সর্বজনীনকরণ-যোগ্যতার নীতি বলতে আর. এম. হেয়ার কী বুঝান? এ নীতি প্রণয়নে কান্টের

নৈতিক অবধারণের ব্যবস্থাবাচক রূপ
পূর্বোক্ত পাঠ ৬ এ উল্লেখ করা হয়েছে, মানব আচরণের বিবিধ প্রশ্ন যেমন ‘আমি কি করব?’ কিংবা
কী করা উচিত? এসব প্রশ্নের সঙ্গে নৈতিকতার বিবিধ সম্পর্ক খুবই নিবিড়। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে
আমরা কতগুলো নীতির শরণাপন্ন হই, যে সব আমাদের আচরণ সংক্রান্তকতগুলো ব্যবস্থাপত্র দেয়।
এই দিক থেকে নৈতিক অবধারণ তথা ভাষা মূলত ব্যবস্থাবাচক, বর্ণনাবাচক নয়। তবে নৈতিকতার
ভাষাই শুধু ব্যবস্থাবাচক ভাষা নয়; এর (ব্যবস্থাবাচক ভাষার) আরো শাখা-উপশাখা রয়েছে। হেয়ার
এগুলোকে নি¤েœাক্ত ছকের সাহায্যে দেখাবার চেষ্টা করেছেন : ব্যবস্থাবাচক ভাষা
আদেশবাচক মূল্য সম্পর্কীয়
একক সার্বিক অ-নৈতিক নৈতিক
এই ছক থেকে আদেশবাচক বাক্যের সঙ্গে নৈতিক বাক্যের সম্পর্কটি সহজেই প্রতিভাত হয়। হেয়ার
এই সম্পর্কের সূত্র ধরে ব্যবস্থাবাচক ভাষাকে মূলত আদেশবাচক ভাষা হিসেবে ধরে নিয়েছেন যা
তাঁর মতে সংজ্ঞাগত ভাবেই সত্য। এটা সংজ্ঞাগতভাবে সত্য এ জন্য যে, যখন আমি এই ধরনের
নৈতিক অবধারণ উচ্চারণ করি যে, ‘আমার ‘ক’ কাজটি করা উচিত’ তখন আমার নিজের মধ্যে ব্যবস্থাবাচক ভাষার শাখা উপশাখা।
কাজটি করার জন্য একটা তাগিদ আমি অবশ্যই অনুভব করব, ভাষায় প্রকাশ করলে যার রূপ
দাঁড়াবে এই রকম, “আমাকে কাজটি করতে দাও”। হেয়ারের মতে যদি তা না হয় তাহলে বুঝতে
হবে, হয় আমি আমার কথার উদ্দেশ্য বুঝতে পারছি না, নয় আমি আন্তরিক নই। অবশ্য নৈতিক
ভাষা শুধুই আদেশবাচক এবং এর মধ্যে বর্ণনার কোন স্থানই নেই, হেয়ার এমন মনে করেন না।
তিনি যা মনে করেন তা হচ্ছে যে, কোন নৈতিক পদের একটা বর্ণনামূলক অর্থ থাকতে পারে, কিন্তু
সেটার ভ‚মিকা নিতান্তই গৌণ। বিষয়টা ব্যাখ্যা করার জন্য উদ্ভূত গুণ
সম্পর্কিত তাঁর তত্ত¡টি আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
উদ্ভূত গুণ
শুভ একটা উদ্ভূত গুণ একথা মূলত প্রকৃতিবাদী নীতিবিদদের কথা। তাঁদের মতে উদ্ভুত গুণ বলতে
বুঝায় এমন একটা নতুন গুণ যা কোন জিনিষের বর্ণনা থেকে উদ্ভ‚ত হয়। হেয়ার বিষয়টা বুঝাতে
গিয়ে ‘ক’ ও ‘খ’ নামক দুটো ছবির উদাহরণ টেনেছেন। বর্ণনাগত দিক থেকে দুটো ছবির মধ্যে
কোন পার্থক্য নেই। এমতাবস্থায় আমরা এ কথা বলতে পারব না যে, এদের একটি ভাল অন্যটি ভাল
নয়। যদি বলি তাহলে কথা ওঠবে, নিশ্চয়ই কথিত ভাল ছবিটির মধ্যে এমন আরো কোন জিনিষ
