নির্বিচারবাদের বৈশিষ্ট্য কী? নির্বিচারবাদ সম্পর্কে কান্টের অভিমত ব্যাখ্যা করুন।

সাধারণত নির্বিচারবাদ বলতে বোঝায়, কোনো কিছু যুক্তি সমালোচনা ব্যতিরেকেই গ্রহণ করা।
আমাদের জ্ঞানে ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা কতটুকু, কিভাবে জ্ঞানলাভ করা যায়, জ্ঞানের সীমা কতদ র
ইত্যাদি না জেনে দার্শনিক আলোচনা শুরু করার নাম নির্বিচারবাদ। এই দৃষ্টিভঙ্গি বা মতবাদের
অনুসারীরা কতটুকু জানা যায় তা বিচার না করেই তত্ত¡জিজ্ঞাসা শুরু করে দেন। তাই এঁদেরকে নির্বিচারবাদী দার্শনিক বলা হয়।
নির্বিচারবাদ : সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
জ্ঞানের সম্ভাবনা, শর্ত, সীমা ও বৈধতা সম্পর্কে কোনো আলোচনা না করেই দার্শনিক
তত্ত¡ালোচনা করার যে পদ্ধতি তাকেই নির্বিচারবাদ (উড়মসধঃরংস) বলে। নির্বিচারবাদীরা
নিজেদের অনুসৃত আলোচনা-পদ্ধতির কার্যকারিতা, উপযোগিতা ও যৌক্তিকতা বিচার না করেই
তত্ত¡ালোচনা শুরু করে দেন। তাঁরা বিনা বিচারেই কোনো একটি পদ্ধতিকে যথার্থ পদ্ধতিরূপে
গ্রহণ করেন এবং সে অনুযায়ী নিজেদের দার্শনিক মতবাদ ব্যাখ্যা করেন। তাঁরা কতকগুলো
নীতি বা সত্যকে স্বতঃসিদ্ধ ও স্বতঃপ্রমাণিত বলে স্বীকার করে নেন এবং তার থেকে অন্যান্য
সিদ্ধান্তে উপনীত হন। আবার এই সিদ্ধান্তের সত্যতা যে যাচাই করার প্রয়োজন আছে তা তাঁরা
মনে করেন না। প্রাচীন দার্শনিক প্লেটো ও আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক ডেকার্ট ধারণা
করেন যে, কতকগুলো স্বতঃসিদ্ধ ধারণা বা নীতি থেকে অন্যান্য ধারণা বা নীতিতে উপনীত
হওয়া যায়। ডেকার্টের মতে, ঈশ্বর কতগুলো অন্তর ধারণা জন্মের সময়েই
আমাদের মনে মুদ্রিত করে দেন। এগুলো নির্ভুল এবং এগুলোর ভিত্তিতে আমরা যেসব সত্যে
উপনীত হই, সেগুলো যথার্থ। আবার কোনো কোনো দার্শনিক মনে করেন, মানুষের মনের
গঠন এমনই যে, কতগুলো সত্য সে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বাস করে এবং সেগুলোকে স্বতঃসিদ্ধ
মনে করে এবং তারই ভিত্তিতে জগৎ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে। অন্ধবিশ্বাস, মতের গোঁড়ামি,
অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি, আপ্তবাক্যকে প্রমাণিতরূপে গ্রহণ করার প্রবণতা নির্বিচারবাদী দর্শনের
বৈশিষ্ট্য।
নির্বিচারবাদ : অভিজ্ঞতাবাদ, বুদ্ধিবাদ ও স্বজ্ঞাবাদ
নির্বিচারবাদ প্রাচীন দর্শনে প্রথম দেখা যায়। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকরা জগতের সৃষ্টি সম্পর্কে
বিভিন্ন মতবাদ উপস্থাপন করেন। কিন্তু এসব মতবাদের মূলে রয়েছে অন্ধবিশ্বাস। জ্ঞানের
সম্ভাব্যতা বা তার সীমা কতদ র এ প্রশ্ন তাঁদের মনে আসেনি। ইউরোপে মধ্যযুগে দার্শনিক
চিন্তার ক্ষেত্রে যে গতিহীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ করা যায় তার মূলে রয়েছে অন্ধবিশ্বাস, ধর্ম
