পূর্ণতাবাদ কাকে বলে? এ প্রসঙ্গে নৈতিক পূর্ণতাবাদের পূর্ণতাবাদ প্রসঙ্গে প্লেটো ও অ্যারিস্টটলের মত ব্যাখ্যা করুন।

পূর্ণতাকে যে নীতি নৈতিকতার মান হিসেবে গ্রহণ করে তাকে পূর্ণতাবাদ বলে। একে বুঝতে হলে
পূর্ণতা শব্দটির অর্থ সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। এমনিতে এ অপূর্ণতা তথা অভাব এর
বিপরীতার্থক একটি শব্দ যা কোন কিছুর সম্পূর্ণতা বা সমগ্রতা নির্দেশ করে। কিন্তু নীতিবিদ্যার
দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমরা এর গ্রিক প্রতিশব্দ এর কথা ভুলতে পারি না যা (ঞবষড়ং)
শব্দটির সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। (ঞবষড়ং) এর অর্থ হলো লক্ষ্য। এই দৃষ্টিকোণ থেকে একটি
জিনিষ তখনই পূর্ণ হয় যখন এ তার সম্ভাবনাসমূহ ও নির্দিষ্ট আকারগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার লক্ষ্যে পৌঁছে।
গ্রিকদের মতে নৈতিকতার ক্ষেত্রে মানুষের লক্ষ্য হচ্ছে ‘শুভ’ যা প্রকৃতপক্ষে তার চরিত্র ও আচরণের
মাধ্যমে অর্জিত হয়। অতএব নৈতিক পূর্ণতাবাদ বলতে প্রকৃতপক্ষে মানুষের চরিত্র ও আচরণ
সম্পর্কিত তার সম্ভাবনাসমূহের বাস্তবায়নের নীতি বুঝায়। এ তাই আত্ম-বাস্তবায়ন (ঝবষভৎবধষরুধঃরড়হ) নীতি বলেও বহুল পরিচিত।
আরেক ধরনের পূর্ণতাবাদ আছে যাকে আমরা ধর্মীয় পূর্ণতাবাদ বলতে পারি। বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও
ইসলামি ঐতিহ্যে এর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। ইসলামের সুফী সাধকরা ইনসান-ই-কামিল বা পূর্ণ মানব
এর তত্তে¡ বিশ্বাস করেন। আমাদের অবশ্য এখানে ধর্মীয় পূর্ণতাবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করার কোন অবকাশ নেই। তবে এটুকু বলা চলে, যেসব ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে পূর্ণতার দৃষ্টান্তমনে করা
হয় তাঁরা নৈতিকতার ক্ষেত্রেও অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্তরেখে গেছেন। ইসলামে নবী হযরত মোহাম্মদ (স.)
একই সাথে ছিলেন একজন নবী, একজন মানুষ, একজন পিতা, স্বামী, বন্ধু এবং একজন শাসক,
সেনানায়ক আরো অনেক কিছু। এসব প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই তিনি প্রকৃষ্ট নৈতিক দৃষ্টান্তস্থাপন করে
গেছেন। সেজন্য সংগত কারণেই তিনি ছিলেন সুফীদের দৃষ্টিতে একজন ইনসান-ই-কামিল। কিন্তু
এসবই ব্যবহারিক নৈতিকতার উদাহরণ পেশ করে। মান হিসেবে আমরা পূর্ণতার তাত্তি¡ক দিক
সম্পর্কে বেশি উৎসাহী। এ কারণে নৈতিক পূর্ণতা সম্পর্কে আমরা এখন দার্শনিকদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করব।
