ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে কি বুঝায়? ,শিক্ষার গুরুত্ব কী?

শিক্ষার বুৎপত্তিগত অর্থ
‘শিক্ষা’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত ‘শাস্’ ধাতু থেকে। ‘শাস্’ ধাতুর অর্থ হল ‘শাসন করা’,
‘নিয়ন্ত্রণ করা’, ‘নির্দেশ দেওয়া, তিরস্কার করা’, উপদেশ দেয়া’, ইত্যাদি। অন্যদিকে শিক্ষা শব্দের
সমার্থক ‘বিদ্যা’ শব্দটির উদ্ভব হয়েছে সংস্কৃত ‘বিদ্’ ধাতু থেকে। ‘বিদ্’-এর অর্থ জানা বা জ্ঞান অর্জন
করা। তাহলে বুৎপত্তিগত অর্থে শিক্ষা হল জ্ঞানার্জনের প্রয়াস। তবে বাংলা ভাষায় ‘শিক্ষা’ শব্দটির দ্বারা
নানা অর্থ প্রকাশ পায়। ‘শিক্ষা’ শব্দটির দ্বারা জ্ঞান চর্চা, অনুশীলন বা অভ্যাসের মাধ্যমে কোন বিশেষ
কর্মে দক্ষতা অর্জন বা কোন কিছু আয়ত্ত করাকে বুঝায়। আবার এর দ্বারা জ্ঞান ও অভিক্ষতা অর্জন বা
কোন বিধি-নিষেধ পালনের কথাও বুঝায়। এমনকি অন্যায় বা অবাঞ্ছনীয় কাজের জন্যে শাস্তিদানের
কথাও এ ‘শিক্ষা’ শব্দটি দ্বারা প্রকাশ পায়। যেমন, কাউকে উচিত শিক্ষা দেওয়া অর্থাৎ শাস্তিদান করা
বুঝায়। তাহলে দেখা যায়, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ‘শিক্ষা’ শব্দটিকে ব্যবহার করা যায়।
এখন আমরা ‘শিক্ষা’ শব্দের প্রকৃত অর্থ অনুধাবনের জন্য ইংরেজি অভিধানের সাহায্য গ্রহণ করতে
পারি। ‘শিক্ষা’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হিসেবে ‘ঊফঁপধঃরড়হ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ‘ঊফঁপধঃরড়হ’
শব্দটি ইংরেজি ভাষায় এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে। ল্যাটিন ভাষায় তিনটি মৌলিক শব্দের সন্ধান
পাওয়া যায়, যথা শব্দটির অর্থ
শিক্ষা কর্ম বা শিক্ষকতা। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ ঊফঁপবৎব শব্দের অর্থ লালন-পালন
করা বা প্রয়োজন অনুসারে প্রশিক্ষণ দেওয়া । তৃতীয়টি অর্থাৎ
শব্দটির সমার্থ হল প্রকাশ করা বা বিকাশ ঘটানো (ঞড় ফৎধ)ি। উপরের
তিনটি ল্যাটিন শব্দের ভাবগত অর্থ ইংরেজি ঊফঁপধঃরড়হ শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
বুৎৎপত্তিগত অর্থের বিবেচনায় বা শিক্ষা শব্দের তিনটি অর্থ প্রকাশিত হয়। প্রথমটিঅর্থাৎ মূলতঃ শিক্ষকতার নীতি ও পদ্ধতির অর্থ প্রকাশ করে। দ্বিতীয়টি-অর্থাৎ
শব্দটিতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে শিশুকে তৈরি করার ভাবার্থ সুস্পষ্ট। তৃতীয়টি-অর্থাৎ
-এর মাধ্যমে শিক্ষার অর্থ বলতে অন্তর্নিহিত শক্তির বিকাশ। অর্থাৎ ব্যক্তির সুপ্ত সম্ভাবনার
বাস্তবায়নকে বুঝানো হয়।
সংকীর্ণ ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষা
বাংলায় ‘শিক্ষা’ এবং ইংরেজিতে ঊফঁপধঃরড়হ শব্দ দ্বয়ের অর্থ খুঁজতে গিয়ে দু’টি দৃষ্টিভঙ্গীর সন্ধান
পাওয়া গেল, যথা- ব্যাপক অর্থে শিক্ষা এবং সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা। এখন আমরা এ দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব: বুৎপত্তিগত অর্থে শিক্ষা হল জ্ঞানার্জনের প্রয়াস।
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা বলতে প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে বুঝায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিক উপায়ে
শিক্ষকের সহায়তায় নির্বাচিত পাঠক্রম অনুসারে এ শিক্ষাদান করে। শিক্ষার্থী এ প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট পাঠ্য
বিষয়ে জ্ঞান ও কুশলতা অর্জন করে। শিক্ষার্থীকে ডিগ্রী গ্রহণের উপযুক্ত করে তোলাই এ ধরণের
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষাকে অনেকে প্রক্রিয়া এবং উৎপাদন
হিসেবেও বিবেচনা করেন। একথা মনে করা হয় যে, শিক্ষা হল আমাদের জ্ঞান, কৌশল
বা দক্ষতা, আদর্শ, মূল্যবোধ, বাঞ্ছনীয় দৃষ্টিভঙ্গী ইতাদির বিকাশ ঘটানোর প্রক্রিয়া (চৎড়পবংং)। এ
ক্ষেত্রে পূর্ব নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণের দিকে লক্ষ্য রেখে যে শিক্ষণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করা যুক্তিযুক্ত তার
উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। আবার উদ্দেশ্য পুরণ কতটুকু হল অথবা কি কি উদ্দেশ্য সার্থক হল তার
উপর গুরুত্ব প্রদান করে বলা হয় শিক্ষা হল উৎপাদন (চৎড়ফঁপঃ)। অর্থাৎ শিক্ষা হল জ্ঞান, দক্ষতা,
আদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গী, মূল্যবোধ ইত্যাদি সৃষ্টি করার সামগ্রিক ফলাফল।
ব্যাপক অর্থে শিক্ষা
ব্যাপক অর্থে শিক্ষা জীবনের সাথে গভীরভাবে যুক্ত। শিক্ষা ও জীবন এক্ষেত্রে সমার্থক। মানব জীবনের
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ শিক্ষা বিরামহীন প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। তাই এ শিক্ষা আনুষ্ঠানিক
প্রক্রিয়ার মধ্যে অর্থাৎ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে প্রতিক্ষণে নতুন নতুন যত অভিজ্ঞতাই মানুষ সঞ্চয় করে তার সবই শিক্ষার
আওতাভুক্ত। শিক্ষার ব্যাপক অর্থের বিচার যে কোন নিরক্ষর মানুষও কার্যকরী অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে
শিক্ষিত হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে অভিজ্ঞতা তখনই স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণের উপর প্রভাব
বিস্তার করে। তাই ব্যাপক অর্থে ব্যক্তির মন, চরিত্র অথবা শারীরিক সামর্থ্য প্রসঙ্গে কোন গঠনমূলক
উপযোগিতা আছে এমন যে কোন কর্ম বা অভিজ্ঞতাকে শিক্ষা বলা হয়।
শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীর বক্তব্য
বহুকাল ধরে দার্শনিকগণ শিক্ষা সস্বন্ধে তাঁদের চিন্তাধারা বা মতবাদ প্রকাশ করে আসছেন। কিন্তু
অদ্যাবধি শিক্ষার কোন সার্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়নি। শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কেও দার্শনিক-শিক্ষা
চিন্তাবিদদের মধ্যে বিভিন্ন ধারণা রয়েছে।
গ্রীক দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ সক্রেটিসের মতে শিক্ষার উদ্দেশ্য হল ‘সত্যের আবিষ্কার ও মিথ্যার
অপনোদন।’
দার্শনিক প্লেটো বলেছেন, ‘মনের ও দেহের পরিপূর্ণ উন্নতি ও বিকাশ সাধনের জন্যে প্রয়োজনীয়
সবকিছুই শিক্ষার উদ্দেশ্য বলে পরিগণিত।’
এরিস্টটল অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, ‘ধর্মীয় অনুশাসনের অনুমোদিত
কার্যকলাপের মাধ্যমে সুখ আহরণই শিক্ষার উদ্দেশ্য।’
চিন্তাবিদ জন লক অত্যন্ত জোরালো ভাষায় বলেছেন, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সুস্থ দেহে সুস্থ মন
প্রতিপালনের নীতিমালা আয়ত্তকরণ।’
শিক্ষা-চিন্তাবিদ হার্বার্ট মনে করেন, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিশুর মধ্যে সুকায়িত সম্ভাবনা ও অনুরাগের
পূর্ণ বিকাশ এবং তার নৈতিক চরিত্রের কাক্সিক্ষত আত্মপ্রকাশ।’
শিশু শিক্ষাবিদ ফ্রোয়েবেল মন্তব্য করেছেন, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে একটি সুন্দর, বিশ্বাসযোগ্য ও পবিত্র
জীবনের উপলব্ধি।’
শিক্ষাবিদ পার্কারের মতে, একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে সমাজে আত্মপ্রকাশের জন্যে যে সমস্ত গুণ
নিয়ে শিক্ষার্থী পৃথিবীতে এসেছে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সে সকল গুণের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন।
বাংলাদেশে শিক্ষার উদ্দেশ্য
শিক্ষার সাধারণ উদ্দেশ্য দেশ-কাল নির্বিশেষে অভিন্ন হলেও কোন দেশের ভৌগলিক অবস্থান,
