এইচ. এ. প্রিচার্ডের স্বজ্ঞাবাদ ব্যাখ্যা করুন। তিনি কিভাবে প্লেটো, বাটলার, মিল এবং কান্ট ও ম্যূরের সমালোচনা করেন?

এইচ. এ. প্রিচার্ডের স্বজ্ঞাবাদ
জি. ই. ম্যূরের মত প্রিচার্ডেরও বিশ্বাস ছিল এই যে, নৈতিক বাক্যসমূহের জন্য কোন প্রমাণের
প্রয়োজন পড়ে না। তাঁর রচনার সংখ্যা বা আকার খুব বড় নয়, কিন্তু শীর্ষক একটি মাত্র প্রবন্ধে তিনি যা বলেছেন তাই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বুঝার জন্য
যথেষ্ট। তিনি নৈতিকতার ক্ষেত্রে আমাদের কার্যসমূহের সঠিকত্ব বা বাধ্যবাধকতার
ওপর সবিশেষ জোর দেন এবং এই মত প্রকাশ করেন যে, প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি অধিকাংশ
দার্শনিকই যে ভুলটি করেছেন তা হচ্ছে, তাঁরা কিছু কারণ প্রদর্শন করে আমাদের
কর্মসমূহের সঠিকত্ব বা বাধ্যবাধকতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। মূলত এই কারণগুলো হচ্ছে সঠিকত্ব
বা বাধ্যবাধকতার পেছনে কোন দূরবর্তী উদ্দেশ্যের বিবেচনা। প্রিচার্ড দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই ধরনের
প্রচেষ্টাকে ভ্রান্তবলেন এই কারণে যে, যা সঠিক অথবা যা আমাদের কর্তব্য তার জন্য কোন
বৈধায়নের প্রয়োজন পড়ে না, এরা স্বতঃসিদ্ধ এবং সরাসরি ও তাৎক্ষণিকভাবে বোধগম্য। অন্যকথায়
আমরা তাদেরকে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে বা স্বজ্ঞার সাহায্যে জানি।
যে দূরবর্তী উদ্দেশ্য বিবেচনায় নিয়ে দার্শনিকরা কোন কাজের সঠিকত্ব বা বাধ্যবাধকতা ব্যাখ্যা
করতে চান, প্রিচার্ডের মতে মোটামুটিভাবে তা দু‘ভাগে বিভক্ত :
(১) আমাদের কাজ সঠিক হয় যখন ঐ কাজটি আমাদের জন্য কোন সুবিধা, বা আরো ভালভাবে
বললে সুখের সংস্থান করবে।
(২) ঐ কাজটির মাধ্যমে আমরা যা পাব তা শুভ হবে।
প্রিচার্ডের মতে প্রথম দলে যেসব দার্শনিক রয়েছেন তাঁদের মধ্যে বিখ্যাত ক’জন হচ্ছেন, প্লেটো,
বাটলার, মিল প্রমুখ। দ্বিতীয় দলে রয়েছেন কান্ট ও ম‚্যর।
এসব দার্শনিকের বিরুদ্ধে প্রিচার্ডের একটা প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে : আমাদের কোন নৈতিক কাজের পেছনে
যদি কোন দূরবর্তী উদ্দেশ্যই থেকে থাকে, তাহলে আমরা কেন নিজের ক্ষতি স্বীকার করেও আমাদের
প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে থাকি? এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া যে খুব কঠিন তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর তাই