রয়েছে যা আমরা বর্ণনা করতে ভুলে গেছি। শুধু প্রকৃতিবাদীরা নয়, ম্যূর ও রসের মত স্বজ্ঞাবাদীরাও
শুভকে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন, (তবে তাঁরা তা করেছেন অপ্রাকৃতিক গুণের মাধ্যমে) অর্থাৎ
তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, শুভ একটি বর্ণনাজাত তথা উদ্ভূত গুণ। হেয়ার তাঁদের সকলের মধ্যেই
অর্থের নির্দেশবাচক মতবাদের প্রতি আনুগত্যের এবং এর ব্যবহারবাচক মতবাদের
প্রতি ঔদাসীন্যের অভিযোগ করেন। শেষোক্ত অর্থের নীতি ধরেই তিনি বর্ণনাজাত অর্থে উদ্ভ‚ত গুণ
হিসেবে শুভের ব্যাখ্যা অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে তিনি নি¤েœাক্ত যুক্তি প্রদান করেন:
“সাধারণভাবে বললে বলতে হয় : যদি ‘ক’ একটি ভাল ছবি হয় আর এ কথাটিকে এ কথা বুঝানোর
জন্যই বলা হয় যে, ‘ক একটি ছবি এবং ‘ক’ হয় ‘ন’, তাহলে ‘ন’ হওয়ার কারণে আমরা কোন
ছবিকেই প্রশংসা করতে পারবো না (অন্যকথায় ভাল বলতে পারব না); শুধুমাত্র একথা বলাই
আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে যে, তারা হয় ‘ন’। এখানে একথা বুঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, যে বিশেষ
উদাহরণটি আমি বেছে নিয়েছি, এই অসুবিধাটার সঙ্গে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমরা কিছু ভুল
সংজ্ঞাদানকারী বৈশিষ্ট্য বেছে নিয়েছি এ কারণে নয়, বরং মূল কারণ হচ্ছে, যে সংজ্ঞাদানকারী
বৈশিষ্ট্যই আমরা বেছে নেই না কেন, এই অভিযোগ থাকবেই যে, ঐ সমস্তবৈশিষ্ট্য ধারণ করার জন্য
আমরা আরেকটি বস্তুকে প্রশংসা করতে পারি না।”
এর অর্থ অবশ্য এই নয় যে, হেয়ার নৈতিক শব্দের উদ্ভ‚ত গুণ অস্বীকার করেন। তিনি শুধু বলেন যে,
উদ্ভ‚ত গুণ হিসেবে শুভ বা ভাল কোন কিছুর বর্ণনার ফসল নয়, বরং ঐসব বর্ণনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোন
সাধারণ নিয়ম, মানদন্ড কিংবা নীতির ফসল। যেমন যখন বলা হয় ‘ক’ হয় ‘ন’ তখন ‘ন’ কে ভাল
হতে হলে ‘যা ‘ন’ তা কর’ কিংবা এই ধরনের কোন নীতি আমাদেরকে একই সাথে মেনে নিতে
হবে। এ নৈতিক ভাষায় আদেশবাচক অর্থের প্রাবল্য নির্দেশ করে।
সর্বজনীনকরণ-যোগ্যতা
হেয়ারের মতে কোন অবধারণই নৈতিক বলে বিবেচিত হবে না যতক্ষণ না এর সর্বজনীনকরণ-
যোগ্যতা থাকবে। সার্বজনীনকরণ-যোগ্যতা বলতে হেয়ার এখানে একথা বুঝান না যে, অবধারণটি
একটি সর্বজনস্বীকৃত নীতি হবে। এর অর্থ হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এক জনের বেলায় যে
নীতি প্রযোজ্য, অনুরূপ পরিস্থিতিতে তা যে কারো বেলায় প্রযোজ্য। হেয়ার স্বীকার করেন যে, নৈতিক
অবধারণের এই বৈশিষ্ট্যটি নির্ধারণে তিনি কান্টের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। কিন্তু কান্টই প্রথম এ নৈতিক ভাষা যে আদেশবাচক তা সংজ্ঞাগতভাবে সত্য প্রকৃতিবাদী ও অপ্রকৃতিবাদী সকলের মতেই শুভ একটি উদ্ভ‚ত গুণ উদ্ভুত গুণের প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে হেয়ারের যুক্তি।
নীতির কথা বলেননি, বিভিন্ন যুগের ধর্মীয় শিক্ষকরা এ নীতিটির ওপর সবিশেষ জোর দিয়েছেন।
যেমন ইসলামে নবী (স.) বলেছেন, তুমি ঈমানদার হতে পারবে না যদি তুমি নিজের জন্য যা
অপছন্দ কর অন্যের জন্য তা পছন্দ কর। তবে এটাও সত্য যে, অনেক অ-নৈতিক বিষয়ের বর্ণনায়ও
এ নীতি প্রযোজ্য হয়। যেমন ‘এই ফুলটি লাল’ আমি যখন একথা বলি তখন লালের এমন কিছু
বৈশিষ্ট্যের কথা আমি ভাবি, অন্য কোন ফুলে যার উপস্থিতি আমাকে বাধ্য করে তাকেও লাল
বলতে। নৈতিক এবং সাধারণ অবধারণের মধ্যে তাহলে পার্থক্যটা কোথায়? হেয়ারের মতে এ
পার্থক্যটা বেশ সূ² ও জটিল। অল্প কথায় বললে যা বলতে হয় তা একটু আগে উদ্ভ‚ত গুণ সম্পর্কে
হেয়ারের যে তত্ত¡ আমরা দেখেছি অনেকটা তারই পুনরুক্তি। হেয়ার মনে করেন, নৈতিক অবধারণের
সঙ্গে একটা অতিরিক্ত সংশ্লেষণাত্মক মানদন্ড বা নীতি জড়িত থাকে যার আলোকে আমরা বিচার করি
অবধারণটি নৈতিক কিনা।
মূল্যায়ন
আর.এম. হেয়ারের নীতিদর্শন প্রচুর বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এর একটা কারণ বোধ হয় এই যে, তিনি
এখনো অত্যন্তসক্রিয় এবং সেজন্য তাঁর সমালোচকদের সমালোচনার জবাব দিতে পছন্দ করেন।
উপরন্তু তাঁর সমসাময়িক দার্শনিকদের লেখালেখি নিয়েও তিনি মন্তব্য করেন যা আবার পাল্টা মন্তব্য
বয়ে আনে। অতি সম্প্রতি লিখিত তাঁর গ্রন্থসমূহে এর সাক্ষ্য মিলে। আমরা অবশ্য সংগত কারণেই
হেয়ারের নীতি দর্শন সংক্রান্তবাদানুবাদের একটি পূর্ণ বিবরণ এখানে দিতে পারব না। তিনি
নৈতিকতার যে মূল বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করেছেন, আমাদের আলোচনা তাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
প্রথমেই আমরা প্রশ্ন করব নৈতিক অবধারণের যৌক্তিক দিক প্রসঙ্গে। প্রশ্ন হচ্ছে, বর্ণনামূলক ও
আদেশবাচক অবধারণ এর মধ্যে সম্পর্ক দেখাতে গিয়ে হেয়ার যা বলেছেন তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
তাঁর মতে উভয়ের মধ্যে পার্থক্যটা শুধু ‘নিউস্টিক’ এর ক্ষেত্রে, তাদের ‘ফ্রেসটিক’ এক। এখানে