নৈতিক পূর্ণতাবাদের সমর্থকবৃন্দ
সুখবাদের মত পূর্ণতাবাদের মূলও গ্রীসে নিহিত। দর্শনের এক বিশ্বকোষে এর গ্রিক সূত্রর কথা এভাবে
বর্ণনা করা হয়েছে: “গ্রিক-রোমান জগতে স্টোয়িকরা পূর্ণমানব সম্পর্কে বিশদভাবে লিখেছিলেন।
তাঁদের মতে বুদ্ধি কর্তৃক আবেগের দমনের মধ্যে এবং স্ব-নির্ভর অবস্থার মধ্যে পূর্ণতা নিহিত থাকে।
কখনো তাঁরা মনে করতেন যে, নৈতিক সদ্গুণ ঐশী পূর্ণতার অনুকরণমাত্র এবং কখনো বা তারা কোন
মানব-সত্তাকে (বিশেষত সক্রেটিসকে) উৎকর্ষের নমুনা হিসেবে গণ্য করতেন। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই
তাঁরা তাঁদের ‘আদর্শ জ্ঞানী লোক’ সম্পর্কে বিমূর্তভাবেই লিখতেন।”
সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো এবং তদীয় শিষ্য অ্যারিস্টটলের ভাবনাগুলোতে পূর্ণতাবাদের আভাস
মিলে। প্লেটোর পূর্ণতাবাদী চিন্তার সাক্ষাৎ মিলে তাঁর ন্যায়ের মতবাদে। তাঁর মতে ন্যায় শুধুমাত্র
রাষ্ট্রের ব্যাপার নয়, মানুষের মধ্যে একটি আত্মিক গুণও বটে। তিনি মানুষের আত্মায় তিন ধরনের
বৃত্তি থাকার কথা বলেন। এগুলো হচ্ছে : প্রজ্ঞা, সাহস ও কামনা-বাসনা। এই তিনটি বৃত্তির
প্রত্যেকটির নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে, যেমন কামনা-বাসনার কাজ হচ্ছে মানুষের জীববৃত্তিগুলোকে
পরিতৃপ্ত করা, সাহসের কাজ হচ্ছে আত্ম-রক্ষা করা এবং বুদ্ধির কাজ হচ্ছে সাহস ও কামনাবাসনাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষের মধ্যে একটা সঙ্গতি বিধান করা। যখন এই বৃত্তিগুলো যথার্থভাবে
কাজ করে তখনই মানুষের প্রকৃত আত্ম-বাস্তবায়ন ঘটে আর প্লেটো একেই মানুষের মাঝে ন্যায়ের
অবস্থা বলেছেন, যা তার পূর্ণতাও নির্দেশ করে। কিন্তু প্লেটো স্বজ্ঞানে পূর্ণতাবাদের সমর্থক ছিলেন তা
আমরা বলতে পারি না; যেমন বলা যায় না, তিনি একজন সুখবাদী ছিলেন, যদিও কোন ব্যক্তির
মাঝে যখন ন্যায়ের অবস্থা সৃষ্টি হয় তখন নিঃসন্দেহে তিনি এক সুখী ব্যক্তিতে পরিণত হন।
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটলের মাঝে পূর্ণতাবাদের প্রবণতা অধিকতর স্পষ্ট। তাঁর মতে মানবীয়
ক্রিয়াকর্মের চূড়ান্তও স্বয়ংসম্পূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে ‘ইউডাইমোনিয়া একে ইংরেজিতে
অনেকে বা আনন্দ বলে থাকেন। তবে বা মঙ্গল বললে এর অর্থ যথাযথ
হয় বলে অনেকে মনে করেন। প্রকৃতপক্ষে মিশকাবী এবং অন্যান্য মুসলিম দার্শনিকেরা সা‘আদা
বলতে যা বুঝিয়েছেন অ্যারিস্টটলের ‘ইউডাইমোনিয়া’ অনেকটা তাই। এই অর্থে মানুষের প্রকৃত