প্রিচার্ড নৈতিক কর্মসমূহকে সরাসরি পদ্ধতিতে বুঝার জন্য আমাদেরকে পরামর্শ দেন। এই প্রিচার্ডের স্বজ্ঞাবাদ কাজের সঠিকত্ব ও বাধ্যবাধকতার পেছনে কোন দূরবর্তী উদ্দেশ্যের ধারণা ভ্রান্ত। কাজের সঠিকত্ব ও বাধ্যবাধকতা দু‘ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রিচার্ড স্বজ্ঞা বলতে বুঝেছেন বৌদ্ধিক ব্যাপারকে।
পদ্ধতিটিকে স্বজ্ঞা বলা হলেও প্রিচার্ডের স্বজ্ঞার ধারণার একটা স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। তাঁর স্বজ্ঞায় বিচারবিবেচনার একটা বড় ভ‚মিকা রয়েছে, রয়েছে যথেষ্ট যতœ ও সতর্কতার ছাপ। তবে মূলত প্রিচার্ডের
স্বজ্ঞা একটি বৌদ্ধিক ব্যাপার যে জন্য অষ্টাদশ শতকের কয়েকজন স্বজ্ঞাবাদীর মত তাঁকেও একজন
বৌদ্ধিক স্বজ্ঞাবাদী বলা হয়।
এ অভিধা আরো যথার্থ প্রমাণিত হয় যখন আমরা দেখি যে তিনি নৈতিকতা ও গণিতের মধ্যে একটা
তুলনামূলক সম্পর্ক খুঁজে পান। গণিতের কোন সমস্যার যখন সমাধান হয় না তখন আমরা বারবার
চেষ্টা করে শেষপর্যন্তসমাধান খুঁজে পাই। একইভাবে কোন কাজের নৈতিকতা নিয়ে যদি আমাদের
মনে সন্দেহ জাগে, আমাদের উচিত বাস্তবে বা কল্পনায় একটা নৈতিক পরিস্থিতিতে নিজকে নিক্ষেপ
করা এবং আমাদের নৈতিক চিন্তার সামর্থ্যকে কাজ করতে দেয়া। এর ফলে আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে আমাদের সন্দেহের অপনোদন হবেই।
ডবিøও. ডি. রস ও তাঁর আপাত প্রতীয়মান সঠিকত্বের ধারণা
ম্যূর যেখানে শুভকে একমাত্র মৌলিক নৈতিক পদ বলে গ্রহণ করেছিলেন, সেখানে প্রিচার্ডকে আমরা
দেখেছি সঠিকত্ব বা বাধ্যবাধকতার ধারণার ওপর সবিশেষ জোর দিতে। রস এ দুটো ধারণার মধ্যে
একটা সমন্বয় করেন এভাবে যে, ‘শুভ’ ও ‘সঠিক’ দুটোই স্বনির্ভর শব্দ। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত তার
ঞযব জরমযঃ ধহফ ঃযব এড়ড়ফ নামক পুস্তকে তিনি এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তবে
সমকালীন নীতিদর্শনে রস বিখ্যাত তাঁর আপাত প্রতীয়মান সঠিকত্ব ও প্রকৃত সঠিকত্বের মধ্যে পার্থক্যকরণের তত্তে¡র কারণে।
আপাত প্রতীয়মান সঠিকত্বের পটভ‚মি
প্রিচার্ড মনে করেন, আমাদের নৈতিক ধারণাগুলো যদি গাণিতিক ধারণার মতই স্বতঃসিদ্ধ হয়,
তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, আমাদের শুভ-অশুভ ও সঠিক-বেঠিক এর ধারণার মধ্যে কোন
মতভেদ থাকতে পারে না, যেমন পারে না ২+২=৪ এই ধারণার ব্যাপারে কোন মতভেদ। একথা
মেনে নিলে এরপর যা মেনে নিতে হয়, তাহলো নৈতিকতার ব্যাপারে জোর জবরদস্তিই শেষকথা।
কেননা অত্যন্তস্পষ্ট জিনিষ যারা অস্বীকার করে তাদেরকে তা স্বীকার করতে বাধ্য করা ছাড়া আর
বিকল্প কি থাকতে পারে? এ ব্যাপারে স্যামুয়েল ক্লার্কের বক্তব্য আমরা উল্লেখ করতে পারি, তাঁর
