বর্ণনাবাদের প্রেক্ষাপটটি আলোচনা করুন। সার্লে কিভাবে ‘হয়’ থেকে ‘উচিত্যে’ গমন করেন তা ব্যাখ্যা করুন।

বর্ণনাবাদ এখনো কোন সুসংহত মতবাদ নয়। যেসব দার্শনিক এ মতবাদকে সমৃদ্ধ করে তুলছেন
তাঁরাও নিজেদেরকে বর্ণনাবাদী বলে কোথাও তাঁদের পরিচয় জ্ঞাপন করেন না। তাঁদের এক প্রবল
প্রতিপক্ষ আর. এম. হেয়ারের মাধ্যমেই মূলত তাঁরা এ অভিধায় অভিহিত হয়েছেন। এমনিতে এই
ধারার দার্শনিকদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, ঘটনা বা তথ্যের সঙ্গে নৈতিকতা তথা মূল্যের একটি সম্পর্ক
রয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে, মূল্য বর্ণনাযোগ্য। তাঁদেরকে অনেক সময় নব্য প্রকৃতিবাদীও বলা হয়।
কারণটা এই যে, সনাতন প্রকৃতিবাদীরা যেমন প্রাকৃতিক কোন বস্তু বা বিষয় দ্বারা নৈতিকতাকে
ব্যাখ্যা করতেন, বর্ণনাবাদীরাও মুখ্যত তাই করে থাকেন।
বর্ণনাবাদী মতের উদ্ভব হয় মূলত দার্শনিক ডেভিড হিউমের বিখ্যাত সেই উক্তির ব্যাখ্যা থেকে যার
কথা আমরা এই ইউনিটের প্রথম পাঠে উল্লেখ করেছি। প্রচলিত বিশ্বাসের বিপরীতে বর্ণনাবাদীরা
মনে করেন, হিউম উক্ত অনুচ্ছেদে ঘটনা থেকে মূল্যের অনুসৃতির সম্ভাবনার কথাই বলেছেন। এ.
সি. ম্যাকইনটায়ার (অ. ঈ. গধপওহঃুৎব), জেফরী হান্টার (এবড়ভভৎবু ঐঁহঃবৎ) প্রমুখ দার্শনিকরা এ
দলে রয়েছেন। হিউমের অনুচ্ছেদটির খুঁটিনাটি বিশ্লেষণের বাইরেও তাঁরা মনে করেন, হিউম ঘটনার
সঙ্গে নৈতিক অবধারণের যৌক্তিক অপ্রাসঙ্গিকতা রয়েছে এমন মনে করতেন, এই ধরনের চিন্তা
একেবারেই বেমানান এজন্য যে, হিউমের নীতিদর্শনের পুরো পরিমন্ডলটাই সমাজতাত্তি¡ক চিন্তায়
ভরা। ন্যায়বিচার, সদ্গুণ, প্রভৃতি সম্পর্কিত হিউমের ব্যাখ্যা তাঁদের এ দাবি সমর্থন করে বলে তাঁরা
মনে করেন। তবে বর্ণনাবাদীদের মধ্যে যারা সব চাইতে বেশি উল্লেখযোগ্য তাঁরা হিউমের প্রসঙ্গটি
অতিক্রম করেই তাঁদের বক্তব্য রেখেছেন। আমরা এবার তাঁদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।
জে. আর. সার্লে : হয় থেকে ঔচিত্যে উত্তরণের প্রশ্ন
হয়-উচিত্যের প্রশ্নে ১৯৬৪ সালে জে. আর. সার্লে
পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেন যার শিরোনাম ছিল, “হয় থেকে যেভাবে উচিত্য পেতে হয়” । সার্লে তাঁর প্রবন্ধে দু’ধরনের ঘটনার কথা বলেন যাদেরকে তিনি নাম
দেন ‘ওæঢ় ঘটনা’ ও ‘প্রাতিষ্ঠানিক ঘটনা’ । প্রাতিষ্ঠানিক
ঘটনাগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত বিষয় যার অর্থ হচ্ছে এরা কতগুলো সাংগঠনিক নিয়ম কানুনের প্রকৃতিবাদীর মত বর্ণনাবাদীদের মতে মূল্য বর্ণনাযোগ্য।
