হেয়ার-এর নৈতিক মতবাদের দুটি যৌক্তিক নিয়ম সংক্ষেপে প্রেক্ষাপটসহ আলোচনা করুন।

ব্যবস্থাবাদের উদ্ভবকে অতি সাম্প্রতিক ঘটনা বলা চলে। ১৯৫২ সালে
নামক পুস্তক লিখে ব্রিটিশ দার্শনিক আর. এম. হেয়ার এই নীতি তত্ত¡টি প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে এ
ব্যাপারে তাঁর আরো কটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে খুবই প্রসিদ্ধ।
হেয়ার তাঁর পূর্বসূরি আবেগবাদীদের মত নৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে ছিলেন প্রকৃতিবাদ বিরোধী। তবে
আবেগবাদীদের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য যে, তিনি নৈতিক অবধারণগুলোকে তাঁদের মত মনস্তাত্তি¡ক
দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেননি। তিনি এদের মধ্যে যুক্তির অন্বেষণ করেছেন এবং এ করতে গিয়ে
একদিকে যেমন জি. ই. ম্যূরের অপ্রকৃতিবাদী তত্ত¡ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, তেমনি তাঁর সময়ে
প্রচলিত অর্থতত্ত¡অনুসারে এই মতও গ্রহণ করেছেন যে, নৈতিক পদগুলোর অর্থ নির্ভর করে তাদের
ব্যবহারের দ্বারা। তাঁর মতে ‘শুভ’ তথা সমস্তনৈতিক পদকেই আমরা ব্যবহার করি ব্যবস্থা তথা
আদেশ প্রদানের জন্য, কেননা একটা বিশেষ মুহূর্তে ‘আমি কি করব’ এই প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে এদের
ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ ব্যাপারে হেয়ার তাঁর ঞযব খধহমঁধমব ড়ভ গড়ৎধষং এর শুরুতেই
নৈতিকতাকে কতগুলো আচরণ সম্পর্কিত নীতিমালার সমার্থক আখ্যা দিয়ে, এই নীতিগুলো যে মূলত
কতগুলো ব্যবস্থাপত্র (চৎবংপৎরঢ়ঃরড়হ) সে কথা উল্লেখ করেন। হেয়ারের তত্তে¡র বিশ্লেষণে এখানে বলা
যায় যে, ‘চুরি করো না’, ‘মিথ্যা কথা বলো না’, ‘প্রতিজ্ঞা রক্ষা করো’, এসব কথার মধ্যেই
নৈতিক;তার মূল নিহিত আর এরা এক ধরনের ব্যবস্থাপত্র বৈ কিছু নয়। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা
যাবে, এই ব্যবস্থাপত্রগুলো কোন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে শুধু প্রযোজ্য নয়, সকলের জন্যই সমভাবে
প্রযোজ্য। অন্যকথায় নৈতিক অবধারণগুলো এক ধরনের সর্বজনীন ব্যাপার।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমাদের কাছে ব্যবস্থাবাদ সম্পর্কিত যে ক‘টি উল্লেখযোগ্য বিষয়
স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে তা হচ্ছে: (১) ব্যবস্থাবাদ নৈতিক অবধারণের ক্ষেত্রে যৌক্তিক পদ্ধতির
অনুসারী, (২) এ নৈতিক অবধারণকে ব্যবস্থাবাদী অবধারণ বলে মনে করে এবং (৩) এ মনে করে
যে, নৈতিক অবধারণের সঙ্গে অন্যান্য অবধারণের পার্থক্য এই যে, নৈতিক অবধারণ
সর্বজনীনকরণযোগ্য। এখন আমরা ব্যবস্থাবাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।
১. নৈতিকতা ও যৌক্তিক পদ্ধতি
আবেগবাদীদের মতবাদে যুক্তির কোন স্থান নেই এটা না বললেও চলে। তাঁরা ছাড়াও অনেক
যুক্তিবিদই রয়েছেন যাঁরা মনে করেন যে, নৈতিক অবধারণের ক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যার নীতি অচল।
তাঁদের যুক্তি হলো, (১) যৌক্তিক অনুমানে যে যুক্তিবাক্য ব্যবহৃত হয় তা মূলত বর্ণনামূলক। এদের
থেকে কেবল বর্ণনামূলক সিদ্ধান্তই পাওয়া যেতে পারে। সিদ্ধান্তটি যদি আদেশবাচক বা অন্য যে কোন
অর্থবাচক হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, তা অবৈধভাবে গৃহীত হয়েছে। (২) যদি বলা হয় যে,
যৌক্তিক অনুমানে বর্ণনামূলক যুক্তিবাক্যের পাশাপাশি অন্য অর্থবাচক, যেমন আদেশবাচক যুক্তিবাক্য
থাকতে পারে, তাহলে প্রশ্ন দাঁড়াবে এই যে, এই ভিন্নধর্মী যুক্তিবাক্যগুলোর মধ্যে যৌক্তিক সম্পর্ক
কিভাবে স্থাপিত হবে?
প্রথমেই দ্বিতীয় যুক্তিটির ব্যাপারে হেয়ারের বক্তব্যকে স্পষ্টভাবে বুঝার চেষ্টা করা যাক। এ ব্যাপারে
হেয়ার যা বলেন তা হচ্ছে, আদেশবাচক ও বর্ণনাবাচক যুক্তিবাক্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনকারী এমন
একটা উপাদান রয়েছে যার ফলে তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব। প্রথমেই আমরা দেখব কি করে এটা সম্ভব।
হেয়ারের ফ্রেসটিক ও নিউস্টিক
হেয়ার তাঁর দাবি প্রমাণের জন্য নি¤েœাক্ত দুটি বাক্য গ্রহণ করেন:
তুমি দরজাটি বন্ধ করতে যাচ্ছ।
তুমি দরজাটি বন্ধ কর।
দেখা যাচ্ছে প্রথম বাক্যটি বর্ণনাবাচক এবং দ্বিতীয় বাক্যটি আদেশবাচক। হেয়ারের মতে দুটো
বাক্যেই যে জিনিষটা সাধারণভাবে বর্তমান তা হচ্ছে : নিকট ভবিষ্যতে তোমার দরজা বন্ধ করা।
উভয় ধরনের বাক্যে লুক্কায়িত এই সাধারণ উপাদানটিকে হেয়ার নাম দেন চযৎধংঃরপ যা একটি গ্রিক
ভাষাজাত শব্দ এবং যার অর্থ হচ্ছে নিদের্শ করা বা দেখানো। এর বিপরীতে, অর্থাৎ যে ব্যাপারে
ওপরোক্ত দুটি বাক্যের মধ্যে মিল নেই, ঘবঁংঃরপ বলে আরেকটি শব্দ হেয়ার ব্যবহার করেন। এর
অর্থ হচ্ছে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জ্ঞাপন। একটি আদেশবাচক বাক্য ও একটি বর্ণনাবাচক বাক্যের
মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তাকে অতঃপর হেয়ার এভাবে বর্ণনা করেন:
আদেশবাচক : নিকট ভবিষ্যতে তোমার দরজাটি বন্ধ করা- দয়া করে চষবধংব
বর্ণনাবাচক : নিকট ভবিষ্যতে তোমার দরজাটি বন্ধ করা- হ্যাঁণবং
এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যাকে তিনি ফ্রেসটিক নাম দিয়েছেন তার দিক থেকে আদেশ এবং
বর্ণনাবাচক বাক্যের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অপরপক্ষে যাকে তিনি নিউসটিক বলেছেন তার দিক
থেকে দু’ধরনের বাক্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে দু’ধরনের যে নিউসটিকের কথা তিনি বলেছেন
তাদের মধ্যেও একটা সাধারণ ঐক্য রয়েছে এই অর্থে যে ‘দয়া করে’ বা ‘হ্যাঁ’ যাই বলা হোক না
কেন, দুটোই দৃঢ়তা সহকারে কোন ব্যাপারে কোন কিছু করা বুঝায়, নিরাসক্তভাবে নয়। হেয়ারের
মতে এসবই প্রমাণ করে যে, আদেশবাচক ও বর্ণনাবাচক শব্দের মধ্যে একটা সম্পর্ক এমনিতেই
রয়েছে। আর এ কারণে যুক্তিবিদদের এ ধারণা ঠিক নয় যে, তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক স্থাপন করা
যাবে না।
