বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী , দ্বাদশ সংশোধনী সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন।

বাংলাদেশ সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি
বাংলাদেশ সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় না। এ সংবিধান দুস্পরিবর্তনীয় ধরনের। সাধারণ আইন প্রণয়ন পদ্ধতিতে
এ সংবিধান সংশোধন করা যায় না। বাংলাদেশ সংবিধান পরিবর্তনের জন্য বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। সংবিধানের
দশম ভাগের ১৪২নং অনুচ্ছেদে বিধান রয়েছে যে, সংসদ আইনের দ্বারা বাংলাদেশের সংবিধানের কোন বিধান সংশোধিত
বা রহিত করা যেতে পারে। তবে দুটি শর্ত পালনযোগ্য:
১. অনুরূপ সংশোধীর জন্য আনীত কোন বিলের সম্পূর্ণ শিরোনামে এই সংবিধানের কোন বিধান সংশোধন করা হবে
বলে স্পষ্টরূপে উল্লেখ না থাকলে বিলটি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা যাবে না।
২. সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার ন্যূনতম দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত না হলে অনুরূপ কোন বিলে সম্মতি দানের জন্য
তা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপিত হবে না।
সংবিধান সংশোধনে উপরিউক্ত শর্ত দুটি পালন আবশ্যক। উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষে কোন বিল সংসদে গৃহীত হলে তা
সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করা হয়। সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধান বিলটিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এ ভাবে
বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধন করা হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সংবিধানে বেশ কয়েকটি সংশোধন আনা হয়।
এগুলো পর্যায়ক্রমে নি¤েœআলোচনা করা হল।
বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম সংশোধনী (১৫ জুলাই, ১৯৭৩ সাল।)
১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানে প্রথম সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীতে বাংলাদশ সংবিধানের ৪৭নং
অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করা হয়। উক্ত সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৭-(ক) নামে একটি নতুন অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হয়েছে। এ
সংশোধনীর মূল কথা ছিল –“কোন শসস্ত্রবাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা কোন যুদ্ধবন্দীকে
গণহত্যা বা মানবতার বিরুদ্ধে, অপরাধ বা যুদ্ধ অপরাধ বা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত
ব্যক্তির আটক, ফৌজদারী বিচার সোপর্দকরণ বা শাস্তিদানের বিধান করে এমন কোন আইন সংবিধানে যে কোন বিধান
থাকা সত্তে¡ও বৈধ থাকবে, সংবিধানের কোন বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্য হওয়ার কারণে এরূপ আইন অবৈধ বলে গণ্য
হবে না। এর প্রতিকারের আশায় সুপ্রীম কোর্টে আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে না।” এ সংশোধনীর ফলে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী
ও গণহত্যার অভিযোগে বন্দিদের বিচারের পথ সহজ হয়।
বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী (২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ সাল।)
১৯৭৩ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সংবিধানে একটি সংশোধনী আনীত হয়। এটি সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী।
এ সংশোধনীর গুরুত্বপূর্ণ দিক হল –“জরুরি বিধানবলি”। এটি সংবিধানের নবম ভাগে সন্নিবেশিত হয়েছে। এ সশোধনীর
মূল কথা হল- “যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ অথবা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ দ্বারা বাংলাদেশ বা এর যে কোন অংশের নিরাপত্তা বা
অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন হবার আশঙ্কা দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। এ ধরনের ঘোষণার
বৈধতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি-স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা পরবর্তী কোন ঘোষণার দ্বারা প্রত্যাহার করা
হবে অথবা জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হবে কিংবা ১২০ দিন অতিবাহিত হবার পূর্বে সংসদের প্রস্তাব দ্বারা অনুমোদিত
না হলে তা কার্যকর হবে না। জরুরি অবস্থা চলাকালীন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকবে।” এ সংশোধনের
দ্বারা ২৬নং অনুচ্ছেদের শেষে একটি নতুন দফা সংযোজিত হয়; ৬৩নং অনুচ্ছেদের অংশ বাদ দেয়া হয়। ৭২নং
অনুচ্ছেদের পরিবর্তন সাধন করা হয়। এ সংবিধানে আরো উল্লেখ করা হয়, - এ জরুরি অবিস্থায় গ্রেফতার ও আটকাদেশ সম্পর্কিত বিধানের অবসান ঘটবে।
বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী (২৮ নভেম্বর, ১৯৭৪ সাল।)
১৯৭৪ সালের ২৮শে নভেম্বর বাংলাদেশ সংবিধানে তৃতীয় সংশোধনী গৃহীত হয়। এ সংশোধনীটি হল “বাংলাদেশ ও
ভারত সম্পর্কিত সীমান্তচুক্তি সংশোধনী।” বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তচুক্তি
স্বাক্ষর করেন। মোট ১৫টি এলাকার সীমানা রদ-বদল করা হয়। এ রদ-বদল কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ
সংবিধানে তৃতীয় সংশোধনী আনীত হয।
বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী (২৫ জানুয়ারি, ১৯৭৫ সাল।)
এটি বাংলাদেশ সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সংবিধানে যে সংশোধনী
গৃহীত হয় তা সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী নামে পরিচিত। রাজনৈতিক ভাবে এ সংশোধনীর গুরুত্ব অপরিসীম। এ
সংশোধনীর মাধ্যমে বিরাজমান সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা ও একদলীয় ব্যবস্থা
প্রবর্তন করা হয়। এ সংশোধনীর কতিপয় বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা যেতে পারে -
(১) রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন: রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর প্রথম বৈশিষ্ট্য। উক্ত
সংশোধনীর দ্বারা বাংলাদেশ পার্লামেন্টারী সরকার পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন
করা হয়।
(২) একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা: চতুর্থ সংশোধনীর দ্বারা বাংলাদেশে একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা
হয়। এ সংশোধনীর দ্বারা একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্তনেওয়া হয়। এ দলটির নাম ছিল -
বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ। সংক্ষেপে নাম ছিল বাকশাল।
(৩) রাষ্ট্রপতির প্রভাব বৃদ্ধি: সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এটি উক্ত সংবিধানের
একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
(৪) সাংবিধানিক আদালত গঠন: সাংবিধানিক আদালত চতুর্থ সংশোধনীর একটি বিশেষ দিক। উক্ত সংবিধানের
মাধ্যমে একটি সাংবিধানিক আদালত গঠন করা হয়। এ সংশোধনীর পূর্বে এ সাংবিধানিক আদালতের দায়িত্ব
পালন করত সুপ্রীম কোর্ট। এ সংশোধনীর কারণে সুপ্রীম কোর্ট রীট জারি করার ক্ষমতা হারায়।
(৫) ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদ সৃষ্টি: বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর দ্বারা ভাইস-প্রেসিডেন্ট নামে একটি নতুন
পদ সৃষ্টি করা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে বিপুল ক্ষমতা প্রদান করা হয়। প্রেসিডেন্ট তাঁর এ বিপুল
ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য ভাইস-প্রেসিডেন্ট নামে একটি নতুন পদ সৃষ্টি করেন।
(৬) বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা হ্রাস: সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকের নিয়োগ ও অপসারণ সংক্রান্ত
যাবতীয় ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেয়া হয়। (সংবিধান অনুচ্ছেদ ৯৫/৯৬)
বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী (৬ এপ্রিল, ১৯৭৯ সাল।)
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী একটি ব্যতিক্রমধর্মী সংশোধনী। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট
থেকে ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্তসামরিক শাসন বিরাজ করছিল। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক
কর্তৃক জারিকৃত আদেশ ও ঘোষণার দ্বারা বাংলাদেশ সংবিধানের কিছু কিছু সংশোধনী আনা হয়। পঞ্চম সংশোধনীর
দ্বারা এ সংশোধনীকে বৈধতা দান করা হয়। তৎকালীন সময়ে সামরিক শাসক হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক পরিবর্তন ও
সংশোধনী বিষয়াবলী হল - (১) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (২) ‘বাঙালি’ শব্দটির পরিবর্তে ‘বাংলাদেশী’ (৩) ধর্ম
নিরপেক্ষতার পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস (৪) ’সমাজতন্ত্র’ মানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক
ন্যায় বিচার (৫) মন্ত্রিসভার সদস্যগণের চার-পঞ্চমাংশের সংসদ সদস্য হবার বিধান (৬) মৌলিক অধিকার বলবৎ করার
ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মামলা রুজু করা (৭) সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন (৮) গণভোট ইত্যাদি
সংযোজন, পরিবর্তন ও সংশোধন করা হয়। ফরমানসমূহ ইত্যাদির অনুমোদন ও সমর্থনের ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫
আগস্ট হতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্তপ্রণীত সকল ফরমান বৈধ ঘোষণা করা হয় এবং তৎ সম্পর্কে কোনো আদালত,
ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো কারণেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করার বিধান জারি করা হয়। (পঞ্চম সংশোধনী
১৮ অনুচ্ছেদ)
বাংলাদেশ সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী (৮ জুলাই, ১৯৮১ সাল।)
৮ জুলাই ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সংবিধানে ষষ্ঠ সংশোধনী গৃহীত হয়। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে এ
সংশোধনী আনা হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে এক ব্যর্থ সামরিক
অভ্যুত্থানে নিহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা ঘোষণা করা হয়। বিচারপতি সাত্তারকে শাসক দল
বি.এন.পি. রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনয়ন দান করে। এর ফলে সাংবিধানিক সংকট দেখা দেয়। বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রপতি
নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারবেন কিনা সে বিষয় সন্দেহ দেখা দেয়। এ সংশোধনী দ্বারা উপ-রাষ্ট্রপতি থেকে রাষ্ট্রপতি
নির্বাচনের পদ প্রশস্তকরা হয়।
বাংলাদেশ সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী (১০ নভেম্বর, ১৯৮৬ সাল।)
এটি বাংলাদেশ সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য সংশোধনী। ১৯৮৬ সালের ১০ই নভেম্বর এ সংশোধনী গৃহীত হয়। মোট
২২৩ সদস্যের ভোটে এ সংশোধনী গৃহীত হয়। এ সংশোধনীর দ্বারা বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের মাননীয়
বিচারপতিদের স্বীয় পদে অধিষ্ঠান থাকার বয়স ৬২ থেকে ৬৫ বছর করা হয়। এছাড়া এ সংশোধনীর উদ্দেশ্য ছিল
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্তএরশাদ সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধি-বিধান ও
সংশোধনীসমূহের সাংবিধানিক বৈধতা দান। আরো উল্লেখ করা হয় যে, ঐ সকল কার্যক্রম ও সংশোধনী সম্পর্কে
আদালতে কোন মামলা দায়ের করা যাবে না।
বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী (৭ জুন, ১৯৮৮ সাল।)
বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ৮ম সংশোধনীর তাৎপর্য অপরিসীম। ১৯৮৮ সালের ৭ জুন এ সংশোধনী আনা
হয়। এ সংশোধনীর মৌলিক বিষয়গুলো হল - (১) ইসলাম ধর্মকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা দান (২)
হাইকোর্ট বিভাগের ছয়টি বেঞ্চ যথাক্রমে বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রংপুর ও সিলেটে স্থাপন করা (৩)
বাংলাদেশের কোন নাগরিক রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে বিদেশ থেকে কোন উপাধি গ্রহণ করতে পারবে। রাজধানীর
বানান উধপপধ এর পরিবর্তে উযধশধ এবং বাংলা ভাষা ইংরেজি ইবহমধষর এর পরিবের্ত ইধহমষধ গৃহীত হয়। কিন্তু এ
সংশোধনী হাইকোর্ট বিভাগীয় বেঞ্চ সম্পর্কে দু’জন নাগরিক রীট পিটিশন করেন। তারা দুজন হলেন - আনোয়ার হোসেন
চৌধুরী ও জালাল উদ্দিন। তাদের এ রীট পিটিশনের ফলে ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বিভাগের ৬টি স্থায়ী বেঞ্চ রহিত করা
হয়। পরবর্তীতে এটি বাতিল হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সংবিধানের নবম সংশোধনী (১১ জুলাই, ১৯৮৯ সাল।)
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জনাব মওদুদ আহমেদ এ নবম সংশোধনী বিলটি উপস্থাপন করেন। এ বিলটির পক্ষে ২৭২টি ভোট
পড়ে। কিন্তু বিপক্ষে কোন ভোট পড়েনি। এ সংশোধনীর মূল বিষয়গুলো ছিল নি¤œরূপ:
(১) উপ-রাষ্ট্রপতি প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন;
(২) রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন একসঙ্গে একই সময় অনুষ্ঠিত হবে;
(৩) একাধিকক্রমে দু’ মেয়াদ তথা ১০ বৎসরের বেশী কেউ রাষ্ট্রপ্রতি পদে অধিষ্ঠিত হবেন না;
(৪) প্রতি ৫ বছর পর পর নিয়মিত রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে;
(৫) রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে তা নিরসনের জন্য সংসদ অধিবেশন আহŸান।
বাংলাদেশ সংবিধানের দশম সংশোধনী (১৫ জুন, ১৯৯০ সাল।)
বাংলাদেশ সাংবিধানিক ইতিহাসে এ সংশোধনীটি বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। ১৯৯০ সালের ১৫ জুন এ সংশোধনটি
গৃহীত হয়। তৎকালীন আইন ও বিচার মন্ত্রী হাবিবুল ইসলাম চতুর্থ জাতীয় সংসদে ১৯৯০ সালের ১০ জুন এ দশম
সংশোধনী বিলটি উত্থাপন করেন। ১১ জুন থেকে এ সংশোধনীর উপর আলোচনা শুরু হয়। ২২৬-০ ভোটে সংশোধনী
গৃহীত হয়।
(১) সংবিধানের ৬৫নং অনুচ্ছেদ সংশোধন সাপেক্ষে বলা হয় যে, আগামী ১০ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে মহিলাদের
৩০টি আসন পুনরায় সংরক্ষণ করা হল।
(২) সংবিধানের ১২৩নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয় যে, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে ১৮০ দিনের মধ্যে
এ পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সংশোধনীর দ্বারা ইংরেজি ও বাংলা ভাষ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্তযাবতীয়
বিধি-বিধানের অসঙ্গতি দূর করা হয়।
বাংলাদেশ সংবিধানের একাদশ সংশোধনী (৬ আগস্ট, ১৯৯১ সাল।)
বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে একাদশ সংশোধনীটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটে
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের ফলে। গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য ছিল তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু
নির্বাচন অনুষ্ঠান। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য গণ-আন্দোলনের মুখে অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান এরশাদের পতন ঘটে। তিনি
পদত্যাগ করার পূর্বে সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে তার নিকট
ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তিনি যতদিন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং তার যাবতীয় কার্যাদী অনুমোদনের জন্য সংবিধানে
এ একাদশ সংশোধনী আনীত হয়। সংশোধনীতে আরো উল্লেখ করা হয়, সংবিধান অনুসারে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত
হওয়ার পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ পুনরায় প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী (৬ আগষ্ট, ১৯৯১ সাল।)
বাংলাদেশ সংবিধানে ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট আরেকটি সংশোধনী আনা হয়। এটি সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী। এ
সংশোধনীর গুরুত্ব অপরিসীম। এ সংশোধনী বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে বিরল ঐতিহাসিক নজীর স্থাপন করে।
এ সংশোধনীর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল - রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা
প্রবর্তন। ১৯৯১ সালের ৬ই আগস্ট ৩০৭-০ ভোটে এ সংশোধনী বিলটি গৃহীত হয়। এ সংশোধনীর প্রধান প্রধান
দিকগুলো নি¤েœপ্রদত্ত হল:
(১) সংসদীয় সরকার: দ্বাদশ সংশোধনীর প্রধান দিক হল সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন। এ সংশোধনীর দ্বারা
বাংলাদেশের সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে সংসদীয় সরকার
পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।
(২) নামমাত্র রাষ্ট্রপতি: এ সংশোধনীর দ্বারা বাংলাদেশে একজন নামমাত্র রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। তিনি
আইনানুসারে সংসদ সদস্য দ্বারা নির্বাচিত হবেন। তিনি যাবতীয় বিষয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে কাজ
করবেন।
(৩) রাষ্ট্রপতির মেয়াদ: এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ নির্ধারিত হয়। রাষ্ট্রপতি ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত
হবেন। একাধিক্রমে তিনি ১০ বছরের বেশি মেয়াদে ক্ষমতায় থাকবেন না।
(৪) উপ-রাষ্ট্রপতির পদ বিলোপ: উপ-রাষ্ট্রপতির পদ বিলোপ দ্বাদ্বশ সংশোধনীর একটি উল্লেখযোগ্য দিক। দ্বাদশ
সংশোধনীর দ্বারা উপ-রাষ্ট্রপতির পদটি বিলোপ করা হয়। এ সংশোধনীতে বলা হয়,কোন কারণে রাষ্ট্রপতির পদ
শূন্য হলে জাতীয় সংসদের স্পীকার অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
(৫) মন্ত্রিসভা গঠন: মন্ত্রিসভা গঠন পদ্ধতি সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর একটি বিশেষ দিক। এ সংশোধনীতে বলা
হয় বাংলাদেশ সরকার ব্যবস্থায় একটি মন্ত্রিসভা থাকবে। রাষ্ট্রপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করবেন। তিনি হবেন এ মন্ত্রিসভার নেতা।
(৬) গণভোট পদ্ধতি: এ সংশোধনীতে গণভোট পদ্ধতির কথা বলা হয়। দ্বাদশ সংশোধনী দ্বারা কেবল প্রস্তাবনা,
সংবিধানের প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮, ৫৬ ও ১৪২ সংক্রান্তকোন সংশোধনী বিল গণভোট আকারে পেশ করার
বিধান রাখা হয়।
বাংলাদেশ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (২৬ মার্চ, ১৯৯৬ সাল।)