অধীন। এই সাংগঠনিক নিয়মগুলো নতুন ধরনের আচরণ সৃষ্টি করে বা তাদের সংজ্ঞা দেয়। যে কোন
খেলার কথাই ধরা যাক। সেখানে এমন কতগুলো নতুন আচরণ শেখানো হয় যেগুলো না মানলে আর
খেলা হয় না। এগুলোই এই খেলার সাংগঠনিক ঘটনা। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত আরো কিছু ঘটনা থাকে
যা সাংগঠনিক ঘটনাকে সম্ভব করে তোলে, যেমন দাবা খেলায় ‘কিস্তিমাত’ করতে দাবার গুটিকে
স্থানান্তরিত করতে হয়। এই স্থানান্তরকরণের ব্যাপারটি কিস্তিমাতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং এ হচ্ছে
তার ‘ওæঢ় ঘটনা’ যা না হলে কিস্তিমাত সম্ভব হতো না। একইভাবে সার্লে নৈতিক ঘটনা প্রতিজ্ঞা
করাকে একটি সাংগঠনিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। এর ওæঢ় ঘটনা হলো এমন কিছু উচ্চারণ যার
মাধ্যমে আমরা প্রতিজ্ঞা করি। সার্ল দেখান যে, আমরা প্রতিজ্ঞা করতে গিয়ে এমন কিছু উচ্চারণ করি
যা সাংগঠনিক নিয়মের প্রভাবে শেষপর্যন্তনৈতিক বাধ্যতায় পর্যবসিত হয়। ব্যাপারটা যেভাবে ঘটে
তাকে সার্লে পর্যায়ক্রমে এভাবে বর্ণনা করেছেন :
(১) জোন্স উচ্চারণ করল, “স্মিথ, আমি এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করছি যে, তোমাকে পাঁচ ডলার দিব”।
(২) জোন্স স্মিথকে ৫ ডলার দেয়ার প্রতিজ্ঞা করল।
(৩)জোন্স স্মিথকে ৫ ডলার দেয়ার বাধ্যবাধকতায় নিজেকে ন্যস্তকরল।
(৪) জোন্স স্মিথকে ৫ ডলার দেয়ার বাধ্যবাধকতায় রয়েছে।
(৫)জোন্স-এর স্মিথকে ৫ ডলার দেয়া উচিত।
এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সার্লে (১) নম্বরের ইনভার্টেড কমার মধ্যস্থিত জোনস এর বক্তব্যকে ‘ওæঢ়
ঘটনা’ হিসেবে নিয়েছেন এবং এই ঘটনা থেকে প্রতিজ্ঞার মত একটা ‘সাংগঠনিক ঘটনা’ সৃষ্টি হয়েছে
বলে ধরে নিয়েছেন যা (২) নম্বর বক্তব্যে তিনি প্রকাশ করেছেন। এরপর তাঁর আর কোন অসুবিধা
হয়নি; প্রতিজ্ঞারূপ এই সাংগঠনিক ঘটনাটি নিজে থেকেই (৩), (৪) ও (৫) নম্বর বক্তব্যকে টেনে
এনেছে। সার্লে-এর মতে এই যে ‘টেনে আনা’ এটা ঠিক যৌক্তিক অনুসৃতি (ঊহঃধরষসবহ) নয়, কিন্তু
শুধু সম্ভাব্য সম্পর্কেরও দ্যোতক নয়। তিনি স্বীকার করেন, এদের মাঝে আরো এমন
কিছু অতিরিক্ত বক্তব্য আছে যা আমরা মনে মনে ধরে নেই, কিন্তু ঐসব বক্তব্যে মূল্যবোধক কোন
কিছু আছে বলে তিনি মনে করেন না। যেমন (২) নম্বর বক্তব্য থেকে আমরা মনে মনে ভাবতে
পারি, “সব প্রতিজ্ঞাই হচ্ছে এমন কাজ যাতে প্রতিজ্ঞাকারী যে বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করছে নিজকে তা
