ভ‚মিকা নির্বিচারবাদের বিপরীত পদ্ধতিই হলো বিচারবাদ। নির্বিচারবাদ বিনা বিচারে একটি
মতবাদকে গ্রহণ করে; পক্ষান্তরে, বিচারবাদ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি মতবাদকে গ্রহণ
করে। বিচারবাদের মূলকথা হলো, কোনো দার্শনিক সমস্যা আলোচনার পূর্বে ঐ সমস্যাটি
কোন্ োপদ্ধতিতে আলোচনা করা যথাযথ হবে তা বিবেচনা করা। প্রকৃত দার্শনিক সমস্যা
আলোচনার প র্বে অবশ্যই দেখতে হবে ঐ বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব কিনা? অথবা ঐ
সমস্যাটি সমাধানযোগ্য কিনা?
বিচারবাদ
জ্ঞানের সম্ভাবনা, শর্ত, সীমা ও বৈধতা সম্পর্কে যথাযথভাবে আলোচনা করে দার্শনিক
তত্ত¡ালোচনার যে পদ্ধতি তাকে বিচারবাদ বলে। বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি দার্শনিক
আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এই বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি কম-বেশি সকল সময়ে
দার্শনিক আলোচনায় উপস্থিত ছিল। গ্রিক দর্শন, ভারতীয় দর্শন প্রভৃতি প্রাচীন দার্শনিক
আলোচনায় আমরা এই বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই। এটি প র্ণতা লাভ করে আধুনিক দর্শনে,
কান্টের হাতে। কান্ট তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ঈৎরঃরয়ঁব ড়ভ চঁৎব জবধংড়হ’ এ বলেন, প্রথমে
সরাসরি সমস্যা নিয়ে আলোচনা না করে সমস্যাটি যে পদ্ধতিতে আলোচনা করা হচ্ছে বা হবে
সেই পদ্ধতির ক্ষমতা বা যথার্থতা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন এবং সেভাবেই তিনি
আলোচনা করে জ্ঞানের উৎপত্তিবিষয়ক মতবাদ ‘বিচারবাদ’ প্রদান করেন।
হিউমের দার্শনিক আলোচনাই কান্টকে এই পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য প্রেরণা দেয়। এজন্য
কান্ট বলেন, হিউমই আমাকে নির্বিচারবাদের নিদ্রা থেকে জাগরিত
করেন। তবে যে যুক্তির মাধ্যমে হিউম সংশয়বাদে উপনীত হন সেই যুক্তি কান্টের মতে
ত্রæটিমুক্ত নয়। কান্ট উপলব্ধি করেন যে, হিউমের মতবাদের মূলে রয়েছে বিচারের অভাব,
জ্ঞানের বিশ্লেষণের অভাব। কান্ট দেখেন যে, জ্ঞানের শর্ত দু’রকম -অভিজ্ঞতা ও বিচারবুদ্ধি।
অভিজ্ঞতাই জ্ঞান লাভের একমাত্র উৎস নয়। জ্ঞানের একটি মাত্র উপকরণকেই একমাত্র
উপকরণ মনে করে হিউম ভুল করেছেন। যথার্থ জ্ঞান অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি এ দুয়ের সংযোগের
ফল। প্রত্যেক বস্তুর যেমন উপাদান ও আকার থাকে, ঠিক তেমনি জ্ঞানেরও উপাদান ও
আকার আছে। তাঁর মতে, দর্শনের যথাযথ পদ্ধতি হলো প্রতিষ্ঠিত জ্ঞান নিয়ে শুরু করে
বিচারের দ্বারা সেই নীতিগুলি নিরূপণ করা, যা সেই জ্ঞানকে সম্ভব করে তুলেছে। জ্ঞানের
বিশ্লেষণ করে কান্ট যেমন একদিকে জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করেন, তেমনি
জ্ঞানের সীমাও নির্দেশ করেন।
আধুনিক চিন্তার অগ্রদ ত বেকন (১৫৬১-১৬২৬), পূর্বধারণা বা কুসংস্কার বর্জন করে সত্য
সন্ধানের চেষ্টা করেন। আর আধুনিক দর্শনের জনক রেনে ডেকার্ট (১৫৯৬-১৬৫০), সমস্ত পূর্ব
ধারণা ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তাঁর পদ্ধতিগত সংশয় ( প্রয়োগ করেন। লক
তাঁর (১৬৯০) গ্রন্থে বলেন, আমরা
জ্ঞানগত সমস্যাকেই প্রথম ব্যাপকভাবে আলোচনা করবো। আধুনিক দর্শনের উল্লেখযোগ্য