কাজের মধ্যে অ্যারিস্টটল ‘ইউডাইমোনিয়ার সাক্ষাৎ পান এবং এই কাজকেই (ভঁহপঃরড়হ) মানুষের
প্রকৃত লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। এতেই মানুষের পূর্ণতা নিহিত বলে অ্যারিস্টটল মনে করেন।
কিন্তু মানুষের কাজটি কি? এ ব্যাপারে অ্যারিস্টটল গাছপালা এবং প্রাণধারী অন্যান্য জীবজন্তুর সঙ্গে
মানুষের তুলনা করেন। গাছপালার প্রাণ আছে, মানুষেরও প্রাণ আছে; কিন্তু নিছক বেঁচে থাকা তাঁর
মতে মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। জীবজন্তু সংবেদনশীল; মানুষও তাই, কিন্তু
সংবেদনও মানুষের জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না বলে অ্যারিস্টটল মনে করেন। তাঁর মতে বৌদ্ধিক
নীতি অনুযায়ী সক্রিয় জীবন যাপনই মানুষের চূড়ান্তলক্ষ্য। অন্যকথায় বুদ্ধির চর্চাই তার একমাত্র
কাজ। শুধু তাই নয়, অ্যারিস্টটল মনে করেন যে, এই বুদ্ধির চর্চায় চরম উৎকর্ষ লাভই তার লক্ষ্য
হওয়া উচিত। তাঁর ভাষায়, “মানবীয় মঙ্গল শেষপর্যন্তউৎকর্ষ প্রদর্শনকারী আত্মিক কাজে পরিণত হয়
এবং যদি একাধিক উৎকর্ষ থাকে তাহলে কাজটি হবে সর্বোত্তম এবং সবচাইতে পূর্ণ উৎকর্ষ
অনুযায়ী”। এ থেকে বলা যায়, আত্মিক কাজে উৎকর্ষ অর্জন করাকেই অ্যারিস্টটল আত্ম-বাস্তবায়ন বলে মনে করেন।
অ্যারিস্টটলের মতে, এ আত্মবাস্তবায়ন বিক্ষিপ্ত ও অনিয়মিত বুদ্ধির চর্চায় সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে তার
মন্তব্য হচ্ছে : “আমাদেরকে অবশ্যই ‘সমগ্র জীবনব্যাপী’ এই কথাটি যোগ করতে হবে। কেননা
একটি চড়ুই পাখির আগমন কিংবা শুধু একটি দিনই যেমন গ্রীষ্মকাল বুঝায় না, তেমনি একটি দিন
কিংবা সংক্ষিপ্ত সময় মানুষকে আশীর্বাদ ও মঙ্গলের অধিকারী করে না।”
এখানে একথা না বললেও চলে যে, মানুষের প্রকৃত কাজে পূর্ণতা অর্জনের মধ্যেই মানুষের নৈতিকতা
নিহিত, অ্যারিস্টটলের এই তত্তে¡ প্লেটোর প্রভাব সুস্পষ্ট। কিন্তু অ্যারিস্টটল প্লেটোর এই ভাববাদী
তত্ত¡ গ্রহণ করেননি যেসব মঙ্গলের উৎস রয়েছে স্বর্গলোকে মানুষের ধরাছোয়ার বাইরে। পরবর্তীতে প্লেটোর মতে মানুষের আত্মায় যে তিন ধরনের বৃত্তি রয়েছে তারা যখন যথার্থভাবে স্ব-স্ব কাজ করে তখনই মানুষের আত্মা-বাস্তবায়ন ঘটে। অ্যারিস্টটলের মতে মানুষের প্রকৃত কাজই হচ্ছে তার লক্ষ্যে গমন এবং এ লক্ষ্য হাসিলের মধ্যে তার পূর্ণতা নিহিত।
যাঁরা পূর্ণতাবাদের পূর্ণতা সাধন করেন তাঁরা কিন্তু প্রায় সকলেই ছিলেন ভাববাদী। এ ব্যাপারে জার্মান
দার্শনিক হেগেল এবং তাঁর দুই ব্রিটিশ অনুসারী এফ. এইচ. ব্র্যাডলী ও টি. এইচ. গ্রীন ছিলেন
