পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সমস্যাগুলো আলোচনা ক

আল্লামা ইকবাল সর্বপ্রথম “পাকিস্তান” রাষ্ট্রের ধারণা দেন। তিনি ১৯৩০ সালে মুসলিম লীগের অধিবেশনে মুসলিম রাষ্ট্র
হিসাবে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের ইঙ্গিত দেন। কিন্তু সে সময় মুসলিম লীগ নেতৃত্বের মনে এ প্রস্তাবের কোন প্রতিক্রিয়া ছিল
না। পরবর্তীতে জাতীয় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি চৌধুরী রহমত আলী আল্লামা ইকবালের এ ধারণাকে সমর্থন
করেন। তাঁর ধারণা ছিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্তপ্রদেশ, বেলুচিস্তান, কাশ্মীর ও সিন্ধু প্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হবে।
তাদের এ ধারণা বাস্তবে রূপায়িত হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। এদিন থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্যগুলোর উপর
হতে ইংল্যান্ডের রাজার সার্বভৌম ক্ষমতার অবসান ঘটে। সৃষ্টি হয় দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্টের পর থেকে পাকিস্তানের ইতিহাসে তার শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির যাত্রা শুরু হয়। সংবিধান হল রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। কোন দেশেই সংবিধান একদিনে সৃষ্টি হয়নি। ধীরে ধীরে কালক্রমে সংবিধান
গড়ে ওঠে। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন প্রক্রিয়া এর ব্যতিক্রম নয়। বিবর্তনের ধারায় প্রয়োজন মত এ শাসনতন্ত্রের
সৃষ্টি। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের লক্ষে প্রথমে একটি গণপরিষদ গঠন করা হয়। এ পরিষদের সভাপতি ছিলেন
পর্যায়ক্রমে শ্রী যোগেন্দ্র নাথ মন্ডল, জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খান। কিছু দিন পর পাকিস্তানে আবার দ্বিতীয় গণপরিষদ
গঠন করা হয়। এ পরিষদের উপর প্রথম গণ-পরিষদের সব দায়িত্ব ন্যস্তহয়। এ পরিষদদ্বয়ের মূল দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানের
জন্য একটি শাসনতন্ত্র রচনা করা। কিন্তু শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে গিয়ে প্রণেতাগণ কতিপয় সমস্যার সম্মুখীন হন।
পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনার সমস্যাবলী ছিল নি¤œরূপ:-
(১) ভাষার প্রশ্ন: ভাষার প্রশ্ন ছিল পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রথম ও প্রধান সমস্যা। পাকিস্তান রাষ্ট্র ছিল বহু
ভাষা-ভাষী একটি রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রে বহু ভাষা-ভাষী মানুষ বসবাস করত। ভাষার প্রশ্নে পাকিস্তানের দুটি প্রদেশের
মধ্যে মতবিরোধ ছিল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। পূর্ব
বাংলায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দানা বাঁধতে থাকে। এ সমস্যা শাসনতন্ত্র প্রণয়নে বিশেষ প্রভাব ফেলে।
(২) ক্ষমতার বন্টন: ক্ষমতার বণ্টন ছিল পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের একটি অন্যতম মৌলিক সমস্যা। ক্ষমতার
বন্টনের ক্ষেত্রে পাকিস্তানে মতানৈক্য দেখা দেয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র ছিল যুক্তরাষ্ট্রীয় ধরনের। এ ধরনের সরকার
ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করা হয়। কিন্তু এতে দীর্ঘ স্থায়ী বিতর্ক দেখা দেয়। কিছু রাজনৈতিক
দল চেয়েছিল প্রদেশগুলোকে সীমিত ক্ষমতা দিতে। ফলশ্রæতিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে অসন্তোষ দেখা দেয়।
(৩) প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন: পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বের সমস্যা দেখা দেয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয়
আইন সভায় কোন্ কোন্ অঞ্চল থেকে সদস্য থাকবেন এবং কতজন সদস্য থাকবে এ নিয়ে শাসনতন্ত্র প্রবক্তাদের
মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। প্রতিনিধিত্বের সমস্যা ছিল একটি প্রকট সমস্যা। এ সমস্যার কারণে পাকিস্তানের
শাসনতন্ত্র প্রণয়নে বেশ বিলম্ব ঘটে।
(৪) কৃষ্টিগত পার্থক্য: কৃষ্টিগত পার্থক্য ছিল পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের একটি বিশেষ সমস্যা। পাকিস্তান
ভৌগোলিক দিক থেকে দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। এ বিভক্তির কারণে তাদের মধ্যে কৃষ্টিগত পার্থক্য দেখা দেয়।
দুটি অঞ্চলের ভাষা ও কৃষ্টি ছিল দু’রকমের। এ সকল কারণে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্র রচনা আরও দুরূহ
হয়ে পড়ে।
(৫) রাষ্ট্রের প্রকৃতি নির্ধারণে সমস্যা: পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রকৃতি নিয়ে মত বিরোধ দেখা দেয়। পাকিস্তানের একটি গোষ্ঠীর
দাবি ছিল একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করার। এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান বলেন - অন্যদিকে উদারনৈতিক নেতৃবর্গের কাছে
ইসলামি রাষ্ট্রের ধারণা ছিল অনেকটা সেকেলে। এ সমস্যা শাসনতন্ত্র প্রণয়নে বিলম্ব ঘটায়। তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানায়।
(৬) আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সম্পর্ক: পাকিস্তানের আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সম্পর্ক শাসনতন্ত্র প্রণয়নে
বাধার সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পাকিস্তানে সংসদীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু নতুন শাসনতন্ত্রে আইন
বিভাগ ও শাসন বিভাগের সম্পর্ক কিরূপ হবে এ প্রশ্নে শাসনতন্ত্র প্রণেতাদের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দেয়। তাই
দুটি বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের প্রশ্নে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
সারকথা
পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন বিষয়টি ছিল একটি জটিল প্রকৃতির। কারণ পাকিস্তান সৃষ্টির পর উভয় প্রদেশের মধ্যে দূরত্ব্
দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্তদেশে বিবিধ সমস্যা বিদ্যমান
ছিল। এ সমস্যাগুলো শাসনতন্ত্র প্রণয়নে বিলম্ব ঘটায়। কারণ শাসনতন্ত্র প্রণেতাগণ তৎকালীন বিদ্যমান সমস্যার কোন
উত্তম সমাধান খুঁজে পান নি। ফলশ্রæতিতে তারা দেশবাসীকে একটি গ্রহণযোগ্য শাসনতন্ত্র উপহার দিতে পারেননি।
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন
১। পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠন করা হয় -
(ক)১৯৪৫ সালে (খ) ১৯৫৫ সালে
(গ) ১৯৫৪ সালে (ঘ) ১৯৬৩ সালে
২। শাসনতন্ত্র প্রণয়নের মূল দায়িত্ব ছিল Ñ
(ক) মন্ত্রিপরিষদের ওপর (খ) কেবিনেট সভার ওপর
(গ) গণ-পরিষদের ওপর (ঘ) কারো ওপরই নয়
৩। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন প্রক্রিয়াটি ছিল Ñ
(ক) সরল প্রকৃতির (খ) জটিল প্রকৃতির
(গ) নমনীয় প্রকৃতির (ঘ) কোনটিই নয়
উত্তরমালা: ১। খ ২। গ ৩। খ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। পাকিস্তানে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সমস্যাগুলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]