করার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতায় ন্যস্তকরে, ইত্যাদি ইত্যাদি”। অন্যকথায়, নিখাদ ‘হয়’ থেকে আমরা
যে ‘উচিত্যে’ যেতে পারছি তাতে কোন সন্দেহ নেই।
পি. টি. গীচ : শুভ বিধেয়াত্মক, না বিশেষণাত্মক
অপ্রকৃতিবাদীদের অনেকে শুভকে একটি বিধেয়াত্মক (চৎবফরপধঃরাব) গুণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন,
বিশেষণাত্মক গুণ হিসেবে নয়। পি. টি. গীচ এই মতের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন
তোলেন। তাঁর প্রশ্নটি বুঝতে হলে প্রথমেই এই দু’ধরনের ব্যবহারের বিষয়টি সম্পর্কে একটু ব্যাখ্যার
প্রয়োজন। ডবিøও. ডি. রসের মতে আমরা শুভকে বিশেষণাত্মক অর্থে ব্যবহার করি যখন আমরা বলি
যে, ‘একজন ভাল অমুক’। যখন বলি যে ‘অমুক হয় ভাল’ তখন ব্যবহারটি হয় তাঁর মতে
বিধেয়াত্মক। শেষোক্ত ব্যবহারটি রসের মতে শুভের যথার্থ ব্যবহার এজন্য যে, এ শুভের প্রাকৃতিক
বর্ণনা পরিহার করে, আর প্রথমোক্ত ব্যবহারটি তা করে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যখন আমরা
বলি যে, ‘একজন ভাল ক্রিকেটার’, তখন ভাল এর অর্থ হয়, সাফল্য, দক্ষতা বা কোন একটা
মানবীয় উদ্দেশ্য সাধনের ব্যাপার যাদের প্রত্যেকটিকেই প্রাকৃতিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু যখন
বলা হয় ‘এই ক্রিকেটারটি ভাল’, তখন যা বুঝায় তা হচ্ছে, “এই ক্রিকেটারটি ভাল মানুষ।” এখানে সাংগঠনিক ঘটনা থেকে নৈতিক বাধ্যকতায় উত্তরণ ঠিক যৌক্তিক অনুসৃতি নয়, কিন্তু শুধু সম্ভাব্য সম্পর্কেরও দ্যোতক নয়।
ভালকে রসের মতে কোন প্রাকৃতিক গুণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যাবে না। এটা নৈতিক ভাল, যা
একটি অপ্রাকৃতিক গুণ। গীচের আপত্তি এখানেই। তাঁর মতে প্রাকৃতিক হলেও শুভের একমাত্র বৈধ
ব্যবহার হচ্ছে বিশেষণাত্মক। তাঁর এ বক্তব্যের সমর্থনে তিনি যেসব বাক্যে বিশেষণের বিধেয়াত্মক
ব্যবহার হয়, তাদের একটি যৌক্তিক চরিত্রের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। এ হচ্ছে,
ঐসব বাক্যকে দুটো বিধেয়াত্মক বাক্যে ভাগ করা যায়। যখন এই ধরনের বিভক্তি সম্ভব হয় না, তাঁর
মতে, আমাদের বুঝতে হবে, উক্ত বাক্যে বিশেষণটি বিশেষণাত্মক অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। গীচের
মত, বড়, ছোট, লাল, এই সব শব্দ হচ্ছে বিশেষণাত্মক বিশেষণের সর্বোত্তম উদাহরণ। যেমন তিনি
দেখান, ‘ক একটি বড় মাছি’, এই বাক্যটিকে আমরা দু‘ভাগে ভাগ করতে পারি না। যদি করি
তাহলে এ ধরনের দুটো বাক্য পাব : ‘ক একটি মাছি এবং ক হয় বড়’। পরিণামে এর অর্থ দাঁড়াবে
এই যে, ক একটি বড় প্রাণী। ‘ক একটি ছোট হাতি’ যদি বলি, তাহলে তাকে ভাগ করলে দাঁড়াবে
এমন দুটি বাক্য : ‘ক একটি হাতি’ এবং ‘ক হয় ছোট’, যার অর্থ হবে ক একটি ছোট প্রাণী আর তাই
তা হবে অর্থহীন। গীচের মতে লাল, মিষ্টি ইত্যাদি বিশেষণগুলো আবার বিশেষণাত্মক ভাবে ব্যবহৃত
হতে পারে। যেমন, যখন আমি বলি, ‘ক একটি লাল বই’, তখন একে নির্দোষভাবে ভাগ করা যায়
এই বলে: ‘ক একটি বই’ এবং ‘ক হয় লাল’। এই তত্ত¡ মেনে নিলে, গীচ মনে করেন যে, বিশেষণ
হিসেবে শুভের ব্যবহার কখনো বিধেয়াত্মক হতে পারে না, কেননা তাঁর মতে, “আমি ধরতে পারি
যে, দূরের বস্তুটি একটি লাল গাড়ি, কারণ আমি দেখতে পারি যে, ঐটি লাল এবং তী²তর
দৃষ্টিসম্পন্ন কিন্তু বর্ণান্ধ আমার একজন বন্ধু দেখতে পারেন যে, এটি একটি গাড়ি, কিন্তু স্বাধীনভাবে
তথ্য যোগাড় করে এমন ধরার কোন সম্ভাবনা নেই যে, ‘এটা শুভ’ এবং ‘এটা একটা গাড়ি’।
গীচ অবশ্য একথা অস্বীকার করেন না যে, ব্যাকরণের পুস্তকে শুভের বিধেয়াত্মক ব্যবহার রয়েছে,
কিন্তু তিনি যে ব্যাপারটার ওপর জোর দেন তা হচ্ছে ঐ অর্থেও কোন একটা বিশেষ্য অবশ্যই ধরে
নিতে হবে। শুধুমাত্র ভাল বা মন্দ বলে কিছু নেই, যা আছে তা হচ্ছে শুধু ভাল বা মন্দ কোন একটি জিনিষ।
ফিলিপ্পা ফুট : হেয়ার বিরোধিতার রূপ
মিসেস ফিলিপ্পা ফুটের বর্ণনাবাদী তত্ত¡ পাওয়া যায় তাঁর
প্রভৃতি প্রসিদ্ধ নিবন্ধে। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি আর. এম. হেয়ার বর্ণনাবাদীদের প্রবল
প্রতিপক্ষ। ফিলিপ্পা ফুটের প্রবন্ধগুলো এর বড় প্রমাণ। ফিলিপ্পার মতে নৈতিক পদসমূহের ব্যাখ্যায়
যেসব ‘মূল্যসূচক উপাদানের’ কথা বলা হয় তার কোন প্রয়োজন নেই। বর্ণনার মাধ্যমেই এদের অর্থ
বুঝা যায়। এই মূল্যসূচক উপাদানগুলো কী? একটি অবশ্যই, হেয়ার যাকে ‘প্রশংসা’ বলেছেন তা।
প্লেটোর মুখ্য সদ্গুণের একটি, সাহসের উল্লেখ করে তিনি এ ব্যাপারে হেয়ারের মতকে সমালোচনা
করেন। হেয়ার মনে করেন যে, আমরা যখন কাউকে সাহসী বলি তখন এর দ্বারা কতগুলো
বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাজের বর্ণনাই শুধু বুঝানো হয় না, ঐ বিশিষ্ট্যগুলোকে যে আমরা মূল্য দিয়ে থাকি
অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যে পূর্ব থেকেই একটা ম‚ল্যের মানদন্ড বর্তমান রয়েছে তাও বুঝায়। মিসেস
ফিলিপ্পা ফুট শেষোক্ত বিষয়টি অস্বীকার করেন। যুক্তিস্বরূপ তিনি বলেন, যদি তাই হবে তবে
আমাদেরকে মেনে নিতে হবে যে, আমাদেরকেও সাহসী হতে হবে। “কিন্তু, তাঁর ভাষায়, “তার