অগ্রগণ্য। এঁদের কারণেই পূর্ণতাবাদ বর্তমানে নৈতিকতার মানমূলক ভাববাদী মতবাদ হিসেবে সমধিক পরিচিত।
হেগেলীয় পূর্ণতাবাদ
জার্মান দার্শনিক জর্জ উইলহেলম ফ্রেডরিখ হেগেলের (১৭৭০-১৮৩১) দর্শন অত্যন্তসমৃদ্ধ ও জটিল। তাঁর
নীতিদর্শনও তাই জটিলতামুক্ত নয়। তবে কয়েকটা বিষয় মনে হয় বেশ স্পষ্ট আর তা হচ্ছে :
(১) জগতের সব কিছুই এক পরম সত্তার (ধনংড়ষঁঃব) প্রকাশ এবং এই প্রকাশটি ঘটে বিবর্তনের
ধারায় একটা ক্রমবিকাশমান প্রক্রিয়া হিসেবে। এ প্রক্রিয়ার চূড়ান্তলক্ষ্য হচ্ছে আত্ম-সচেতনতার
সৃষ্টি যা পরম সত্তার গুণ। জগতে এর চূড়ান্তপ্রকাশ ঘটে মানুষের মধ্যে।
হেগেলের মতে যার মধ্যে এর প্রকাশ যত বেশি সে তত বেশি আত্ম-বাস্তবায়ন সাধন করে এবং পূর্ণ
মানুষে পরিণত হয়।
(২) মানুষ পূর্ণ আত্ম-সচেতনতায় পৌঁছে একটি দ্বা›িদ্বক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়ার মূলকথা
হচ্ছে মানুষের চিন্তা প্রথমে একটি মত গঠন করে। এরপর সে তা বাতিল করে দ্বিতীয় একটি প্রতিমত গঠন করে এবং এ দুটো মিলে এরপর সে আবার তৃতীয় একটি সমন্বয়-মত গঠন করে। এ
সমন্বয় মত আবার সময়মত একটি মত হিসেবে অপর একটি প্রতি-মতের সৃষ্টি করে এবং এভাবে
চিন্তা প‚র্ণতার দিকে এগিয়ে চলে।
(৩) জগতে একটা আঙ্গিক ঐক্য রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে জগৎ একটি সামগ্রিক সত্তা এবং এর কোন
অংশকে অন্য একটি অংশের সঙ্গে কিংবা সমগ্রের সঙ্গে সম্পর্কিত হিসেবে না দেখে উপায় নেই।
অন্যভাবে বলা যায়, জগতে কোন কিছুরই আলাদা ও স্বনির্ভর অস্তিত্ব নেই।
শেষোক্ত মতটি হেগেলের নীতি দর্শনের জন্য অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ। ম্যাকেন্জির ভাষায়, “আমাদের
নিজেদেরকে স্বতন্ত-সত্তা হিসেবে ভাবা উচিত নয় যার ফলে প্রত্যেকেই নিজেদের জন্য স্বতন্ত্রমঙ্গল
কামনা করবে। বরং আমাদের চিন্তা করা উচিত এমন একটি সামাজিক পদ্ধতির সদস্য হিসেবে যা
কমবেশি কল্পনার স্বচ্চতাসহ সব চাইতে পূর্ণ ধরনের মানবীয় অস্তিত্ব অন্বেষণ করে। তাগিদ দেয়া হয়
যে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই কর্তব্য হচ্ছে, সে যে নৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ তার স্বার্থে যা সে করতে পারে তার
জন্য চেষ্টা করা; সে যে প্রক্রিয়ার অংশ তাতে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে অবদান রাখা- তা সে অবদান যত
সামান্যই হোক। তাঁর সত্যিকারের আনন্দ এতেই নিহিত, ব্যক্তিগত সুখ উপভোগের মধ্যে নয়।”