নিউস্টিক এর ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখাতে গিয়ে তিনি কেবল দুটো শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা হচ্ছে ‘হ্যাঁ’
এবং ‘দয়া করে’। দার্শনিক ব্রেইথউইট-এর মতে এখানেই হেয়ারের ভুলটি প্রকট হয়ে ওঠেছে। তাঁর
মতে এই দুটো নিউস্টিকে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে হেয়ার সাহেব বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা, আদেশ,
এবং যেসব পরিবেশ পরিস্থিতিতে নৈতিক অবধারণ করা হয় তার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিচিত্র সব উদ্দেশ্যের
প্রতি সুবিচার করেননি। অন্যকথায়, শুধু হ্যাঁ এবং ‘দয়া করে’ এ দুটো ভাব প্রকাশ করার জন্যই
আমরা বর্ণনাবাচক, কিংবা আদেশবাচক কিংবা নৈতিক অবধারণের উল্লেখ করি না; প্রসঙ্গভেদে
আমাদের আরো অনেক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রিয়তম মানুষের মৃত্যুর পর যখন কেউ তার সম্পর্কে
খারাপ কিছু বলতে থাকে তখন শ্রোতা যদি বলে, ‘আপনি চুপ করুন’, তাহলে এর মাঝে শুধু কি
তার অনুরোধ প্রকাশ পায়, না এর সঙ্গে আরো কিছু?
নিউস্টিক শব্দটির শাব্দিক অর্থও সমস্যার সৃষ্টি করে। নিউস্টিক বলতে হেয়ার মাথা দোলানোর
একটা ধরনকে বুঝান, যা হচ্ছে হ্যাঁ এবং ‘দয়া করে’ বাচক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাস্তবে কি কেউ
এমনভাবে মাথা দোলাতে পারেন যার দ্বারা তিনি বুঝাতে পারেন যে, তিনি ‘দয়া করে’ কথাটি বলতে
চান ? যেহেতু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার জন্যই মাথা দোলানো হয় সেহেতু একটামাত্র কথাই যা তিনি
বলতে পারেন তাহলো, ‘দয়া করে’ বুঝাতে তিনি একইসঙ্গে কয়েক বার হ্যাঁ এর অনুরূপ মাথা
দোলাবেন যার অর্থ হবে হ্যাঁ+হ্যাঁ+হ্যাঁ বলা। ব্যাপারটা যদি তাই হয় তাহলে আদেশবাচক বাক্যের
নিউস্টিক বর্ণনামূলক বাক্যের নিউস্টিক থেকে শুধু মাত্রার দিক থেকেই ভিন্ন হতে পারে, প্রকারের
দিক থেকে নয়। এদিক থেকে বিচার করলে বলতে হয় হেয়ার প্রকারান্তরে বর্ণনাবাদীদেরই সমর্থন সর্বজনীনকরণ যোগ্যতা তখনই নৈতিকতার বৈশিষ্ট্য হয় যখন এর সঙ্গে কোন নীতি জড়িত থাকে।
করেছেন। বর্ণনাবাদীরা নৈতিক অবধারণকে যেখানে বর্ণনাবাচক মনে করেন, সেখানে হেয়ারের
বিশ্লেষণে এ বর্ণনা রূপলাভ করে নিছক তীব্রতর বর্ণনায়।
হেয়ার নৈতিক অবধারণের যে ব্যবস্থাবাচক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
হেয়ারের মতে কোন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে যখন আমরা প্রশ্ন করি, “আমি এখন কি করব?”