কোন প্রয়োজন নেই। অন্য কারো সম্পর্কে আমি বলতে পারি যে, তার সাহস রয়েছে এবং প্রকৃত
অর্থেই একে একটি সদ্গুণ বলে স্বীকৃতি দিতে পারি, যদিও আমি জানি যে আমি একজন সম্পূর্ণ ভীরু
ব্যক্তি এবং নিজকে আমার সংশোধন করার কোন ইচ্ছাই নেই।” এখানে এটাও উল্লেখ করা যায় যে,
ফুট তাঁর এড়ড়ফহবংং ধহফ ঈযড়রপব শীর্ষক নিবন্ধে হেয়ারের এই মতের সমালোচনা করেন যে, কোন
জিনিষকে ‘শুভ’ বললে আমাদের ওপর কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় তাকে বেছে নেয়া, যাকে আমরা প্রকাশ গীচের মতে শুভের ব্যবহার বিশেষণাত্মক যদিও তা তার প্রাকৃতিক ব্যবহার।
করি এভাবে : “আমাকেও তা করতে দাও”। তাঁর মতে বক্তার বেছে নেওয়াটা শব্দটির অর্থের জন্য
কোন অত্যাবশ্যকীয় বা যথেষ্ট শর্ত নয়।
ফুটের মধ্যে ক্ষতি , আঘাত ( প্রভৃতি শব্দের মাধ্যমে মানুষের ন্যায়-অন্যায়, ভালমন্দ, প্রভৃতি ধারণাকে ব্যাখ্যা করার একটা সবল প্রয়াস দেখা যায়। তিনি মানবীয় প্রয়োজনকেও
(ঐঁসধহ হববফং) নৈতিকতার প্রয়োজনীয় উপাদান মনে করেন।
জি. জে. ওয়ারনক : নৈতিকতার উপাদান
জি. জে. ওয়ারনক তাঁর
শীর্ষক পুস্তক দ্বয়ে তাঁর নৈতিক চিন্তা প্রকাশ করেছেন। তাঁর একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হচ্ছে এই যে,
“সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্লেষণী নীতি দর্শন অতিরিক্ত রকমে বিমূর্ত, এমনকি শূন্যগর্ভ রূপ
পরিগ্রহ করে চলেছে, আর এটা এ কারণে যে, নৈতিকতার ভাষার বিশেষ কতগুলো খুবই সাধারণ
বৈশিষ্ট্যের ওপরই শুধু একে সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে”। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি নৈতিকতার
বিষয়বস্তুর বা উপাদানের ওপর সমধিক গুরুত্ব আরোপ করেন এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই
নৈতিকতাকে বিচার করেন। অবশ্য তিনি নৈতিকতার একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরতে ভুল করেন
না। তার মতে নৈতিকতার চারটি চিহ্ন বা লক্ষণ অত্যন্তসুস্পষ্ট : (১) দায়িত্ব,
অপরাধবোধ, মনস্তাপ ইত্যাদির একটা বিশেষ মনস্তাত্তি¡ক উপচ্ছায়া (২) ব্যক্তির জীবনে প্রভাব
বিস্তারকারী কিছুবিশেষ ব্যবহার সংক্রান্তনীতি (৩) নৈতিকতার বিষয়বস্তু, যা হচ্ছে মানবীয় সুখ বা
আগ্রহ, প্রয়োজনীয়তা, চাওয়া, অথবা আকাক্সক্ষা।
ওয়ারনক দাবি করেন যে, নৈতিকতার এই চারটি চিহ্নের মধ্যে সর্বশেষটির গুরুত্ব সর্বাধিক। তাঁর
মতে মানুষের প্রয়োজনীয়তা, চাওয়া ইত্যাদি আছে বলেই এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতির এবং এই