মতে, “এই বিষয়গুলো (অনৈতিক ব্যাপারগুলো) এমনি কুবিদিতভাবে সহজ ও স্বতঃসিদ্ধ যে চরম
স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন মন, দুর্নীতিপরায়ণ অভ্যাস অথবা বিপথগামী মেজাজ ছাড়া অন্য কিছু এদের সম্পর্কে
সামান্যতম সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে না। কেননা একজন বুদ্ধিসম্পন্নলোকের পক্ষে এ জিনিষগুলোর
সত্যতা অস্বীকার করা এ কথারই নামান্তর যে একজন চক্ষুষ্মান ব্যক্তি সূর্য দেখেও অস্বীকার করে যে
পৃথিবীতে আলো বলতে কিছু আছে।”
স্পষ্টত ক্লার্কের বক্তব্যে এমন এক ধরনের অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পেয়েছে যা নৈতিক বিষয়ে জবরদস্তির
প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু এই ধরনের নৈতিক ভাবনা গ্রহণযোগ্য নয় এজন্য যে, এ মানুষের
স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করে। তাছাড়া বিংশ শতাব্দীর উদারমনা মানুষের কাছে এর আবেদন নেই
বললেই চলে। এরই ফল হলো রসের আপাত প্রতীয়মান সঠিকত্বের তত্ত¡। আমরা নি¤েœতত্ত¡টির মূল বক্তব্য ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব। আপাত প্রতীয়মান সঠিকত্ব স্যামুয়েল ক্লার্কের সমালোচনা
আপাত প্রতীয়মান সঠিকত্ব
এ পর্যায়ে আমাদেরকে প্রথমেই স্বজ্ঞাবাদী ঐতিহ্যে ‘সঠিকত্ব’ শব্দটির অর্থ সম্পর্কে কিছু ধারণা
থাকতে হবে। একে এককথায় বলা যায় এক ধরনের সঙ্গতি বা সামঞ্জস্যপূর্ণতা কোন
বিশেষ পরিস্থিতিতে স্বতঃ যার উদ্ভব ঘটে। অন্যকথায়, কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে আমাদের মনে যা
মানানসই ঠেকে তাই ‘সঠিক’ বলে স্বজ্ঞাবাদীরা মনে করেন। অষ্টাদশ শতকের
স্বজ্ঞাবাদীদের কাছে এই সঙ্গতির ব্যাপারটি ছিল একেবারে অবিমিশ্র ও বিশুদ্ধ; যেমন ক্লার্কের মতে,
এটা ছিল এক ধরনের আইন (জঁষব) যা আল্লাহর ইচ্ছাকেও চালিত করে। রস সঠিকত্বের এই চরম
বিশুদ্ধতার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তাঁর মতে কোন কাজের সামঞ্জস্যপূর্ণতায় একটা মাত্রাগত
ব্যাপার রয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, যে কোন মাত্রার সামঞ্জস্যপূর্ণতা একটি কাজকে সঠিক
বানাতে পারে না; তাঁর মতে শুধুমাত্র কোন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য সব চাইতে বেশি পরিমাণ
সামঞ্জস্যপূর্ণতাই একটি কাজকে সঠিক করে তুলে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন :
“আমরা এমন একটা ব্যাপার বিবেচনা করতে পারি যাতে একজন লোক দুটো প্রতিজ্ঞা করেছে এবং
একটিকে ভঙ্গ না করে অপরটি পূরণ করতে পারে না। যদি আমরা সিদ্ধান্তনেই যে ‘খ’ এর স্থলে তার
‘ক’ প্রতিজ্ঞাটি পূরণ করা উচিত, অথবা এর উল্টোটি, তাহলে দুটো কাজের প্রত্যেকটিরই কিছু
পরিমাণ সঠিকত্ব থাকবে, কেননা প্রত্যেকটিই হবে প্রতিজ্ঞা পূরণের কাজ এবং কোনটিই সম্পূর্ণ
সঠিক হবে না এজন্য যে প্রত্যেকটিতেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের ব্যাপার রয়েছে। আমরা ঐ কাজটিকেই
সঠিক বলব যা, এই পরিস্থিতিতে যা সম্ভব তার মাঝে সব চাইতে বেশি সঙ্গত। অন্য কাজটিকে
সঠিক বলা যাবে না, শুধু বলা যাবে, বিশেষ দিক থেকে সঠিক।”
রসের উদাহরণ থেকে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার ব্যাপারটি নিয়ে আমাদের কোন
সন্দেহ নেই, কিন্তু পরিস্থিতি ভেদে এর সঠিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং শেষপর্যন্তআমরা কোন
প্রতিজ্ঞাটি রক্ষা করব যা সব চাইতে বেশি সঠিক তা ঠিক করি নানা বিচার-বিবেচনার পর।
অন্যকথায় আমরা মনে মনে দুটো প্রতিজ্ঞার ব্যাপারকে ওজন করি এবং যা সব চাইতে ভারী ঠেকে
তাকে প্রকৃতভাবে সঠিক বলে গ্রহণ করি। এর অর্থ হচ্ছে এই যে, প্রতিজ্ঞার ব্যাপারকে আমরা
প্রথমত ‘আপাত প্রতীয়মান সঠিক (চৎরসধ ভধপরব ৎরমযঃ) বলে ধরে নেই যা প্রকৃতপক্ষে স্বজ্ঞাপ্রসূত।
এরপর নানা বিচার-বিবেচনা তথা ওজনের পর এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্তটি হয় তা কিন্তু স্বজ্ঞাপ্রসূত নয়,
যদিও একে আমরা প্রকৃত সঠিক বলব।
রস স্বজ্ঞাপ্রসূত এই ধরনের বেশ কয়েকটি “আপাত প্রতীয়মান সঠিকত্বের “সমান্তরালে বেশ কটি
আপাত প্রতীয়মান কর্তব্যের (উঁঃু)কথা বলেছেন। এগুলো হচ্ছে: (১) সততা প্রদর্শন (ঋরফবষরঃু)
(২) কৃতজ্ঞতা (৩) ন্যায়পরায়ণতা (৪) অন্যের হিতসাধ
(৫) আত্ম-উন্নয়ন (৬)অন্যের ক্ষতিসাধন না করা
রস স্বীকার করেন যে, এছাড়াও আরো কিছু কর্তব্য থাকতে পারে যাদের সঠিকত্ব আমরা স্বজ্ঞার
মাধ্যমে জানি।
স্বজ্ঞাবাদের সমালোচনা
ইউনিট ৪ এ মানমূলক নীতিতত্ত¡ হিসেবে স্বজ্ঞাবাদের আলোচনাশেষে এর দুর্বলতাগুলো আমরা সনাক্ত
করেছিলাম। বর্তমান ইউনিটেও অর্থ সম্পর্কিত স্বজ্ঞাবাদের আলোচনার গোড়াতেই আমরা দেখেছি,
একজন স্বজ্ঞাবাদী দার্শনিক নিজেকে একজন সনাতন স্বজ্ঞাবাদী হিসেবে পরিচয় দিতে অস্বীকার আপাত প্রতীয়মান সঠিকত্বের মূল বক্তব্য কয়েকটি আপাত প্রতীয়মান কর্তব্য
করছেন। এ থেকেই স্বজ্ঞাবাদের দুর্বলতা আবারো আমাদের চোখে ধরা পড়ে। কিন্তু স্বজ্ঞাবাদের
সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ধরা পড়ে জ্ঞানের বৃত্তি হিসেবে এর যথার্থতা সম্পর্কে জানতে চাইলে। এ বিষয়ে এবার আমরা কিছু আলোচনা করব।
আমরা স্বজ্ঞার সাহায্যে কি জানতে পারি?
স্বজ্ঞাবাদীরা দাবি করেন যে, স্বজ্ঞা প্রত্যক্ষ ও স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান দিয়ে থাকে, যার অর্থ হচ্ছে এ জ্ঞান
একেবারে নিশ্চিত, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নিশ্চিত বলতে তাঁরা কি বুঝান? এর অর্থ কি নিশ্চিত অনুভব করা
না নিশ্চিত হওয়া ? দুটোর মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট। স্বজ্ঞাকে যদি আমরা
‘নিশ্চিত অনুভব’ অর্থে গ্রহণ করি তাহলে এ সত্যজ্ঞান দিতে পারে না, কেননা আমাদের অনুভব
আমাদেরকে প্রতারিত করতে পারে। এই অর্থে স্বজ্ঞা আমাদেরকে যা দিতে পারে তা হচ্ছে বিশ্বাস যা
প্রকৃত জ্ঞান নয়।
অবশ্য প্রশ্ন করা যায়, যদি আমরা আমাদের বিশ্বাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত বোধ করি এবং চুড়ান্ত
বিচারে এর সত্যতা মিলে তাহলেও কি তাকে আমরা জ্ঞান বলব না? এ ব্যাপারে এ. জে. এয়ারের
মত হলো, অনেক কুসংস্কার রয়েছে যার ব্যাপারে আমরা অত্যন্তনিশ্চিত থাকি এবং তাদেরকে সত্য
হতেও দেখা যায়, কিন্তু এতদ্সত্তে¡ও তাদেরকে আমরা সত্যজ্ঞান বলব না এজন্য যে, যখন কেউ
কোন ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার দাবি করে, তখন তাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, নিশ্চিত
হওয়ার ব্যাপারে তার অধিকার রয়েছে। ‘কেমন করে তুমি জান?’ এই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিয়ে
সে তা করতে পারে। একজন স্বজ্ঞাবাদীর অসুবিধেটা এখানেই। তাঁর স্বজ্ঞাপ্রসূত জ্ঞানের সত্যতাকে
তিনি কিছুতেই প্রতিপাদন করতে পারবেন না, কেননা এটা করতে হলে তাকে অন্য কোন মানদন্ডের
দ্বারস্থ হতে হবে আর তিনি যদি তাই করেন তবে তার জ্ঞানকে আর স্বজ্ঞা বলা যাবে না, কেননা
স্বজ্ঞা তো অন্য কিছুর সাহায্য ছাড়াই প্রত্যক্ষভাবে জ্ঞান দেয় তিনি দাবি করেন।
তবে স্বজ্ঞার পক্ষেও মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য কিছু যুক্তি রয়েছে; যেমন (১) স্বজ্ঞা সত্যিই জানতে
পারে, তবে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা তার জানার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন মানুষের মনো-
দৈহিক কাঠামোতে এমন কিছু দুর্বলতা রয়েছে স্বজ্ঞাকে অনেক সময় যা অচল করে দেয়। মানুষের
স্মরণশক্তি, ইন্দ্রিয়াদির দুর্বলতা বা প্রাবল্যের কথা তারা এ ব্যাপার উল্লেখ করতে পারে। (২)
স্বজ্ঞাকে প্রথমেই একটি পূর্ণ বিকশিত বৃত্তি হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। একজন চা-পরীক্ষাকারী
