বৈধ যুক্তির নিয়মাবলী বিষয়ক আলোচনা করাই যুক্তিবিদ্যার কাজ। এজন্য বৈধ বলতে কি বুঝায় তা
প্রথমেই জানা প্রয়োজন। আর বৈধতার প্রকৃতি বুঝতে হলে সত্যতার সাথে তার পার্থক্য বা স¤পর্ক কি
তাও আমাদের বুঝতে হবে। স্মরণ করা দরকার, বৈধতা বা অবৈধতা কথা দুটি কেবল অবরোহী যুক্তির
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
বৈধতা
অবরোহী যুক্তির আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যকার ন্যায়সঙ্গত স¤পর্কের ওপর যুক্তির বৈধতা নির্ভর করে।
আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তযখন ন্যায়ত নিঃসৃত হয় তখন তাকে বৈধ বলে। যুক্তির বৈধতা আসলে
আকারগত (ভড়ৎসধষ)। আমরা যখন কোন যুক্তির বৈধতা স¤পর্কে প্রশ্ন তুলি তখন আমরা বস্তুত জানতে
চাই, সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য থেকে ন্যায়ত নিঃসৃত হয় কিনা?
আকারের বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝে নেয়া যাক। তিন রকম কাপড় দিয়ে যদি আপনি তিনটি জামা
তৈরি করেন তাহলে আপনার জামার আকার হবে একই। কিন্তু জামা তিনটির বস্তু বা উপাদান হবে
ভিন্ন। একইভাবে তিনটি গোল টেবিল তিন রকম কাঠ দিয়ে তৈরি করলে টেবিল তিনটির উপাদান ভিন্ন
ভিন্ন হলেও তাদের আকার হবে একই। বস্তুত প্রতিটি পদার্থের রয়েছে একটি আকার (ভড়ৎস) ও একটি
উপাদান যুক্তিরও থাকে আকার ও উপাদান। যুক্তির আকার ও উপাদানের পার্থক্য নিচের
উদাহরণের সাহায্যে সহজে বুঝে নেয়া যায় :
ক
১. সকল মানুষ হয় মরণশীল।
রাসেল হয় মানুষ।
রাসেল হয় মরণশীল
খ
১. সকল ঢ হয় ণ
ত হয় ঢ
ত হয় ণ
২. সকল রাজনীতিবিদ হয় চতুর।
জসিম উদ্দিন হয় একজন রাজনীতিবিদ।
জসিম উদ্দিন হয় চতুর।
২. সকল ঢ হয় ণ
ত হয় ঢ
ত হয় ণ
৩. সকল কবি হয় ভাবপ্রবণ।
সামসুদ্দিন হয় একজন কবি।
সামসুদ্দিন হয় ভাবপ্রবণ।
৩. সকল ঢ হয় ণ
ত হয় ঢ
ত হয় ণ
দেখা যাচেছ যে, ক সারির যুক্তি তিনটির মধ্যে উপাদানগত পার্থক্য রয়েছে। প্রথম যুক্তিটির উপাদান
হলো মরণশীলতা। দ্বিতীয় যুক্তির উপাদান হলো চতুরতা। আর তৃতীয় যুক্তির উপাদান হলো ভাব
প্রবণতা। তবে যুক্তি তিনটির আকার বা প্যাটার্ন একই। প্রতিটি যুক্তির ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে একটি শ্রেণী
স¤পর্কে মন্তব্য করেছি। অতঃপর একজন বিশেষ ব্যক্তি উক্ত শ্রেণীর অন্তর্গত এ দাবি করেছি এবং
ফলস্বরূপ সিদ্ধান্তটেনেছি যে, ঐ বিশেষ ব্যক্তিটির ক্ষেত্রেও উক্ত মন্তব্যটি প্রযোজ্য। এখন আমরা যদি
শ্রেণীর পরিবর্তে ঢ, মন্তব্যটির পরিবর্তে ণ এবং বিশেষ ব্যক্তিটির পরিবর্তে ত ব্যবহার করি তাহলে
আমরা খ সারির প্রতীকধর্মী যুক্তিগুলি লাভ করি। খ সারির যুক্তিগুলির দিকে দৃষ্টি দিলে সহজে বুঝা যায়
যে, তাদের আকার একই। সুতরাং যুক্তির আকার নির্ভর করে যুক্তিরই অন্তর্গত বচনসমূহের আকার এবং
তাদের পার¯পরিক স¤পর্কের ওপর।
আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তের ন্যায়সঙ্গত নিঃসরণ নির্ভর করে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তবচনের আকারের
