছেন তা
পুরোপুরি সার্থক হয়নি। ইসলাম সুখকে নৈতিক কাজের পুরস্কার হিসেবে দেখে, এর মান হিসেবে
নেয় না। আল কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর এবাদতের জন্য;
এটাই তার মূল কাজ, সুখ অন্বেষণ নয়। এতদ্সত্তে¡ও মুসলিম দার্শনিকদের সা’আদা তত্তে¡ প্রচুর স্বকীয়তার সাক্ষাৎ মিলে, যা প্রশংসাযোগ্য।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। আধ্যাত্মিক সুখবাদের পটভ‚মি আলোচনা করুন।
২। আধ্যাত্মিক সুখবাদী মিশকাবীর সা‘আদা সম্পর্কিত তত্ত¡টি ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন করুন।
৩। নৈতিক মান সম্পর্কিত মতবাদ হিসেবে সুখবাদের একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। আধ্যাত্মিক সুখবাদ হলো
ক. স্থূল ও সূ² সুখবাদের সমন্বয় খ. আত্মসুখবাদ ও সর্বজনীন সুখবাদের সমন্বয়
গ. গ্রিক সুখবাদ ও ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সমন্বয়।
২। সা’আদা হলো এক ধরনের
ক. সুখ খ. সৃষ্টি
গ. দুঃখ।
৩। মধ্যযুগের মুসলিম দার্শনিকেরা প্রভাবিত হয়েছেন
ক. ফরাসি দার্শনিকদের দ্বারা খ. স্পেনীয় দার্শনিকদের দ্বারা
গ. গ্রিক দার্শনিকদের দ্বারা।
৪। সা’আদা যে বুদ্ধির চর্চায় নিহিত তা
ক. দুই প্রকার খ. তিন প্রকার
গ. পাঁচ প্রকার।
৫। ‘মিলের গুণগত সুখের মতবাদ আত্মঘাতী’- এ মন্তব্য
ক. সিজউইকের খ. বেনথামের
গ. ম্যূরের
সত্য/মিথ্যা
১। গ্রিক দার্শনিকরা মধ্যযুগের মুসলিম দার্শনিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন- সত্য/মিথ্যা।
২। মুসলিম দার্শনিকদের আধ্যাত্মিক সুখবাদ ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনসত্য/মিথ্যা।
৩। প্রত্যেকের প্রকৃত কাজে পূর্ণতা লাভের মাধ্যমেই মিশকাবীর সা’আদা অর্জন সম্ভবসত্য/মিথ্যা।
৪। মিশকাবীর দৃষ্টিতে সুখ দেহের সাথে সম্পৃক্ত এবং তা নঞর্থকও বটে- সত্য/মিথ্যা।
৫। আত্মসুখবাদ থেকে সর্বজনীন সুখবাদে উত্তরণকালে কোন অনুপপত্তির সৃষ্টি হয় নাসত্য/মিথ্যা।
সঠিক উত্তর
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন : ১। গ ২। ক ৩। ঘ ৪। ক ৫। গ
সত্য/মিথ্যা: ১। মিথ্যা ২। মিথ্যা ৩। সত্য ৪। সত্য ৫। মিথ্যা

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]