প্রথম তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া আলোচনা করুন।

১৯৯০ সালের গণঅভ‚্যত্থান
জিয়াউর রহমানের পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ বাংলাদেশে দ্বিতীয় বার সামরিক শাসনের সূচনা
করেন। তখন থেকে দীর্ঘ নয় বছর এরশাদের সামরিক একনায়কত্বের আওতায় বাংলাদেশ শাসিত হয়। এরশাদের
শাসনকালে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়। এরশাদের সামরিক শাসন অবসানের
জন্য এ দেশের মানুষকে ক্রমাগত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। গণতন্ত্রপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বহু মানুষ প্রাণদান
করেছেন। অবশেষে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনসমূহের সফল
গণঅভ্যুত্থানে সামরিক শাসনের অবসান ঘটে এবং গণতন্ত্রপ্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত হয়। অবশ্য এই গণঅভ্যুত্থান হঠাৎ করে
সংগঠিত হয় নি। এরশাদ শাসনের প্রথমদিক থেকেই সামরিক শাসন বিরোধী কার্যক্রম কখনো ধীরে কখনো প্রবলভাবে
চলতে থাকে। নিচে সংক্ষেপে নব্বই এর গণঅভ্যুত্থানের অতীত প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হলো:
১৯৮২ সালের শেষ দিক থেকেই ছাত্র সমাজ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে শুরু করে। এরশাদ প্রস্তাবিত
শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। বুদ্ধিজীবীরা এ আন্দোলনে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখেন। উক্ত আন্দোলনের
পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দলীয় জোট এবং সেপ্টেম্বর মাসে বি এন পি’র
নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট গঠিত হয়। তখন থেকে এরশাদের পতন পর্যন্তআন্দোলন অব্যাহত থাকে। বিভিন্ন পেশাজীবী ও
সামাজিক-সাংষ্কৃতিক সংগঠনও আন্দোলনে ভ‚মিকা রাখে। ১৯৮৭ সালে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ
তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন প্রবল হওয়া সত্তে¡ও এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে সমর্থ হন।
১৯৯০ সালের প্রথম থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো মিছিল- মিটিং- হরতাল সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকে।
সারাদেশের ছাত্র সংগঠন, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনগুলোও সামরিক শাসন অবসানের আন্দোলনে
সক্রিয় হয়। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। সর্বদলীয় ছাত্র
ঐক্যের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট একাত্ম হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করে তোলে । ১৯ নভেম্বর, ১৯৯০
সামরিক পতনের লক্ষ্যে সরকার ৮,৭ এবং ৫ দলীয় জোট ‘যৌথ ঘোষণা’ প্রদান করে।
তিন জোটের যৌথ ঘোষণা ছিল নি¤œরূপ
 বিরোধী দল এবং জোট কর্তৃক এরশাদের অধীনে সকল নির্বাচন বয়কট ও প্রতিরোধ;
 এরশাদের পদত্যাগ ও তত্তাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর;
 তত্ত¡াবধায়ক সরকার কর্তৃক নির্বাচন ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধার ও সকল নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা;
 অন্তবর্তীকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচিত সার্বভৌম সংসদ এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর
করবে।
তিন জোটের যৌথ ঘোষণা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। জরুরি অবস্থা জারিসহ বিভিন্ন দমনমূলক
পন্থা অবলম্বন করা হলেও আন্দোলন থেকে জনগণকে নিবৃত্ত করা যায় নি। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক, আইনজীবি, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী গ্রæপ আন্দোলনের প্রতি সোচ্চার সমর্থন
জানায়। বড় শহরগুলোতে হাজার হাজার লোক কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমে আসে। রেডিও- টেলিভিশনের শিল্পী,
সংবাদ পাঠকরা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম বর্জন করে। সর্বশেষে এরশাদের মূলশক্তি সামরিক বাহিনীও সমর্থন প্রত্যাহার
করে। এমতাবস্থায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হন। এরশাদের
ক্ষমতা ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা : প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যেকার সন্দেহ, দ্বিধা-দ্ব›েদ্বর অবসান ঘটিয়ে
যৌথ ঘোষণা প্রদানে সমর্থ হলে এরশাদ শাসন বিরোধী আন্দোলন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এর ফলে সারাদেশে আন্দোলন
ব্যাপক আকার ধারণ করে। সরকার ২৭ নভেম্বর, ১৯৯০ জরুরি অবস্থা জারি করে এবং রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ
ঘোষণা করে। একই সাথে প্রধান শহরগুলোতে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু এসব দমনপূর্বক ব্যবস্থা সত্তে¡ও
সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করা যায় নি। বরং বুদ্ধিজীবি-পেশাজীবীসহ সমাজের সকল স্তরের লোকজন আন্দোলনের
প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। জরুরি অবস্থা অমান্য করে জনগণ রাস্তায় নেমে এসে এরশাদের পদত্যাগের দাবী
জানাতে থাকে। সর্বশেষে প্রধান অবলম্বন সামরিক বাহিনীও যখন সমর্থন প্রত্যাহার করে তখন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করা ছাড়া এরশাদের অন্য কোন বিকল্প থাকে