স¤পর্কের ওপর আর, যুক্তির বৈধতা নির্ভর করে আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তের ন্যায়সঙ্গত নিঃসরণের
ওপর। সুতরাং যুক্তির বৈধতা যুক্তির আকারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি যুক্তি তখনই বৈধ
হবে যখন সেটির আকার এমন হবে যে, ঐ আকারের কোন যুক্তির আশ্রয়বাক্যগুলি সত্য অথচ সিদ্ধান্ত
মিথ্যা এমনটি কখনো হতে পারবে না। অন্যকথায় বৈধ যুক্তির ক্ষেত্রে সত্য আশ্রয়বাক্য থেকে মিথ্যা
সিদ্ধান্তনিঃসৃত হতে পারে না।
সত্যতা
যার সাথে বাস্তবের মিল আছে তা সত্য, যার সাথে বাস্তবের মিল নেই তা মিথ্যা। আশ্রয়বাক্য বা
সিদ্ধান্তের বক্তব্য বিষয়ের সাথে বাস্তবের মিল থাকলে আশ্রয়বাক্য বা সিদ্ধান্তসত্য বলে গণ্য হবে।
সুতরাং আশ্রয়বাক্য যদি বাস্তব সত্যতা স¤পন্ন হয় এবং সেই আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তযদি বৈধভাবে
নিঃসৃত হয় তাহলে সিদ্ধান্তও বাস্তব সত্যতা স¤পন্ন হবে। পুনরায় মিথ্যা আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত
বৈধভাবে নিঃসৃত হলেও সিদ্ধান্তবাস্তবে মিথ্যা হবে। লক্ষণীয় সত্য ও মিথ্যা উভয় প্রকার সিদ্ধান্তই
আশ্রয়বাক্য থেকে বৈধভাবে নিঃসৃত হতে পারে। আশ্রয়বাক্যের সত্যতা-মিথ্যাত্ব যুক্তিবিদ্যার বিবেচ্য
বিষয় নয়। যুক্তিবিদ্যার বিবেচ্য বিষয় হলো আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তন্যায়সঙ্গতভাবে নিঃসৃত হয় কিনা।
সত্যতা ও বৈধতা
উপরের আলোচনা থেকে ¯পষ্ট যে, সত্যতা ও বৈধতা একই কথা নয়। দুটি সত্য বচনের মধ্যে যেমন
বৈধ স¤পর্ক থাকতে পারে তেমন দুটি মিথ্যা বচনের মধ্যে বৈধ স¤পর্ক থাকতে পারে। একটি মিথ্যা
আশ্রয়বাক্য ও সত্য সিদ্ধান্তের মধ্যে বৈধ স¤পর্ক থাকতে পারে । আবার সত্য আশ্রয়বাক্য ও সত্য
সিদ্ধান্তের মধ্যে বৈধ স¤পর্ক নাও থাকতে পারে।
বস্তুত সত্যতা ও মিথ্যাত্ব কথা দুটি কেবল বচন স¤পর্কে প্রযোজ্য, যুক্তি স¤পর্কে নয়। যুক্তি স¤পর্কে
প্রযোজ্য বৈধ অবৈধ, অথবা সঠিক বেঠিক কথা দুটি।
আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের সত্যতা বা মিথ্যাত্বের সাথে যুক্তির বৈধতার বা অবৈধতার স¤পর্ক কেমন তা
নিচের দৃষ্টান্তসমূহের সহায়তায় বুঝে নেয়া যায় :
ক. বৈধ যুক্তির অন্তর্গত বচনগুলির সবই সত্য হতে পারে; উদাহরণস্বরূপ
সকল মানুষ হয় মরণশীল। সত্য
সকল বিজ্ঞানী হয় মানুষ। সত্য
অতএব, সকল বিজ্ঞানী হয় মরণশীল। সত্য
খ. বৈধ যুক্তির অন্তর্গত বচনগুলির সবই মিথ্যা হতে পারে; উদাহরণস্বরূপ,
সকল চতু®পদ প্রাণীর শিং আছে। মিথ্যা
সকল মানুষ হয় চতু®পদ প্রাণী। মিথ্যা
অতএব, সকল মানুষের শিং আছে। মিথ্যা
উল্লেখ্য, এই যুক্তির সব কয়টি বচন মিথ্যা হওয়া সত্তে¡ও যুক্তিটি বৈধ। কেননা যদি সব চতু®পদ প্রাণীর
শিং থাকে এবং সব মানুষ যদি চতু®পদ হয় তাহলে অনিবার্য সিদ্ধান্তহবে সব মানুষের শিং আছে।
সুতরাং এখানে সিদ্ধান্তন্যায়সঙ্গতভাবে আশ্রয়বাক্য দুটি থেকে নিঃসৃত হয়েছে।