সামাজিক পরিবেশ, অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি সে দেশের শিক্ষার বিশেষ উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে। এ
সব ক্ষেত্রে পার্থক্যের কারণে এক দেশের শিক্ষার বিশেষ উদ্দেশ্যের সাথে অন্য দেশের শিক্ষার বিশেষ
উদ্দেশ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এজন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন কিংবা চীনের শিক্ষার বিশেষ উদ্দেশ্য
এবং বাংলাদেশের শিক্ষার উদ্দেশ্যের মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশ একটি অতি জনসংখ্যা
অধ্যুসিত এবং অনুন্নত অর্থনীতির দেশ। ধর্মীয় চেতনা, সামাজিক সম্পর্ক ও রক্ষণশীলতার পরিবেশ
গড়ে তুলেছে। তবুও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলা ও সমৃদ্ধি অর্জনের অভিপ্রায়ে শিক্ষার কতকগুলো
বিশেষ উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠে। যেমন-
ব্যক্তির সৃজনশীলতার বিকাশ
সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষাদান
সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন উপযোগী মান, দক্ষতা ও নৈপুণ্য সৃষ্টি
দেশের প্রতি শ্রদ্ধা, নৈতিক বোধ, সততা, মানবিক গুণ ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণের
বিকাশ।
ক্স দেশপ্রেম ও সুনাগরিকের গুণাবলীর বিকাশ সাধন।
বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী প্রণয়ন কমিটি তাদের রির্পোটের প্রথম খন্ডে বাংলাদেশের
সামাজিক পটভ‚মির প্রেক্ষিতে যে কয়টি বিশেষ উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করেছে তা হলো:
ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উপর গুুরুত্ব
মানবিক ও সামাজিক গুণের বিকাশ
বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার
কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ
জীবন ও পরিবেশ কেন্দ্রীক শিক্ষা
সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ এবং
পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা
সারকথা: শিক্ষা শব্দটির দ্বারা চর্চা, অনুশীলন বা অভ্যাসের মাধ্যমে কোন বিশেষ কর্মে দক্ষতা
অর্জন বা কোন কিছু আয়ত্ত করা বুঝায়। আবার এর দ্বারা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন বা কোন
বিধি নিষেধ পালনের কথাও বুঝায়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন নতুন যত অভিজ্ঞতাই মানুষ
সঞ্চয় করে তা সবই শিক্ষার আওতাভুক্ত। শিক্ষার আসল কথা হল মানুষের অর্ন্তনিহিত শক্তির
বিকাশ। শিক্ষার সাধারণ উদ্দেশ্য দেশ-কাল নির্বিশেষে অভিন্ন হলেও কোন দেশের আর্থ-
সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি লিখুন
১. শিক্ষা শব্দটির উৎপত্তি হয়েছেক. হিন্দি
খ. সংস্কৃত
গ. বাংলা
ঘ. উর্দু।
২. কোন ভাষা থেকে ‘ঊফঁপধঃরড়হ’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে?
ক. জার্মান
খ. ইতালি
গ. ফরাসি
ঘ. ল্যাটিন।
৩. সক্রেটিসের মতে শিক্ষার উদ্দেশ্য হল।
ক. নিজেকে জানা
খ. মনের উন্নতি
গ. আত্মার বিকাশ
ঘ. সত্যের আবিষ্কার।
৪. শিক্ষার উদ্দেশ্য হল ‘সুস্থ দেহে সুস্থমন’ কথাটি কে বলেছেন?
ক. প্লেটো
খ. এরিস্টটল
গ. জন লক
ঘ. সক্রেটিস।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে কি বুঝায়?
২. শিক্ষার গুরুত্ব কী?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. শিক্ষা সম্পর্কে মনীষীদের বক্তব্য আলোচনা করুন।
২, সুনাগরিক সৃষ্টিতে শিক্ষার ভ‚মিকার বর্ণনা দিন।
উত্তরমালাঃ ১. খ, ২. ঘ, ৩. ঘ ও ৪. গ
সহায়ক গ্রন্থ
১. মোহাম্মদ আজহার আলী, হোসনে আরা বেগম, শিক্ষানীতির স্বরূপ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]