বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করুন।

নির্বাহী বিভাগ সরকার ব্যবস্থায় একটি বিশেষ অঙ্গ। ১৯৭২ সালের সংবিধানে এ নির্বাহী বিভাগের বিধান রাখা হয়।
বাংলাদেশের নির্বাহী বিভাগ বলতে আমরা বুঝি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে। ১৯৭২ সালের সংবিধান মতে
রাষ্ট্রপতি নামমাত্র নির্বাহী বিভাগের প্রধান ছিলেন। যাবতীয় কার্যাবলি তাঁর নামে সম্পাদিত হত। সংবিধানে দ্বাদশ
সংশোধনীর (১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট) পর আজও যাবতীয় কার্যাবলি শুধু রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদিত হয়। নির্বাহী
বিভাগের প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার উপর ন্যস্ত। প্রধানমন্ত্রী যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদন করেন। কিন্তু তিনি
তাঁর কাজের জন্য জাতীয় সংসদের নিকট দায়ী থাকেন। বাস্তবে রাষ্ট্রপতি শাসনতান্ত্রিক প্রধান নন। তিনি শাসন বিভাগের কেন্দ্রবিন্দু। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার শীর্ষমনি। রাষ্ট্রপ্রধান রূপে তিনি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির উর্ধ্বে অবস্থান করেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৮(২)নং অনুচ্ছেদে বলা হয় যে, তবে দ্বাদশ সংশোধনী মতে কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান
বিচারপতি নিয়োগ ব্যতীত রাষ্ট্রপতি অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে নেন। তিনি একজন
নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি
রাষ্ট্রপ্রধান বর্তমানে সংসদের সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর পূর্বে তিনি জনগণ কর্তৃক
প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হতেন। দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ পদ্ধতির পরিবর্তন করা হয়। রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে
বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী হতে হয়। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নিæোক্ত যোগ্যতার অধিকারী হতে হয় :
(১) অন্তত তাঁর বয়স পঁয়ত্রিশ বছর হওয়া;
(২) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্যতা অর্জন;
(৩) যদি কখনো সংবিধানের অধীনে অভিশংসনের দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হতে অপসারিত না হন।
উপরিউক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। এ শর্তাবলির যে কোন একটির
অনুপস্থিতিতে কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে পারেন না।
রাষ্ট্রপতির মেয়াদ
সংবিধান মতে রাষ্ট্রপতি কর্মভার গ্রহণ করার তারিখ থেকে পাঁচ বৎসর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবেন। একাদিক্রমে হোক
বা না হোক কোন ব্যক্তি দু’মেয়াদের (৫+৫=১০ বছর) বেশী পদে তিনি বহাল থাকতে পারবেন না। তবে রাষ্ট্রপতির
পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্তে¡ও তাঁর উত্তরাধিকারী ব্যক্তি কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ততিনি স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।
রাষ্ট্রপতির কার্যমেয়াদে তিনি অন্য কোন পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। কিন্তু নিজ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশুনা
করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতির অভিশংসন
রাষ্ট্রপতি তাঁর দায়িত্ব পালনের জন্য করো কাছে দায়ী নন। কোন আদালতের নিকটও জবাবদিহি করেন না। কিন্তু
রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে অভিশংসিত করা যায়। সংবিধান লংঘন কিংবা গুরুতর
অসদাচরণের কারণে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে তাঁকে অভিযুক্ত করা যায়।পদত্যাগ করতে চাইলে রাষ্ট্রপতি
স্পীকারের নিকট স্বীয় পদত্যাগ পত্র পেশ করতে পারেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারী মামলা
দায়ের করা চলে না। এ ছাড়া তাঁকে গ্রেফতারও করা যায় না।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি
বাংলাদেশ শাসন ব্যবস্থার শীর্ষে অধিষ্ঠিত আছেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর নামে যাবতীয় কার্যাবলি পরিচালিত হয়। আলোচনার
সুবিধার জন্য তাঁর কার্যাবলিকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা :-
(১) নির্বাহী ক্ষমতা
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির প্রধান কাজ হল নির্বাহী কাজ তদারকী করা। বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা মূলত তাঁর
উপর ন্যস্ত। এ কাজ তিনি প্রত্যক্ষভাবে অথবা তাঁর অধীনস্তকর্মচারিদের দ্বারা সম্পাদন করেন। সরকারি কার্যাবলি ও
বিধি প্রণয়নের বিষয়টি তাঁর উপর ন্যস্ত। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে তিনি প্রধানমন্ত্রীরূপে নিয়োগ
দান করেন। এ ছাড়া অন্যান্য মন্ত্রিদের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ আলোচনা করে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তিনি যাদের
মন্ত্রীরূপে নিয়োগদান করবেন তাঁকে অবশ্যই সংসদ সদস্য হবার যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রতিরক্ষা বিষয়ক যাবতীয়
কার্যাবলি তাঁর নামে সম্পাদিত হয়। তিনি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি শাসন বিভাগ পরিচালনার জন্য এর্টনি
জেনারেল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারী কর্ম-কমিশনের সভাপতি ও সদস্যসহ
অন্যান্যদের নিয়োগ করেন। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতিকেও তিনিই নিয়োগ করেন।
(২) আইন সংক্রান্তকাজ
তিনি সংসদের অধিবেশন আহŸান ও স্থগিত করে থাকেন। এমনকি সংসদ ভেঙ্গে (উরংংড়ষাব) দিতে পারেন। সংসদে
ভাষণ অথবা বাণী প্রেরণের ক্ষমতাও রাখেন। সংসদ কর্তৃক গৃহীত বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। সংসদ
কর্তৃক গৃহীত বিলে সম্মতির জন্য তাঁর নিকট প্রেরণ করা হয়। ১৫ দিনের মধ্যে তিনি ঐ বিলে সম্মতি দিয়ে থাকেন। ১৫
দিনের মধ্যে সম্মতি না দিলে এ বিলে তাঁর সম্মতি রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। তিনি কখনও কখনও অধ্যাদেশ জারী
করতে পারেন। তবে অধ্যাদেশ জারী করার প্রথম সংসদ অধিবেশনে এটি উপস্থাপন করতে হয়। সংসদে উপস্থাপনের
৩০ দিন অতিবাহিত হলে বা এর পূর্বে অনুমোদিত না হলে তা অচল বলে গণ্য হয়।
(৩) বিচার সংক্রান্তকাজ
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন। তিনি তাঁর প্রয়োজনমতে একটি
বিচার পরিষদও গঠন করেন। এ পরিষদের পরামর্শ সাপেক্ষে সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণকে অপসারিত
করেন। তিনি চরমাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন। চরমাধিকার বলে তিনি আদালত, ন্যায়পীঠ বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ
কর্তৃক প্রদত্ত কোন দন্ডের মার্জনা মঞ্জুর করতে পারেন। এছাড়া যে কোন দন্ড মওকুফ, স্থগিত ও হ্রাস করতে পারেন।
তাঁর অনুমতি ছাড়া কোন নাগরিক বিদেশী কোন উপাধি, পদবী বা সম্মান গ্রহণ করতে পারেন না।
(৪) অর্থ সংক্রান্তকাজ
অর্থ সংক্রান্তবিষয়ে রাষ্ট্রপতির ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। সরকারি অর্থ জড়িত এমন বিল রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ছাড়া সংসদে পেশ
করা যায় না। তাঁর সুপারিশ ছাড়া কোন মঞ্জুরী দাবি সংসদে উত্থাপন করা যায় না। কোন আর্থিক বছর নির্দিষ্ট কর্ম
বিভাগের জন্য অনুমোদিত অর্থ অপর্যাপ্ত হলে রাষ্ট্রপতির সংযুক্ত তহবিল থেকে এ ব্যয় প্রদান করা যায়। তবে ঐ ব্যয়ের
পরিমাণ একটি আর্থিক বিবৃতির মাধ্যমে সংসদে উত্থাপন করতে হয়। সংযুক্ত তহবিল থেকে তিনি ব্যয় নির্বাহের ক্ষমতা
রাখেন। তবে এ সব ক্ষমতা তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মত প্রয়োগ করবেন।
(৫) জরুরি ক্ষমতা
জরুরি ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির একটি বিশেষ ক্ষমতা। তিনি যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণের সময় দেশের অভ্যন্তরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা
করতে পারেন। আবার কখনও কখনও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে তিনি এ অবস্থা ঘোষণা করেন। তবে সাধারণত
বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া তিনি এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন না।
(৬) সামরিক ক্ষমতা
সামরিক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা। তিনি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিন বাহিনীর
প্রধানগণকে তিনি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জল, স্থল ও আকাশ পথে কোন সংকট দেখা
দিলে তা নিরসনের ব্যবস্থা নিতে পারেন।
(৭) বিবিধ
উপরোক্ত কার্যাবলি ছাড়া তিনি কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃক চুক্তি তাঁর নামে সম্পাদিত
হয়। যে কোন আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদনের জন্য তাঁর নিকট প্রেরিত হয়। এ চুক্তি জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হলে চুড়ান্ত
অনুমোদনের জন্য পুনরায় সংসদে প্রেরণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
সারকথা
আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শাসন বিভাগের শীর্ষে অবস্থিত। শাসন বিভাগীয় যাবতীয়
কার্যাদি তাঁর নামে পরিচালিত হয়। দ্বাদশ সংশোধনীর পর থেকে রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত হন। বর্তমানে
তিনি ৫ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন। সর্বমোট তিনি দু’মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী
ও প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য পদস্থ ব্যক্তিদের তিনি নিয়োগ দান করেন। আইন, বিচার, অর্থ ও বিবিধ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ
ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হন। তবে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়।
সঠিক উত্তরে টিক () চিহৃ দিন
১। কোন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হতে হলে তাকে অনুর্ধ্ব কত বছর বয়স্ক হতে হয় ?
(ক) ৩০ বছর (খ) ৩৫ বছর
(গ) ৪০ বছর (গ) ২৮ বছর
২। দ্বাদশ সংশোধনী অনুসারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন -
(ক) জনগণের ভোটে (খ) বিভাগীয় কমিশনাদের ভোটে
(গ) মন্ত্রীদের ভোটে (ঘ) সংসদ সদস্যদের ভোটে
৩। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিকে কে নিযুক্ত করেন ?
(ক) রাষ্ট্রপতি (খ) প্রধানমন্ত্রী
(গ) সংসদ সদস্যগণ (ঘ) কোনটিই নয়
৪। তিন বাহিনীর প্রধান হলেন -
(ক) প্রধানমন্ত্রী (খ) সামরিক বাহিনীর প্রধান
(গ) রাষ্ট্রপতি (ঘ) কোনটিই নয়
উত্তরমালা ঃ ১। খ ২। ঘ ৩। ক ৪। গ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। রাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করুন।
২। রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]