গ. অবৈধ যুক্তির অন্তর্গত সকল বচনই সত্য হতে পারে, উদাহরণস্বরূপ
যদি আমি বাংলাদেশের সমস্তস্বর্ণের মালিক হতাম তাহলে আমি ধনী হতাম। সত্য
আমি বাংলাদেশের সমস্তস্বর্ণের মালিক নই। সত্য
অতএব, আমি ধনী নই। সত্য
এখানে সকল বচন অর্থাৎ আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তসবই সত্য হওয়া সত্তে¡ও যুক্তিটি অবৈধ। কেন অবৈধ তা
বুঝার জন্য আমরা এই যুক্তির সমরূপ নিচের যুক্তিটি লক্ষ্য করব :
যদি আকিজ মিয়া বাংলাদেশের সমস্তস্বর্ণের মালিক হতেন, তাহলে তিনি ধনী হতেন। সত্য
আকিজ মিয়া বাংলাদেশের সমস্তস্বর্ণের মালিক নন। সত্য
অতএব, আকিজ মিয়া ধনী নন। মিথ্যা
এই যুক্তির আশ্রয়বাক্য দুটি সত্য, কিন্তুু সিদ্ধান্তমিথ্যা। কেননা আকিজ মিয়া ধনী নন একথা সত্য নয়।
সুতরাং এ ধরনের যুক্তি অর্থাৎ উপরের গ অনুচেছদে উল্লিখিত যুক্তিটি অবৈধ। এতে সিদ্ধান্তআশ্রয়বাক্য
থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়নি।
উল্লিখিত উদাহরণসমূহ থেকে এটি পরিষ্কার যে, বৈধ যুক্তির সিদ্ধান্তমিথ্যা হতে পারে। আবার অবৈধ
যুক্তির সিদ্ধান্তসত্য হতে পারে। সুতরাং বৈধ যুক্তির সিদ্ধান্তসত্য হবেই এমনটি বলা যায় না। অন্যকথায়
আকারগত বৈধতা ও সত্যতা এক কথা নয়।
অভ্রান্তযুক্তি
যে বৈধ যুক্তির সকল আশ্রয়বাক্য বাস্তব সত্য তাকে আমরা বলি অভ্রান্ত(ঝড়ঁহফ) যুক্তি। অভ্রান্তযুক্তির
সিদ্ধান্তও সত্য। যদি যুক্তিটি অভ্রান্তনা হয় অর্থাৎ এটির সকল আশ্রয়বাক্য সত্য না হয় তাহলে তার
সিদ্ধান্তের সত্যতা নিরূপণ করা অবরোহী যুক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। আশ্রয়বাক্যের সত্যতা বা মিথ্যাত্ব
নিরূপণ করা যুক্তিবিদ্যার কাজ নয়। যুক্তিবিদ্যা কেবল যুক্তির শুদ্ধতা-অশুদ্ধতা নির্ণয় করে।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সত্যতা ও বৈধতার পার্থক্য প্রদর্শন করুন।
২। বৈধতা বলতে কি বুঝায় তা ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। প্রতিটি বস্তুরই রয়েছে আকার ও উপাদান - ব্যাখ্যা করুন।
২। অভ্রান্তযুক্তি কাকে বলে?
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। প্রতিটি বস্তুরই রয়েছে উপাদান ও
ক) জ্ঞানগত দিক খ) বস্তুগত দিক
গ) পরিমাণ ঘ) আকার।
২। বৈধ ও অবৈধ কথা দুটি ব্যবহার করা হয়
ক) আরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে খ) অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে
গ) বচনের ক্ষেত্রে ঘ) অবরোহী ও আরোহী উভয় যুক্তির ক্ষেত্রে।
৩) বৈধ যুক্তিতে আশ্রয়বাক্যসমূহ সত্য হলে সিদ্ধান্ত
ক) মিথ্যা হবে খ) সত্য হবে
গ) সত্য-মিথ্যা কোনটিই হবে না। ঘ) সার্বিক বচন হবে।
৪। যে যুক্তির সকল আশ্রয়বাক্য সত্য তাকে বলে
ক) অবরোহী যুক্তি খ) আরোহী যুক্তি
গ) বচন ঘ) অভ্রান্তযুক্তি।
সঠিক উত্তর
১। ঘ) আকার। ২। খ) অবরোহী যুক্তির ক্ষেত্রে ৩। খ) সত্য হবে ৪। ঘ) অভ্রান্তযুক্তি।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত