গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন

সংবিধান কী
সংবিধান হল রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল বলেন, বস্তত সংবিধান হল রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক বিধি-বিধানের সমষ্টি।
অধ্যাপক হারম্যান ফাইনার বলেন,
তাই সংবিধান হল রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক বিধি-বিধানের সমষ্টি।
বাংলাদেশ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নি¤œরূপ:
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সংবিধান কার্যকরী হয়। মাত্র ১ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সংবিধান রচনা করা
হয়। এ সংবিধান বাঙালি জাতির জন্য একটি দর্পণ স্বরূপ। এ সংবিধানকে বিশ্লেষণ করলে নি¤েœাক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট
হয়ে ওঠে
(১) লিখিত সংবিধান : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম বৈশিষ্ট্য হল এটি একটি লিখিত দলিল। এ সংবিধানের
অধিকাংশ বিধি-বিধান কাগজে কলমে লিখিত। এর ধারা ও উপ-ধারাগুলো লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ আছে।
(২) বৃহৎ সংবিধান : বাংলাদেশ সংবিধান আকারে অনেকটা বৃহৎ। অন্যান্য সংবিধানের তুলনায় এ সংবিধানের আয়তন
বড়। এ সংবিধানে ১টি প্রস্তাবনা , ১১টি ভাগ, ১৫৩টি বিধি ও ৪টি তফসিল
সন্নিবেশিত রয়েছে।
(৩) সংসদীয় সরকার : সংসদীয় সরকার বাংলাদেশ সংবিধানের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ সংবিধানে
সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়েছে। এ সংবিধানে দেশের যাবতীয় ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্তকরার
কথা উল্লেখ রয়েছে। এ সংবিধানে আরো বলা হয় যে, মন্ত্রিপরিষদ জাতীয় সংসদের নিকট দায়ী থাকবে।
(৪) এক কেন্দ্রিক শাসন : এক কেন্দ্রিক শাসন পদ্ধতি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
সংবিধানে বাংলাদেশের শাসন পদ্ধতিকে এক কেন্দ্রিক শাসন পদ্ধতি বলে উল্লেখ করা হয়। সংবিধান মতে সকল
ক্ষমতা কেন্দ্রিয় সরকারের হাতে ন্যস্তরাখা হয়।
(৫) সংসদীয় গণতন্ত্র: বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সংসদীয় গণতন্ত্র। বাংলাদেশ সংবিধানে গণতান্ত্রিক
ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়। এ সংবিধানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করা হয়। সংবিধানের প্রথম অংশে উল্লেখ
করা হয় যে, ”প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ”। এ বিধান থেকে গণতন্ত্রের স্বীকৃতি পাওয়া যায়।
(৬) দুস্পরিবর্তনীয়তা : দুস্পরিবর্তনীয়তা বাংলাদেশ সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। বাংলাদেশ সংবিধান
দুস্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির। সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় না। কেবল জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ
সদস্যের ভোটে এ সংবিধান সংশোধন করা যায়।
(৭) আইনসভা : আইনসভা বাংলাদেশ সংবিধানের একটি বিশেষ দিক। সংবিধানে এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার কথা
বলা হয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন এক কেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থার জন্য এক কক্ষ বিশিষ্ট আইন সভা
উত্তম। সংবিধানে আরো উল্লেখ করা হয় যে, আইন সভার আসন বসবে রাজধানী ঢাকায়।
(৮) মৌলিক অধিকার : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের একটি বিশেষ দিক হল মৌলিক অধিকার। এ সংবিধানে
শুরু থেকেই মৌলিক অধিকারের বিধান রাখা হয়। এ সকল মৌলিক অধিকারের মধ্যে প্রণিধানযোগ্য হল ব্যক্তি-
স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা চিন্তা ও বিবেচনার স্বাধীনতা ও সাম্যের অধিকার ইত্যাদি।
(৯) রাষ্ট্রীয় মূলনীতি : রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ১৯৭২ সালের সংবিধানের একটি মূল বৈশিষ্ট্য। উক্ত সংবিধানে জাতীয়তাবাদ,
সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্রও ধর্ম নিরপেক্ষতা এই চারটি নীতিকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে চিহিৃত করা হয়।
এগুলোকে বাস্তবায়নের ব্য্যপারে রাষ্ট্রীয় বিধান রাখা হয়। তবে পরবর্তীতে সংশোধনীর মাধ্যমে সমাজতন্ত্রের ক্ষেত্রে
সামাজিক ন্যায় বিচার ও ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার উপর আস্থা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করা হয়।
(১০) নামমাত্র রাষ্ট্রপতি : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রপতির বিধান রাখা হয়। এ রাষ্ট্রপতি ছিল নামমাত্র।
রাষ্ট্রপতি নাম মাত্র ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হবার যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি
পদে অধিষ্ঠিত হবেন। পরবর্তীতে ৪র্থ সংশোধীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা কায়েম করা হয় এবং
১৯৯১ সালে আবার সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরে আসা হয়।
(১১) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : উক্ত সংবিধানে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের বিধান রাখা হয়। এ সংবিধানে
বাংলাদেশে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার কথা বলা আছে। সুপ্রীম কোর্ট হবে দেশের সর্বোচ্চ
বিচারালয়। মৌলিক অধিকার ও সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব এ বিচার বিভাগের উপর ন্যস্ত।
(১২) সংবিধানের প্রাধান্য : ১৯৭২ সালের সংবিধানে সংবিধানের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। এ সংবিধানকে দেশের চরম
ও চূড়ান্তআইন বলে আখ্যা দেওয়া হয়। সংবিধানের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সঠিক ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে। সংবিধান
পরিপন্থী যে কোন আইন বাতিল বলে গণ্য হবে।
(১৩) দলীয় শৃংখলা : দলীয় শৃংখলা ১৯৭২ সালের সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। এ সংবিধানে দলীয় শৃংখলার
ব্যাপারে কঠোর বিধান রাখা হয়। এটি সংবিধানের একটি অন্যতম বিশেষত্ব। এ সংবিধানে আরো উল্লেখ করা
হয় যে, কোন সংসদ সদস্য দল ত্যাগ করলে বা সংসদে ঐ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তাকে সংসদের পদ
হারাতে হবে।
(১৪) মালিকানা নীতি : মালিকানা নীতি উক্ত সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। মালিকানার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিধান
রাখা হয়। এ সংবিধানে বলা হয় যে, মালিকানা হবে তিন প্রকারের যথা : রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সমবায় মালিকানা
ও ব্যক্তিগত মালিকানা। এর অধিকাংশ মালিকানা রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা সীমিত থাকার বিধান রাখা হয়।
সারকথা
সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার একটি মৌলিক দলিল। বাংলাদেশ সংবিধানও এর ব্যতিক্রম নয়। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর
বাংলাদেশ সংবিধান প্রবর্তন করা হয়। মাত্র ১০ মাসের মধ্যে এ দুরূহ কাজটি সম্ভব হয়েছিল। এটি একটি লিখিত
সংবিধান। বহু বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় হল এ সংবিধান। দু’একটি সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তে¡ও এ সংবিধান বিশ্বের একটি উত্তম সংবিধান।
সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দিন
১। বাংলাদেশ সংবিধানে কয়টি প্রস্তাবনার বিধান রাখা হয় ?
(ক) দুটি প্রস্তাবনা (খ) একটি প্রস্তাবনা
(গ) তিনটি প্রস্তাবনা (ঘ) কোনটিই নয়
২। বাংলাদেশ সংবিধানে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় ?
(ক)১১টি (খ) ১৩ টি
(গ) ৯ টি (ঘ) ১৫ টি
৩। বাংলাদেশ সংবিধানে অনুচ্ছেদের সংখ্যা ছিল -
(ক)১৬০ টি (খ) ২৫৩ টি
(গ) ১৫৩ টি (ঘ) ১৪০ টি
৪। বাংলাদেশ সংবিধানে তফসিল এর সংখ্যা ছিল -
(ক) ৪ টি (খ) ৬ টি
(গ) ৩ টি (ঘ) ২ টি
উত্তরমালাঃ ১। খ ২। ক ৩। গ ৪। ক
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। বাংলাদেশে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ কী কী?
২। বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রসম্পর্কে ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]