এবার প্রথম যুক্তিটির বিষয়ে হেয়ার যা বলেন সে প্রসঙ্গে আসা যাক। তিনি সনাতন যুক্তিবিদদের এই
ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন যে, কোন যৌক্তিক অনুমানে শুধু বর্ণনামূলক বাক্যই ব্যবহৃত হবে। তিনি নৈতিক অবধারণের ক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যার অপ্রাসঙ্গিকতার পক্ষে প্রদত্ত দুটি কারণ।
অ্যারিস্টটলের ব্যবহারিক সহানুমানের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, আদেশবাচক বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত
অনুসৃত হতে পারে। এ ব্যাপারে তাঁর দেয়া একটি উদাহরণ হচ্ছে:
এটা বাক্সগুলোর মধ্যে একটা সুতরাং এটাকে স্টেশনে নিয়ে যাও। সমস্তবাক্সগুলোকেই স্টেশনে
নিয়ে যাও।
হেয়ারের মতে সিদ্ধান্তটি অবৈধ হবে যদি তা আদেশবাচক না হয়ে বর্ণনাবাচক হয়। এ স্থলে যুক্তিটি
দাঁড়াবে এরকম:
এটা বাক্সগুলোর মধ্যে একটা সুতরাং তুমি এটি স্টেশনে নিয়ে যাচ্ছো। সমস্তবাক্সগুলোকেই স্টেশনে
নিয়ে যাও।
কেন শেষোক্ত সিদ্ধান্তটি অবৈধ হবে তার স্বপক্ষে হেয়ার দুটো যৌক্তিক নিয়ম দাঁড় করেন। এগুলো
হচ্ছে:
(১) এক গুচ্ছ (ঝবঃ) যুক্তিবাক্য ( থেকে এমন কোন বর্ণনাবাচক সিদ্ধান্তবৈধভাবে গ্রহণ
করা যাবে না, যাকে শুধুমাত্র ঐ গুচ্ছের মধ্যেকার বর্ণনাবাচক যুক্তিবাক্যগুলো থেকে বৈধভাবে
গ্রহণ করা যাবে না।
(২) এমন এক সেট যুক্তিবাক্য থেকে কোন আদেশবাচক সিদ্ধান্তবৈধভাবে গ্রহণ করা যাবে না যার
মধ্যে অন্তত একটি আদেশবাচক যুক্তিবাক্য নেই।
শেষোক্ত নিয়মটির ওপর হেয়ার অত্যন্তগুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর মতে হিউমের সেই বিখ্যাত
ঘটনা/উচিত্যের প্রশ্ন এবং ম্যূরের প্রাকৃতিক অনুপপত্তির মত যেসব তত্ত¡ রয়েছে সবই এই নিয়মটিরই
বিভিন্ন রূপমাত্র। শুধুমাত্র বর্ণনাবাচক বাক্যের গুচ্ছ থেকে নৈতিক সিদ্ধান্তগ্রহণের বিরুদ্ধে হেয়ারের
আরেকটি যুক্তি এই যে, ঐ ধরনের সহানুমানে যুক্তিবাক্যগুলো যদি বাস্তবতাবিরোধী হয় তাহলে
সিদ্ধান্তও অনুরূপ হবে; তদ্সত্তে¡ও যুক্তিটি সঠিক বলেই বিবেচিত হবে। কিন্তু নৈতিক সিদ্ধান্তবাস্তব
সিদ্ধান্ত, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহানুমানের যুক্তিবাক্যগুলোকে বাস্তবতা বিবর্জিত হলে চলবে না। যারা
মনে করেন নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো একটা শিথিল অর্থে বর্ণনাবাচক যুক্তিবাক্য থেকে অনুসৃত হতে পারে
তাদের বিরুদ্ধে তিনি এই যুক্তিটি সাফল্যের সঙ্গে প্রয়োগ করেন। তাঁর মতে বর্ণনাবাচক
যুক্তিবাক্যগুলো বাস্তব বিষয়কে এমনভাবে উপস্থাপিত করে যেন তারা একটা ভাষাগত ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয়।
সনাতন যৌক্তিক সহানুমানের সিদ্ধান্ত অবাস্তব হতে পারে। তাই নৈতিকতার মত বাস্তব বিষয়ের ক্ষেত্রে তা খাটে না।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ব্যবস্থাবাদ আবেগবাদের সাথে কী বৈপরীত্য প্রদর্শন করে আলোচনা করুন।
২। ব্যবস্থাবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখপূর্বক হেয়ারের ফ্রেসটিক-নিউস্টিক তত্ত¡ আলোচনা করুন।
৩। হেয়ার-এর নৈতিক মতবাদের দুটি যৌক্তিক নিয়ম সংক্ষেপে প্রেক্ষাপটসহ আলোচনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। আর. এম. হেয়ার একজন
(ক) প্রকৃতিবাদী দার্শনিক (খ) অপ্রকৃতিবাদী দার্শনিক
(গ) আধ্যাত্মিক দার্শনিক।
২। হেয়ার-এর মতে নৈতিক অবধারণ হলো
(ক) বিশেষায়িত (খ) সর্বজনীনকরণযোগ্য
(গ) উপরের কোনটিই নয়।
৩। আদেশবাচক ও বর্ণনাবাচক যুক্তিবাক্যের মধ্যেকার সাধারণ উপাদানটি হলো
(ক) নিউট্রন (খ) নিউস্টিক
(গ) ফ্রেসটিক।
৪। সনাতন যুক্তিবিদদের ধারণা অনুসারে যৌক্তিক অনুমান গঠিত হয়
(ক) শুধু বর্ণনামূলক বাক্য দ্বারা (খ) শুধু আদেশমূলক বাক্য দ্বারা
(গ) বর্ণনামূলক ও আদেশমূলক বাক্য দ্বারা।
৫। ব্যবস্থাবাদ নৈতিক অবধারণের ক্ষেত্রে অনুসরণ করে
(ক) যৌক্তিক পদ্ধতি (খ) অযৌক্তিক পদ্ধতি
(গ) যৌক্তিক ও অযৌক্তিক উভয় পদ্ধতি।
সত্য/মিথ্যা
১। আর. এম. হেয়ার নৈতিক অবধারণকে মনস্তাত্তি¡ক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন- সত্য/মিথ্যা।
২। হেয়ারের মতে নৈতিক পদ ব্যবস্থা বা আদেশ প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়- সত্য/মিথ্যা।
৩। হেয়ারের মতে বর্ণনাবাচক ও আদেশবাচক যুক্তিবাক্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনকারী কোন
উপাদান নেই- সত্য/মিথ্যা।
৪। আদেশবাচক ও বর্ণনাবাচক যুক্তিবাক্যের দুটি নিউস্টিকের মধ্যে একটি ঐক্য রয়েছেসত্য/মিথ্যা।
৫। হেয়ারের মতে বৈধভাবে কোন আদেশবাচক সিদ্ধান্তে আসতে হলে অন্তত একটি
আশ্রয়বাক্যকে আদেশবাচক হতে হবে- সত্য/মিথ্যা।
সঠিক উত্তর
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন : ১। খ ২। খ ৩। গ ৪। ক ৫। ক।
সত্য/মিথ্যা: ১। মিথ্যা ২। সত্য ৩। মিথ্যা ৪। সত্য ৫। সত্য।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]