১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের এবং মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণগুলো আলোচনা করুন।

যুক্তফ্রন্ট গঠন
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট বিকৃতভাবে ধর্মভিত্তিক চেতনা ব্যবহার করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান দুটি প্রদেশে
বিভক্ত ছিল। শুরু থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলাকে সুনজরে দেখে নি। তারা পূর্ব বাংলার আপামর জনসাধারণের
প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করে। তাঁরা পূর্ব বাংলায় তাদের শাসন আর শোষণ টিঁকিয়ে রাখার জন্য নব নব কৌশল
উদ্ভাবন করে। মূলত তারা পূর্ব বাংলায় তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি
তাদের ছিল বৈরী মনোভাব।
১৯৪৬ সালের নির্বাচনে ’মুসলিম লীগ’ বিপুল ভোটে পাকিস্তান প্রশ্নে জয়লাভ করে। নির্বাচন পূর্বে আঞ্চলিক স্বাধীনতা ও
সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে মুসলিম লীগের প্রতিশ্রæতি ছিল। কিন্তু নির্বাচনোত্তর তাদের এ মানসিকতায় পরিবর্তন ঘটে।
নির্বাচনের কয়েকদিন পর, অর্থাৎ ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল মুসলিম লীগের এক সম্মেলন আহŸান করা হয়। এ সম্মেলনে
১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে সংশোধন আনা হয়। ফলে পূর্ব বাঙ্গলা একটি অন্যতম স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের বদলে একটা
প্রদেশের মর্যাদা লাভ করে মাত্র। অবশেষে ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের সিদ্ধান্তনেওয়া
হয়। কিন্তু পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী নানা টাল-বাহানা শুরু করে। অহেতুক নির্বাচনের বিলম্ব ঘটায়। অবশেষে পাকিস্তানী
সরকার গণচাপের মুখে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন মেনে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত
হয়। ক্ষমতাসিন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় ও শক্তিশালী করার জন্য পূর্ব বাংলার বিরোধী দলগুলো
ঐক্যবদ্ধ হয়। নেতৃত্বে এগিয়ে আসেন মাওলানা ভাসানী, শের-এ-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ
সোহরাওয়ার্দীসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। অবশেষে তাঁদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক দল, নেজাম
ইসলামি ও গণতন্ত্রী দলের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনী ফ্রন্ট গঠন করা হয়। এটিই যুক্তফ্রন্ট নামে পরিচিত।
যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি
নির্বাচন উপলক্ষ্যে যুক্তফ্রন্ট ২১টি দফা সম্বলিত একটি নির্বাচনী ইস্তেহার ঘোষণা করে। বাংলার আপাময় জনসাধারণ ও
ভোটারগণ ২১ দফা দাবির পক্ষে তাদের মূল্যবান রায় দেন। নি¤েœউক্ত ২১ দফার বর্ণনা দেওয়া হল:
(১) বাংলা ভাষা হবে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা।
(২) ক্ষতিপূরণ ছাড়া যে কোন প্রকারের জমিদারী প্রথার বিলুপ্তিকরণ। উদ্বৃত্ত জমি ভ‚মিহীন কৃষকদের মধ্যে বন্টন এবং
করের পরিমাণ হ্রাস করা।
(৩) পাট শিল্পকে জাতীয়করণের উদ্দেশ্যে পাটের উপযুক্ত ও ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা। মুসলিম লীগ আমলের পাট
শিল্পের দালালদের খুঁজে বের করে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ।
(৪) কৃষির উন্নয়নকল্পে সমবায়, শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুটির শিল্প ও শ্রমঘন শিল্পের উন্নতি সাধন করা।
(৫) লবণ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তানের সমুদ্র উপকূলে লবণ কারখানা প্রতিষ্ঠাকরণ। পূর্বেকার
লবণ দালালদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়।
(৬) বিশেষ করে শিল্প শ্রমিক ও কারিগরিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
(৭) দেশকে বন্যা ও দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষার জন্য সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ করা।
(৮) পূর্ব বাংলায় শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিল্প শ্রমিকদের আর্থিক ও সামরিক নিরাপত্তা বিধান করা।
(৯) দেশের সর্বত্রই প্রাথমিক ও অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করা এবং শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত বেতন ও
ভাতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা।
(১০) সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসকরণ ও মাতৃভাষার মাধ্যমে
শিক্ষা প্রবর্তন করা।
(১১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কালাকানুন বাতিল করে এটিকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিতকরণ। ছাত্রদের জন্য সহজ
লক্ষ্যে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা।
(১২) প্রশাসনের ব্যয় সংকোচন এবং উচ্চ ও নি¤œপর্যায়ের কর্মচারিদের বেতনে সমতা আনয়ন এবং যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীগণ
এক হাজার টাকা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তগ্রহণ।
(১৩) দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও আত্মীয় পোষণ বন্ধ করা। এ উদ্দেশ্যে ১৯৪০ সালের পর থেকে সরকারি ও বেসরকারি
কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব গ্রহণ। বিধিমতে শাস্তির বিধানকরণ।
(১৪) বিভিন্ন অর্ডিন্যান্স ও জননিরাপত্তা আইনে ধৃত সকল বন্দীদের মুক্তি। সংবাদপত্র, সভা-সমিতির অধিকার
প্রতিষ্ঠাকরণ।
(১৫) বিচারকার্য সুষ্ঠুরূপে সম্পাদনের জন্য বিচার ব্যবস্থাকে প্রশাসন থেকে পৃথক করা।
(১৬) যুক্তফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রির বর্ধমান ভবনকে প্রথমে ছাত্রাবাস ও পরে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগারে পরিণত করা।
(১৭) বাংলা ভাষার সংগ্রামে শহীদের উদ্দেশ্যে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্তপরিবারবর্গের ক্ষতিপূরণ দান।
(১৮) ২১ ফেব্রæয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন এবং সরকারি ছুটির দিন বলে ঘোষণা করা।
(১৯) লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমত্ব প্রদান। দেশ রক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা
ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলো পূর্ববঙ্গ সরকারের হাতে নিয়ে আসা। স্থল বাহিনীর হেড কোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তানে
এবং নৌ-বাহিনীর হেড কোয়ার্টার পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন করা।
(২০) যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা কোন কারণে মন্ত্রিসভা বা আইনসভার কার্যকাল বাড়াবে না। আইনসভার মেয়াদ শেষের ৬ মাস
আগে মন্ত্রিসভা পদত্যাগের মাধ্যমে নির্বাচনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সহযোগিতাকরণ।
(২১) আইনসভার কোন সদস্যপদ শূন্য হলে তিনমাসের মধ্যে উপ-নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী
পর পর তিনটি উপ-নির্বাচনে পরাজিত হলে মন্ত্রিসভা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন।
নির্বাচনের ফলাফল
খুব অল্প দিনেই যুক্তফ্রন্টের ২১ দফায় কর্মসূচির পক্ষে জনমত গড়ে ওঠে। শের-এ বাংলা এ.কে ফজলুল হক, হোসেন
শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানীর ন্যায় জনপ্রিয় নেতৃত্ব পূর্ব বাংলায় নির্বাচনী সফরে নামেন। তাঁরা মুসলিম
লীগের ব্যর্থতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। যুক্তফ্রন্টের অনুকূলজনমত গড়ে তোলেন। স্বল্পসময়ের মধ্যে পূর্ব বাংলার শ্রমিক
কৃষক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীসহ সকলে যুক্তফ্রন্টের প্রতি সমর্থন এবং মুসলিম লীগকে
পরাজিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল ছিল নি¤œরূপ:
আসন প্রকৃতি আসন সংখ্যা বিজয়ী দল বিজয়ী আসন সংখ্যা
মুসলিম আসন ২৩৭ মুসলিম লীগ ৯
” ” যুক্তফ্রন্ট ২২৩
” ” নির্দলীয় ৪
” ” খেলাফত রব্বানী ১
অমুসলিম আসন ৭২ কংগ্রেস ২৪
” ” তফসীলী ফেডারেশন ২৭
” ” যুক্তফ্রন্ট ১৩
” ” খ্রিস্টান ১
নির্বাচনের তাৎপর্য
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের তাৎপর্য অপরিসীম। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের অভ‚তপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়। ১৯৫২
সালের ভাষা আন্দোলনের রক্ত রাঙা ইতিহাস পেরিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম বিকাশ ঘটে এ নির্বাচনের মধ্যে
দিয়ে। এ নির্বাচনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করলে নি¤েœাক্ত দিকগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে:
১। একচেটিয়া কর্তৃত্ব বিলোপ: নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্তক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলায় বহাল তবিয়তে রাজত্ব
করে। সাথে সাথে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে।
এ পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মুসলিম লীগের একচেটিয়া আধিপত্যের বিলোপ ঘটে।
২। মুসলিম লীগের ভরাডুবি: মুসলিম লীগের ভারাডুবির মধ্য দিয়ে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের তাৎপর্য উপলদ্ধি করা যায়।
গণপরিষদের মুসলিম লীগ দলীয় বাঙালি সদস্যরা আর তাদের প্রদেশের সত্যিকারের প্রতিনিধি নন বলে প্রমাণিত
হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে এ দলের ভরাডুবি হয়।
৩। স্বায়ত্তশাসনের সমর্থন: এ নির্বাচনে স্বায়ত্তশাসনের প্রতি সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ নির্বাচনে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন
ও স্বাধিকারের দাবির প্রতি বাঙালিদের সমর্থন সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়। তারা নিজেদের ঐক্যের গুরুত্ব
ও শক্তি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে। এতে বাঙালি জাতীয়তাবোধ ক্রমশ জোরদার হয়।
৪। প্রতিনিধিত্ব প্রমাণ: এ নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্টের সদস্যরা তাদের প্রতিনিধিত্ব প্রমাণ করে। যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের
ফলে তাঁরা শাসনতন্ত্রপ্রণয়নে অংশ নেন। তারা প্রথম গণপরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল একটি
গণপরিষদ গঠনের সিদ্ধান্তনেন।
৫। বিবোধী দলের বিকাশ: বিরোধী দলের বিকাশ ৫৪-এর নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত
পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলের কোন স্থান ছিল না। এ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো জয়লাভ করে। সুতরাং
এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
৬। রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি: রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির মধ্যে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের তাৎপর্য নিহিত। এ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে
পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী মাতৃভাষার ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার জনসাধারণের দৃঢ়তা উপলব্ধি করতে পারে।
এর ফলশ্রæতিতে ১৯৫৪ সালে উর্দুর সাথে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় মর্যাদা দেওয়া হয়।
সুতরাং বলা যায় যে, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। উল্লেখিত বিষয়ের আলোকে এ নির্বাচনের গুরুত্ব
স্পষ্ট করে উপলব্ধি করা যায়।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় এবং মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণ
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভাগ্যে নিয়ে আসে অচিন্তনীয় পরাজয়। পক্ষান্তরে যুক্তফ্রন্টের ভাগ্যে নিয়ে আসে
অভ‚তপূর্ব সাফল্য। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় এবং মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণগুলো ছিল নি¤œরূপ :
১) পূর্ব বাংলাকে উপেক্ষা: শুরু থেকেই মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলাকে উপেক্ষা করে আসছিল। তারা কখনও পূর্ব বাংলাকে
সুনজরে দেখে নি। মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষার দাবিকে গ্রাহ্য করে নি। তাই ‘৫৪ এর নির্বাচনে পূর্ব
বাংলার জনগণ যুক্তফ্রন্টকে ম্যান্ডেট দেয়।
২) স্বায়ত্তশাসনের অবজ্ঞা: স্বায়ত্তশাসনের অবজ্ঞা মুসলিম লীগের ভরাডুবি ও যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের একটি বড় কারণ।
পূর্ব বাংলার জনসাধারণ তাদের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেখায়।
৩) অভ্যন্তরীণ কোন্দল: অভ্যন্তরীণ কোন্দল মুসলিম লীগের পরাজয়ের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। মুসলিম লীগের মধ্যে
অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অন্তর্দ্ব›েদ্বর কারণে পূর্ব বাংলায় এ দলের সাংগঠনিক তৎপরতা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে
মুসলিম লীগের সর্বনাশ ডেকে আনে এবং যুক্তফ্রন্টের সাফল্য ঘটে।
৪) ঔপনিবেশিক মনোভাব: ঔপনিবেশিক মনোভাবের কারণে ‘৫৪ -এর নির্বাচনে মুসলিম লীগের চরম পরাজয় ঘটে।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলাকে অবজ্ঞা করে আসছিল। মুসলিম লীগের তৎপরতায়
তারা পূর্ব বাংলাকে তাদের উপনিবেশে পরিণত করতে চেয়েছিল। এরূপ মনোভাবের কারণে ৫৪-এর নির্বাচনে
মুসলিম লীগের পরাজয় এবং যুক্তফ্রন্টের বিজয় অর্জিত হয়।
৫) বিরোধী মনোভাব: মুসলিম লীগের বিরোধী মনোভাবের কারণে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পথ সুগম হয়। অন্যদিকে
মুসলিম লীগের বিজয়ের দ্বার রুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ দল নির্বাচনে তাদের পরাজয় অনিবার্য মনে করে বিরোধী নেতা
ও কর্মীদের প্রতি অত্যাচার চালায়। ফলে তারা নির্বাচনে পরাজয় বরণ করে।
৬) অর্থনৈতিক ব্যর্থতা: ‘৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে অর্থনৈতিক ব্যর্থতায় পেয়ে বসে। এ নির্বাচনের পূর্বে
পূর্ব বাংলায় ব্যাপক অর্থনৈতিক অবনতি ঘটে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে মুসলিম লীগ এ ব্যর্থতা রোধে ব্যর্থ হয়।
ফলে নির্বাচনী রায় তাদের প্রতিক‚লে এবং যুক্তফ্রন্টের অনুক‚লে যায়।
৭) বিচ্ছিন্ন মনোভাব: নির্বাচনের আগে মুসলিম লীগের বিচ্ছিন্ন মনোভাব গড়ে ওঠে। এ দল জনগণের সাথে সুসম্পর্ক
গড়ে তুলতে পারে নি। জনগণ তাদের এ বিচ্ছিন্ন মনোভাব উপলব্ধি করতে পারে। ফলে তাদের পরাজয় নিশ্চিত
হয়।
৮) নির্বাচনে বিলম্ব: বিলম্ব নির্বাচন মুসলিম লীগের পরাজয়ের জন্য দায়ী। এ নির্বাচনে ১৯৫১ সালে হবার কথা ছিল।
কিন্তু ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ এ নির্বাচনে অহেতুক বিলম্ব ঘটায়। তারা সময়মত এ নির্বাচন হতে দেয় নি।
ফলশ্রæতিতে যুক্তফ্রন্টের অনুক‚লে জনমত গড়ে উঠতে থাকে।
৯) শাসনতন্ত্রপ্রণয়ণে ব্যর্থতা: যুক্তফ্রন্টের বিজয় এবং মুসলিম লীগের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হল শাসনতন্ত্রপ্রণয়নের
ব্যর্থতা। প্রথম গণপরিষদের উপর মূলত শাসনতন্ত্রপ্রণয়নের দায়িত্ব ন্যস্তছিল। এ গণপরিষদের অধিকাংশ সদস্য
ছিল মুসলিম লীগের। এ ব্যর্থতার কারণে মুসলিম লীগ নির্বাচনে পরাজয়বরণ করে।
সুতরাং বলা যায় যে, উপরিউক্ত বিষয়গুলোর কারণে ‘৫৪-এর নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় ঘটে। পক্ষান্তরে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পথ সুগম হয়।
সারকথা
১৯৫৪ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর এটিই হল
প্রথম নির্বাচন যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জনসাধারণ তাদের একাত্বতা প্রকাশ করে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর
থেকে মুসলিম লীগ বহাল তবিয়তে রাজত্ব করে আসছিল। এ নির্বাচনের পূর্বে বিরোধী দলগুলো - আওয়ামী লীগ, কৃষকশ্রমিক পার্টি ও নেজামে ইসলামি পার্টি একাত্বতা ঘোষণা করে। তারা যুক্তফ্রন্টের ছায়াতলে একাত্রিত হয়। ক্ষমতাসীন
দলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করাই ছিল এ ফ্রন্টের মূল উদ্দেশ্য। নির্বাচনের পূর্বে যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা কর্মসূচি
ঘোষণা করে। ২১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে তারা তাদের অনুক‚লে নির্বাচনী প্রচারণা চালায়। অবশেষে যুক্তফ্রন্টের অভ‚তপূর্ব
সাফল্য ঘটে; অন্যদিকে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। তাই এ নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার।
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন
১। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ দলের নাম ছিল
(ক) মুসলিম লীগ (খ) আওয়ামী লীগ
(গ) যুক্তফ্রন্ট (ঘ) কোনটি নয়
২। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট কতটি কর্মসূচি ঘোষণা করে
(ক) ২১টি (খ) ২৩টি
(গ) ২৫টি (ঘ) ২০টি
৩। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট আসন পায়
(ক) ২০৫টি (খ) ২৫০টি
(গ) ২৪০টি (ঘ) ২৩৬টি
৪। এ নির্বাচনে মুসলিম লীগ আসন পায়
(ক) ৯ টি (খ) ৫ টি
(গ) ১৩ টি (ঘ) ১৫ টি
উত্তরমালা : ১। গ ২। ক ৩। ঘ ৪। ক
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
(১) যুক্তফ্রন্টের গঠন প্রকৃতি ব্যাখ্যা করুন।
(২) ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল উল্লেখ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের এবং মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণগুলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]