বৈশিষ্ট্য হলো প্রাধিকার বিরোধী সবিচার দৃষ্টিভঙ্গি বা মেজাজ। বিশেষ করে কান্টের সময়
থেকে আধুনিক দর্শনে পদ্ধতিতাত্তি¡ক আগ্রহই প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। পদ্ধতিতাত্তি¡ক অনুসন্ধান
হলো অবশ্যম্ভাবীভাবে বিশ্লেষণমূলক; আর এ কারণে পদ্ধতিতাত্তি¡ক আলোচনাই আধুনিক
কালের বিশ্লেষণী দর্শনের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে।
সমালোচনা
১. কান্ট যথার্থই বলেন, সুশৃঙ্খল অধিবিদ্যক ব্যবস্থার জন্য বিচারবাদ হলো
প্রয়োজনীয় পূর্ব-প্রস্তুতি। দর্শন যেহেতু সন্দেহাতীত জ্ঞানের সন্ধান করে সেহেতু এর দৃষ্টিভঙ্গি
তথা আলোচনা-পদ্ধতি বিচারমূলক হওয়াই স্বাভাবিক। এ কারণে নিশ্চিত করে বলা যায় যে,
বিচারবাদ নির্বিচারবাদের চেয়ে উত্তম।
২. বিচারবাদ যেহেতু কোনো দার্শনিক সমস্যা আলোচনার পূর্বে ঐ সমস্যা সংক্রান্ত মতবাদ,
বিশ্বাস বা সংস্কারের সবিচার মূল্যায়ন করে এবং বিষয়টি কি পদ্ধতিতে ও কোন্ োপরিপ্রেক্ষিতে
আলোচনা করা যথাযথ হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে সেহেতু এই মতবাদ মূল দার্শনিক
সমস্যার তুলনায় পদ্ধতিতাত্তি¡ক আলোচনায় সাধারণত ব্যাপৃত হয়ে পড়ে। অতি বিচারবাদী
দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আধুনিক দর্শনে পদ্ধতিতাত্তি¡ক আলোচনাই বেশি দৃষ্ট হয়।
উপসংহার
বিচারবাদ হলো দার্শনিক আলোচনার এমন একটি পদ্ধতি বা দৃষ্টিভঙ্গি যা দার্শনিক সমস্যা
আলোচনার পূর্বে তার সীমা, শর্ত ও বৈধতা নিয়ে আলোচনা করে। গোড়াতেই যাতে গলদ না
থেকে যায় এবং যথাযথভাবে সত্য সন্ধান করা যায়, সেজন্য বিচারবাদের এই প্রক্রিয়া
নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ও দর্শনসম্মত।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। দার্শনিক আলোচনার পদ্ধতি হিসেবে বিচারবাদ আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। বিচারবাদের সংজ্ঞা দিন।
২। নির্বিচারবাদের সাথে বিচারবাদের পার্থক্য আলোচনা করুন।
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি কম-বেশি দেখা
যায়
র) প্রাচীন যুগে
রর) মধ্যযুগে
ররর) আধুনিক যুগে
রা) সকল যুগে
২। বিচারবাদ পূর্ণতা লাভ করে
র) হিউমের হাতে
রর) কান্টের হাতে
ররর) কোঁতের হাতে
রা) লকের হাতে
৩। দার্শনিক আলোচনার উল্লেখযোগ্য
বৈশিষ্ট্য হলো
র) নির্বিচার দৃষ্টিভঙ্গি
রর) বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি
ররর) সংশয়মূলক দৃষ্টিভঙ্গি
রা) সবগুলো
৪। নির্বিচারবাদের নিদ্রা থেকে কান্টকে
জাগরিত করেন।
র) ডেকার্ট
রর) হিউম
ররর) লক
রা) বেকন
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। নির্বিচারবাদের বিরুদ্ধ মতবাদ হলো বিচারবাদ।
২। বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি আমরা সর্বপ্রথম দেখতে পাই আধুনিককালে।
৩। জ্ঞানের বিশ্লেষণ করে জ্ঞানের সীমা নির্দেশ করেন হিউম।
৪। আধুনিক দর্শনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো প্রাধিকার বিরোধী সবিচার দৃষ্টিভঙ্গি।
সঠিক উত্তর
ক.
১। র) প্রাচীন যুগে ২। রর) কান্টের হাতে ৩। রর) বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ৪। রর) হিউম
খ.
১। স ২। মি ৩। মি ৪। স
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত