অবরোহী ও আরোহী যুক্তির পার্থক্য প্রদর্শন করুন।

যুক্তি দু’প্রকার : অবরোহী ও আরোহী। এই দু’প্রকার যুক্তির মধ্যে নানা দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে।
অবরোহী যুক্তির আলোচনা নিয়ে গড়ে ওঠে অবরোহী যুক্তিবিদ্যা আর
আরোহী যুক্তির আলোচনা নিয়ে গড়ে ওঠে আরোহী যুক্তিবিদ্যা যুক্তি স¤পর্কে
যথার্থ জ্ঞান অর্জন করতে হলে তাই উভয় প্রকার যুক্তির প্রকৃতি এবং তাদের মধ্যকার পার্থক্য জানা প্রয়োজন।
অবরোহী যুক্তি
যদিও প্রত্যেক যুক্তির ক্ষেত্রে এ কথাটি প্রযোজ্য যে, আশ্রয়বাক্যসমূহ তার সিদ্ধান্তের সত্যতার পক্ষে কিছু
ভিত্তি প্রদান করে। তথাপি বলা যায় কেবল অবরোহী যুক্তিই দাবি করতে পারে যে, তার
আশ্রয়বাক্যসমূহ সিদ্ধান্তম‚লক ভিত্তি প্রমাণ করে। অর্থাৎ কেবল অবরোহী যুক্তিই দাবি
করতে পারে যে, তার আশ্রয়বাক্যসমূহ যথাযথ ও সন্দেহাতীতভাবে সিদ্ধান্তের সত্যতা প্রকাশ করে।
সেজন্য অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে ‘ঠিক’ ও ‘বেঠিক’ কথা বা পরিভাষা দুটির পরিবর্তে যথাক্রমে ‘বৈধ’ ও ‘অবৈধ’ কথা দুটি ব্যবহার করা হয়।
যদি কোন অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে আশ্রয়বাক্যের সত্যতা নিশ্চিতভাবে সিদ্ধান্তের সত্যতার ভিত্তি প্রদান
করে তাহলে ঐ অবরোহী যুক্তিকে ‘বৈধ’ বলা হয়। অর্থাৎ বৈধ যুক্তির ক্ষেত্রে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত
এমনভাবে স¤পর্কিত থাকে যে, তার আশ্রয়বাক্যসম হের পক্ষে সত্য হওয়া একেবারেই অসম্ভব যতক্ষণ
না তার সিদ্ধান্তও সত্য হয়। অন্যকথায় বৈধ অবরোহী যুক্তি বা অনুমানে এমনটি কখনই হতে পারে না
যে তার আশ্রয়বাক্য সত্য অথচ সিদ্ধান্তটি মিথ্যা।
প্রত্যেক অবরোহী যুক্তি হয় বৈধ, না হয় অবৈধ। অবরোহী যুক্তিবিদ্যার কাজ হলো বৈধ যুক্তিসম হের
আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যকার স¤পর্কের প্রকৃতি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা, আর এর মাধ্যমে
আমাদেরকে অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তিকে পৃথক করতে সহায়তা করা।
আরোহী যুক্তি (ওহফঁপঃরাব অৎমঁসবহঃ)
আরোহী যুক্তির দাবি হলো, তার আশ্রয়বাক্যসমূহ সন্দেহাতীতভাবে তার সিদ্ধান্তের সত্যতা প্রতিষ্ঠা
করতে পারে না ঠিকই, তবে তা সিদ্ধান্তের সত্যতার পক্ষে কিছুটা হলেও সমর্থন যোগায়। আর এ
কারণে আমরা অবরোহী যুক্তির বেলায় যে অর্থে বৈধ বা অবৈধ পরিভাষা দুটি ব্যবহার করি সেই অর্থে
আরোহী যুক্তিতে বৈধ বা অবৈধ বলতে পারি না। তবে আরোহী যুক্তির আশ্রয়বাক্যসমূহ তার সিদ্ধান্তের
পক্ষে কতটা জোরালো সমর্থন যোগায় তার ভিত্তিতে আমরা আরোহী যুক্তিকে ‘ভাল’ বা ‘মন্দ’ অথবা
অধিক সম্ভাব্য বা কম সম্ভাব্য হিসেবে মূল্যায়ন করতে পারি।
অবরোহী ও আরোহী যুক্তির পার্থক্য
প্রচলিত যুক্তিবিদ্যায় সচরাচর আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের পার¯পরিক ব্যাপকতার ভিত্তিতে অবরোহী ও
আরোহী যুক্তি বা অনুমানের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা হয়। অবরোহী যুক্তিতে আমরা সার্বিক সত্য বা
তথ্য (বচন) থেকে বিশেষ সত্য বা তথ্যে (বচনে) উপনীত হই। আর আরোহী যুক্তিতে আমরা বিশেষ
সত্য বা তথ্য (বচন) থেকে সার্বিক সত্য বা তথ্যে (বচনে) উপনীত হই। বিষয়টি যুক্তিবিদ কপির অনুসরণে বুঝানো যেতে পারে:
সকল মানুষ হয় মরণশীল। সার্বিক সত্য বা তথ্য
সেলিম হয় একজন মানুষ।
অতএব, সেলিম হয় মরণশীল। বিশেষ সত্য বা তথ্য
ইমাম গাযালী একজন মানুষ এবং তিনি মারা গেছেন। বিশেষ সত্য বা তথ্য
কার্ল মার্কস্ একজন মানুষ এবং তিনি মারা গেছেন। বিশেষ সত্য বা তথ্য
বার্নাড শ একজন মানুষ এবং তিনি মারা গেছেন। বিশেষ সত্য বা তথ্য
বার্ট্র্যান্ড রাসেল একজন মানুষ এবং তিনি মারা গেছেন। বিশেষ সত্য বা তথ্য
অতএব, সম্ভবত সকল মানুষ হয় মরণশীল । সার্বিক সত্য বা তথ্য
এভাবে অবরোহী ও আরোহী যুক্তি বা অনুমানের পার্থক্য প্রদর্শন করা হলেও সর্বত্র এ রকম পার্থক্য
প্রদর্শন সম্ভব হয় না; কেননা এমন অনেক বৈধ অবরোহী যুক্তি বা অনুমান আছে যার আশ্রয়বাক্য ও
সিদ্ধান্তসবই সার্বিক সত্য তথা সার্বিক বচন। উদাহরণস্বরূপ
সকল জীব হয় মরণশীল। সার্বিক সত্য বা তথ্য
সকল মানুষ হয় জীব। সার্বিক সত্য বা তথ্য
অতএব, সকল মানুষ হয় মরণশীল। সার্বিক সত্য বা তথ্য
আবার এমন অবরোহী যুক্তি আছে যার আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তসবই বিশেষ সত্য বা বচন। উদাহরণস্বরূপ
যদি মার্কস্ হয় মানুষ তবে মার্কস্ হয় মরণশীল। বিশেষ সত্য বা তথ্য
মার্কস্ হয় মানুষ। বিশেষ সত্য বা তথ্য
অতএব, মার্কস্ হয় মরণশীল। বিশেষ সত্য বা তথ্য
এমন অনেক সঠিক আরোহী যুক্তি বা অনুমান আছে যার আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তসবই সার্বিক বচন।
উদাহরণস্বরূপ
সকল মানুষ হয় স্তন্যপায়ী এবং তাদের ফুসফুস আছে। সার্বিক বচন
সকল গরু হয় স্তন্যপায়ী এবং তাদের ফুসফুস আছে। সার্বিক বচন
সকল ঘোড়া হয় স্তন্যপায়ী এবং তাদের ফুসফুস আছে। সার্বিক বচন
অতএব, সম্ভবত সকল স্তন্যপায়ী জীবের ফুসফুস আছে। সার্বিক বচন
পক্ষাš রে আরোহী যুক্তির সব কয়টি বচনই বিশেষ সত্য হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ
অবরোহী যুক্তি
আরোহী যুক্তি
মুসোলিনী হয় একজন ডিক্টেটর ও নিষ্ঠুর। বিশেষ সত্য বা তথ্য
পিনোচেট হয় একজন ডিক্টেটর ও নিষ্ঠুর। বিশেষ সত্য বা তথ্য
ক্যাস্ট্রো হয় একজন ডিক্টেটর। বিশেষ সত্য বা তথ্য
অতএব, ক্যাস্ট্রো হয় সম্ভবত নিষ্ঠুর। বিশেষ সত্য বা তথ্য
সুতরাং আমরা যদি অবরোহী ও আরোহী যুক্তি বা অনুমানের পার্থক্য দেখাতে বলি যে, অবরোহী যুক্তিতে
সার্বিক সত্য থেকে বিশেষ সত্যে পৌঁছানো হয়; পক্ষান্তরে আরোহী যুক্তিতে বিশেষ সত্য থেকে সার্বিক
সত্যে পৌঁছানো হয় তাহলে সর্বদা একথা যথাযথ হবে না। এই দু’প্রকার যুক্তির প্রকৃত পার্থক্য হলো,
বৈধ অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তআশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়; পক্ষান্তরে, আরোহী
যুক্তিতে সিদ্ধান্তআশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় না, নিঃসৃত হয় সম্ভাবনামূলকভাবে।
আরোহী যুক্তিতে সিদ্ধান্তের সত্যতা সর্বদাই সম্ভাবনামূলক। তবে এই সম্ভাবনার মাত্রা অধিক প্রাসঙ্গিক
তথ্য সহযোগে বাড়ানো যায়। লক্ষণীয়, অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে অধিক বা অতিরিক্ত তথ্যের সংযোজন
বা বিয়োজনে সিদ্ধান্তের সত্যতায় কোন পরিবর্তন ঘটে না। উদাহরণস্বরূপ
সকল মানুষ হয় মরণশীল।
সক্রেটিস হয় মানুষ।
অতএব, সক্রেটিস হয় মরণশীল।
সকল মানুষ হয় মরণশীল।
সক্রেটিস হয় মানুষ।
সক্রেটিস হয় জ্ঞানী ।
রহিম হয় মরণশীল।
ফেরেস্তারা হয় অমরণশীল।
অতএব, সক্রেটিস হয় মরণশীল।
এখানে উভয় অবরোহী যুক্তির সিদ্ধান্তআশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়েছে। অতএব, উভয়
যুক্তিই বৈধ এবং উভয় যুক্তির সিদ্ধান্তসমভাবে সত্য। দ্বিতীয় যুক্তিতে অতিরিক্ত তথ্য বা সত্য যোগ হলেও এতে সিদ্ধান্তের সত্যতা একটুও বাড়েনি কিংবা কমেনি।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। অবরোহী ও আরোহী যুক্তির পার্থক্য প্রদর্শন করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। অবরোহী যুক্তির প্রকৃতি ব্যাখ্যা করুন।
২। আরোহী যুক্তির প্রকৃতি ব্যাখ্যা করুন।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। ‘বৈধ’ ও ‘অবৈধ’ কথা দুটি ব্যবহার করা হয়
ক) আরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে খ) আরোহী অবধারণের ক্ষেত্রে
গ) অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে ঘ) উপরের সব কয়টির ক্ষেত্রে।
২। ‘ভাল’ বা ‘মন্দ’ কথা দুটি ব্যবহার করা হয়
ক) অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে খ) আরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে
গ) অবরোহী ও আরোহী উভয় যুক্তির ক্ষেত্রে ঘ) কেবল মানব চরিত্রের ক্ষেত্রে।
৩) আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তঅনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়
ক) আরোহী যুক্তিতে খ) অবরোহী যুক্তিতে
গ) উভয় প্রকার যুক্তিতে ঘ) বচনের ক্ষেত্রে।
৪। প্রাসঙ্গিক অতিরিক্ত তথ্য বা উপাত্ত যোগ করলে সিদ্ধান্তের সত্যতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়
ক) অবরোহী যুক্তির খ) আরোহী যুক্তির
গ) উভয় যুক্তির ঘ) ঘটনার।
সঠিক উত্তর
১। গ) অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে ২। খ) আরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে ৩। খ) অবরোহী যুক্তিতে
৪। খ) আরোহী যুক্তির

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]