হেগেল এভাবে নৈতিকতাকে পরিণামে সমাজ তথা রাষ্ট্রের অংগরূপে পরিগণিত করেন এবং আইনের
প্রতি আনুগত্যকে নৈতিক বাধ্যতার অন্তর্ভুক্ত করেন। “কিন্তু”, যেমন ম্যাকন্জি উল্লেখ করতে
ভুলেননি, “যে আইনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে তা কোন রাষ্ট্রের বাহ্যিক আইন নয়,
কিংবা কান্ট যেমন তাঁর শর্তহীন আদেশে নির্দেশ করেছেন বলে মনে হয়, তেমন সম্পূর্ণভাবে
অভ্যন্তরীণ কোন আইন নয়। এটা হলো ঐ আইন যা মানবীয় প্রকৃতি যা অর্জন করতে সমর্থ সেই
সর্বোচ্চ পূর্ণতা প্রাপ্তির প্রচেষ্টায় সমাজের বিকশিত সচেতনতা দ্বারা ক্রমে ক্রমে আকৃতি লাভ করে।”
হেগেলের পূর্ণতাবাদের ব্যাখ্যা প্রদান করে তেমন দুটি উক্তি খুবই প্রসিদ্ধ। এগুলো হচ্ছে :
(১) ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হও (ইব ধ ঢ়বৎংড়হ) : আত্ম-সচেতনতাই যদি মানুষের লক্ষ্য হয় এ তার মধ্যে
এমন একটি বোধের সৃষ্টি করে যাকে আমরা তার ব্যক্তিত্ববোধ বলতে পারি। এ ব্যক্তিত্ববোধ নিছক
অন্যান্য প্রাণীদের স্বাতন্ত্র্যবোধের মত নয়। মানুষ ব্যতীত অন্যান্য প্রাণীরা তাদের স্বতন্ত্রঅস্তিত্ব বুঝতে মানুষ আত্ম-সচেতনতায় পৌঁছে একটা দ্বা›িদ্বক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। জগতের সব কিছুতেই একটা আঙ্গিক ঐক্য রয়েছে।
পারে এই অর্থে যে, তারা অন্যের বিরুদ্ধে ভিন্ন সত্তা হিসেবে নিজেকে জাহির করে, অন্যকে তার
জীবন থেকে স্বতন্ত্রকরে দেখে এবং সময়ে নিজে পরিতৃপ্তির জন্য তাদের সংগে মারামারি করে। কিন্তু
মানুষ এর ঊর্ধ্বেও নিজ অস্তিত্ব সম্পর্কে চিন্তা করতে পারে। তার স্বাতন্ত্র্যবোধ তাকে যেখানে অন্যদের
থেকে আলাদা করে রাখে, তার ব্যক্তিত্ববোধের কল্যাণে তাদের সংগে সে নিজেকে জড়িত করে
ফেলে। আর এর ফলে সময়ে সে অপরের জন্য আÍোৎসর্গও করে। হেগেলের মতে ব্যক্তিত্ব বলতে
তাই নৈতিক ব্যক্তিত্বকে বুঝায়।
(২) বাঁচার জন্য মরো (উরব ঃড় ষরাব) : মানুষ যেহেতু আত্মসচেতন জীব এবং যেহেতু তার ব্যক্তিত্ব
রয়েছে, সেহেতু সে অপরাপর জীব থেকে পৃথক। কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে,
তাদের সংগে তার কিছু মিলও রয়েছে। যেমন তার রয়েছে কিছু ইন্দ্রিয়বৃত্তি। এগুলোকে দমন করতে
না পারলে প্রকৃত আত্ম-সচেতনতা তথা বৌদ্ধিক জীবন লাভ হয় না। অথচ ঐ জীবনেই রয়েছে
মানুষের মুক্তি তথা সমস্তক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতা ও স্বার্থপরতা থেকে মুক্তি। এ কারণে মানুষকে তার
প্রবৃত্তিগুলোকে দমন করতে হবে; অন্যকথায় তার জীববৃত্তিমূলক জীবনকে হত্যা করতে হবে। এতে
করে প্রকৃতপক্ষে সে বেঁচে যাবে। যেমন প্রফেসর সেথ বলেন, “আমাকে অবশ্যই মাংস তথা শরীরকে
(পল যাকে প্রাকৃতিক, আবেগমূলক ও ইন্দ্রিয়পরায়ণ বা অনৈতিক মানুষ বলেছেন) ক্রুশবিদ্ধ করতে
হবে, যদি আমি আধ্যাত্মিক জীবন যাপন করতে চাই। আমাকে অবশ্যই নি¤œতর জীবন থেকে
নিজকে বন্ধনমুক্ত করতে হবে যদি আমি উচ্চতর জীবন পাই। প্রত্যেকটি স্বার্থপর আবেগকে অবশ্যই
অস্বীকার করতে হবে অথবা সম্পূর্ণ যৌক্তিক সত্তাময় জীবনের আওতায় আনতে হবে ... মিথ্যা,
অযোগ্য, বিশেষ, স্বতন্ত্র, আলাদা সত্তাকে অবশ্যই লুপ্ত হতে হবে, যদি সত্যিকারের বৌদ্ধিক ব্যক্তিকে বেঁচে থাকতে হয়”। ইন্দ্রিয়বৃত্তি নির্মূল করে বৌদ্ধিক জীবন লাভ করাতেই মানুষের পূর্ণতা নিহিত।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। পূর্ণতাবাদ কাকে বলে? এ প্রসঙ্গে নৈতিক পূর্ণতাবাদের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করুন।
২। পূর্ণতাবাদ প্রসঙ্গে প্লেটো ও অ্যারিস্টটলের মত ব্যাখ্যা করুন।
৩। হেগেলীয় পূর্ণতাবাদ আলোচনা প্রসঙ্গে ‘ব্যক্তিত্বসমুন্ন হও’ এবং ‘বাচাঁর জন্য মরো’ নীতি দুটি
আলোচনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। সুফীদের দৃষ্টিতে ইনসান-ই- কামিল ছিলেন
ক. ইমাম গাজালী খ. রুশো
গ. হযরত মুহাম্মদ (স.)
২। প্লেটোর মতে আত্মার তিনটি অংশ রয়েছে
ক. প্রজ্ঞা, সাহস ও কামনা-বাসনা খ. বুদ্ধি, ক‚টকৌশল ও চতুরতা
গ. লোভ, কাম ও চতুরতা
৩। আনন্দ বা সুখের গ্রিক প্রতিশব্দ হলো
ক. ঊঁফধরসড়হরধ খ. ঊঃযড়ং
গ. ঞবষড়ং
৪। বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন ও অনিয়মিত বুদ্ধি-চর্চার দ্বারা সম্ভব নয়
ক. আত্ম-বাস্তবায়ন খ. অমরত্ব গ. যশ অর্জন।
৫। “জগতের সব কিছু এক পরম সত্তার প্রকাশ উক্তিটি করেছেন
ক. বাটলার খ. প্লেটো গ. হেগেল।
সত্য/মিথ্যা
১। পূর্ণতাবাদ ‘আত্ম-বাস্তবায়ন’ নীতি বলেও বহুল পরিচিত-সত্য/মিথ্যা।
২। নৈতিক পূর্ণতাবাদ বলতে মানুষের চরিত্র ও আচরণ সম্পর্কিত তার সম্ভাবনাসমূহের
বাস্তবায়নের নীতি বুঝায়- সত্য/মিথ্যা।
৩। ধর্মে কোন পূর্ণতাবাদ নেই- সত্য/মিথ্যা।
৪। স্টোয়িকগণ পূর্ণতাবাদী ছিলেন- সত্য/মিথ্যা।
৫। অ্যারিস্টটলের মতে মানুষের লক্ষ্য অর্জনই তার প্রকৃত কাজ এবং এ লক্ষ্য হাসিলের মধ্যেই
তার পূর্ণতা নিহিত- সত্য/মিথ্যা।
সঠিক উত্তর
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন: ১। গ ২। ক ৩। ক ৪। ক ৫। গ।
সত্য/মিথ্যা: ১। সত্য ২। সত্য ৩। মিথ্যা ৪। সত্য ৫। মিথ্যা ৬। সত্য।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]