যেমন বহু অভ্যাসের ফলে চা’র স্বাদ থেকে তার গুণের বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে, মানুষের স্বজ্ঞাও
তেমনি অভ্যাস ও অনুশীলনের ওপর নির্ভরশীল। স্বজ্ঞার চর্চা যখন কম থাকে তখন এর মাধ্যমে ভুল
সিদ্ধান্তেপৌছা স্বাভাবিক ব্যাপার। এই ধরনের যুক্তি জ্ঞানের বৃত্তি হিসেবে স্বজ্ঞাকে একটা সম্ভাব্যতা
অবশ্যই দেয় যদিও চ‚ড়ান্তভাবে তার সত্যতা প্রতিপাদিত হয় না।
পরানীতিবিদ্যার বিষয় হিসেবে স্বজ্ঞাবাদ আরেকটা যে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে তা হচ্ছে নৈতিকতার
ক্ষেত্রে অপ্রকৃতিবাদ কি গ্রহণযোগ্য? বিশেষ করে ম্যূরের প্রকৃতিবাদী অনুপপত্তি সম্পর্কেই এই পর্যায়ে
বিভিন্ন আপত্তি উত্থাপন করা হয়। ফ্রাংকেনা তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ (ঞযব ঘধঃঁৎধষরংঃরপ ঋধষষধপু) তে
বলেছেন যে মূরের অপ্রকৃতিবাদী কথাটিই সঠিক নয়। তাঁর মতে, ম্যূরের মূল বক্তব্য হচ্ছে, শুভকে
যখন প্রাকৃতিক কোন বস্তু বা গুণ দ্বারা সংজ্ঞা দেয়া হয়, তখন তা অনুপপত্তি ঘটায় এই কারণে যে,
এই সংজ্ঞার মাধ্যমে শুভ যা নয় তার সঙ্গে তাকে অভিন্ন করে দেখা হয়। কিন্তু ফ্রাংকেনা যুক্তি দেন,
শুধু প্রাকৃতিক কোন কিছুর সঙ্গে শুভকে অভিন্ন মনে করলেই যে এই অনুপপত্তি ঘটবে তা নয়, অন্য
যে কোন কিছুর সঙ্গে তার অভিন্নতা প্রদর্শনেও তাই ঘটবে। যেমন ম্যূর নিজেই স্বীকার করেছেন
অধিবিদ্যক কোন কিছু দিয়ে শুভের সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করলেও একই অনুপপত্তি ঘটবে। এই দিক স্বজ্ঞা শুধু বিশ্বাসই দিতে পারে।
থেকে ফ্রাংকেনা ম্যূর কথিত অনুপত্তিটিকে সংজ্ঞেয় অনুপপত্তি নাম দেন এবং
এর বিপদ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। তাঁর ভাষায়, “যদি মি. ম্যূরের বাণী (বা সংজ্ঞেয়
অনুপপত্তি) শুভের (উদাহরণস্বরূপ) যে কোন সংজ্ঞা অস্বীকার করে তাহলে যে কোন পদের সমস্ত
সংজ্ঞাকেই এ অস্বীকার করবে। ... এর ফলে একটি ভেড়াহীন বিশ্বে ইংরেজ কসাই এর যে অবস্থা
হবে, বিশ্লেষণের পদ্ধতিরও তেমন অবস্থা হবে।”
প্রাকৃতিক অনুপত্তির ভিত্তি ম্যূরের উন্মুক্ত প্রশ্ন যুক্তিটি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। সি. ড. ব্রডের
মতে যদিও ম্যূরীয় অর্থে শুভের সংজ্ঞা পুনরুক্তি ঘটায়, এই পুনরুক্তি সম্পূর্ণভাবে তাৎপর্যহীন নয়।
ব্রডের যুক্তি হলো, যে কোন পদকে বিশ্লেষণযোগ্য হতে হলে দুটো শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে:
(১) যে ব্যক্তি কোন জিনিষের বিশ্লেষণ সঠিক কিনা তা জানার চেষ্টা করছে তার অবশ্যই আগে ঐ
জিনিষটি সম্পর্কে অল্পবিস্তর ধারণা থাকতে হবে এবং (২) তার এ ধারণাকে এ জিনিষটির প্রকৃত
ধারণা থেকে ভিন্ন হতে হবে। এ দুটো শর্ত না থাকলে বস্তুটির সঠিক বিশ্লেষণের প্রশ্ন ওঠে না।
এখন, ব্রড যুক্তি দেন, যদি শুভের ক্ষেত্রে এই শর্তগুলো পূরিত হয় তাহলে এই ধরনের লোকদের
সম্পর্কে ধারণা করা খুবই সম্ভব যারা শুভ শব্দটির সঠিক অর্থ না জেনেই তার ব্যবহারে অভ্যস্ত।
এক্ষেত্রে যদি কেউ তাদেরকে শুভের সঠিক অর্থ বলে দেয়, তাহলে তার বিবৃতিটি তাদের জন্য তাৎপর্যহীন পুনরুক্তি হবে না।
এসব সমালোচনা সত্তে¡ও বিংশ শতাব্দীতে পরানীতিবিদ্যার গোড়াপত্তনকারী হিসেবে মূরের গুরুত্বকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। একই সঙ্গে প্রিচার্ড ও রসের বিশ্লেষণেও যে প্রচুর যৌক্তিকতা রয়েছে তাও আমাদের না মেনে উপায় নেই।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। এইচ. এ. প্রিচার্ডের স্বজ্ঞাবাদ ব্যাখ্যা করুন। তিনি কিভাবে প্লেটো, বাটলার, মিল এবং কান্ট ও ম্যূরের সমালোচনা করেন?
২। ডবিøও. ডি. রসের আপাত প্রতীয়মান সঠিকত্ব ও প্রকৃত সঠিকত্বের মাঝে পার্থক্য করুন।
৩। স্বজ্ঞাবাদের মূল্যায়নমূলক আলোচনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। প্রিচার্ড-এর স্বজ্ঞাবাদে বিচার-বিবেচনার ভ‚মিকা রয়েছে বলেই তিনি
ক. বুদ্ধিবাদী স্বজ্ঞাবাদী খ. অভিজ্ঞতাবাদী
গ. বুদ্ধিবাদী
২। নৈতিকতা ও গণিতের মাঝে তুলনা করেন
ক. হিউম খ. প্রিচার্ড
গ. ম্যূর
৩। ডবিøউ. ডি. রসের গ্রন্থের নাম হল
ক. ঞযব জরমযঃ ধহফ ঃযব এড়ড়ফ খ. চৎরহপরঢ়রধ ঊঃযরপধ
গ. ঊঃযরপধষ ঝঃঁফরবং
৪। আপাত প্রতীয়মান কর্তব্যের একটি হল
ক. চিন্তা খ. জ্ঞান
গ. প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা
৫। কৃতজ্ঞতা হলো একটি
ক. আপাত প্রতীয়মান কর্তব্য খ. প্রকৃত কর্তব্য
গ. বাস্তব কর্তব্য
সত্য/মিথ্যা
১। রস ও প্রিচার্ড দুজন বৌদ্ধিক স্বজ্ঞাবাদী - সত্য/মিথ্যা।
২। প্রিচার্ডের মতে যা সঠিক বা যা আমাদের কর্তব্য তার জন্য আমাদের কোন প্রকার বৈধায়নের
প্রয়োজন পড়ে না- সত্য/মিথ্যা।
৩। ‘যে কাজ সুবিধা বা সুখের সন্ধান দেয় তা সঠিক’- উক্তিটি কান্টের - সত্য/মিথ্যা।
৪। রস আপাত প্রতীয়মান সঠিকত্ব ও প্রকৃত সঠিকত্বের মাঝে পার্থক্য করেছেন- সত্য/মিথ্যা।
৫। ক্লার্কের মতে নৈতিকতার প্রশ্নে শেষ পর্যন্তকিছুটা জবরদস্তিথাকতে পারে- সত্য/মিথ্যা।
সঠিক উত্তর
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন : ১। ক ২। খ ৩। ক ৪। গ ৫। ক।
সত্য/মিথ্যা: ১। সত্য ২। সত্য ৩। সত্য ৪। সত্য ৫। সত্য।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]