বাংলাদেশ সংবিধানের ইতিহাসে এ সংশোধনীটি বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। এ সংশোধনীর দ্বারা অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয়
নির্বাচনের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠনের বিধান করা হয়। ১৯৯৬ সালের ২১ মার্চ জাতীয় সংসদে এ
বিলটি উপস্থাপিত হয়। ২৪ মার্চ আইন মন্ত্রীর প্রস্তাব অনুসারে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটিতে বিলটি প্রেরণ
করা হয়। অবশেষে ২৬ মার্চ বিলটি সংশোধনী আকারে সর্বসম্মতিক্রমে ২৬৯-০ ভোটে গৃহীত হয়। এ সংশোধনীর মূল
প্রতিপাদ্য বিষয় হল -
(১) জাতীয় সংসদ বিলোপের ১৫ দিনের মধ্যে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন।
(২) প্রধান উপদেষ্টাকে প্রধানমন্ত্রীর এবং অন্যান্য উপদেষ্টাগণকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা দান।
(৩) এ সরকার নীতি নির্ধারণী কোন সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে পারবেন না।
(৪) যোগ্য প্রধান উপদেষ্টা পাওয়া না গেলে প্রেসিডেন্টকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন।
(৫) প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনাক্রমে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্য থেকে ১০ জন উপদেষ্টা
নিয়োগ।
(৬) এ সরকারের মেয়াদ হবে তিন মাস; নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ হলে তার হাতে এসব ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
চতুর্দশ সংশোধনী (২০০৪)
চতুর্দশ সংবিধান সংশোধনীতে বলা হয়েছে স্পীকার অথবা ডেপুটি স্পীকার সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ করাতে অসমর্থ
হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার শপথ পাঠ করানোর বিধান করা হয়। জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৪৫-
এ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪৫টি আসন হবে সংরক্ষিত মহিলা আসন। এ ৪৫টি বর্ধিত আসনে মনোনীত নারী
প্রার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর আওতায় সাধারণ আসনের
সংখ্যানুপাতে নারী আসনগুলো ভাগ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫ থেকে ৬৭
বছর, পিএসসির চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের বয়সসীমা ৬২ থেকে ৬৫ বছর এবং মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের
অবসর বসয়সীমা ৬০ থেকে ৬৫ বছরে উন্নীত করা হয়।
সারকথা
সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে আজ পর্যন্ত(জুলাই ২০০৯) মোট ১৪টি সংশোধনী গৃহীত হয়। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এ
সংশোধনী গৃহীত হয়। ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্তএ সময়ে এ সংশোধনী গৃহীত হয়। এ
সংশোধনীসমূহের মধ্যে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য হল প্রথম সংশোধনী, চতুর্থ সংশোধনী, অষ্টম সংশোধনী, দ্বাদশ
সংশোধনী, ও ত্রয়োদশ সংশোধনীসমূহ। বিশেষ করে চতুর্থ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ সংশোধনী বিশেষ গুরুত্বের দাবীদার।
এ সংশোধনীগুলো দ্বারা বাংলাদেশের সরকার পদ্ধতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়।
সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দিন
১। সংবিধান সংশোধনী সম্পর্কিত বিধান দশম ভাগের কত অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে?
(ক)১২২নং অনুচ্ছেদে (খ) ১৪২নং অনুচ্ছেদে
(গ) ১৫২নং অনুচ্ছেদে (গ) কোনটিই নয়
২। বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম সংশোধনী কোন তারিখে গৃহীত হয় ?
(ক)১৫ জুলাই ১৯৭৩ সাল (খ) ২৪ জুলাই ১৯৭৩ সাল
(গ) ২৫ জানুয়ারী ১৯৭৫ সাল (ঘ) ২৪ মার্চ ১৯৭৩ সাল
৩। কোন সংশোধনীর দ্বারা বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন
করা হয় ?
(ক) চতুর্থ সংশোধনী (খ) প্রথম সংশোধনী
(গ) দ্বাদশ সংশোধনী (ঘ) পঞ্চম সংশোধনী
৪। বাংলাদেশ সংবিধানের কোন সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয় সরকার
প্রবর্তিত হয় ?
(ক) প্রথম সংশোধনী (খ) চতুর্থ সংশোধনী
(গ) অষ্টম সংশোধনী (ঘ) দ্বাদশ সংশোধনী
উত্তরমালা ১। খ ২। ক ৩। ক ৪। ঘ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। বাংলাদেশ সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।
২। বাংলাদেশ সংবিধানে গৃহীত তত্ত¡াবধায়ক সরকার সম্পর্কে ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
২। বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]