নীতির সর্বজনীনকরণ-যোগ্যতা থাকার প্রশ্ন আসে, অভ্যুদয় হয় এদেরকে ঘিরে উল্লিখিত মনস্তাত্তি¡ক
ব্যাপারসমূহ। অন্যকথায় ওয়ারনকের মতে মানুষের প্রয়োজন, চাওয়া, আকাক্সক্ষা ইত্যাদিই হচ্ছে > নৈতিকতার ভিত্তি।
একথা না বললেও চলে যে, ওয়ারনকের এই বর্ণনাবাদী ব্যাখ্যায় তাঁর সমসাময়িক দার্শনিক হেয়ারের
ব্যবস্থাবাদকে মোকাবেলার একটি প্রচেষ্টা রয়েছে। মানুষের জীবন তার নৈতিক নীতিসমূহ দ্বারা
চালিত হয়ে থাকে, বিশেষ করে হেয়ারের এই মত সম্পর্কে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। তার
ভাষায়, “সন্দেহ নেই, এটা সত্য যে, এমন অনেক ভাল লোক রয়েছেন যাদের জীবন পরিণামে
নৈতিক নীতি সম‚হের দ্বারা চালিত হয়ে থাকে। কিন্তু ... নিশ্চয়ই এমন ব্যক্তি রয়েছেন এবং এমনকি
সমগ্র সমাজও রয়েছে যাদের সম্পর্কে আমরা বলতে চাইবো যে, তাদের জীবনে নৈতিক নীতি কোন
বড় ভ‚মিকা পালন করেনি; অর্থাৎ তাদের ব্যবহারের আদর্শ এবং তাদের প্রকৃত ব্যবহার উভয়ই এমন
মানদন্ড দ্বারা রূপায়িত হয়েছে। যারা আদৌ নৈতিক নীতি নয় মোটেও। হোমার তাঁর যোদ্ধা
সমাজপতির মধ্যে যে হিংস্রতা, চাতুর্য ও জাঁকজমক প্রাচুর্যতা অনুমোদন করেছেন তাকে আমাদের
চেয়ে ভিন্ন নৈতিক মানদন্ড বলা চলে, কিন্তু এটাও ভালভাবেই বলা চলে যে, তিনি আদৌ কোন নৈতিক মানদন্ডের কথা বলেননি।”
ওয়ারনক হেয়ারের সর্বজনীনকরণ-যোগ্যতা নীতিরও এই বলে সমালোচনা করেছেন যে,
সর্বজনীনকরণ-যোগ্য হলেও একটি নীতি নৈতিক দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন নাও হতে পারে। মূল্যায়ন সাহসকে সদগুণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরও কারো সাহসী হওয়ার ইচ্ছা নাও থাকতে পারে।
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, বর্ণনাবাদ এখনো কোন সুসংগঠিত মতবাদ হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি।
তবে বিক্ষিপ্তভাবে যে ক’জন দার্শনিকের মতবাদ এখানে আমরা আলোচনা করেছি তাঁদের সবাই
অপ্রকৃতিবাদী চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে উদগ্রীব তাতে কোন সন্দেহ নেই। অপ্রকৃতিবাদের
হাতে নৈতিকতা জীবনের সাথে ক্রমশ যোগসূত্র হারিয়ে ফেলছিল, এ ধরনের অভিযোগ নিশ্চয়ই
তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁদের চিন্তাধারায় এ যোগসূত্র উদ্ধারের একটা প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা
যায়, যা প্রশংসার্হ। কিন্তু তাঁদের মতের বিরুদ্ধে যেসব সমালোচনা রয়েছে তাও বিবেচ্য। আর. এম.
হেয়ার এঁদের সবচাইতে বড় সমালোচক। তিনি সার্লে-এর ‘হয়’ থেকে উচিত্যে” গমনের প্রক্রিয়ার
সমালোচনায় বলেন যে, তাঁর ‘প্রাতিষ্ঠানিক ঘটনা’ প্রকৃতপক্ষে মূল্যবাচক বিষয় বৈ নয়, আর তাই
তার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তগ্রহণ করা হয় তা মূলত মূল্য থেকেই মূল্যে গমন। গীচের বিশেষণের
বিশেষণাত্মক ব্যবহারের বিরুদ্ধে তাঁর যুক্তি হচ্ছে : যে সব বিশেষণ কার্যবাচক
তাদের ক্ষেত্রেই কেবল তাঁর ব্যাখ্যা খাটে, আর শুভ তাঁর মতে এ শ্রেণীর বিশেষণ নয়, যেজন্য এর
অপ্রাকৃতিক ও বিধেয়াত্মক ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। ওয়ারনকের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ হলো,
তাঁর নৈতিক উপাদানের তালিকায় যেসব জিনিষের তিনি উল্লেখ করেছেন তার প্রায় সবগুলোকেই
ব্যবস্থাবাচক অর্থ দেয়া যেতে পারে। মিসেস ফুট কর্তৃক সাহসের প্রশংসা করা, কিন্তু তদ্সত্তে¡ও
সাহসী হতে না চাওয়ারও তিনি সমালোচনা করেন। তবে হেয়ারের এসব সমালোচনার পাল্টা
সমালোচনাও অনেকে করেছেন। মূলকথা হচ্ছে বর্ণনাবাদ সম্পর্কে চ‚ড়ান্তকিছু বলার সময় এখনো
আসেনি। ভবিষ্যতই বলে দিবে এ ধরনের নীতি দর্শন কতটুকু গ্রহণীয় কিংবা বিশ্লেষণীয়? সর্বজনীনকরণ যোগ্যতা
নীতি নৈতিকতার জন্য যথেষ্ট নয়।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বর্ণনাবাদের প্রেক্ষাপটটি আলোচনা করুন। সার্লে কিভাবে ‘হয়’ থেকে ‘উচিত্যে’ গমন করেন তা ব্যাখ্যা করুন।
২। গীচ কেন শুভ’কে বিশ্লেষণাত্মক বলেন? এ প্রসঙ্গে তাঁর মতটি সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
৩। জি. জে. ওয়ারনক অনুসরণে নৈতিকতার উপাদান ব্যাখ্যা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১. বর্ণনাবাদীদের কখনো কখনো অভিহিত করা হয়
ক. অপ্রকৃতিবাদী হিসেবে খ. অতি প্রকৃতিবাদী হিসেবে
গ. নব্য প্রকৃতিবাদী হিসেবে।
২। বর্ণনাবাদী মতের উদ্ভব হয় যে দার্শনিকের উক্তির ব্যাখ্যা থেকে তিনি হলেন
ক. জর্জ বার্কলে খ. ডেভিড হিউম
গ. ইমানুয়েল কান্ট।
৩। জে. আর. সার্লের অভিমতটি হলো
ক. মূল্য থেকে তথ্যে যাওয়া যায় না খ. হয় থেকে উচিত্যে যাওয়া যায়
গ. উচিত্য থেকে হয়-এ যাওয়া যায়।
৪। ফুটের মতে মানবীয় প্রয়োজনে একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো
ক. নৈতিকতা খ. অনৈতিকতা
গ. আধ্যাত্মিকতা।
৫। জি. জে. ওয়ারনকের মতে নৈতিকতার চিহ্ন হলো
ক. একটি খ. তিনটি
গ. চারটি।
সত্য/মিথ্যা
১। বর্ণনাবাদীরা তথ্য ও মূল্যের মধ্যে কোন প্রকার সম্পর্ক স্বীকার করেন না- সত্য/মিথ্যা।
২। জে. আর. সার্লে তিন প্রকারের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন- সত্য/মিথ্যা।
৩। পি. টি. গীচের মতে অপ্রাকৃতিক হলেও শুভের একমাত্র বৈধ ব্যবহার হচ্ছে বিশ্লেষণাত্মকসত্য/মিথ্যা।
৪। ফিলিপ্পা ফুটের মতে নৈতিক পদসমূহের ব্যাখ্যায় মূল্যসূচক উপাদানসমূহ হলো অপ্রয়োজনীয়সত্য/মিথ্যা।
৫। ওয়ারনক নৈতিক ভাষার বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহের চেয়ে এর বিষয়বস্তু বা উপাদানের ওপর জোর
দেন- সত্য/মিথ্যা।
সঠিক উত্তর
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন : ১। গ ২। খ ৩। খ ৪। ক ৫। গ।
সত্য/মিথ্যা: ১। মিথ্যা ২। মিথ্যা ৩। মিথ্যা ৪। সত্য ৫। সত্য।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]