নি। ক্ষমতায় থাকার শেষ চেষ্টা হিসাবে এরশাদ - ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯০ কোন নিদিষ্ট তারিখ উল্লেখ ছাড়াই, একই দিনে
রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করেন। এবং নির্বাচনের ১৫ দিন পূর্বে পদত্যাগের অঙ্গীকার
করেন। আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনগুলো এরশাদের এ ঘোষণাকে ক্ষমতায় টিকে থাকার অপকৌশল
হিসাবে ব্যাখ্যা করে এবং প্রত্যাখান করে। এমতাবস্থায় ৪ ডিসেম্বর, ১৯৯০, এরশাদ অবিলম্বে পদত্যাগের সিদ্ধান্তঘোষণা
করেন। সাংবিধানিক পন্থা অবলম্বন করে ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯০ উপ-রাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমেদ পদত্যাগ করেন। উক্ত পদে
তিন-জোটের মনোনীত প্রার্থী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদকে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই দিন এরশাদ
জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন এবং বিচারপতি শাহাবুদ্দীনের হাতে ক্ষমতা সমর্পণ করে। এভাবেই এরশাদের অপশাসনের
অবসান ঘটে এবং বাংলাদেেেশর ইতিহাসে প্রথম তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। উল্লেখ যে, বাংলাদেশে অসামরিক
উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের এটিই প্রথম নিদর্শন।
১৯৯১ সালের সংসদীয় নির্বাচন ও ফলাফল : ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহামদের তত্ত¡াবধায়ক সরকার
১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে সংসদ নির্বাচন সংক্রান্তঘোষণা দেন। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা
হয় ২৭ ফেব্রæয়ারি, ১৯৯১। বিভিন্ন কারণে এ নির্বাচনে জাতীয় জীবনে অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ ছিল। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন
পরিস্থিতির কারণে জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা যায়।
৪২৪ জন স্বতন্ত্রপ্রার্থী সহ মোট ২৭৮৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে। ৭৫টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে
অংশগ্রহণ করে। প্রার্থী এবং দলের এ সংখ্যা বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে সর্বোচ্চ। রেকর্ড সংখ্যক ৪৭ জন মহিলা
নির্বাচনে প্রার্থী হন। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্ত¡াবধায়ক সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তিনজন বিচারপতি অন্তর্ভুক্ত
করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। অভিযুক্ত রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারদের বরখাস্তকরার ক্ষমতাও
নির্বাচন কমিশনের হাতে সমর্পণ করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার সাপেক্ষে ১৬- দফা নির্বাচনী বিধি
প্রণীত হয়। নির্বাচনে উত্তেজনা হ্রাস, সহিংসতা দমন ও কালো টাকার ব্যবহার বন্ধের উদ্দেশ্যে সরকার বিভিন্ন আইন
সংশোধন করে।
ফলাফল
অত্যন্তশান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৭৫টি দল নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রধান ৪টি দল ৯৩.৬৬ শতাংশ
আসন লাভ করে। ৮৪ শতাংশ দল কোন আসন লাভ করে নি এবং কোন দল নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে নি।
ভোটের ফলাফল নিচে সারণির সাহায্যে উল্লেখ করা হলো :
জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯১
দল / স্বতন্ত্র প্রাপ্ত আগণ
বিএনপি ১৪০
আওয়ামী লীগ ৮৮
জাতীয় পার্টি ৩৫
জামায়াত- ই-ইসলামি ১৮
এসএসএইচএল
বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন পৃষ্ঠা-১২২
কম্যুনিস্ট পার্টি ৫
বাকশাল ৫
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মুজাফফর) ১
গণতন্ত্রী দল ১
ওয়াকার্স পার্টি ১
জাসদ (সিরাজ ) ১
ইসলামী ঐক্য জোট ১
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১
স্বতন্ত্র ৩
মোট ৩০০
উৎস : নির্বাচন কমিশন
সারকথা
১৯৭৫ সালের আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্তদু’জন সেনা ব্যক্তিত্ব
বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করে গেছেন। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ এর সামরিক শাসনের সূচনা হলে
তখন থেকেই এই অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা হয়। অবশেষে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০
সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদ শাসনের অবসান ঘটে এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠিত হয়।
সঠিক উত্তরে টিক() দিন
১। জেনারেল এরশাদ কবে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করেন?
ক) ১৯৮৯ সালের ৬ ডিসেম্বর খ) ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর
গ) ১৯৯১ সালের ৬ ডিসেম্বর ঘ) ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর
২। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হয়?
ক) ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর খ) ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি
গ) ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল ঘ) ১৯৯১ সালের ২ জুলাই
৩। জেনারেল এরশাদের শাসনব্যবস্থা কি ধরনের ছিল?
ক) গণতান্ত্রিক খ) সমাজতান্ত্রিক
গ) সাম্যবাদী ঘ) স্বৈরতন্ত্রী
উত্তর: ১. খ; ২.খ ৩.ঘ
রচনামূলক প্রশ্ন
১। প্রথম তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]