তখন এই প্রশ্নের উত্তরে যে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয় তাই নৈতিকতার ভিত্তি রচনা করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো
এই ব্যবস্থাপত্রগুলোর বৈধতা কেমন করে নির্ণিত হবে। এ ব্যাপারে এক জায়গায় হেয়ার বলেছেন :
যদি কোন একটি সিদ্ধান্তের পরিপূর্ণ বৈধতা প্রমাণের দাবি করা হয়, তাহলে আমাদেরকে এমন একটি
জীবন পদ্ধতির পরিপূর্ণ বিবরণ দিতে হয় যার এ অংশ ... কিন্তু এরপরও যদি অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তি
জিজ্ঞেস করেন, আমি এভাবে কেন জীবন যাপন করব, তখন দেবার মত আর কোন উত্তর থাকে
না। ... আমরা শুধু তখন তাকে কিভাবে তার জীবন যাপন করা উচিত সে সম্পর্কে মনস্থির করতে
বলতে পারি, কেননা পরিণামে সব কিছুই এই ধরনের নীতি নির্বাচনের ওপরই নির্ভর করে।” আর.
বি. ব্রেইথউইটের মতে হেয়ার যে একজন বিষয়ীবাদী ) এই উত্তর তাই নির্দেশ করে।
যদি তাই হয় তাহলে নৈতিক ব্যাপারে অন্যান্য বিষয়ীবাদী, যেমন এয়ার, স্টিভেনশন প্রমুখ
আবেগবাদীদের ক্ষেত্রে যেসব অভিযোগ ওঠেছে হেয়ারের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।
জি. জে. ওয়ারনক নৈতিকতাকে ব্যবস্থাবাচকতার মত সংকীর্ণ অর্থে নিতে নারাজ। তাঁর মতে নৈতিক
পদগুলোর ব্যবস্থাবাচকতা ছাড়াও আরো অনেক অর্থ রয়েছে। যেমন তারা উপদেশ, প্রেরণা, মিনতি,
আদেশ, নিন্দা, পরিতাপ, প্রতিজ্ঞা, দোষ স্বীকার, অঙ্গীকার এবং এ জাতীয় আরো বেশ কিছু অর্থ
নির্দেশ করে। যদিও হেয়ার এসব ক’টি শব্দকেই আদেশের বিভিন্ন রূপ বলে তাঁর বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত
করার চেষ্টা করেছেন এবং অনেকেই এ ব্যাপারে তাঁকে সমর্থনও করেছেন তবু একথা সত্য যে,
অধুনা ওয়ারনকের সমর্থনে বহু দার্শনিকই কাজ করে যাচ্ছেন যাঁদেরকে হেয়ার নিজেই
বর্ণনাবাদীরূপে আখ্যায়িত করেছেন। সংগত কারণেই বুঝতে কষ্ট হয় না, হেয়ারের কথাই শেষকথা
নয়।
হেয়ারের সর্বজনীনকরণ-যোগ্যতা নীতিটি সম্পর্কেও প্রশ্ন ওঠেছে। আমরা দেখেছি নৈতিক অবধারণ
ছাড়াও ভাষার অ-নৈতিক ব্যবহারেও এর ভ‚মিকা রয়েছে। এ নৈতিক ব্যাপারে তার অপরিহার্যতা
নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করে। কিন্তু এর অপরিহার্যতার বিষয়ে সব চাইতে কঠিন প্রশ্নটি ওঠে, আমরা
যাদেরকে যে কোন নীতির ব্যাপারে চরমপন্থী বলি, তাদের আচরণে। নাৎসীবাদে বিশ্বাসী একজন
লোকের কথা ধরা যাক। সে বিশ্বাস করে যে, পৃথিবীর সকল ইহুদীকে হত্যা করা উচিত। কেউ যদি
তাকে প্রশ্ন করে, “এমনও তো হতে পারে, আবিষ্কৃত হলো যে তুমি নিজেই একজন ইহুদী বংশজাত
লোক; তখন কি হবে?” নাৎসী ব্যক্তিটি দ্বিধা না করেই বলবে, “তাহলে আমাকেও তুমি হত্যা
করবে।” এখানে সর্বজনীনকরণ-যোগ্যতা নীতির প্রতি সে সমর্থন জানিয়েছে; কিন্তু তাই বলে কি তার
নীতিকে আমরা নৈতিক বলব? হেয়ার এই ধরনের চরমপন্থীদের নৈতিকতার পরিমন্ডল থেকে বাদ
দিতে চান। কিন্তু তাই যদি হয়, নৈতিকতার বৈশিষ্ট্য হিসেবে সর্বজনীনকরণ যোগ্যতার আবশ্যকতা
নিয়ে তিনি আর জোরের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। তবে একথা সত্য সাধারণভাবে এ নীতিটি নৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। নৈতিক অবধারণের ব্যবস্থাবাচক রূপটির প্রকৃতি আলোচনা করুন। এ প্রসঙ্গে উদ্ভূত গুণ
সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
২। সর্বজনীনকরণ-যোগ্যতার নীতি বলতে আর. এম. হেয়ার কী বুঝান? এ নীতি প্রণয়নে কান্টের কোন প্রভাব আছে কি ?
৩। সামগ্রিকভাবে আর.এম. হেয়ার-এর ব্যবস্থাবাদ মূল্যায়ন করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। শুভ একটি উদ্ভ‚ত গুণ এমনটি দাবি করেন
ক. প্রকৃতিবাদী দার্শনিকরা খ. অপ্রকৃতিবাদী দার্শনিকরা
গ. প্রকৃতিবাদী ও অপ্রকৃতিবাদী উভয় সম্প্রদায়ের দার্শনিকরা।
২। হেয়ার-এর মতে নৈতিক অবধারণের সাথে সংযুক্ত অতিরিক্ত যে মানদন্ডটি থাকে তা
ক. সংশ্লেষণাত্মক খ. বিশ্লেষণাত্মক
গ. সংশ্লেষণাত্মক ও বিশ্লেষণাত্মক উভয়ের মিশ্রণ।
৩। নৈতিক ভাষা যে আদেশবাচক তা সত্য
ক. স্বজ্ঞাগতভাবে খ. বুদ্ধিগতভাবে
গ. সংজ্ঞাগতভাবে।
৪। নিউস্টিক বলতে হেয়ার বুঝেন
ক. ‘না’ অর্থে খ. ‘চুপ করুন’ অর্থে
গ. ‘হ্যাঁ’ এবং দয়া করে অর্থে।
৫। সমালোচকদের মতে হেয়ার-এর আদেশবাচক বাক্যের নিউস্টিক বর্ণনাবাচক বাক্যের
নিউস্টিক থেকে ভিন্ন
ক. প্রকারের দিক থেকে খ. মাত্রার দিক থেকে
গ. প্রকার ও মাত্রা উভয়ের দিক থেকে।
সত্য/মিথ্যা
১। হেয়ারের মতে ব্যবস্থাবাচক ভাষা সংজ্ঞাগতভাবেই সত্য- সত্য/মিথ্যা।
২। হেয়ারের মতে নৈতিক পদের বর্ণনামূলক অর্থই হলো মুখ্য- সত্য/মিথ্যা।
৩। সর্বজনীনকরণ-যোগ্যতা নীতির ক্ষেত্রে হেয়ারের ওপর কান্টের প্রভাব অনুভূত হয়সত্য/মিথ্যা।
৪। কোন কোন সমালোচকের মতে হেয়ার একজন বিষয়ীবাদী দার্শনিক- সত্য/মিথ্যা।
৫। হেয়ারের মতে একটি উদ্ভূত গুণ হিসেবে শুভ হচ্ছে তার বর্ণনার সাথে সম্পৃক্ত কোনো নীতির
ফসল- সত্য/মিথ্যা।
সঠিক উত্তর
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন : ১। গ ২। ক ৩। গ ৪। গ ৫। খ।
সত্য/মিথ্যা: ১। সত্য ২। মিথ্যা ৩। সত্য ৪। মিথ্যা ৫। সত্য।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]