সম্পর্কীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও শা¯ বাক্যের উপর একান্ত নির্ভরতা। আধুনিক ইউরোপীয়
দর্শনের মধ্যেও নির্বিচারবাদী দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা যায়। বেকন, লক, বার্কলি, হিউম প্রমুখ
অভিজ্ঞতাবাদীরা ( বিনা বিচারেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, অভিজ্ঞতাই জ্ঞান
লাভের একমাত্র উপায়; অপরদিকে ডেকার্ট, স্পিনোজা, লাইবনিজ প্রমুখ বুদ্ধিবাদীরা
বিনা বিচারেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, কতকগুলো স্বতঃসিদ্ধ ধারণা বা
নীতি থেকে অবরোহ পদ্ধতির মাধ্যমে তত্ত¡জ্ঞান লাভ করা যায়। বার্গসোঁ প্রমুখ স্বজ্ঞাবাদীরা
স্বজ্ঞাকে জ্ঞান লাভের একমাত্র উপায় বলে মনে করেন। তাঁদের মতবাদও
নির্বিচারবাদী মতবাদ।
নির্বিচারবাদ : কান্টের অভিমত
কাণ্টের মতে, বুদ্ধির প্রকৃতি ও সীমারেখা নির্ধারণ না করেই কোনো বিষয় সম্বন্ধে বুদ্ধির
সাহায্যে জানার দাবি করাই নির্বিচারবাদ। কাণ্ট সকল বুদ্ধিবাদী যেমন-ডেকার্ট, স্পিনোজা,
লাইবনিজ ও উল্ফকে বিচারবিযুক্ত দার্শনিক বলে অভিহিত করেছেন। কারণ তাঁরা অন্ধভাবে
স্বীকার করে নিয়েছেন যে, বুদ্ধি দিয়ে আমরা আত্মা, বিশ্ব ও স্রষ্টা সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞানলাভ
করতে পারি। কিন্তু তাঁরা কখনো এ প্রশ্ন উত্থাপন করেননি, বুদ্ধি দ্বারা আমরা কতটুকু জানতে
পারি? বুদ্ধির পরিধি কতটুকু? তাঁরা বুদ্ধির পরিধি সম্বন্ধে আলোচনা না করেই বুদ্ধিজাত জ্ঞান
আলোচনা শুরু করেছেন।
সমালোচনা
নির্বিচারবাদ নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে :
১. দার্শনিক আলোচনা-পদ্ধতি যদি বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত না হয়ে অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামি,
স্বতঃসিদ্ধ ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সে পদ্ধতি কখনও দার্শনিককে তার অভীষ্ট
লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে না। যথার্থ জ্ঞান বা সত্যকে লাভ করাই দর্শনের লক্ষ্য। একমাত্র
বিচারের সাহায্যেই সত্যকে জানা যেতে পারে। বিচার না করে যদি কতকগুলো নীতিকে
স্বতঃসিদ্ধ ধরে তার থেকে অবরোহ পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তাহলে
যথার্থ জ্ঞান লাভের সম্ভাবনা সম্পর্কে সংশয় দেখা দিবে।
২. জ্ঞানবিদ্যা দর্শনের অপরিহার্য অঙ্গবিশেষ। জ্ঞানবিদ্যার আলোচনা ছাড়া দার্শনিক আলোচনা
কখনও প র্ণতা লাভ করতে পারে না, তা কাল্পনিক আলোচনায় পর্যবসিত হয়। যথার্থ জ্ঞানের
শর্ত বা উপকরণগুলো এবং জ্ঞানের সম্ভাবনা ও সীমা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে কোনো বস্তুর
যথার্থ বিচার করা সম্ভব নয়। জন্মের সময়ে স্রষ্টা কোন্ োকোন্ োধারণা মানুষের মনে মুদ্রিত
করে দেন কিংবা মানুষ স্বাভাবিকভাবে কোন্ োকোন্ োসত্যে বিশ্বাস করে সেসব ধারণা বা
সত্য নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া এ বিষয়ে সব দার্শনিক একমতও নয়।
৩. নির্বিচারবাদী দার্শনিকরা সকলেই নিজ নিজ মতবাদের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত। কিন্তু
নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমেই মতবাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। আর এ বিচারই দর্শনের প্রাণ।
নির্বিচারবাদীরা অন্যের মতবাদের সমালোচনা করেন, কিন্তু নিজের মতবাদ আলোচনাপর্যালোচনা ছাড়াই বিনা বিচারে সুনিশ্চিত বলে ধরে নেন।
উপসংহার
নির্বিচারবাদ বিনা বিচারে একটি মতবাদকে মেনে নেয় এবং তাকে সর্বজনীন ও শাশ্বত বলে
মনে করে। কিন্তু দর্শনের চিরাচরিত যে প্রথা তার সাথে এ মতবাদ খাপ খায় না। দর্শনে
সর্বজনীন ও শাশ্বত সত্য বলে কিছু নেই। কোনো মতবাদই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। এখানে
সত্য ও জ্ঞান উভয়ই সাপেক্ষ এবং তা দেশ ও কালের পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তনশীল।
রচনামূলক প্রশ
১। নির্বিচারবাদ সমালোচনাসহ আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। নির্বিচারবাদের সংজ্ঞা দিন।
২। পাঁচ জন নির্বিচারবাদী দার্শনিকের নাম লিখুন।
৩। নির্বিচারবাদের বৈশিষ্ট্য কী?
৪। নির্বিচারবাদ সম্পর্কে কান্টের অভিমত ব্যাখ্যা করুন।
ক. বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১) নির্বিচারবাদ একটি
র) জনপ্রিয় মতবাদ
রর) একপেশে মতবাদ
ররর) উৎকৃষ্ট দার্শনিক মতবাদ
রা) কোনোটাই নয়
২) নির্বিচারবাদের আবির্ভাব ঘটে
র) প্রাচীনকালে
রর) মধ্যযুগে
ররর) আধুনিক যুগো
র) কোনোটাই সঠিক নয়
৩) নির্বিচারবাদী দার্শনিকবৃন্দ হলেন
র) কান্ট, রাসেল, হেগেল
রর) লক, ডেকার্ট, স্পিনোজা
ররর) বাকলি, কান্ট, হিউম
রা) উলফ, রাসেল, কান্ট
৪। নির্বিচারবাদীরা একটি মতবাদ
প্রদানের প র্বে মতবাদটির যৌক্তিকতা
র) বিচার করে
রর) ব্যাখ্যা করা
ররর) প্রমাণ করে
রা) কোনোটাই করে না
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। প্রাচীনকালের দর্শনে সর্বপ্রথম নির্বিচারবাদ দেখা যায়।
২। অভিজ্ঞতাবাদ নির্বিচারবাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
৩। একমাত্র নির্বিচারবাদের মাধ্যমেই প্রকৃত জ্ঞানলাভ করা সম্ভব।
৪। নির্বিচারবাদের মূলে রয়েছে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, ধর্ম সম্পর্কীয় গোঁড়ামি, শা¯ বাক্যের উপর নির্ভরতা।
সঠিক উত্তর ক.
১। রর) একপেশে মতবাদ ২। র) প্রাচীনকালে ৩। রর) লক, ডেকার্ট, স্পিনোজা
৪। রা) কোনোটাই করে না
খ. ১। স ২। মি ৩। মি ৪। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]